প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের সঙ্গে জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) এবং সংসদের উচ্চকক্ষ গঠিত হলে তার কাজ কী হবে, এসব বিষয় ‘একই প্যাকেজে’ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পক্ষে বিএনপি।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে আজ রোববার সন্ধ্যায় এক ব্রিফিংয়ে দলের এ অবস্থানের কথা জানান বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘অন্ততপক্ষে এনসিসি ও উচ্চকক্ষের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের সঙ্গে একই প্যাকেজে আলোচনা করে একটা সিদ্ধান্তে এলে সুবিধা হবে।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ঐকমত্য কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী দুই দিন (রাজনৈতিক দলের নেতারা) দলের মধ্যে আলোচনা করে যার যার দলীয় অবস্থান কমিশনের পরবর্তী সভায় সিদ্ধান্ত আকারে জানাবেন। তারপর আলোচনা করে প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

এর আগে আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টায় রাজধানীর হেয়ার রোডে ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় পর্বের বৈঠকের পঞ্চম দিনের আলোচনা শুরু হয়। বিকেল পাঁচটার দিকে এ দিনের আলোচনা শেষে রাজনৈতিক দলগুলো আলাদাভাবে সংবাদ ব্রিফিং করে।

একজন ব্যক্তি কয় মেয়াদে বা কত বছর প্রধানমন্ত্রী হতে পারবেন, এ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর বৈঠকে বিভিন্ন ব্যাখ্যা এসেছে বলে সংবাদ ব্রিফিংয়ে জানান সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আমরা পরপর দুই মেয়াদের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না বলে প্রস্তাব দিয়েছি; কিন্তু এখানে অনেক ব্যাখ্যা আছে। পরপর একই ব্যক্তি দুবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী হবেন না, সেটা ঠিক। পরপর দুই মেয়াদের পরে গ্যাপ দিয়ে যদি একই দল বা জোট ম্যান্ডেট পায়, তখন তারা একই ব্যক্তিকে আবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত করতে পারেন। এটাও যৌক্তিক ব্যাখ্যা।’

ঐকমত্য কমিশনের আলোচনায় নিজের করা প্রস্তাবের বিষয়টি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমি প্রস্তাব করেছিলাম, আমরা কয় মেয়াদ এবং কয় বার—এই বিতর্কে না থেকে সর্বোচ্চ এক ব্যক্তি তাঁর জীবনে কত বছরের জন্য প্রধানমন্ত্রিত্বে বহাল থাকতে পারবেন। তিন মেয়াদে হোক, চার মেয়াদে হোক, সর্বোচ্চ বছর উল্লেখ করতে পারলে, (যেমন:) একজন লোক তাঁর জীবনে এত বছরের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। আমি নির্দিষ্ট বছর উল্লেখ করিনি, তার কারণ সেটা সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা এককভাবে আমার নেই। যদি হাউস একটা মেয়াদ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়, সেটা নিয়ে আমাকে দলীয় ফোরামে আলোচনা করতে হবে।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘উচ্চকক্ষে প্রোপরশনেট নির্বাচনের কথা বলা আছে। তখন উচ্চকক্ষে একটা সাধারণ বিল পাস করতে গেলে ৫০ শতাংশ সমর্থন লাগবে। সংবিধান সংশোধন করতে হলে দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন লাগবে। তখন কেউ কোনো দিন দুই-তৃতীয়াংশ সমর্থন পাবে না। উচ্চকক্ষ ও নিম্নকক্ষের সদস্যদের গোপন ব্যালটের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হতে পারে। রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা আইনে নির্ধারণ করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রেও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ এবং স্থায়িত্বের বিষয়টি জড়িত।’

সংবিধানের মূলনীতি বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘হাউসে যাঁরা আলোচনা করেছেন, তাঁদের মধ্যে কেউ পঞ্চদশ সংশোধনীতে যেভাবে আছে, সেটার পক্ষে। আমরা স্পষ্টতই বলেছি, এই সংশোধনী হাইকোর্টে যেভাবে চ্যালেঞ্জড হয়েছে, আমরা এর পুরো অংশ বিলুপ্তি চেয়েছি। হাইকোর্টের কিছু কিছু সিদ্ধান্ত দিয়েছেন এবং পরবর্তী নির্বাচিত সংসদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। কাজেই সেটা সংসদে সিদ্ধান্ত হবে, সেটাই স্বাভাবিক।’

