রাজধানীতে ডিবির অভিযানে সাবেক দুই সংসদ সদস্যসহ সাতজন গ্রেপ্তার
Published: 23rd, June 2025 GMT
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় গতকাল রোববার রাতে পৃথক অভিযান চালিয়ে আওয়ামী লীগের দুই সাবেক সংসদ সদস্যসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। ডিবির দাবি, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা সংঘবদ্ধভাবে রাষ্ট্রবিরোধী তৎপরতায় জড়িত ছিলেন।
ডিএমপির পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ফয়সল বিপ্লবকে তেজগাঁও থানার মণিপুরিপাড়া এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিনও গ্রেপ্তার হয়েছেন। ভোররাতে ঢাকার নবাবগঞ্জ এলাকায় নিজ বাড়ি থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করে ডিবির ওয়ারী বিভাগ।
এ ছাড়া নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের সাবেক সদস্য মো.
ওয়ার্ড পর্যায়ের আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের কয়েকজন নেতাও এই অভিযানে গ্রেপ্তার হন। রোববার দিবাগত রাত পৌনে ১টার দিকে ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুল ওহায়াবকে কলাবাগান এলাকা থেকে, ২৫ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানকে রাত দুইটার দিকে মিরপুর এলাকা থেকে এবং রাত দেড়টার দিকে ৯২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহদপ্তর সম্পাদক জাকির হোসেন আলীকে পল্লবী থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা নাশকতার পরিকল্পনায় সক্রিয় ছিলেন এবং সরকারবিরোধী উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টায় লিপ্ত ছিলেন। এঁদের কারও কারও বিরুদ্ধে আগেই মামলা ছিল, আবার কয়েকজনের বিরুদ্ধে নতুন মামলা প্রক্রিয়াধীন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ র প ত র কর আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষাঙ্গনে করোনা মোকাবিলায় অব্যবস্থাপনার পুনরাবৃত্তি নয়
সরকারের অন্যান্য বিভাগ কতটা তৎপর; জানি না। করোনার নতুন ভ্যারিয়েন্ট আলোচনায় আসার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষা প্রশাসনের তৎপরতা স্পষ্ট। ইতোমধ্যে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর। নির্দেশনায় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। শিশুদের নাজুকতা বিবেচনায় শিক্ষা প্রশাসনের এ উদ্যোগ স্বাভাবিক। ২৬ জুন থেকে অনুষ্ঠিতব্য এইচএসসি পরীক্ষায়ও করোনা বিবেচনায় আসন বিন্যাসে দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধির কথা বলা হয়েছে। সতর্কতা জরুরি; কিন্তু ২০২০ ও ’২১ সালে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে করোনা মোকাবিলায় যে অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিতে হবে।
২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী করোনার প্রকোপ বাড়লে প্রায় সব দেশই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করেছিল। বাংলাদেশে একই বছরের ১৭ মার্চ থেকে ২০২১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্ধ ছিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে এসেছে, করোনার কারণে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সর্বাধিক সময় ছুটি ছিল। বাস্তবসম্মত কারণেই সে সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হয়েছিল। তখন বিকল্প হিসেবে অনলাইন শিক্ষায় অব্যবস্থাপনা ও সময়ের আলোকে সিদ্ধান্তহীনতা দেখেছি আমরা। শিক্ষা প্রশাসন বাস্তবতার আলোকে অনেক ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নিতে না পারায় ভুক্তভোগী হয়েছে শিক্ষার্থীরা।
সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিকের শীর্ষ প্রতিবেদনে উঠে আসে– ‘শিক্ষা ব্যবস্থায় বড় ক্ষত তৈরি করেছে সংক্ষিপ্ত সিলেবাস ও অটোপাস’ (বণিক বার্তা, ১৬ জুন ২০২৫)। তার মানে, চার বছর পর এসেও আমরা সেই শূন্যতা টের পাচ্ছি। করোনার সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দেড় বছর বন্ধ থাকার ক্ষতি হয়তো আরও কমানো যেত, যদি এর প্রভাব ও শিখনশূন্যতা নিরূপণ করা যেত।
