বিশ্বব্যাপী বাকস্বাধীনতা হুমকির মুখে। ২০২৫ সালের গ্লোবাল এক্সফ্রেশন রিপোর্ট অনুসারে, গত এক দশকের তুলনায় বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি মানুষের বাকস্বাধীনতা কমে এসেছে। গেল সপ্তাহে চিন্তা উৎপাদনকারী ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান আর্টিকেল ১৯-এর বার্ষিক গ্লোবাল এক্সপ্রেশন রিপোর্টে এই পরিস্থিতি উঠে এসেছে। ৭৭টি দেশে স্কোর বা অর্জিত নাম্বার কমেছে এবং বিশ্বব্যাপী মাত্র ৩৫টি দেশ এখন ‘ওপেন’ বা ‘বাকস্বাধীনতায় উন্মুক্ত’ হিসেবে স্থান পেয়েছে, যা মোট জনসংখ্যার মাত্র ১৫ শতাংশ।
এই জরিপ করতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বরাবরের মতোই দেশগুলোকে চার ভাগে ভাগ করে। ওপেন বা উন্মুক্ত, লেস রেস্ট্রিকটেড বা সামান্য সীমাবদ্ধ, হাইলি রেস্ট্রিকটেড বা ব্যাপকভাবে সীমাবদ্ধ ও সংকটাপন্ন। বাকস্বাধীনতায় ২০২৫ সালে সর্বোচ্চ নাম্বারপ্রাপ্ত তিনটি দেশ হলো– ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড ও সুইডেন। আঞ্চলিক দিক থেকে এগুলো ইউরোপের দেশ। এ অঞ্চলের অর্ধেক জনসংখ্যা ‘উন্মুক্ত’ এবং এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি এখন ‘সংকটময়’ তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে বাস করে। প্রতিবেদন অনুসারে, গত দশকে অগ্রগতি এসেছে এমন একজনের বিপরীতে ১৯ জন ব্যক্তির অবনতি ঘটেছে। খুবই অল্পসংখ্যক দেশে বাকস্বাধীনতার অগ্রগতি এসেছে, যেগুলোতে আবার জনসংখ্যা ও অর্থনীতির দিক থেকে ক্রমশ ছোট হওয়ার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে। মানচিত্রে দেখা যায়, অগ্রগতি আসা দেশগুলো যেমন প্রতিবেশী, তেমনি পিছিয়ে পড়া দেশগুলোরও অবস্থান কাছাকাছি। এতে বাকস্বাধীনতায় আঞ্চলিক প্রভাবের ব্যাপারটিও স্পষ্ট হয়ে পড়ে।
গত দশকে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৮৩ শতাংশ মানুষ ‘সংকটময়’ বা ‘অত্যন্ত সীমাবদ্ধ’ তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে বাস করেছে। এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি পতন ঘটেছে চীনাভুক্ত হংকংয়ে। এর পরে রয়েছে আফগানিস্তান ও ফিলিপাইন। একই সময়ে পাঁচটি দেশ অগ্রগতি দেখেছে, যার মধ্যে তিনটি উল্লেখযোগ্য। শ্রীলঙ্কা, ফিজি ও মালদ্বীপ।
শ্রীলঙ্কা ২০১৯ সাল থেকে ভয়াবহ রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সংকট পার করছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে দেশটি পারিবারিক রাজনৈতিক বলয় থেকে বেরিয়ে আসে। আর ২০২৫ সালে ১৪ পয়েন্ট পেয়ে ‘উন্মুক্ত’ ক্যাটেগরিতে জায়গা করে নেওয়াটা নিঃসন্দেহে ভাবনার উদ্রেক করে। অন্যদিকে বাকস্বাধীনতায় আগে ‘উন্মুক্ত’ ক্যাটেগরিতে থাকা ইংল্যান্ড এখন ‘সীমিত সীমাবদ্ধ’ দেশগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এখানে দুটি দেশের পরিস্থিতি আমাদের জন্য শিক্ষণীয়, তবে রাজনীতি পারিবারিক বলয় থেকে বেরিয়ে আসা শ্রীলঙ্কা গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী বাংলাদেশের জন্য অধ্যয়নের বিষয় হতে পারে।
বাকস্বাধীনতায় বাংলাদেশের অবস্থান সংকটময়। আমরা দীর্ঘদিন ধরে পরিস্থিতি দেখে আসছি। কয়েক দশক ধরে ক্ষমতাসীন সরকার বিভিন্ন কালাকানুনের মধ্য দিয়ে বাকস্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণ করেছে। বাস্তবতা হলো, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ক্ষমতার বলয় অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলো এমনভাবে জিম্মি করে রেখেছে, যেখানে মানুষ ও প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাছে অসহায়। সংবাদমাধ্যমসহ সব ধরনের মিডিয়া, নাগরিক সমাজ, চিন্তা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের স্বতন্ত্র ও স্বাধীন কোনো অর্থনৈতিক বন্দোবস্ত নেই, বরং ক্ষমতার বলয়গুলো এসব নিয়ন্ত্রণ করছে। সত্যি কথা হলো, আর্টিকেল ১৯-এর মতো বৈশ্বিক চিন্তা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষেও এখন নিরপেক্ষ কোনো প্রতিবেদন তুলে ধরা প্রায় অসম্ভব। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রগুলো অসংখ্য অনানুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। ফলে এখানে প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও দায়বদ্ধতার বড় ঘাটতি রয়েছে। এই জটিলতার ধাঁধা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে বাকস্বাধীনতার কোনো টেকসই নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব নয়।
