ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করে জিতেছি কিন্তু নতুন আরেক ফ্যাসিস্ট জন্ম নিয়েছে- এমন মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম।

সোমবার সন্ধ্যায় নীলফামারী বড় মাঠে ‘প্রয়োজনীয় রাষ্ট্রসংস্কার, গণহত্যার বিচার, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠু নির্বাচন দাবিতে এবং ইসলামবিরোধী ষড়যন্ত্র ও চক্রান্তের প্রতিবাদে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ নীলফামারী জেলা শাখা আয়োজিত জনসভায় তিনি এ কথা বলেন।
 
মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, প্রয়োজনীয় সংস্কার, গণহত্যার বিচার, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন না হলে দেশে আবারও ফ্যাসিস্ট প্রতিষ্ঠিত হবে।

গরিবের রিলিফের চাল একটি দলের নেতার গুদামে পাওয়া যাচ্ছে দাবি করে শায়েখে চরমোনাই বলেন, গরিব-দুঃখী ও মেহনতি মানুষের মুখের খাবার যারা কেড়ে নেয়; এ দেশের জনগণ তাদের দ্বিতীয়বার আর ক্ষমতায় যেতে দেবে না।

প্রতিবেশী দেশ ভারতকে উদ্দেশ্য করে ফয়জুল করীম বলেন, বাংলাদেশিরা বীরের জাতি। কারও রাঙ্গা চক্ষুকে ভয় পায় না। বাংলাদেশের বন্দর বন্ধ বা সেভেন সিস্টার নিয়ে রাজনীতি শুরু করলে ভারতের পেটে ভাত থাকবে না। প্রতিবেশী দেশ হিসেবে ভারতের সাথে সুসম্পর্ক থাকবে, তবে কোনো গোলামী করা চলবে না।

ভারতের দালালি করে আর ক্ষমতায় আসা যাবে না মন্তব্য করে তিনি বলেন, ভারতের দালালি করে যারা ক্ষমতায় আসতে ও থাকতে চায় তাদের বাংলাদেশে থাকা হবে না, যারাই ভারতে দালালি করবে তাদের ভারতে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।

বক্তব্য শেষে নীলফামারী-২ আসনে অ্যাডভোকেট এম হাছিবুল ইসলাম, নীলফামারী-৩ আসনে আলহাজ্ব আমজাদ সরকার ও নীলফামারী-৪ আসনে আলহাজ্ব শহীদুল ইসলামকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেন মুফতি ফয়জুল করীম।

দলটির জেলা সভাপতি মুহাম্মাদ ইয়াসীন আলীর সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন দলের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট এম.

হাছিবুল ইসলাম, ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের সাংগঠনিক সম্পাদক সুলতান মাহমুদ, ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশের সাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি মুহাম্মাদ আবু তালহা ও জেলা জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ মাওলানা আব্দুস সাত্তার প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: চরম ন ই প র ব এনপ ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গণহত্যা বন্ধে আরও পদক্ষেপ জরুরি

যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের একই দিনে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। শতাধিক দেশ বহু আগে থেকেই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দিয়েছে; তবে এই পশ্চিমা শক্তিগুলোর পদক্ষেপ কেবল সংখ্যাত্মক নয়, বরং রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক প্রভাবের দিক থেকে অতুলনীয় গুরুত্ব বহন করে। দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ মিত্র এবং বৈশ্বিক কূটনীতির মঞ্চে প্রভাবশালী এই দেশগুলো যখন ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি দেয়, তখন এটি কেবল কাগজে লেখা ঘোষণা নয়—এটি ফিলিস্তিন রাষ্ট্র ধারণাকে নতুন প্রাণশক্তি দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে প্রতীকী হলেও তা গভীর অর্থ বহন করে।

কিন্তু প্রশ্ন থেকে যায়, এই স্বীকৃতি কি ফিলিস্তিনি মানুষের দৈনন্দিন যন্ত্রণার সীমারেখা অতিক্রম করতে পারবে? গাজার ধ্বংসস্তূপে দাঁড়িয়ে থাকা মা, যিনি তাঁর সন্তান হারিয়েছেন অথবা পশ্চিম তীরে দখলদার সৈন্যদের হাতে প্রাণ হারানো কিশোর—তাদের জন্য এই ঘোষণার তাৎক্ষণিক প্রভাব আসলে কতটা? যখন মৃত্যুর মিছিল, ঘরবাড়ি ধ্বংস ও মানবিক সংকট অব্যাহত, তখন এই প্রতীকী পদক্ষেপ বাস্তব জীবনকে রক্ষা করতে পারছে না।

