লন্ডন বৈঠক: কতটা বরফ গলল রাজনীতির
Published: 23rd, June 2025 GMT
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস কি একজন জটিল মনের মানুষ? কী জানি? সেই যে বাংলায় প্রবাদ আছে না, মনের কথা গোবিন্দ জানে। একজন গুণমুগ্ধ ছাত্র হিসেবে আমি তাঁকে যতটুকু চিনি, তিনি তা নন। তিনি কি জটিলতা-কুটিলতা ধরতে পারেন? তার মোকাবিলা করতে পারেন? আমার মনে হয় না। বরং এই ব্যাপারে তাঁকে জিরো মার্ক দেওয়া যেতে পারে।
৫ আগস্টের পর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য দেশে ফিরে বিমানবন্দরে যে রকম করে তিনি বললেন, ‘আমার কথা শুনতে হবে (হাসতে হাসতে বললেন, হুমকি দিয়ে নয়), না হলে আমি চলে যাব’, এর মধ্যে আর যা-ই থাক, ডিপ্লোমেসি নেই। অথচ গ্রামীণ ব্যাংকের কর্মকর্তা হিসেবে তিনি যত দেশ ঘুরেছেন, যত বড় বড় কর্মকর্তা, নেতার সঙ্গে কথা বলেছেন, তাঁর কথার মধ্যে কৌশল থাকার কথা। আমি আগেও বিভিন্ন সময় বলেছি, ডক্টর ইউনূস খুব মিষ্টি করে কথা বলতে জানেন। মন্ত্রমুগ্ধের মতো শুনতে হয়। অথচ রাজনীতির ব্যাপারে তিনি একেবারেই কথা বলতে চান না; কিন্তু কথা তো তাঁকে বলতে হলো।
হ্যাঁ পাঠক, আমি লন্ডন বৈঠকের কথা বলছি। এই সংলাপের প্রাক্কালে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছিলেন, অধ্যাপক ইউনূসই লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলতে চেয়েছেন। এখন সবাই বিশ্বাস করেন, মির্জা ফখরুল ঠিক কথা বলেছিলেন। অধ্যাপক ইউনূসের আগ্রহেই এই সংলাপ হয়েছিল এবং সেই সংলাপে তিনি হেরে গেছেন।
মাত্র সাত দিন আগে যে প্রধান উপদেষ্টা বললেন, একটি দল বাদে এপ্রিল মাসে নির্বাচনের ব্যাপারে সবাই একমত (অর্থাৎ তিনি সরাসরি বিএনপিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দায়ী করেছিলেন), সেই তিনিই আবার কেবল তাদের সঙ্গে বসে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করলেন! ছেলেমানুষি মনে হয় না?কথাটা একটু ব্যাখ্যা করে বলতে হয়। এখন মনে যা আসে, তা-ই বলা সমীচীন নয়। এখন এমন একটা সময়, যখন কোনো নেতা বা দল জিতল কি না, সেটা বড় কথা নয়; বড় কথা হলো, গণতন্ত্র জিতল কি না; দেশ জিতল কি না।
আমরা সত্যি সত্যি বাংলাদেশের ইতিহাসের, আরও স্পষ্ট করে বললে, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের একটি বাঁকে অবস্থান করছি। জামায়াত, এনসিপিসহ দু-চারটি দলের একটি অভিমান আছে, অন্যান্য রাজনৈতিক দলকে উপেক্ষা করে নির্বাচনের সময়-সংক্রান্ত এত বড় একটি সিদ্ধান্ত সরকার এককভাবে একটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নিয়েছে এবং প্রটোকল ভেঙে তাদের সঙ্গে যৌথ বিবৃতি দিয়েছে। জামায়াত এর প্রতিবাদে এক দিন ঐকমত্য কমিশনের সভাও বর্জন করেছে।
আমি জামায়াতসহ এই কয়েকটি রাজনৈতিক দলের এ-সংক্রান্ত সেন্টিমেন্টের সঙ্গে একমত। এই সিদ্ধান্ত সবাইকে স্পর্শ করেও করা যেত বলে আমার মনে হয়। এটা সরকারের বোঝার ভুল অথবা এ ধরনের একটি রাজনৈতিক কৌশল সম্পর্কে অজ্ঞতার কারণে হয়েছে।
মাত্র সাত দিন আগে যে প্রধান উপদেষ্টা বললেন, একটি দল বাদে এপ্রিল মাসে নির্বাচনের ব্যাপারে সবাই একমত (অর্থাৎ তিনি সরাসরি বিএনপিকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দায়ী করেছিলেন), সেই তিনিই আবার কেবল তাদের সঙ্গে বসে ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করলেন! ছেলেমানুষি মনে হয় না?
