কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টা থেকে আজ বুধবার সকাল ১০টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় উপজেলার সরকারি–বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৩৮৩ জন রক্ত পরীক্ষা করেছেন। এর মধ্যে ৮০ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে।

১ জুন থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত উপজেলায় প্রায় দুই হাজার নারী, পুরুষ ও শিশু ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়েছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৯ মে থেকে আজ ২৫ জুন সকাল ১০টা পর্যন্ত দাউদকান্দি উপজেলায় ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে।

এদিকে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এক ব্যবসায়ীর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। মৃত ব্যক্তির নাম খোকন মিয়া (৫৫)। তিনি দাউদকান্দি পৌরসভার ৯ নম্বর ওয়ার্ডের দৌলদ্দি গ্রামের বাসিন্দা ও ব্যবসায়ী ছিলেন।

খোকন মিয়ার ছেলে সাব্বির আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বাবা দৌলদ্দি গ্রামের নিজ বাড়িতে বসবাস করতেন। এক সপ্তাহ আগে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন। ২২ জুন রক্ত পরীক্ষায় তাঁর ডেঙ্গু শনাক্ত হয়। সেদিনই তাঁকে ঢাকার কাকরাইল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে তিনি মারা যান।

ডেঙ্গুর প্রকোপ শুরু হয়েছিল পৌর এলাকার দোনারচর গ্রাম থেকে। এই গ্রামের বাসিন্দা ও দাউদকান্দি আদর্শ পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য ফকরুল আলম সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘পৌর এলাকার দোনারচর গ্রাম থেকে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব শুরু হয়। প্রথমে দোনারচর গ্রামেই ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে। সচেতনতা এখনো বাড়েনি। ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার হয়নি। আমার দুই ছেলে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত। চিকিৎসা নিচ্ছে। ডেঙ্গু নিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ উদক ন দ সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

টেলিটকের আধুনিকায়নের পরিকল্পনা, লক্ষ্য উন্নত সেবা

মোবাইল অপারেটর টেলিটক বাংলাদেশ লিমিটেড প্রযুক্তি হালনাগাদের একটি বৃহৎ পরিকল্পনায় হাত দিয়েছে। লক্ষ‍্য চতুর্থ প্রজন্মের (৪জি) সেবার বিস্তার, ভবিষ্যতের ৫জি প্রস্তুতি এবং নাগরিকদের জন্য আরো উন্নত ও নিরবচ্ছিন্ন ডিজিটাল সংযোগ নিশ্চিত করা।

আধুনিকায়নের ঘোষণা, বাস্তবে বিভ্রাট
টেলিটক গত ২৪ জুন রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত রিচার্জ সেবা সাময়িক বন্ধ থাকবে বলে আগেই জানায়। মূলত ব্যাকএন্ড সার্ভার, বিলিং সিস্টেম ও রিচার্জ মডিউল আপগ্রেডের জন্য এই সময় নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু সকাল পেরিয়ে দুপুর পর্যন্ত বহু গ্রাহক রিচার্জ করতে না পেরে চরম ভোগান্তিতে পড়ে।

বরিশাল, রংপুর, চট্টগ্রাম ও ঝালকাঠীর মতো এলাকায় একাধিক ব্যবহারকারী অভিযোগ করেন সকাল ৭টায় রিচার্জ করতে চাইলেও কাজ করেনি টেলিটকের সিস্টেম।

আরো পড়ুন:

‘মার্চ ফর গাজা’: সোহরাওয়ার্দীতে অর্ধশতাধিক মোবাইল চুরি

বাবার জানাজায় এসে আইফোন খোয়ালেন মনির খান

ঝালকাঠীর শিক্ষক রুহুল আমিন খান বলেন, “রাতে রিচার্জ বন্ধ থাকবে জেনেই সকাল ৭টার পর চেষ্টা করি। কিন্তু তখনও ব্যর্থ হই। অনলাইন ক্লাস নেওয়ার সময় ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে ক্লাস করতে পারিনি।”

ডেইভেন্টে ভেঙে পড়া সেবা
টেলিটকের ভাষ্য অনুযায়ী, রিচার্জ প্ল্যাটফর্মে ডেইভেন্ট ঘটায় মূল সমস্যার সৃষ্টি হয়। পরিকল্পিত সময়সীমার বাইরেও সেবা বিঘ্নিত থাকায় প্রশ্ন উঠেছে, এত বড় এক আপগ্রেড কেন আরো পরিকল্পিতভাবে সম্পন্ন হলো না।