স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণার দিনেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকার ইসরায়েলি প্রেসিডেন্টকে লন্ডনে অভ্যর্থনা জানায় আর গাজায় নিরীহ জনপদে ধ্বংসযজ্ঞ চালাতেও তাদের অস্ত্র (যুদ্ধবিমান, ক্ষেপণাস্ত্র, গোলাবারুদ) ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, দ্বিরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন ঘোষণা করে যদি ইসরায়েলকে অস্ত্র সহায়তা অব্যাহত রাখা হয়, তাহলে এ ধরনের স্বীকৃতি বাস্তবে আসলে কী ফল দেবে।

কূটনীতির মসৃণ ভাষণে মানবাধিকার, আত্মনিয়ন্ত্রণ ও রাজনৈতিক স্বাধীনতার প্রতিধ্বনি শোনা গেলেও বাস্তব নীতিতে প্রাধান্য পাচ্ছে কৌশলগত স্বার্থ, সামরিক ব্যবসা ও ভূরাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ। এই পরস্পরবিরোধী অবস্থান ফিলিস্তিনের স্বীকৃতিকে শুধু প্রতীকী পদক্ষেপে সীমাবদ্ধ করে।

গাজার মাটি আজও লাল রঙে রাঙানো। জাতিসংঘের সর্বশেষ তথ্যমতে, ৬৪ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত, লাখো মানুষ গৃহহীন, অবকাঠামো ধ্বংসস্তূপে পরিণত। হাসপাতাল ও চিকিৎসাব্যবস্থা ধ্বংসপ্রাপ্ত, খাদ্য ও পানির সরবরাহ ব্যাহত, শিশুরা অনাহারে মৃত্যুর মুখোমুখি। এই ভয়াবহ মানবিক বাস্তবতায় কেবল প্রতীকী স্বীকৃতি যথেষ্ট নয়। এখন জরুরি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ প্রয়োজন অবরোধ প্রত্যাহার, আগ্রাসন বন্ধ, পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ও দায়িত্বশীল অংশগ্রহণ। 

বিশ্বরাজনীতির জটিল হিসাব-নিকাশ, বাণিজ্য স্বার্থ এবং নানা বৈপরীত্য সত্ত্বেও চারটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের এই স্বীকৃতি রাষ্ট্র হিসেবে ফিলিস্তিনের অস্তিত্বকে অস্বীকারের ইসরায়েলি প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক বাস্তবতাকে পুনরায় জাগ্রত করে। এটি কেবল কূটনীতির মঞ্চে নয়, আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির মানচিত্রেও ফিলিস্তিনকে দৃঢ় অবস্থানে রাখে। ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন এখনো জীবন্ত—এ বার্তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্পষ্ট।

কিন্তু এই স্বীকৃতির প্রকৃত মূল্য তখনই প্রতিফলিত হবে, যখন স্বীকৃতিদানকারী দেশগুলো বাস্তব পদক্ষেপে প্রবল ও কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে। গণহত্যা বন্ধ, দখলনীতি স্থায়ীভাবে ত্যাগ, গাজার অবকাঠামো পুনর্গঠন এবং মানবিক সহায়তায় সরাসরি অংশগ্রহণ ছাড়া এই স্বীকৃতি শূন্য প্রতীক হয়ে থাকবে। ফিলিস্তিনিদের অবিচ্ছেদ্য আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার শুধু ঘোষণায় নয়, বাস্তব সহায়তায় নিশ্চিত করতে হবে। 

যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া ও পর্তুগালের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে আমরা স্বাগত জানাই। তবে এটি কেবল সূচনালগ্ন। এখন প্রয়োজন দৃঢ় আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। প্রয়োজন দ্বিরাষ্ট্রভিত্তিক সমাধানের পথে দ্রুত অগ্রগতি, যাতে প্রতীকী স্বীকৃতি ইতিহাসের পাতায় সীমাবদ্ধ না থেকে ফিলিস্তিনের রক্তাক্ত মাটিতে তার বাস্তব প্রতিফলন খুঁজে পায়। এই প্রতিফলনই হবে মানবিক ন্যায়ের জয়, যা কূটনীতির নীরবতার আবরণ ভেঙে দিয়ে স্বাধীনতার দীপ্তিকে চিরন্তন করে তুলবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণহত্যা বন্ধে আরও পদক্ষেপ জরুরি