‘ইরাকের ব্যাপক বিধ্বংসী অস্ত্রের ভুয়া অজুহাত’ আবার ব্যবহার করছে যুক্তরাষ্ট্র: রাশিয়া
Published: 23rd, June 2025 GMT
ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কড়া নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। দেশটি এসব হামলাকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন, উসকানিমূলক ও বিপজ্জনক’ বলে মন্তব্য করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, এসব পদক্ষেপ মধ্যপ্রাচ্যকে একটি বড় যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিতে পারে, যার পরিণতি ভয়াবহ হতে পারে। এমনকি পারমাণবিক বিপর্যয়ও ঘটতে পারে।
গতকাল রোববার জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূত ভাসিলি নেবেনজিয়া বলেন, যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ সনদ, আন্তর্জাতিক আইন এবং পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তির (এনপিটি) লঙ্ঘন করেছে।
রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, যুক্তরাষ্ট্র একরকম ‘প্যান্ডোরার বাক্স’ খুলে দিয়েছে। এখন কেউ জানে না, এর পরিণতি কী হতে পারে। তিনি আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (আইএইএ) তত্ত্বাবধানে থাকা পারমাণবিক স্থাপনাগুলোতে হামলা চালিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মতামতকে সম্পূর্ণভাবে অবজ্ঞা করেছে।
নেবেনজিয়া বলেন, এই পরিস্থিতি অনেকটা ২০০৩ সালের ইরাক যুদ্ধের আগের সময়ের মতো। তখন তৎকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী কলিন পাওয়েল ইরাকে হামলারর অজুহাত হিসেবে জাতিসংঘে মিথ্যা তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন করেছিলেন। পরে তাঁর তথ্যপ্রমাণ মিথ্যা প্রমাণিত হয় এবং ইরাক বহু বছর ধরে বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে।
জাতিসংঘে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘আজকের পরিস্থিতিও অনেকটাই তেমন। আবার মানুষের সামনে রূপকথা তুলে ধরা হচ্ছে, যাতে মধ্যপ্রাচ্যের লাখ লাখ মানুষের ওপর দুর্ভোগ নেমে আসে।’
রাশিয়া বলেছে, ইরান যে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করছে, এমন কোনো প্রমাণ নেই। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার আগের মূল্যায়নও একই কথা বলছে। কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাঁর দেশের গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনকে উড়িয়ে দিয়েছেন।
নেবেনজিয়া অভিযোগ করেন, যুক্তরাষ্ট্র মনগড়া গল্প বানিয়ে বলপ্রয়োগের অজুহাত খুঁজছে এবং ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক কর্মসূচি ঘিরে তৈরি হওয়া কূটনৈতিক কাঠামোকে নষ্ট করছে।
রুশ রাষ্ট্রদূত আরও বলেন, পশ্চিমা দেশগুলো জাতিসংঘে ‘সংযম’ প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে। অথচ তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের এই হামলার সমালোচনা না করে উল্টো ইরানকেই দোষারোপ করছে। এটি তাদের ভণ্ডামির চূড়ান্ত উদাহরণ।
রুশ রাষ্ট্রদূত নেবেনজিয়া বলেন, ‘এটি দ্বিচারিতার চমকপ্রদ উদাহরণ। ইরান হচ্ছে সবচেয়ে বেশি পর্যবেক্ষণাধীন দেশগুলোর একটি, অথচ তাকেই লক্ষ্য করে হামলা হচ্ছে। অন্যদিকে হামলাকারী দেশ (যুক্তরাষ্ট্র) নিজেই পারমাণবিক অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি (এনপিটি) স্বাক্ষরই করেনি।’
রাষ্ট্রদূত বলেন, এই হামলা আন্তর্জাতিক পরমাণু সংস্থা (আইএইএ) ও বৈশ্বিক পরমাণু নিয়ন্ত্রণব্যবস্থার ওপর আঘাত হেনেছে এবং এই উত্তেজনা বাড়তে থাকলে আবারও বিশ্ব অনিয়ন্ত্রিত পারমাণবিক ঝুঁকির যুগে ফিরে যেতে পারে।
নেবেনজিয়া আরও অভিযোগ করেন, ‘এটি একটি নিষ্ঠুর ও নীতিহীন অবস্থা। আইএইএর মহাপরিচালক এ বিষয়ে একটি শব্দও বলেননি। এমনকি কখনো তিনি ইসরায়েলকে এনপিটিতে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাননি।’
রাশিয়া জরুরি পদক্ষেপের আহ্বান জানানোর পাশাপাশি চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে মিলে জাতিসংঘে একটি খসড়া প্রস্তাব জমা দিয়েছে। এতে অবিলম্বে নিঃশর্ত যুদ্ধবিরতি এবং ইরানের পারমাণবিক ইস্যুতে কূটনৈতিক আলোচনায় ফিরে যাওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র
এছাড়াও পড়ুন:
জাতিসংঘের পরমাণু সংস্থার জরুরি বৈঠক আজ
ইরান পরিস্থিতি নিয়ে আজ সোমবার জরুরি বৈঠক ডেকেছে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ)।
জাতিসংঘের পরমাণু পর্যবেক্ষক এই সংস্থা জানিয়েছে, ইরানের তিন পারমাণবিক স্থাপনায় যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর রেডিয়েশন বা তেজস্ক্রিয়তার পরিমাণ বাড়েনি।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার তদন্ত দাবি করে আইএইএকে চিঠি দিয়েছেন ইরানের আণবিক শক্তি সংস্থার প্রধান মোহাম্মদ ইসলাম। হামলার নিন্দা জানাতে আহ্বানও জানিয়েছে তেহরান। এর পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বৈঠকে বসবে আইএইএ।