ইফতেখারুল ইসলাম, সহসম্পাদক, সমকাল
iftekarulbd@gmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: উন ম ক ত
এছাড়াও পড়ুন:
বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের সভাপতি প্রার্থী জাকির হোসেন
দেশের ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের ২০২৫-২৭ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ। তাদের প্যানেল লিডার বা সভাপতি পদে প্রার্থী হবেন জাকির হোসেন। তিনি বাংলাদেশ সিএনজি যন্ত্রপাতি আমদানিকারক সমিতির সভাপতি।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) গতকাল বৃহস্পতিবার আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের উপদেষ্টা গিয়াসউদ্দিন চৌধুরী এই ঘোষণা দেন। তিনি জানান, শিগগিরই পুরো প্যানেলের নাম ঘোষণা করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদ পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক গিয়াস উদ্দীন খোকন, বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের সদস্যসচিব মো. জাকির হোসেন, সদস্য বেলায়েত হোসেন, আনিসুর রহমান প্রমুখ।
আগামী নির্বাচনে বৈষম্যবিরোধী সংস্কার পরিষদের সভাপতি প্রার্থী জাকির হোসেন বলেন, বিগত স্বৈরাচার সরকারের সময় একটি বিশেষ স্থান থেকে ওহি নাজিলের মাধ্যমে সভাপতি নির্বাচিত হতেন। এ সময় সাধারণ ভোটারের তেমন মূল্য ছিল না। বিরোধী মতের কেউ নির্বাচন করতে চাইলে তাঁকে মামলা দিয়ে হয়রানি করা হতো। ফেডারেশনে ঢুকতে দেওয়া হতো না। এখন সংস্কার হওয়াতে এই চর্চা থাকবে না।
জাকির হোসেন আরও বলেন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি খাতের ব্যবসায়ীরা দীর্ঘদিন অবহেলিত ছিলেন। তাঁদের দিকে নজর দেওয়ার সুযোগ এসেছে। তা ছাড়া ব্যবসায়ীদের ভেতর নারী উদ্যোক্তা কম। মোট ব্যবসায়ীদের মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ। তাঁদের সংখ্যা না বাড়ালে ব্যবসা টেকসই হবে না।
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এফবিসিসিআইয়ের পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগের দাবিতে তৎপর হন সদস্যদের একাংশ। তারই পরিপ্রেক্ষিতে সভাপতি পদ থেকে মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেন। পরে ১১ সেপ্টেম্বর এফবিসিসিআইয়ের পর্ষদ বাতিল করে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য মো. হাফিজুর রহমানকে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।
এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন বোর্ড গত বুধবার ২০২৫-২৭ মেয়াদে ফেডারেশনের পরিচালনা পর্ষদ নির্বাচনের তফসিল প্রকাশ করেছে। তফসিল অনুযায়ী, ৪৬ জনের পর্ষদের মধ্যে সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও সহসভাপতির বাইরে ৪২ জন পরিচালক থাকবেন। তাঁদের মধ্যে পণ্যভিত্তিক বাণিজ্য সংগঠন বা অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার গ্রুপ থেকে ১৫ জন করে ৩০ জন সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হবেন। বাকি ১২ জন মনোনীত পরিচালকের মধ্যে অ্যাসোসিয়েশন ও চেম্বার থেকে ৫ জন করে ১০ জন এবং নারী চেম্বার ও অ্যাসোসিয়েশন থেকে ১ জন করে ২ জন আসবেন।
নতুন বাণিজ্য সংগঠন বিধিমালা অনুযায়ী এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনে সভাপতি, সহসভাপতি ও পরিচালক পদে এবার সরাসরি ভোট হবে। আগামী ৭ সেপ্টেম্বর ফেডারেশনের সাধারণ পরিষদের সদস্যরা ভোট দিয়ে সভাপতি, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি, ২ জন সহসভাপতি এবং ৩০ জন পরিচালক নির্বাচিত করবেন।