বিএনপি পঞ্চম সংশোধনীতে বহাল থাকতে চায় উল্লেখ করে দলের স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘সেখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আছে, আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস আছে। সেখানে ধর্মনিরপেক্ষতা নেই। তার সঙ্গে আমরা ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হলে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতির মধ্যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার এবং গণতন্ত্রকে যোগ করব।’ এখনো এসব বিষয় চূড়ান্ত হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবগুলো বললাম। যদি জাতীয় ঐকমত্যে না আসা যায়, ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে এসব বিষয়ে ঐকমত্য হয়েছে—এমনটি বলা যাচ্ছে না।’

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘জাতি আমাদের কাছে অনেক বেশি আশা করে। আমরা রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যয় করে সারা দিন আলোচনা করে রাজনীতিবিদেরা একটা জায়গায় না আসতে পারলে সেটা হতাশাব্যঞ্জক হবে। আমি এখনো হতাশা ব্যক্ত করতে চাই না। আমি আহ্বান করব, আমরা যেন এসব বিষয়ে ন্যূনতম ঐকমত্যে আসতে পারি। তাহলে রাজনীতিবিদদের ওপর মানুষের আস্থা বাড়বে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স ল হউদ দ ন আহমদ ব প রস ত ব প রব ন সদস য ব এনপ

এছাড়াও পড়ুন:

এত আত্মবিশ্বাসী যে সরকারি দল হবেন, নির্বাচনে আসেন না কেন: সালাহউদ্দিন আহমদ

সরকারি দল হওয়ার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হলে নির্বাচনে আসতে এত বাহানা কেন—এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘আপনারা যখন এত আত্মবিশ্বাসী যে সরকারি দল হবেন, তাহলে নির্বাচনে আসেন না কেন? নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে কারা সরকারে যাবে আর কারা বিরোধী দলে যাবে সেটা ঠিক করবে। আজকে এক বাহানা, কালকে আরেক বাহানা- এসব অজুহাত দেখিয়ে কেন আপনারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করতে চান?’

আজ শনিবার রাজধানীর কাকরাইল ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স (আইডিইবি) মিলনায়তনে সামাজিক সংগঠন অর্পণ আলোক সংঘ আয়োজিত ‘তারুণ্যের রাষ্ট্রচিন্তার তৃতীয় সংলাপ’-এ এসব কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা করেন বীথিকা বিনতে হোসাইন।

সালাহউদ্দিন বলেন, 'আজকে শিরোনাম দেখলাম কোথাও— জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠন করবে, বিএনপি যাবে বিরোধী দলে। তো ভাইসাব, বিএনপি বিরোধী দলে যাবে নাকি জনগণ ঠিক করবে। যারা জনগণের ভোটে বিশ্বাস করে না, তারাই এসব কথা বলে।’

গতকাল শুক্রবার বিকেলে চট্টগ্রাম নগরে আয়োজিত এক সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের পরিচালক মুহাম্মাদ শাহজাহান বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী সরকার গঠনের মতো আসনে বিজয়ী হবে। জামায়াতে ইসলামী সরকারি দল হবে। বিএনপিকে বিরোধী দলে যেতে হবে।

এর প্রেক্ষিতে সালাহউদ্দিন আহমদ এ কথা বলেন। বিরোধী দল প্রসঙ্গে বিএনপির এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন আরও বলেন,

সরকার সব সময় চায় বিরোধী দল যেন মাঠে না থাকে। অথচ গণতন্ত্রে সরকার ও বিরোধী দল দুটোই জনগণের। বিরোধী দল মানে শত্রু নয়, রাষ্ট্রের অংশ।

একই সময়ে কেউ সরকারি দল ও বিরোধী দল হতে পারে না

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, একই সময়ে কেউ সরকারি দল ও বিরোধী দল হতে পারে না। দরজা হয় খোলা থাকে, নয় বন্ধ থাকে— এক সাথে দুটো হয় না। যারা এখনো ছাত্র প্রতিনিধি হয়ে সরকারে বসে আছেন, প্রতিদিনই তাদের দায়ভার বহন করতে হচ্ছে। জনগণের সঙ্গে দ্বিমুখী আচরণ করে কোনো দল বা সংগঠন টিকে থাকতে পারে না।

