বাগমারায় বাক্প্রতিবন্ধী পথশিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, প্রতিবাদে মানববন্ধন
Published: 24th, June 2025 GMT
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলায় আট বছর বয়সী বাক্প্রতিবন্ধী এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল সোমবার রাত ১১টার দিকে উপজেলার তাহেরপুর কলেজের পাশে একটি বাগান থেকে শিশুটিকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান–স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) ভর্তি করা হয়েছে।
এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তিনজনকে থানায় নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তবে তাঁদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার বিকেলে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেছেন। এ ছাড়া আগামীকাল বুধবার দুটি সংগঠন প্রতিবাদ সভার ডাক দিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে শিশুটি তাহেরপুর কলেজের পাশে একটি বাগানে কান্না করছিল। স্থানীয় লোকজন তাকে উদ্ধার করে স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেন। কিন্তু শিশুটির রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতালের মুখপাত্র চিকিৎসক শঙ্কর কুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেন, ‘শিশুটিকে ওসিসিতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তার শারীরিক অবস্থা খুবই নাজুক। আমরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখেছি।’
স্বজন ও স্থানীয় লোকজন জানান, ভুক্তভোগী শিশুটির বাবাও মানসিক প্রতিবন্ধী। মা–বাবার মধ্যে ছাড়াছাড়ির পর শিশুটি বাবার কাছে থাকত। কিন্তু বাবা দ্বিতীয় বিয়ের পর তাহেরপুর বাজারের বিভিন্ন জায়গায় পথশিশু হিসেবে ঘুরে বেড়ায়। লোকজনের দেওয়া খাবার খেত এবং বাজারে ঘুমাত। গতকাল রাতে তাহেরপুর কলেজ এলাকায় শুয়ে ছিল। সেখান থেকে তুলে নিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করে দুর্বৃত্তরা।
শিশুটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন এস এম আরিফুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, বিকৃত মস্তিষ্কের লোকজনই শিশুটিকে ধর্ষণ করেছে। তিনি তাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। তিনি বলেন, শিশুটির বাবা মানসিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় সে আদর যত্ন পায় না। সৎমা–ও তেমন দেখাশোনা করেন না। এ জন্য পথে পথে ঘুরে বেড়াত।
এদিকে প্রতিবন্ধী পথশিশুকে ধর্ষণের প্রতিবাদে আজ বিকেলে তাহেরপুর হরিতলা মোড়ে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সভা করেন স্থানীয় বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতা–কর্মীরা। বৃষ্টির মধ্যে বিকেল সাড়ে চারটা থেকে সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত এক ঘণ্টার মানববন্ধনে পৌর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবদুল আলিমসহ স্থানীয় নেতারা বক্তব্য দেন। তাঁরা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।
বাগমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তৌহিদুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, শিশুটিকে গতকাল গভীর রাতে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে পাঠানো হয়েছে। শিশুটি এখন ভালো আছে। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলেছে। রক্তমাখা পোশাকসহ আলামত সংগ্রহ করেছে। এ ঘটনায় সন্দেহভাজন কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তিনজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও এখনো গ্রেপ্তার দেখানো হয়নি। এখনো শিশুটির পরিবার অভিযোগ দেয়নি। পুলিশ তদন্ত করছে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সোনারগাঁয়ে বিদ্যালয়ের মালামাল বিক্রির ঘটনায় ঝাড়ু-জুতা মিছিল
সোনারগাঁয়ে পঞ্চমীঘাট উচ্চ বিদ্যালয়ের মালামাল রাতের আধাঁরে গোপনে বিক্রির ঘটনায় জড়িতদের কঠোর শাস্তির দাবীতে ঝাড়ু ও জুতা মিছিল করেছেন বিদ্যালয়ের বর্তমান–সাবেক শিক্ষার্থী ও স্থানীয় এলাকাবাসী।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট স্কুলের সামনে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়। অভিযুক্ত বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া, সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম এবং একাধিক অভিযোগের মুখে থাকা প্রধান শিক্ষক মো. জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের প্রতি দাবি জানান তারা।
মানববন্ধনে সাদিপুর ইউনিয়ন বিএনপির সহ-সভাপতি তাজুল ইসলাম বলেন, “এ ইউনিয়নকে যেন ব্যক্তিগত সম্পত্তি মনে করে মাসুম ও মনিরুজ্জামান নিজেদের ইচ্ছেমতো সব কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন।
তাদের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের মালামাল রাতের আধাঁরে নিয়মবহির্ভূতভাবে বিক্রি করা হয়। পরে এলাকাবাসী মালামাল ভর্তি গাড়ি আটক করে। কিন্তু এখন উল্টো ভালো মানুষদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ ছড়ানো হচ্ছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই।”
সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য হাবিবুর রহমান মাসুদ মোল্লা বলেন, “একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল চুরি করে বিক্রি করার মতো ন্যাক্কারজনক ঘটনা আমাদের ইউনিয়নের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে।
স্কুলের মতো পবিত্র জায়গায় দুর্নীতি ও অনিয়ম কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না। এ ঘটনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় আনতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “এলাকাবাসী রাতেই মালামাল আটকে দিয়ে প্রমাণ করেছে—এ এলাকার মানুষ অন্যায়ের বিরুদ্ধে সবসময় ঐক্যবদ্ধ। আমরা চাই প্রশাসন যেন বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করে।”
এলাকাবাসীরা জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মালামাল বিক্রির মতো ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে প্রয়োজন কঠোর নজরদারি ও পরিচালনা কমিটিতে সৎ-নিষ্ঠাবান ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্তি।
মানববন্ধন শেষে এলাকাবাসী ঝাড়ু ও জুতা প্রদর্শন করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত সাবেক সভাপতি কামরুজ্জামান ভূইয়া মাসুম জানান, একটি কুচক্রী মহল উদ্দেশ্যপ্রণীত ভাবে আমাদের বিতর্কিত করতে বিক্রি করা মালামাল চুরির ঘটনা সাজিয়েছে। আমরা তাদের বিরুদ্ধে গতকাল মিটিং করেছি৷
অভিযুক্ত বর্তমান কমিটির সভাপতি মনিরুজ্জামান ভূইয়া জানান, আমরা স্কুলের একটি কমিটি করে বিক্রি করেছি। তবেমাধ্যমিক শিক্ষা অফিস থেকে কোনো অনুমতি নেই নি। বিক্রি করার পর গাড়িতে উঠাতে রাত হয়ে যায়। এখানে কোনো চুরির ঘটনা ঘটে নি।
উল্লেখ্য, গত (৯ সেপ্টেম্বর) শনিবার স্কুল বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সভাপতি ও প্রধান শিক্ষককের নির্দেশে রাতের আধাঁরে নিয়মবহির্ভূতভাবে পঞ্চমীঘাট স্কুলের মালামাল বিক্রি করা হয়। যা স্থানীয় এক ভাঙ্গারীর পিক-আপ ভ্যানে নেয়ার সময় স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।