উত্তর মেরুতে এক রোমাঞ্চকর অভিযানে অংশ নিতে যাচ্ছেন বাংলাদেশের স্কুল শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মাহমুদ। চলতি বছরের আগস্ট মাসে রাশিয়ার পরমাণু শক্তি চালিত আইসব্রেকার জাহাজে চড়ে এই পথ পাড়ি দেবেন তিনি। আবদুল্লাহ আল মাহমুদ ১৪-১৬ বছর বয়সী ২০ জন বিদেশি স্কুল শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন, যিনি এই অনন্য সুযোগ লাভ করেছেন।

অভিযানে বিদেশি শিক্ষার্থী ছাড়াও রাশিয়ার উন্মুক্ত এবং আন্তর্জাতিক নির্বাচন প্রক্রিয়া এবং অন্যান্য আঞ্চলিক ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ী আরো ৪৫জন অংশ নেবেন। 

মঙ্গলবার (২৪ জুন) বিকেলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পরমাণু সংস্থা রোসাটম-এর সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

আরো পড়ুন:

শাবিপ্রবিতে নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে ছাত্রশিবিরের স্মারকলিপি

উচ্চশিক্ষার মান উন্নয়নে ওবিই কারিকুলাম অপরিহার্য: বেরোবি উপাচার্য

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি মস্কোতে ‘আইসব্রেকার অফ নলেজ’ শীর্ষক একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান ও শিক্ষা প্রকল্পের অধীণে পরিচালিত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতায় বিজয়ী ২০ জন বিদেশি শিক্ষার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। এটি ছিল এই প্রতিযোগিতার ষষ্ঠ আসর। রাশিয়ার পরমাণু শিল্পের ৮০ বছর এবং উত্তর সমুদ্র পথ আবিষ্কারের ৫০০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।

চলতি বছর ‘আইসব্রেকার অফ নলেজ’ প্রতিযোগিতায় রাশিয়া ব্যাতীরেকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের ২০টি দেশের ৩ হাজার ৫০০ এর অধিক ১৪-১৬ বছর বয়সী শিক্ষার্থীরা আবেদন করে। রোসাটমের সহায়তায় এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে রাশিয়ার পারমানবিক শিল্প তথ্যকেন্দ্র নেটওয়ার্ক। এবারের নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ, বেলারুশ, বলিভিয়া, ব্রাজিল, হাঙ্গেরি, ভিয়েতনাম, ভারতসহ ২০টি দেশের স্কুল শিক্ষার্থীরা অংশ নিয়েছিল। বাংলাদেশ থেকে অংশগ্রহণ করেছে রেকর্ড সংখ্যক ১৫৩ জন শিক্ষার্থী। এই প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো- প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন ডিসিপ্লিন এবং পরমাণু প্রযুক্তির প্রচার।

প্রতিযোগিতাটি অনলাইনে goarctic.

energ ওয়েবসাইটে তিন ধাপে অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিযোগিতা শুরু হয় গত ২৮ এপ্রিল। প্রথম ধাপে বিদেশি শিক্ষার্থীরা একটি বিজ্ঞান সংক্রান্ত কুইজে অংশ নেন। দ্বিতীয় ধাপে তাদের অনেকগুলো ওয়েবিনারে অংশ নিতে হয়, যার মূল বিষয়বস্তু ছিল- রোসাটমের যুগান্তকারী প্রযুক্তি এবং নিরাপদ উত্তর মেরু শিপিং এ ব্যবহৃত প্রযুক্তি। এর ভিত্তিতে তাদের আরেকটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। 

চূড়ান্ত পর্বে অংশগ্রহণকারীদর একটি ভিডিও প্রেজেন্টেশন তৈরি করতে বলা হয়, যার মূল বিষয় ছিল- তাদের নিজস্ব ভাবনায় কীভাবে নিজের দেশের জনগণের জীবনযাত্রার উন্নয়নে পরমাণু প্রযুক্তি ব্যবহৃত হতে পারে। একটি আন্তর্জাতিক বিচারক প্যানেল প্রেজেন্টেশনগুলো মূল্যায়ন করে চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে।

প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন ডিসিপ্লিন এবং পরমাণু প্রযুক্তির প্রচার ছাড়াও এই প্রকল্পটির অন্য একটি লক্ষ্য হলো- প্রতিভাবান শিশুদের খুঁজে বের করা এবং তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা ও ক্যারিয়ার গাইডেন্স প্রদান করা। চূড়ান্ত পর্বে বিজয়ীরা আইসব্রেকারে করে উত্তর মেরু অভিযানে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়ে থাকেন। গত ছয় বছরে বিভিন্ন দেশের ৩৫০ এর অধিক শিক্ষার্থী এই অভিযানে অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছেন।

