জিমেইলের ভুয়া আনসাবস্ক্রাইব বাটনের মাধ্যমে সাইবার হামলা, সতর্ক থাকার পরামর্শ
Published: 22nd, June 2025 GMT
ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক কাজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সেবা নেওয়ার জন্য নিজের ই-মেইল ঠিকানা দিয়ে নিবন্ধন করেন অনেকেই। ফলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পণ্য ও সেবার প্রচারণামূলক বার্তা ইনবক্সে জমা হওয়ায় দরকারের সময় গুরুত্বপূর্ণ ই-মেইল খুঁজে পেতে বেশ ঝামেলা হয়। এ সমস্যা সমাধানে দ্রুত অবাঞ্ছিত ই-মেইলের নিবন্ধন বাতিলের জন্য জিমেইল অ্যাপে রয়েছে ‘আনসাবস্ক্রাইব’ বাটন। কিন্তু এখন সে সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে নতুন ধরনের সাইবার হামলা চালাচ্ছে হ্যাকাররা।
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের তথ্যমতে, জিমেইলের আনসাবস্ক্রাইব বাটনের আড়ালে লুকিয়ে রাখা হচ্ছে ক্ষতিকর সফটওয়্যার। ফলে ব্যবহারকারীরা বাটনটিতে ক্লিক করলেই একটি ভুয়া ওয়েবসাইটে চালু হয়। এরপর ওয়েবসাইটে থাকা কোনো অপশনে ক্লিক করলে স্মার্টফোন বা কম্পিউটারে গোপনে প্রবেশ করে ভাইরাস বা ম্যালওয়্যার। ক্ষতিকর ভাইরাস বা ম্যালওয়্যারটি যন্ত্রে প্রবেশ করেই ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে থাকে, এমনকি দূর থেকে যন্ত্র নিয়ন্ত্রণও করতে পারে হ্যাকাররা।
জিমেইলে প্রচারণামূলক ই-মেইলগুলোতে সাধারণত প্রেরকের নামের পাশে থাকা আনসাবস্ক্রাইব বাটনে ক্লিক করলে একটি নতুন পেজ বা পপ-আপ বক্স দেখা যায়। তাই ব্যবহারকারীদের বোকা বানাতে এই পপ-আপ বক্সের আদলেই ভুয়া ই-মেইল পাঠিয়ে থাকে হ্যাকাররা। ফলে বিভ্রান্ত হয়ে আনসাবস্ক্রাইব বাটনে ক্লিক করলেই একটি ক্ষতিকর ওয়েবসাইট চালু হয়। এরপর ব্যবহারকারীদের অজান্তেই তাঁদের স্মার্টফোন ও কম্পিউটারে ভাইরাস ও ম্যালওয়্যার প্রবেশ করে তথ্য চুরি করতে থাকে।
নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এ ধরনের প্রতারণা থেকে নিরাপদ থাকতে হলে অপরিচিত প্রেরকের ই-মেইলে থাকা আনসাবস্ক্রাইব বাটনে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে। শুধু তাই নয়, অপরিচিত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ই-মেইলের শিরোনামে যদি ‘অতি জরুরি’ বা কোনো সতর্কবার্তা লেখা থাকে, তবে সেটি না খোলাই ভালো। এ ছাড়া যদি দেখা যায় যে আনসাবস্ক্রাইব বাটনটি ই–মেইলের শুরুতে প্রেরকের নামের পাশে নেই বা একেবারে নিচের দিকে রয়েছে, তবে সেটি ভুয়া হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
সূত্র: নিউজ ১৮
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
দমার চরের বিরল পানিকাটা
ভোলার দমার চর ও সেখানকার বিচিত্র চঞ্চুর পাখিটি দেখার ইচ্ছা বহুদিনের। কিন্তু সঠিক পরিকল্পনা ও সঙ্গীর অভাবে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। হঠাৎ ৬ জানুয়ারি ২০১৬-এ হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ভ্রমণের একটি সুযোগ এল। কিন্তু পাখি দেখার ভ্রমণ না হওয়ায় ক্যামেরা নিলাম ঠিকই, তবে পাখির ছবি তোলার উপযোগী কোনো লেন্স নিলাম না সঙ্গে। সন্ধ্যায় সদরঘাট থেকে এমভি ফারহান-৪ লঞ্চে হাতিয়ার উদ্দেশে রওনা হয়ে ৭ জানুয়ারি নিঝুম দ্বীপ পৌঁছালাম।
