অজুহাতে এগিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলো, ম্যাচ খেলায় ব্রাজিলিয়ানরা
Published: 24th, June 2025 GMT
অতিরিক্ত ম্যাচ খেলার চাপ নিয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাবগুলোকে প্রায়ই অভিযোগ করতে দেখা যায়। পেপ গার্দিওলা–কার্লো আনচেলত্তিরা বিভিন্ন সময় সংবাদমাধ্যমে টানা ম্যাচ খেলা নিয়ে উষ্মাও প্রকাশ করেছেন। খেলোয়াড়দের ক্লান্তি ও চোটপ্রবণ হয়ে পড়ার কারণ হিসেবেও বারবার সামনে আনা হয় অতিরিক্ত ম্যাচ খেলাকে।
কিন্তু ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া দলগুলোর একটি পরিসংখ্যান ভিন্ন তথ্যই দিচ্ছে। ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম গ্লোবোর দেওয়া তথ্যমতে, গত এক বছরে অর্থাৎ ২৩ জুন ২০২৪ থেকে ২৩ জুন ২০২৫ পর্যন্ত ক্লাব বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ব্রাজিলিয়ান চার ক্লাব ইউরোপসহ অন্য মহাদেশের ক্লাবগুলোর চেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে।
যেখানে সবার ওপরে আছে ব্রাজিলিয়ান ক্লাব ফ্ল্যামেঙ্গো। গত এক বছরে সবচেয়ে বেশি ৭৭ ম্যাচ খেলেছে ব্রাজিলিয়ান শীর্ষ লিগে সবার ওপরে থাকা ফ্ল্যামেঙ্গো। গড়ে প্রতি ৪ দশমিক ৭৪ দিন পরপর মাঠে নামতে হয়েছে ফ্ল্যামেঙ্গোকে।
আরও পড়ুনক্লাব বিশ্বকাপে ব্রাজিল যেখানে ১০০–তে ১০০ ২৩ জুন ২০২৫এই তালিকায় দ্বিতীয় কোপা লিবার্তোদোরেস চ্যাম্পিয়ন বোতাফোগো। পিএসজিকে হারিয়ে ক্লাব বিশ্বকাপে আলোচনার জন্ম দেওয়া দক্ষিণ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নরা গত এক বছরে ম্যাচ খেলেছে ৭৩টি (গতকাল রাতে আতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষ খেলা ম্যাচসহ)।
ইউরোপিয়ান দলগুলোর মধ্যে এক বছরে সবচেয়ে বেশি ম্যাচ খেলেছে রিয়াল.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ল ব ব শ বক প এক বছর ইউর প
এছাড়াও পড়ুন:
নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থী সুজা
কেউ কেউ শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে যায়, আবার কেউ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ছুটে চলে অদম্য সাহসে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বি এম সুজা উদ্দিন সেই অদম্য সাহসী মানুষদের একজন।
পরিবারে অভাব ছিল না, কারণ বাবা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সুজার মনে বাসা বেঁধেছিল ভিন্ন এক তৃষ্ণা; স্বপ্ন নিজের কিছু গড়ে তোলার, উদ্যোক্তা হওয়ার। তাই তো ২০২০ সালে অনার্স চতুর্থ বর্ষে থাকা অবস্থায় মাত্র ৩ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।
আরো পড়ুন:
১০ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে অকৃতকার্য ইবি উপাচার্য
চাকসু নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে যা জানা গেল
একজন বন্ধুর কাছে দেড় হাজার এবং এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া দেড় হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু হয় অনলাইনে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে, আজ অরগানিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের বিশ্বস্ত মাধ্যমে রূপ নিয়েছে।
গত ৪ বছর ধরে শুধু অনলাইনেই চলেছে এই পথচলা। এরপর একদিন সাহস করে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি টেবিলে কয়েকটি পণ্য সাজিয়ে বসেন তিনি। সেই টেবিলই হয়ে উঠল তার স্বপ্নের অফলাইন রূপ। আজ সেটা সবার কাছে পরিচিত ‘সুজাস ফুড হেভেন’ নামে।
শুরুতে তার পড়াশোনা আর ব্যবসা সামলানো ছিল অনেক কঠিন। অর্ডার হাতে পেলে ক্লাস বা পরীক্ষা না থাকলে নিজেই ডেলিভারি দিতেন যশোর শহর ও ক্যাম্পাসে। অন্য জেলায় পাঠাতেন কুরিয়ারে। ধীরে ধীরে দোকানে অংশীদার ও কর্মচারী যুক্ত হয়, তাতে কিছুটা স্বস্তি আসে তার। তবে স্বপ্ন পূরণের টানে পড়াশোনার প্রতি আগের মতো সিরিয়াস হওয়া সম্ভব না হলেও নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন। কারণ তিনি জানতেন, ফলাফলে কিছুটা ঘাটতি হলেও স্বপ্ন পূরণের পথে অভিজ্ঞতা অর্জনই বড় সম্পদ।
বন্ধুদের সহযোগিতা তার পথচলায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও পেয়েছেন প্রেরণা। ক্যাম্পাসে স্টল বসানোর সুযোগ কিংবা উদ্যোক্তা মেলায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে করেছে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করে আজ তিনি নিজের খরচ মেটাচ্ছেন, কর্মচারীর বেতন দিচ্ছেন এবং নতুন করে বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়। যদিও এখনো অর্থনৈতিক চাপ পুরোপুরি কাটেনি, তবে সুজা উদ্দিন দৃঢ় বিশ্বাসী- এই চাপই তাকে আরো শক্ত করবে এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সুজা বলেন, “আমার পথচলা একেবারে সহজ ছিল না। প্রথম দিকে আমার দোকানে বসতে লজ্জা লাগত, কখনো কখনো বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখিও হয়েছি। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সবকিছু জয় করে এখন আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি- আলহামদুলিল্লাহ, আমি আমার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। গ্রাহকদের ভালোবাসা ও সম্মান আমার আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।”
তার স্বপ্ন নিরাপদ খাদ্যের আউটলেট গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতে আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ইতোমধ্যে একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরে তিনি মনে করেন, এটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্যের সূচনা।
অন্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, “যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকে, তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করুন। এমন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করুন, যা সম্পর্কে আপনি জানেন, ভালো সোর্স রয়েছে এবং যেটা নিয়ে কাজ করতে আপনি আনন্দ পান। এতে সময় সঠিকভাবে কাজে লাগবে, অভিজ্ঞতাও বাড়বে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর সহজেই বড় পরিসরে শুরু করতে পারবেন।”
সুজা উদ্দিন হয়তো বড় ব্যবসায়ী নন, কিন্তু তার গল্প বড়। তিনি প্রমাণ করেছেন শুধু চাকরির স্বপ্ন দেখলেই জীবন বদলায় না। স্বপ্ন দেখতে হয় ভিন্নভাবে, সাহস করে শুরু করতে হয় ছোট থেকে। এটি তার সাহসের গল্প, স্বপ্নের গল্প, নিজেকে গড়ে তোলার গল্প।
‘সুজাস ফুড হেভেন’ শুধু একটি খাবারের দোকান নয়, এটি একটি প্রমাণ। চাইলে স্বপ্ন সত্যি হয়, যদি লড়াই করার সাহস থাকে।
ঢাকা/মেহেদী