দেশের বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং বা বিপিও খাতের সম্মেলন ‘বিপিও সামিট বাংলাদেশ-২০২৫’ শুরু হয়েছে আজ শনিবার। রাজধানীর সেনাপ্রাঙ্গণ ভেন্যুতে আজ ও আগামীকাল দুই দিন ধরে চলবে এই সম্মেলন। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কন্টাক্ট সেন্টার অ্যান্ড আউটসোর্সিং (বাক্কো), তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগ এবং বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল যৌথভাবে এ সম্মেলন আয়োজন করেছে।
আজ সকালে মেলার উদ্বোধন করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান। ‘বিপিও ২.
আদিলুর রহমান খান বলেন, ‘কৃষি আর শিল্প খাতে আমাদের অর্থনীতি আর আটকে নেই। ডিজিটাল খাতে প্রযুক্তিনির্ভর শিল্প খাত ও অর্থনীতির বিকাশ ঘটছে। প্রযুক্তিখাতনির্ভর বিশাল একটি মানবসম্পদ ক্ষেত্র বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে, আমাদের সরকার সে বিষয়ে কাজ করছে। আমরা স্মার্ট নগর পরিকল্পনা, আইটি পার্ক স্থাপনসহ অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করছি। বিপিও সামিটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির জন্য আমরা নতুন কী করতে পারি, তার অনেক কৌশল সম্পর্কে আলোচনার সুযোগ তৈরি হবে।’
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, ‘আমরা এখন একটি রূপান্তরমূলক সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কোভিড–পরবর্তী সময়ে সারা বিশ্বের প্রযুক্তি খাতে আমূল পরিবর্তন এসেছে। আমাদের দেশে প্রযুক্তি খাতকে সেই পরিবর্তনকে মানিয়ে দ্রুত এগোতে হবে। এখনকার নয়া বাস্তবতা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নানা প্রযুক্তি। বিপিওসহ প্রযুক্তি খাত–সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান যদি এআইকে গ্রহণ না করে, তাহলে নতুন চ্যালঞ্জে তৈরি হবে। সরকার ও সমাজের ডিজিটাল রূপান্তরের বিকল্প নেই। আগামী কয়েক বছরের মধ্যে আমাদের প্রযুক্তি খাতে আরও কর্মসংস্থান হবে। দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা ও কার্যকর নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ রয়েছে।’
বাক্কো সভাপতি তানভীর ইব্রাহীম বলেন, এখনকার প্রযুক্তি দুনিয়া বেশ দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে। সেই পরিবর্তন মাথায় রেখে বিপিও খাতে কর্মসংস্থান গড়ার সুযোগ বাড়ছে। আমাদের দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি দেশের কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
এবারের সম্মেলনে ৩০টি দেশি ও আন্তর্জাতিক তথ্যপ্রযুক্তি বা বিপিও প্রতিষ্ঠান অংশ নিচ্ছে। অংশগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের পণ্য ও সেবা উপস্থাপন করছে সামিটে। সম্মেলনে তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক সেমিনার ও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে দেশ–বিদেশের প্রযুক্তি–বিশ্লেষক, বিপিও–বিশেষজ্ঞ, দেশি–বিদেশি প্রতিষ্ঠান নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছে। তথ্যপ্রযুক্তি সেবা ক্রেতা প্রতিষ্ঠানগুলো ও আন্তর্জাতিক খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞরা দুই দিনের আয়োজনে অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনে তরুণদের বিভিন্ন কার্যক্রম প্রদর্শন করা হচ্ছে। এক্সপেরিয়েন্স জোনে অগমেন্টেড রিয়েলিটি, ভার্চ্যুয়াল রিয়েলিটি, ড্রোন, সাবমেরিন, রোবটসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি প্রদর্শন করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এই সম্মেলনে বিশেষ একটি চাকরির মেলা আয়োজন করা হয়েছে। আগ্রহী তরুণদের কাছ থেকে জীবনবৃত্তান্ত সংগ্রহ করছে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