আরও পড়ুনঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে মান–অভিমান ও সহমত–দ্বিমত২১ জুন ২০২৫আমাদের দল নাগরিক ঐক্য অথবা আমাদেরই জোট গণতন্ত্র মঞ্চকেও সরকার কোনো বিবেচনাতেই নেয়নি; কিন্তু আমরা কোনো সেন্টিমেন্ট দেখাইনি। আমাদের মনে হয়েছে, এই সরকার এসব সেন্টিমেন্টের মূল্য দিতে জানে না। নির্বাচনের সময় নিয়ে সরকার এবং বিএনপির মধ্যে যে সম্পর্কের অধঃপতন হচ্ছিল, তা বিপজ্জনক হতে পারত। লন্ডন সংলাপ সে বিপদটা কাটিয়ে দিয়েছে। ঠান্ডা লড়াইয়ের যে বরফ জমতে শুরু করেছিল, তা গলে গেছে। নির্বাচন হবে নাকি হবে না বলে জনমনে যে সন্দেহ দেখা দিয়েছিল, তা দূর হয়েছে। এটাকেই আমি একটা বাঁক মনে করছি।
এখন রাজনৈতিক দলগুলোর আরও বেশি ধৈর্য ধরতে হবে, সহনশীল হতে হবে এবং কথাবার্তায় নম্রতা, যুক্তি, পরিমিতি এবং পরস্পরের সঙ্গে সৌহার্দ্য প্রদর্শন করতে হবে। তর্ক বা ঝগড়া করার মতো অনেক পয়েন্টই তৈরি করা যাবে, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হবে না; বরং ক্ষতি হবে। ফ্যাসিবাদকে হটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি গ্রহণযোগ্য গুণগত মানসম্পন্ন নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। সেই নির্বাচনের পর এই সরকারের আর কোনো অস্তিত্ব থাকবে না।
এ কারণে এই সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করা মানে ছায়ার বিরুদ্ধে লড়াই করা। সুখের বিষয়, ছোটখাটো মতান্তর বাদ দিলে রাজনৈতিক দলগুলো সেটা করছে না। গত ৮ আগস্ট এই অন্তর্বর্তী সরকারকে তারা যে সমর্থন দিয়েছিল, সেই সমর্থন এখনো অব্যাহত রেখেছে।
দুই.লন্ডন বৈঠকের পর বরফ গলতে শুরু করেছে। কিন্তু সম্পূর্ণ কি গলেছে? তা বলার অবকাশ অবশ্য তৈরি হয়নি। এ রকম হয়ও না। রাজনীতি সতত গতিশীল এবং দ্বন্দ্বমুখর। এখানে মতপার্থক্য, ধাক্কাধাক্কি হবেই। আর সামনে যদি থাকে ক্ষমতা বা নির্বাচন, তাহলে তো কথাই নেই। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ব্যাপারটাই দেখেন। এখানে সরকার ও বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ মুখোমুখি দাঁড়িয়ে গেছে। যা চলছে, তাকে কোনোভাবেই স্বাস্থ্যসম্মত বলা যেতে পারে না। একধরনের গা-জোরি এবং জেদাজেদি চলছে। অথচ লন্ডন বৈঠকের পর একটা সমঝোতা আশা করা গিয়েছিল।
লন্ডন বৈঠকে, বিশেষ করে সরকারের পক্ষ থেকে একটা কথা বলা হয়েছিল। নির্বাচনের সময়ের ব্যাপারে ঘোষণা দেওয়ার সময় তারা আশা করেছিল, ইতিমধ্যে তিনটি বিষয়ে দৃশ্যমান অগ্রগতি সাধিত হবে। প্রশ্ন আসে, এখানে সরকার আশা করবে কার থেকে? দায়িত্বটা তো প্রধানত সরকারের। সরকার অবশ্য সংস্কার এবং জুলাই সনদ তৈরির ব্যাপারে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে সর্বাত্মক সহযোগিতা প্রত্যাশা করতে পারে।
১৭ জুন থেকে ঐকমত্য কমিশন দ্বিতীয় দফায় সংস্কার নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে। ৭০ ধারা এবং সংসদের কয়েকটি স্ট্যান্ডিং কমিটিতে বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সভাপতি নির্বাচনের ব্যাপারে দলগুলো সম্মত হয়েছে। এটা একটা ভালো অগ্রগতি।
রাষ্ট্রপতি, উচ্চকক্ষ নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ নিয়ে মতভিন্নতার অবসান হয়নি। বলা হয়েছে, আলোচনা চলবে। এর আগের দিনের আলোচনায় সাংবিধানিক কাউন্সিল নিয়ে দলগুলো একমত হতে পারেনি।
এ ছাড়া নারী সদস্য ৫০ থেকে ১০০ জন করার ব্যাপারে একমত হলেও এই ১০০ জন কীভাবে নির্বাচিত হবেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়নি। বিশ্লেষণ করে দেখলে, এর কারণে সংসদে উচ্চকক্ষ গঠনের প্রশ্নটি ঝুলে আছে। আর তার অর্থ, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট গঠনের প্রশ্নটিরও কোনো নিষ্পত্তি হয়নি।
সরকারের কাছে এই মুহূর্তে খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্ভবত জুলাই সনদ। গত বছরের জুলাই মাসে যে মহান ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল, তার সনদ ঐকমত্যের ভিত্তিতে রচিত হবে এই বছরের জুলাইয়ে। খোদ অধ্যাপক ইউনূস বিদেশিদের কাছে বলেছেন, এই জুলাইয়ে সনদ হবেই।
পত্রিকায় দেখেছি, জুলাই অভ্যুত্থানের যাঁরা নায়ক ছিলেন, তাঁরা সবাই নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত। জুলাই অভ্যুত্থানে পরাজিত এবং দেশ থেকে বিতাড়িত শক্তি তাদের হারানো সাম্রাজ্য ফিরিয়ে আনার জন্য দেশের বাইরে গিয়ে অপতৎপরতায় লিপ্ত। একটা থ্রেট তো আছেই। ঐকমত্যের ভিত্তিতে জুলাই সনদ হবে তো?
