কাবার দরজার গিলাফে আরবি অক্ষরে কোরআনের আয়াত ও বিভিন্ন তসবি খচিত রয়েছে। ক্যালিগ্রাফিখচিত হওয়ায় কেউ কেউ এই লেখাগুলো বুঝতে পারেন না। অনেকের জানার আগ্রহ, কী লেখা রয়েছে পবিত্র কাবার দরজায়। আয়াতগুলো হলো—
সুরা আল-ইমরান, আয়াত: ১৩৩
‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে। তোমরা প্রতিযোগিতা করো তোমাদের প্রতিপালকের কাছ থেকে ক্ষমা ও জান্নাত লাভের জন্য, যা আকাশ ও পৃথিবীর সমান প্রশস্ত, যা সাবধানীদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে।’
সুরা বাকারা, আয়াত: ১৪৪
‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে। আমি লক্ষ করি, তুমি আকাশের দিকে বারবার তাকাও। তাই তোমাকে এমন এক কিবলার দিকে ঘুরিয়ে দিচ্ছি, যা তুমি পছন্দ করবে। সুতরাং তুমি মসজিদুল হারামের (কাবা) দিকে মুখ ফেরাও। তোমরা যেখানেই থাক না কেন, কাবার দিকে মুখ ফেরাও। আর কিতাব দেওয়া হয়েছে যাদের, তারা নিশ্চিতভাবে জানে যে এ তাদের প্রতিপালক-প্রেরিত সত্য। তারা যা করে, তা আল্লাহর অজানা নেই।’
আরও পড়ুনসহজ ওমরাহ ৩০ জানুয়ারি ২০২৫সুরা ফাতহ, আয়াত: ২৭
‘পরম করুণাময় পরম দয়াময় আল্লাহর নামে। আল্লাহ তাঁর রাসুলের স্বপ্ন পূর্ণ করেছেন। আল্লাহর ইচ্ছায় তোমরা অবশ্যই মসজিদুল হারামে নিরাপদে প্রবেশ করবে, কেউ-কেউ মুণ্ডিত মাথায়, কেউ-কেউ চুল কেটে। তোমাদের কোনো ভয় থাকবে না। আল্লাহ জানেন তোমরা যা জানো না। এ ছাড়া তিনি তোমাদের দিয়েছেন এক আসন্ন বিজয়।’
সুরা বাকারা, আয়াত: ২৫৫ (আয়াতুল কুরসি)
‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে। আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। তিনি চিরঞ্জীব, অনাদি। তাঁকে না তন্দ্রা স্পর্শ করে, না নিদ্রা। আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, সবই তাঁর। কে আছে যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর কাছে সুপারিশ করবে? তাদের (মানুষের) সামনে ও পেছনে যা কিছু আছে, তিনি তা জানেন। তিনি যা ইচ্ছা করেন, তা ছাড়া তাঁর জ্ঞানের কিছুই তারা আয়ত্ত করতে পারে না। আকাশ ও পৃথিবীব্যাপী তাঁর আসন আর তাদের রক্ষণাবেক্ষণে তিনি ক্লান্ত হন না। তিনি অত্যুচ্চ মহামহিম।’
সুরা ইখলাস
‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে। বলো, তিনি আল্লাহ (যিনি) অদ্বিতীয়। আল্লাহ সবার নির্ভরস্থল। তিনি কাউকে জন্ম দেননি ও তাঁকেও কেউ জন্ম দেয়নি। আর তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।’
সুরা ফাতহ, আয়াত: ২৯
‘মুহাম্মদ আল্লাহর রাসুল। তাঁর সহচরগণ অবিশ্বাসীদের প্রতি কঠোর আর নিজেরা পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। আল্লাহর অনুগ্রহ ও সন্তুষ্টি কামনায় তুমি তাদেরকে রুকু ও সিজদায় নমিত দেখবে। তাদের মুখের ওপর সিজদার চিহ্ন থাকবে। তাদের সম্বন্ধে এ রূপ বর্ণনা রয়েছে তাওরাত আর ইঞ্জিলেও। তাদের উপমা একটি চারাগাছ, যা থেকে কিশলয় গজায়, তারপর তা দৃঢ় ও পুষ্ট হয় এবং পরে কাণ্ডের ওপর শক্ত হয়ে দাঁড়ায়, চাষিকে আনন্দ দেয়। এভাবে আল্লাহ বিশ্বাসীদের উন্নতি করে কাফেরদের অন্তর্জ্বালা সৃষ্টি করেন। যারা বিশ্বাস করে ও সৎকাজ করে, আল্লাহ তাদেরকে ক্ষমা ও মহাপুরস্কারের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।’
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো মাবুদ নেই। তিনি সত্য প্রতিপালক ও প্রকাশ্য সত্য। মুহাম্মদ আল্লাহর প্রেরিত রাসুল, তিনি সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত।
আরও পড়ুনসাঈ মানে সাতটি দৌড়০১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সুরা কুরাইশ
পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে। কুরাইশদের সংহতির জন্য, শীত ও গ্রীষ্মের সফরে তাদের সংহতির জন্য, তাদের উপাসনা করা উচিত এই (কাবা) গৃহের প্রতিপালকের, যিনি তাদেরকে ক্ষুধায় খাদ্য দান করেছেন এবং নিরাপত্তা দান করেছেন ভয়ভীতি থেকে।
তাসবিহ
ওপরে, মধ্যখানে ও নীচে থাকা গোলাকৃতির ছয়টি বক্সে লেখা আছে, ‘রাব্বি আল্লাহ’; যার অর্থ: আল্লাহ আমার পালনকর্তা। চার জায়গায় লেখা আছে, ‘হাসবি আল্লাহ’; যার অর্থ: আল্লাহ আমার জন্য যথেষ্ট।
মক্কায় প্রস্তুত বর্তমান গিলাফটি কাবা শরিফের জন্য উপহার প্রদান করেছেন সৌদি আরবের বর্তমান বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আলে সৌদ। তাকে বলা হয়, খাদেমুল হারামাইন আশ-শারিফাইন, অর্থাৎ, মক্কা ও মদিনার দুই পবিত্র মসজিদের সেবক তিনি।
আরও পড়ুনকাবা শরিফ মার্বেল পাথরের অপূর্ব কাহিনি১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য কর ছ ন আল ল হ
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমার খেজুরবাগানের এখন যে অবস্থা, তাতে চৌদ্দ পুরুষ বসে খেতে পারবে’
সৌদি আরবে খেজুরবাগানে কাজ করতে গিয়ে কিছু বীজ দেশে আনেন আবদুল মোতালেব নামের এক ব্যক্তি। এরপর নিজের একটি খেজুরবাগান তৈরির কাজ শুরু করেন। হতাশা কাটিয়ে কয়েক বছর পর সফলতার দেখা পান। বর্তমানে তাঁর খেজুরবাগান থেকে বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। মোতালেবের দেখাদেখি স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।
আবদুল মোতালেব ময়মনসিংহের ভালুকার উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিন বছর খেজুরবাগানে কাজ করেছেন। ২০০১ সালের শেষ দিকে নিজে খেজুর চাষের পরিকল্পনা দেশে ফেরেন। এ সময় উন্নত জাতের খেজুরের প্রায় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে আসেন। বাড়ির আঙিনায় ৭০ শতাংশ জমিতে রোপণ করে ২৭৫টি চারা। বর্তমানে মোতালেবের ৭ বিঘা খেজুরবাগানে প্রায় ৩ হাজারের বেশি খেজুরগাছ আছে। এগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের দেখা মেলে।
গত বুধবার মোতালেবের খেজুরবাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে নানা জাতের খেজুর। মোতালেব জানান, আজোয়া খেজুর ৩ হাজার টাকা, শুক্কারি এক হাজার, আম্বার আড়াই হাজার, লিপজেল সাড়ে ৪ হাজার ও মরিয়ম খেজুর ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এ ছাড়া বিক্রি হয় খেজুরের চারাও। কাটিং করা প্রতিটি চারা ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ ছাড়া বীজ থেকে তৈরি চারা ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন।
আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমি পড়ালেখা করি নাই। দেশেও কৃষিকাজ করি এবং সৌদি আরবে গিয়ে আমি কৃষিকাজ পাই। সেখানে খেজুরবাগানে কাজ করে খেজুর খেয়ে মনে হলো, যদি দেশে একবার এই খেজুর চাষ করতে পারি তাহলে জীবন সার্থক, আর বিদেশে যেতে হবে না। ২০০১ সালে বাড়িতে আসার সময় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে আসি, সেখান থেকে মাত্র ২৭৫টি গাছ তৈরি করা হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর গবেষণা করে ৭টি মাতৃগাছ পাই, বাকিগুলো সব পুরুষ গাছ। পুরুষ গাছগুলো কেটে মাতৃগাছগুলো থেকে কাটিং করে চারা উৎপাদন শুরু করি। এখন আমার বাগানের যে অবস্থা, তাতে আমার পরবর্তী চৌদ্দ পুরুষ বসে খাবে, আমার সন্তানদের আর কষ্ট করতে হবে না। বাগানে এখন শুধু মাতৃ গাছ আছে। আমাদের বাগানে উৎপাদিত খেজুর পুরোপুরি সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাদে-গন্ধে মেলে।’
বাগানটিতে সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের দেখা মেলে