টেলিযোগাযোগ বিশেষজ্ঞ ড. মাহমুদুল হাসান বলেন, “একটি জাতীয় অপারেটর হিসেবে টেলিটকের প্রযুক্তি হালনাগাদ হওয়া সময়ের দাবি। কিন্তু রোলআউট পরিকল্পনায় ঘাটতি থাকলে তা গ্রাহকের আস্থা নষ্ট করে। রিচার্জ যতটাই সামান্য মনে হোক, এর সঙ্গে স্বাস্থ্য, ব্যাংকিং, জরুরি যোগাযোগ যুক্ত যা সাময়িক হলেও বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে।”

এ বিষয়ে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব বলেন, “টেলিটকের আধুনিকায়ন একটি কৌশলগত পরিবর্তনের অংশ। দেশের প্রতিটি উপজেলায় ৪জি সম্প্রসারণের কাজ চলছে।”

তিনি আরো বলেন, “প্রযুক্তি হঠাৎ ব্যর্থ হতেই পারে, তবে তা যেন গ্রাহকের ক্ষতির কারণ না হয় সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। রাষ্ট্রীয় এই অপারেটরকে আমরা বিশ্বাসযোগ্য প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

আশার আলো
বর্তমানে টেলিটকের গ্রাহক সংখ্যা প্রায় ৭০ লাখ। ‘আগামী’ ও ‘স্বপ্ন’ নামে তরুণ ও শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ প্যাকেজ চালু করে প্রতিষ্ঠানটি ইতিমধ্যে তরুণ সমাজে আগ্রহ জাগাতে পেরেছে। তবে চ্যালেঞ্জ এখন এই আস্থা ধরে রাখা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শফিক হাসান বলেন, “টেলিটকের আধুনিকায়ন নিঃসন্দেহে সময়োপযোগী উদ্যোগ। কিন্তু শুরুতেই সেবার ভাঙন এই উদ্যোগের সক্ষমতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। রাষ্ট্রীয় এই অপারেটর যেন ‘আস্থাহীন ব্র্যান্ড’ হিসেবে না থেকে সত্যিকারের জাতীয় গর্ব হয়ে উঠতে পারে এটাই প্রত্যাশা।”

পুরনো সমস্যা, নতুন সুযোগ
বহুদিন ধরেই টেলিটকের বিরুদ্ধে গ্রাহকদের অভিযোগ দুর্বল সিগনাল, অ্যাপ ব্যবহারযোগ্য না থাকা, রিচার্জে জটিলতা, অপ্রত্যাশিত ব্যালেন্স কাটাকাটি। এই আধুনিকায়ন প্রক্রিয়াই হতে পারত এক নতুন সূচনা। কিন্তু প্রযুক্তির প্রথম ধাক্কাতেই আবারও ফিরে এল পুরনো শঙ্কা।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি
টেলিটক জানিয়েছে, তারা ধাপে ধাপে দেশব্যাপী ৪জি বিস্তার, ভবিষ্যতে ৫জি রোলআউট, এবং ই-গভর্নেন্স ও শিক্ষা খাতে অংশগ্রহণ বাড়ানোর পরিকল্পনা নিয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা একটি সম্পূর্ণ অটোমেটেড ও আধুনিক প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলছি। কিছু কারিগরি জটিলতা থাকলেও তা অস্থায়ী। আমাদের অগ্রাধিকার হলো গ্রাহকের আস্থা ফিরিয়ে আনা।”

তিনি বলেন, “টেলিটকের আধুনিকায়ন নিঃসন্দেহে প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী উদ্যোগ। তবে সেই প্রযুক্তিগত রূপান্তর কেবল তখনই ফলপ্রসূ হবে, যখন এর প্রয়োগ হবে পরিকল্পিত, রিস্ক ম্যানেজমেন্ট থাকবে শক্তিশালী, আর ‘গণমানুষের প্রযুক্তি’ হিসেবে আস্থা ফেরাতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি। প্রযুক্তি বিকাশের প্রতিটি ধাপেই জনগণের আস্থা অর্জন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। রাষ্ট্রীয় অপারেটর টেলিটক সেই চ্যালেঞ্জ পেরোতে পারবে কি না এখন সেটাই দেখার পালা।”

ঢাকা/এএএম/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