সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হক, শাজাহান খান, শেখ হাসিনার উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানসহ পাঁচ জনের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। 

পল্টন থানায় করা রমজান মিয়া জীবন হত্যা মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামকে এবং মোহাম্মদপুর থানার হত্যা মামলায় কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আ.

কা. ম. সরওয়ার জাহান (বাদশা) কে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

সোমবার (২৩ জুন) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মাহবুব আলম শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

রিমান্ডে যাওয়া অপর আসামিরা হলেন, ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনু এবং চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান  রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহাইল।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ঢাকার যাত্রাবাড়ীতে সাজেদুর রহমান ওমর নিহতের মামলায় আনিসুল হক, শাজাহান খান এবং সালমান এফ রহমানের দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিকে একই থানার এলাকায় রিটন উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি নিহতের মামলায় ঢাকা-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য কাজী মনিরুল ইসলাম মনুকে এক দিনের রিমান্ড দেওয়া হয়েছে। তবে যাত্রাবাড়ী থানায় করা রাসেল হত্যা মামলায় তার রিমান্ড আবেদন নামঞ্জুর করা হয়েছে। পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশে গণঅধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনকে হত্যাচেষ্টা মামলায় চট্টগ্রাম বন্দরের অবসরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল সোহাইলের তিন দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়েছে।
ঢাকার মহানগর হাকিম মাহবুব আলম সোমবার শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

আনিসুল হক, শাজাহান খান, সালমান এফ রহমানের ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন পিবিআইর এসআই আমিরুল ইসলাম মীর। মনিরুল ইমলাম মনুর দুই মামলায় পাঁচ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করে তদন্ত সংস্থা পিবিআই। সোহাইলের ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পল্টন থানার এসআই বিমান তরফদার। পল্টন থানায় করা রমজান মিয়া জীবন হত্যা মামলায় সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী তাজুল ইসলামকে এবং মোহাম্মদপুর থানার হত্যা মামলায় কুষ্টিয়া-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) আ. কা. ম. সরওয়ার জাহানকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। আদালত আসামিদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন সোমবার ধার্য করেন। এদিন শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়।

শুনানি শেষে আদালত আসামিদের রিমান্ড এবং গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন।

সাজেদুর রহমান ওমর হত্যা মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ২১ জুলাই দুপুর আড়াইটার দিকে যাত্রাবাড়ী থানাধীন কাজলা ফুটওভার ব্রিজের নিচে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আন্দোলনে অংশ নেন সাজেদুর রহমান ওমর। বিকেলে আসামিদের আক্রমণে মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৪ আগস্ট মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ৩ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ী থানায় সৈয়দ তানভীর আহমেদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৮১ জনকে আসামি করে মামলা করেন।

বদরুল ইসলাম সায়মনকে হত্যাচেষ্টার মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর শেখ হাসিনা সরকারের গুম, খুন, নিপীড়ন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে সমাবেশ আয়োজন করা হয়। এতে দেশের সব রাজনৈতিক দলের ঐকমত্যের ভিত্তিতে বিএনপি ও গণ অধিকার পরিষদসহ অন্যান্য সমমনা রাজনৈতিক দল মহাসমাবেশের ডাক দেয়। ভুক্তভোগী গণঅধিকার পরিষদের কর্মী বদরুল ইসলাম সায়মনও সমাবেশে অংশ নেন। শান্তিপূর্ণ সমাবেশে আসামিরা অতর্কিতভাবে হামলা করে। এ সময় আসামিদের ছোঁড়া এলোপাতাড়ি গুলিতে সায়মন গুলিবিদ্ধ হন। তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা নেন তিনি। এ ঘটনায় গত ২৯ এপ্রিল ভুক্তভোগী বদরুল ইসলাম সায়মন বাদী হয়ে রাজধানীর পল্টন মডেল থানা হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। মামলায় শেখ হাসিনাসহ ২৪৫ জনকে আসামি করা হয়।

৫ আগস্ট যাত্রাবাড়ী থানার সামনে গুলিবিদ্ধ হন রিটন উদ্দিন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। একই দিন সকাল ৮ টার দিকে যাত্রাবাড়ী ফুটওভার ব্রিজের নিচে গুলিবিদ্ধ হন রাসেল। পরে তিনি মারা যান।

ঢাকা/এম/ইভা 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর বদর ল ইসল ম স আস ম দ র মন ত র রহম ন

এছাড়াও পড়ুন:

এ ঘটনা অধ্যাপক ইউনূসের জন্য লজ্জার, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ক্ষমা চাইতে হবে

যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেনের ওপর আওয়ামী লীগের নেতা–কর্মীদের ডিম নিক্ষেপের প্রতিবাদে ঢাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন দলটির নেতা–কর্মীরা। তাঁরা বলেছেন, এ ঘটনা প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য লজ্জার। নিরাপত্তা নিশ্চিতে ব্যর্থ হওয়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ জন্য ক্ষমা চাইতে হবে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বাংলামোটরে এনসিপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এসে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়।

নিউইয়র্কে এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেনসহ রাজনীতিবিদদের ওপর আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে অন্তর্বর্তী সরকারের চরম গাফিলতির প্রতিবাদ এবং দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে এই বিক্ষোভ মিছিলের আয়োজন করে দলটির ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা।