দীর্ঘ বন্ধের পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রাক্কালে সমকালের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন পরিচালক অধ্যাপক ড. ছিদ্দিকুর রহমান বলেছিলেন, শিক্ষার্থীর ‘শিখনশূন্যতা’ পূরণই বড় চ্যালেঞ্জ (সমকাল, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১)। তখনই তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, শিখনশূন্যতার প্রভাব হবে দীর্ঘমেয়াদি। সে জন্য তিনি কিছু পরামর্শও দিয়েছিলেন। অথচ তখনও পুরোদমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলেনি। সপ্তাহে এক-দুই দিন শ্রেণি কার্যক্রম চালু ছিল। পুরোপুরি শ্রেণি কার্যক্রম চালু হয় তারও কয়েক মাস পর। অর্থাৎ বলা যায়, দুই বছর বন্ধ থাকার পর ১৫ মার্চ ২০২২ থেকে পুরোদমে ক্লাস শুরু হয়। তখন আমি শিখনশূন্যতা পরিমাপের ওপর জোর দিয়ে লিখেছিলাম ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলাই শেষ কথা নয়’ (২৭ মার্চ ২০২২)। কিন্তু শিখনশূন্যতা পরিমাপে তেমন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি শিক্ষা প্রশাসন। এই সময়ে কত শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে, সেই চিত্রও এসেছে যেনতেনভাবে। এ লক্ষ্যে শিক্ষাশুমারির দাবি থাকলেও তা আমলে নেওয়া হয়নি। এসব অব্যবস্থাপনার পুনরাবৃত্তি করা যাবে না।
এখন অবশ্য করোনার সেই ভয়ংকর রূপ নেই। ইতোমধ্যে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, কভিডের নতুন ধরনে আতঙ্ক নয়; প্রয়োজন সতর্কতা। শিক্ষা প্রশাসন ইতোমধ্যে যে সতর্কতার কথা বলেছে, এটাই আপাতত যথেষ্ট। ঈদের ছুটি শেষে ২২ জুন সব প্রতিষ্ঠান খুলে গেছে। কিছুদিন পরই অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা শুরু হবে। এই সময়ে পুরোদমে শ্রেণি কার্যক্রম চালু রাখতে হবে, যাতে শিক্ষার্থীদের সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হয়।
রাজধানীর একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কন্যার পড়াসূত্রে দেখেছি, অর্ধবার্ষিক পরীক্ষার বিশাল সিলেবাস স্কুল দিয়ে রেখেছে। জুলাইয়ের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে তাদের পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা রয়েছে। এর মধ্যে এত বড় সিলেবাস শেষ করা কঠিন হবে। কারণ এ বছরের উল্লেখযোগ্য সময়জুড়েই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বছরের শুরুতে বই সময়মতো না পাওয়ায় যেমন শ্রেণি কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটেছে, তেমনি রমজান মাস, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা মিলে তিন সপ্তাহের গ্রীষ্মকালীন ছুটির কারণে সিলেবাসের অনেক পড়াই বাকি।
২০২০-২১ সালের করোনা মহামারির কারণে শিক্ষার ক্ষতি থেকে অনেক শিক্ষণীয় রয়েছে। মনে আছে, ২০২০ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা অটো পাস পেয়েছিল। সেই অটো পাসের কারণেই শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে জুলাই অভ্যুত্থানের সময়ে স্থগিত হওয়া ২০২৪ সালের এইচএসসির পরীক্ষায়ও অন্তর্বর্তী সরকার অটো পাস দিতে বাধ্য হয়। করোনার সময়ে এমন সিদ্ধান্ত না নিলে শিক্ষার্থীরা অটো পাসের দাবি করতে পারত না। করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার কারণে এখনও অনেক শিক্ষার্থীর মানসিকতায় ঢুকে গেছে– এর কথা বললেই বোধ হয় পরীক্ষা, প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। সে কারণে করোনার দোহাই দিয়েই সম্প্রতি এক দল শিক্ষার্থী এইচএসসি পরীক্ষা পেছানোর দাবি তুলেছে। তাদের অযৌক্তিক দাবিতে কর্ণপাত না করায় শিক্ষা প্রশাসনকে ধন্যবাদ।
করোনা মহামারির প্রথম প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অব্যবস্থাপনা হতেই পারে। কিন্তু ২০২১ সালেও তার পুনরাবৃত্তি দেখা যায়। ২০২৫ সালে এসেও তা আমরা প্রত্যাশা করি না। করোনা পরিস্থিতি এখনও স্বাভাবিক। তবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে কী করতে হবে, সেই প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা থাকা উচিত। কেবল করোনাই নয়; অন্য কোনো মহামারি, বন্যা বা এ ধরনের দুর্যোগেও যদি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার প্রয়োজন হয়, তখন শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়ার বিষয়ও ভাবা দরকার। এ ক্ষেত্রে বিকল্প হিসেবে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম কার্যকরভাবে সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করে সে ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া চাই। করোনা এ ক্ষেত্রে ডিভাইস সংকটসহ গ্রাম-শহরের ইন্টারনেট গতির যে পার্থক্য দেখিয়েছে, সে পরিস্থিতিরও তেমন উন্নয়ন ঘটেনি। করোনার সময়ে অটো পাস দেওয়া ও অযৌক্তিকভাবে সিলেবাস সংক্ষিপ্ত করা প্রভৃতি সিদ্ধান্তও পর্যালোচনায় আসা উচিত, যাতে ভবিষ্যতের যে কোনো সংকটে শিক্ষা প্রশাসন যথাযথ পদক্ষেপ নিতে পারে।
মাহফুজুর রহমান মানিক: জ্যেষ্ঠ
সহসম্পাদক, সমকাল
mahfuz.manik@gmail.com