জনগণ ভোটের মাধ্যমে পিআর বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবে

সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি দাবির প্রসঙ্গে বিএনপি'র এই স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, কেউ কেউ বলছেন, ‘পিআর চাই’। আমরা বলেছি জনগণ ভোটের মাধ্যমে তা দেবে। দাবি-দাওয়াগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করে নির্বাচনে আসুন। জনগণ সমর্থন দিলে তখনই তা বাস্তবায়ন হবে। এটা-ই গণতন্ত্রের রীতি। একতরফা ঘোষণা দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করা যায় না।

জুলাই সনদ নিয়ে কোর্টের মতামত উত্তম

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের মতামত নেওয়াই উত্তম। কারণ সংবিধান অনুযায়ী বিচার বিভাগের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। তিনি বলেন, বিচার বিভাগের রায় মানা না হলে রাষ্ট্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। আদালতের রায়ের বাইরে গিয়ে কোনো রাজনৈতিক সমাধান টেকসই হয় না।

রাজনীতি মিডিয়া, ব্যবসায়ী, মাফিয়ার হাতে বন্দী, বললেন হাসনাত

সংলাপে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতি এখন মিডিয়া, ব্যবসায়ী, মাফিয়ার হাতে বন্দী হয়ে গেছে। জনগণের প্রকৃত প্রতিনিধিত্ব হারিয়ে গেছে। রাজনৈতিক দলগুলো জনগণের কাছে জবাবদিহি না করে কিছু গোষ্ঠীর কাছে জবাবদিহি করছে। এভাবে চলতে থাকলে গণতন্ত্র কখনোই শক্তিশালী হবে না।

বর্তমান প্রজন্মের ভুল স্বীকার করার সাহস আছে বলে উল্লেখ করে হাসনাত বলেন, 'আমরা তরুণ প্রজন্ম ভিন্ন। আমরা স্বীকার করি আমাদেরও ভুল থাকতে পারে, কিন্তু ভুল স্বীকার করার সাহস আমাদের আছে। আগের প্রজন্মের অনেক রাজনীতিবিদ ভুল করেও সেটা অস্বীকার করে গেছেন, যার ফল ভুগছে পুরো জাতি। তাই নতুন প্রজন্মই পারে রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করতে।'

আরও পড়ুনজামায়াতে ইসলামী সরকারি দল হবে, বিএনপিকে বিরোধী দলে যেতে হবে২১ ঘণ্টা আগে

হাসনাত আরও বলেন, তরুণ প্রজন্মকে আজ রাজনীতির বাইরে ঠেলে দেওয়া হচ্ছে। অথচ তারাই দেশের ভবিষ্যৎ। তরুণেরা যদি রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত না হয়, তাহলে এই দেশকে এগিয়ে নেওয়া যাবে না। এনসিপি সেই পথ তৈরি করতে চায়, যেখানে তরুণেরা নিজের মতামত স্বাধীনভাবে প্রকাশ করতে পারবে এবং রাষ্ট্র পরিচালনায় সরাসরি ভূমিকা রাখতে পারবে।

সংলাপে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবিদুল ইসলাম খান, কবি জসীম উদ্দীন হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর বারী হামিম, বিজয় একাত্তর হল ছাত্রদলের আহ্বায়ক তানভীর আল হাদী মায়েদ প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কয়েকটি রাজনৈতিক দলের জেদ ও ভুলের কারণে নির্বাচন হুমকির মুখে পড়তে পারে: এবি পার্টি
  • জমিয়ত নেতার হত্যার রহস্য উদঘাটন না হলে হরতালের হুঁশিয়ারি
  • ঢাবিতে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও প্রযুক্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত
  • জুলাই সনদ বাস্তবায়নের সম্ভাব্য উপায় নিয়ে আরও পর্যালোচনা হচ্ছে
  • দেশে আর চেতনার ব্যবসা চলবে না: সালাহউদ্দিন
  • এত আত্মবিশ্বাসী যে সরকারি দল হবেন, নির্বাচনে আসেন না কেন: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • ‘আলোচনা চলমান অবস্থায় আন্দোলন স্ববিরোধী’
  • ঐকমত্যের ভিত্তিতে সুষ্ঠু নির্বাচনের আশা
  • আমরা আশাবাদী একটা ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব: বদিউল আলম মজুমদার
  • ঐকমত্যের জন্য আর কতকাল অপেক্ষা