ইতিমধ্যে জুলাই আন্দোলনে যাঁরা যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মতপার্থক্যের ব্যাপারটা প্রকাশিত এবং সেটাই স্বাভাবিক। রাজনৈতিক দলগুলো আলাদা, এ জন্যই তাদের আলাদা মত আছে। এক ঐতিহাসিক মুহূর্তে সমগ্র জাতির প্রয়োজনে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে তারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। সেই থেকে এক বছর পার হয়ে গেছে। তাদের নিজেদের যে মতপার্থক্য, সেগুলো নিয়েই তো রাজনীতি শুরু হবে। তার মধ্যে সামনে জাতীয় নির্বাচন, যেটা প্রধানত প্রতিযোগিতার বিষয়, প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়, এক পক্ষ আরেক পক্ষকে হারিয়ে জেতার বিষয়। এ জন্যই ভয় যায় না, শঙ্কা কাটে না।
ভোট ঠিকঠাকমতো হবে তো?
ভবিষ্যদ্বাণী করার মতো করে তো কিছু বলা যায় না। রাজনীতিতে সেটা উচিতও নয়। এখানে ভেরিয়েবল বেশি। তারপরও আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। আমি মনে করি সামনে যে বাধা, মতপার্থক্য আসবে, সেগুলো কাটিয়ে উঠে আমরা এগিয়ে যেতে পারব। গণতন্ত্রের পাদপীঠে পৌঁছানোর জন্য যে পদক্ষেপ এবং সিদ্ধান্তগুলো নেওয়া দরকার, সেগুলো দিতে পারব।
মাহমুদুর রহমান মান্না নাগরিক ঐক্যের সভাপতি
মতামত লেখকের নিজস্ব
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য দ সরক র র ঐকমত য কর ছ ল হয় ছ ল বলল ন র একট ইউন স ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ময়মনসিংহ নগরে ফাঁদে ফেলে টাকা আদায় করছে প্রতারক চক্র
রাস্তা থেকে অস্ত্রের মুখে তুলে আনা হয় অথবা কৌশলে সম্পর্ক তৈরি করে নেওয়া হয় কোনো বাসায়। এরপর নারীর সঙ্গে বিবস্ত্র ছবি ও ভিডিও ধারণ করে জিম্মি করা হয়। ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে আদায় করা হয় টাকা।
সম্প্রতি এ ধরনের চক্রের অপতৎপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে ময়মনসিংহ নগরে। চলতি মাসে পৃথক ঘটনায় ওই চক্রের তিন সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এতে আলোচনায় এসেছে চক্রটির তৎপরতা।
এ সম্পর্কে ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মুহাম্মদ ফিরোজ হোসেন বলেন, ‘এ ধরনের অপতৎপরতা রোধে আমরা তথ্য পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার চেষ্টা করছি। ঘটনার শিকার ব্যক্তিরা তথ্য দিলে আমরা তাঁদের পূর্ণাঙ্গ সহযোগিতা করব।’ বিষয়টি নিয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার কাজী আখতার উল আলমও।
চলতি মাসের ২ জুন নগরের মাসকান্দা এলাকা থেকে প্রাইভেট কারের চালক স্বপন মিয়াকে অস্ত্রের (চাকু) মুখে তুলে নিয়ে যায় একটি দল। অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তাঁকে নগরের আকুয়া গরুখোঁয়াড় মোড়ের একটি ফ্ল্যাটে নেওয়া হয়। সেখানে একটি কক্ষে এক নারীর সঙ্গে তাঁর ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়। এরপর সেগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়। একপর্যায়ে স্বপন মিয়া স্ত্রীকে ফোন করে বিকাশ ও নগদের মাধ্যমে ৪০ হাজার টাকা এনে দেন। এরপর ছাড়া পান স্বপন।
এ ঘটনায় ৩ জুন রাতে নগরের আকুয়া বোর্ডঘর এলাকার বাসিন্দা মো. পাপ্পু (৩৫) ও একই এলাকার মৃত আবদুল জলিলের ছেলে ফরহাদ আহমেদকে (২৫) গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৪ জুন মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
এক মাস আগে সৌদি আরব থেকে দেশে ফেরেন ফুলবাড়িয়া উপজেলার আছিম ইউনিয়নের জঙ্গলবাড়ি গ্রামের আবদুল হকের ছেলে শওকত হোসেন (৩৪)। তিনি সঙ্গে নিয়ে এসেছিলেন ১৪ হাজার রিয়াল। মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে এক মেয়ের পরিচয় হয়। সেই মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তাঁর সব অর্থ খোয়া গেছে।