মিছিলে এনসিপি নেতা–কর্মীদের ‘ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর/ আওয়ামী লীগ নো মোর’; ‘আবু সাঈদ মুগ্ধ/ শেষ হয়নি যুদ্ধ’; ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ/ মুজিববাদ মুর্দাবাদ’; ‘দিল্লি না ঢাকা/ ঢাকা ঢাকা’; ‘আওয়ামী লীগের ঠিকানা/ এই বাংলায় হবে না’; ‘আখতারের ওপর হামলা করে/ ইন্টারিম কি করে?’ প্রভৃতি স্লোগান দিতে শোনা যায়।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম, যুগ্ম আহ্বায়ক মনিরা শারমিন বক্তব্য দেন।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন এবং যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারাকে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে নিয়ে গিয়েছেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তাঁদেরকে আওয়ামী লীগের সামনে ছেড়ে দিয়েছেন। এটা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের জন্য লজ্জার। রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের জন্য লজ্জার। এ ঘটনায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যর্থতার দায় নিয়ে অতিসত্বর বাংলাদেশের মানুষের সামনে এসে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে।’

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘বাংলাদেশের দূতাবাসগুলোতে এখনো আওয়ামী লীগের সাঙ্গপাঙ্গরা রয়েছে। অতিদ্রুত সিভিল সার্ভিস থেকে, সেনাবাহিনী থেকে, রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠান থেকে আওয়ামী লীগের গুন্ডা বাহিনীদের অপসারণ করতে হবে। যদি অপসারণ করতে না পারেন, তাহলে ইউনূস সরকার বর্তমান যে অবস্থায় রয়েছে, তারা কত দিন ক্ষমতায় টিকবে সেই নিশ্চয়তা আমরা দিতে পারি না।’

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘আজকে আমাদের বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল সাহেবের একটি বক্তব্য দৃষ্টিগোচর হয়েছে। সেখানে তিনি বলেছেন, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এবং জাতীয় পার্টিকে নিয়ে আসতে চায়। এ বক্তব্য জাতি হিসেবে আমাদের জন্য লজ্জার।...আমরা এখনো বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের শহীদ জিয়ার সৈনিকেরা মির্জা ফখরুলের এই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করবেন।’

জামায়াতে ইসলামীর উদ্দেশে এনসিপির এই নেতা বলেন, ‘জামায়াতে ইসলামীকে যখন রাজাকার বলে, পাকিস্তানি ট্যাগ দিয়ে অলিগলিতে পেটানো হয়েছে, তখন আমরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাদের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম। কিন্তু আজকে যখন গণ–অভ্যুত্থানের নেতাদের ওপর হামলা হচ্ছে, বাংলাদেশের অলিগলিতে আওয়ামী লীগ ঘোরাফেরা করছে, তখন তারা মুখে কুলুপ বসিয়েছে।’

দলীয় প্রতীক হিসেবে শাপলা পাওয়া নিয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক বলেন, ‘আমরা যখন নিবন্ধন কর্মসূচির সব কাজ সম্পন্ন করেছি, নির্বাচন কমিশনের কাছে গিয়ে আমরা বলেছিলাম, শাপলা প্রতীক পেতে আইনি কোনো বাধা আছে? তারা আমাদের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছে, আইনি কোনো বাধা নেই। কিন্তু কেন প্রতীক পাব না, সেই প্রশ্নে তারাও মুখে কুলুপ এঁটেছে। আমরা সব জায়গায় ষড়যন্ত্রের গন্ধ পাচ্ছি।’

আরও পড়ুননিউইয়র্কে এনসিপি নেতা আখতারকে হেনস্তা করলেন আওয়ামী লীগ নেতা–কর্মীরা, ডিম নিক্ষেপ১৩ ঘণ্টা আগে

তাসনিম জারাকে কটূক্তির প্রতিবাদ জানিয়ে এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম বলেন, ‘চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল আমাদের বোনেরা। রাজপথে সামনে সারিতে দাঁড়িয়ে তাঁরা আওয়ামী লীগকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছিল। রক্ত দিয়ে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়েছিলেন। এখন সেই আওয়ামী লীগ দেশছাড়া হয়ে আমাদের বোনদের আক্রমণ করা শুরু করেছে। কারণ তারা জানে, আমাদের বোনেরা যদি তাদের বিরুদ্ধে দাঁড়ান, আমাদের বোনেরা যদি তাঁদের কণ্ঠস্বর সোচ্চার রাখেন, তাহলে এই বাংলাদেশে ওই খুনিদের আর জায়গা হবে না।’

বাংলাদেশে কোনো ‘রিফাইন্ড’ আওয়ামী লীগের জায়গা হবে না মন্তব্য করে সারজিস আলম বলেন, ‘আগামীর বাংলাদেশে যেকোনো ফরম্যাটে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগকে আমরা আশ্রয় পেতে দেব না। আমরা আগামীর বাংলাদেশকে রিফাইন্ড বাংলাদেশের দিকে নিয়ে যাব, যেই বাংলাদেশে কোনো ফ্যাসিস্ট কিংবা ফ্যাসিস্টের দোসরের জায়গা হবে না।’

আরও পড়ুনআখতারকে ডিম নিক্ষেপ: নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থতার জন্য দায়ী কর্মকর্তাদের শাস্তি চায় এনসিপি৬ ঘণ্টা আগে

সম্পর্কিত নিবন্ধ