সম্মেলনে কৌশলগত অংশীদার হিসেবে থাকছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে থাকছে বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিস্ট ফোরাম (বিআইজেএফ) ও টেকনোলজি মিডিয়া গিল্ড বাংলাদেশ (টিএমজিবি)।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
অনলাইন জুয়ায় জড়িতদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার চিন্তা
ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেছেন, যারা অনলাইন বেটিংয়ে জড়িত, তাদের মোবাইলে ইন্টারনেটের গতি সীমিত করার বিষয়টি বিবেচনাধীন রয়েছে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনে (বিটিআরসি) ‘অনলাইন জুয়া প্রতিরোধে করণীয়’ শীর্ষক এক সভায় তিনি এ কথাগুলো বলেন।
সভায় ফয়েজ আহমদ বলেন, দেশকে অনলাইন জুয়া থেকে মুক্ত করতে হলে জুয়ার চক্রের সদস্যদের চিহ্নিত করা, ট্রাফিক মনিটরিংয়ের মাধ্যমে লিংকের গতি ধীর করা এবং যে নম্বর বা এমএফএস (মোবাইলে আর্থিক সেবা) অ্যাকাউন্ট থেকে লেনদেন হয়, সেগুলো পর্যবেক্ষণ করতে হবে। যাচাইয়ের পর এসব অ্যাকাউন্ট ব্লক করা হবে। তবে ন্যায্যতা ও কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। এ ছাড়া সিম ও এমএফএসের ইকেওয়াইসি (গ্রাহকের পরিচয় যাচাই) সমন্বয়ে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন
কমিশনের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানান, অনলাইন জুয়া বন্ধে বিটিআরসি থেকে ইতিমধ্যে বিভিন্ন অনলাইন প্ল্যাটফর্মে মেইল দেওয়া শুরু হয়েছে। গণমাধ্যমগুলো কীভাবে তাদের ওয়েব ব্রাউজার ও এডসেন্স সেটআপ করবে, সে বিষয়ে একটি নির্দেশিকা তৈরি করা হয়েছে, যা বর্তমানে তথ্য মন্ত্রণালয়ে ভেটিং প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ভেটিং শেষে তা সংশ্লিষ্ট সব গণমাধ্যমকে সরবরাহ করা হবে। পাশাপাশি ডিজিটাল বিজ্ঞাপনসংক্রান্ত গাইডলাইনও তথ্য মন্ত্রণালয়ের সাথে সমন্বয় করে প্রস্তুত করা হয়েছে। এটা অনুমোদনের পর প্রকাশ করা হবে।
সভায় তিনি আরও জানান, অনলাইন জুয়ায় জড়িত প্রায় ৫ হাজার এমএফএস হিসাব ইতিমধ্যে বন্ধ করা হয়েছে। সরকার এখন একটি কমন ডেটাবেজ (তথ্যভান্ডার) তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। যেখানে সংশ্লিষ্ট সরকারি সংস্থা, প্ল্যাটফর্ম ও অপারেটরদের সমন্বয়ে তথ্য সংরক্ষণ ও নজরদারি করা হবে।
সভায় বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেন, ১৬ ডিসেম্বরের পর সিম সংখ্যা ১০টিতে সীমিত করলে জুয়া প্রতিরোধে সহায়ক হবে। একই সঙ্গে যারা জুয়া খেলছে, তাদের শনাক্ত করাও জরুরি।
সভায় অনলাইন স্ক্যাম ও জুয়া প্রতিরোধে মাদক অধিদপ্তরের মতো একটি বিশেষ সংস্থা গঠন এবং ক্রস-ডোমেইন মনিটরিং কার্যক্রম জোরদার করার প্রস্তাব করা হয়।
সভায় মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার, আন্তর্জাতিক ইন্টারনেট গেটওয়ে সার্ভিস, আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা এবং মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।