গত শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা পর্যন্ত ময়মনসিংহ নগরের পাটগুদাম ব্রিজ মোড় আটাআনী পুকুরপাড় এলাকায় একটি বাসায় আসায় আটকে রেখে মারধর ও অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে শওকত হোসনকে ইয়াবা ও নারীর সঙ্গে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়। সাদা স্ট্যাম্পে স্বাক্ষরও রাখা হয়। বিদেশি মুদ্রার পাশাপাশি সঙ্গে ১১ হাজার টাকা ও বিকাশের মাধ্যমে আরও ২০ হাজার টাকা আদায় করে তাঁকে ছেড়ে দেয় চক্রটি। পরে শওকত হোসেন থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন। শনিবার রাতেই পুলিশ ওই বাসায় অভিযান চালিয়ে খলিলুর রহমান ওরফে সজল মিয়াকে (২৪) আটক করে। পরে গতকাল রোববার পাঁচ দিনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠায় পুলিশ। তাঁর বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতিসহ ছয়টি মামলা রয়েছে কোতোয়ালি মডেল থানায়।
নগরের বিভিন্ন এলাকায় এই চক্রের সদস্যরা সক্রিয় থাকলেও অনেকে ভয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেন না। তাঁদের একজন জেলার ত্রিশাল উপজেলার দড়িকাঁঠাল গ্রামের আল আমিন (২৮)। ১৬ জুন তিনি এ রকম ‘ফাঁদে’ পড়েছিলেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক বন্ধুর মাধ্যমে নগরের এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। সেই সুবাদে ১৬ জুন বিকেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে যাই। নগরের গুলকিবাড়ী এলাকার একটি ফ্ল্যাটে যাওয়ার পর একটি কক্ষে এক নারীকে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে দরজা আটকে দেওয়া হয়। এরপর দুই যুবক ভেতরে ঢুকে ছবি ও ভিডিও ধারণ করেন। তাঁরা সেগুলো ফেসবুকে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে মারধর শুরু করেন। তাঁরা ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে এক বন্ধুর মাধ্যমে বিকাশে ৫ হাজার টাকা ও ব্যাংকের এটিএম কার্ডে থাকা ১০ হাজার টাকা তুলে নেওয়ার পর আমাকে ছেড়ে দেয়।’
আল আমিন বলেন, ‘ওই চক্রের সদস্যরা বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে গেলে ভিডিও ফেসবুকে ছেড়ে দেবেন। তাঁরা আমার পরিবারের সদস্যদের ফোন নম্বর রেখেছেন। সেখানেও পাঠিয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছেন। এই ভয়ে থানায় অভিযোগ করতে যাইনি।’
সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি নিরাপদ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের নিয়মাবলি জানা জরুরি। একই সঙ্গে ফ্ল্যাটগুলো যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত না হয়, সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।সাঈদ ইসলাম, নাগরিক সংগঠন ময়মনসিংহ ফোরামের কো–অর্ডিনেটরএ সম্পর্কে নাগরিক সংগঠন ময়মনসিংহ ফোরামের কো–অর্ডিনেটর সাঈদ ইসলাম বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে হানি ট্র্যাপ ফাঁদা খুব সহজ হয়ে গেছে। নারী সান্নিধ্যে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে বা রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে জিম্মির প্রবণতা গোটা সমাজকাঠামোকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে। একদিকে অবক্ষয়, অন্যদিকে লোভ অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করে ফেলছে। সাইবার নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি নিরাপদ সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের নিয়মাবলি জানা জরুরি। একই সঙ্গে ফ্ল্যাটগুলো যেন অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত না হয়, সে জন্য পুলিশ প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো প্রয়োজন।