বর্তমানে বিশ্বে একমাত্র রাশিয়ারই একটি নিজস্ব পরমাণু শক্তিচালিত আইসব্রেকারের বহর রয়েছে। FSUE Atomflot নামক এই বহরে পরমাণু আইসব্রেকার সংখ্যা মোট আটটি।

ঢাকা/শাহীন/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর রকল প পরম ণ

এছাড়াও পড়ুন:

‘আমার খেজুরবাগানের এখন যে অবস্থা, তাতে চৌদ্দ পুরুষ বসে খেতে পারবে’

সৌদি আরবে খেজুরবাগানে কাজ করতে গিয়ে কিছু বীজ দেশে আনেন আবদুল মোতালেব নামের এক ব্যক্তি। এরপর নিজের একটি খেজুরবাগান তৈরির কাজ শুরু করেন। হতাশা কাটিয়ে কয়েক বছর পর সফলতার দেখা পান। বর্তমানে তাঁর খেজুরবাগান থেকে বছরে ৫০ লাখ টাকার বেশি আয় হচ্ছে বলে দাবি করেছেন। মোতালেবের দেখাদেখি স্থানীয় বাসিন্দাদের কয়েকজন খেজুর চাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

আবদুল মোতালেব ময়মনসিংহের ভালুকার উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের পাড়াগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। সংসারে সচ্ছলতা ফেরাতে তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন সৌদি আরবে। সেখানে ১৯৯৮ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত তিন বছর খেজুরবাগানে কাজ করেছেন। ২০০১ সালের শেষ দিকে নিজে খেজুর চাষের পরিকল্পনা দেশে ফেরেন। এ সময় উন্নত জাতের খেজুরের প্রায় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে আসেন। বাড়ির আঙিনায় ৭০ শতাংশ জমিতে রোপণ করে ২৭৫টি চারা। বর্তমানে মোতালেবের ৭ বিঘা খেজুরবাগানে প্রায় ৩ হাজারের বেশি খেজুরগাছ আছে। এগুলোর মধ্যে সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের দেখা মেলে।

গত বুধবার মোতালেবের খেজুরবাগানে গিয়ে দেখা যায়, বাগানের গাছে গাছে ঝুলছে নানা জাতের খেজুর। মোতালেব জানান, আজোয়া খেজুর ৩ হাজার টাকা, শুক্কারি এক হাজার, আম্বার আড়াই হাজার, লিপজেল সাড়ে ৪ হাজার ও মরিয়ম খেজুর ৬০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন। এ ছাড়া বিক্রি হয় খেজুরের চারাও। কাটিং করা প্রতিটি চারা ১৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। এ ছাড়া বীজ থেকে তৈরি চারা ৫০০ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন।

আবদুল মোতালেব বলেন, ‘আমি পড়ালেখা করি নাই। দেশেও কৃষিকাজ করি এবং সৌদি আরবে গিয়ে আমি কৃষিকাজ পাই। সেখানে খেজুরবাগানে কাজ করে খেজুর খেয়ে মনে হলো, যদি দেশে একবার এই খেজুর চাষ করতে পারি তাহলে জীবন সার্থক, আর বিদেশে যেতে হবে না। ২০০১ সালে বাড়িতে আসার সময় ৩৫ কেজি বীজ নিয়ে আসি, সেখান থেকে মাত্র ২৭৫টি গাছ তৈরি করা হয়। দীর্ঘ ১৮ বছর গবেষণা করে ৭টি মাতৃগাছ পাই, বাকিগুলো সব পুরুষ গাছ। পুরুষ গাছগুলো কেটে মাতৃগাছগুলো থেকে কাটিং করে চারা উৎপাদন শুরু করি। এখন আমার বাগানের যে অবস্থা, তাতে আমার পরবর্তী চৌদ্দ পুরুষ বসে খাবে, আমার সন্তানদের আর কষ্ট করতে হবে না। বাগানে এখন শুধু মাতৃ গাছ আছে। আমাদের বাগানে উৎপাদিত খেজুর পুরোপুরি সৌদি আরবের সঙ্গে স্বাদে-গন্ধে মেলে।’

বাগানটিতে সৌদি আরবের আজোয়া, শুক্কারি, আম্বার, লিপজেল ও মরিয়ম জাতের দেখা মেলে

সম্পর্কিত নিবন্ধ