রাতের খাবার শেষে টিম লিডার সাইফুর রহমান সজীব ঘোষণা দিলেন, ‘আপনার জন্য সারপ্রাইজ আছে।’ আমি বললাম, ‘কী সারপ্রাইজ?’ ‘নৌকা ঠিক করেছি, কাল আমরা দমার চর যাব।’ শুনে প্রথমে খুশি হলেও পরে মনটা খারাপ হয়ে গেল। হায় রে! সেই তো দমার চর যাচ্ছি, কিন্তু লেন্স কোথায়? কীভাবে ছবি তুলব? তবে মন খারাপের বিষয়টা কাউকে বুঝতে দিলাম না।
পরদিন সকাল সকাল নৌকা ছাড়ার কথা থাকলেও পৌনে ১০টার আগে রওনা দিতে পারলাম না। যাত্রার শুরুতেই একঝাঁক কালো লেজ জৌরালি ও একটি লাল পা পিউ দেখলাম। এরপর পর্যায়ক্রমে লালশির, যাঠুয়া বক, বড় গুলিন্দা, ছোট গোতরা, খোয়াজ, বদরকৈতর, ছোট টিটি জিরিয়া দেখতে দেখতে দুঘণ্টা পর দমার চরে পৌঁছালাম। কিন্তু কাদাপানির কারণে চরে নামার কোনো চেষ্টাই করলাম না। চরের সামনে এসে প্রথমেই চোখে পড়ল ছোট ও বড় গুলিন্দার ঝাঁক। এরপর এক জোড়া খোয়াজ, একঝাঁক কাস্তেচরা ও শেষে সৈকত পাখির এক বিশাল মিশ্র ঝাঁক। কিন্তু দমার চরের সেই বিচিত্র চঞ্চুর পাখিদের তো দেখছি না?
এমন সময় কোত্থেকে হঠাৎ শ তিনেক পাখির বিশাল একটি ঝাঁক উড়ে এল। ঝাঁকের পাখিদের ওড়া দেখেই বুঝলাম ওরা কারা। কিন্তু ঢাল-তলোয়ার ছাড়া কি আর যুদ্ধ করা যায়? কাজেই যা হওয়ার তা–ই হলো। সাক্ষী ছবি ছাড়া আর কিছুই তুলতে পারলাম না। এরপর বেশ কয়েকবার রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে ওদের দেখা গেছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জে তো ওরা প্রজননও করেছিল। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে সে সময় যেতে পারিনি।
ঢাল-তলোয়ার ছাড়া নিধিরাম সরদার হয়ে যে পাখির ছবি তুললাম সে আর কেউ নয়, এ দেশের বিরল ও মহাবিপন্ন আবাসিক পাখি পানিকাটা। অবশ্য বেশসংখ্যক পাখি বরিশাল, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের উপকূলে শীতে পরিযায়ী হয়ে আসে। থেলাজাল, জলখোর, পানিচরা বা গাঙচষা নামেও পরিচিত। ইংরেজি নাম ইন্ডিয়ান স্কিমার। ল্যারিডি গোত্রের পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Rynchops albicollis। বিশ্বব্যাপী শঙ্কাগ্রস্ত পাখিটিকে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া ও আফ্রিকার কিছু দেশে দেখা যায়।
প্রাপ্তবয়স্ক পানিকাটা লম্বায় ৩৮ থেকে ৪৩ সেন্টিমিটার। গড় ওজন ৩৫০ গ্রাম। প্রজননকালীন পাখির মাথা, ঘাড়ের পেছনটা, কাঁধ, ডানা ও লেজ কালো এবং পিঠ কালচে-বাদামি। কপাল, গলাবন্ধ, ডানার মধ্য পালকের আগা, দেহতল ও ডানার পালকতল সাদা। চোখের রং বাদামি। বৈচিত্র্যপূর্ণ কমলা-লাল চঞ্চুর গোড়া আলতা লাল ও আগা হলদে। নিচের চঞ্চু ওপরেরটি থেকে অনেক লম্বা। খাটো পা ও পায়ের পাতা সিঁদুরে লাল। প্রজননহীন পাখির পিঠ অনুজ্জ্বল ও তুলনামূলকভাবে বাদামি। স্ত্রী-পুরুষ দেখতে একই রকম হলেও স্ত্রী খানিকটা ছোট।
আ ন ম আমিনুর রহমান, পাখি ও বন্য প্রাণী প্রজনন ও চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ, গাজীপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়