নিউ ইর্য়কের ডেমোক্র্যাট ‘চমক’ ৩৩ বছরের মামদানি
Published: 25th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কের বাসিন্দাদের জন্য চকম হয়ে এসেছে একটি নাম। সেই নামটি হলো জোহরান মামদানি। ৩৩ বছর বয়সি এই মুসলিম তরুণ নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচনে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হওয়ার পথে রয়েছেন। দলীয় প্রাইমারি ভোটে তিনি বিজয়ী হয়েছেন।
ভারতীয় বংশোদ্ভূত মামদানি ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারিতে ব্যাপক ব্যবধানে পরাজিত করেছেন নিউ ইয়র্কের সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্র কুয়োমোকে। পরাজয় স্বীকার করে মামদানিকে শুভেচ্ছা জানিয়ে কুয়োমো বলেছেন, “আজ রাত তার, সে-ই এটার যোগ; সে জিতেছে।”
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে নিউ ইয়র্ক সিটির ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রাইমারি ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হয়। বুধবার সকালে এক্সে (সাবেক টুইটার) সমর্থকদের উদ্দেশে মামদানি লেখেন, “নেলসন ম্যান্ডেলার কথায়, ‘এটা সবসময়ই অসম্ভব মনে হয়, যতক্ষণ না সেটা সম্ভব হয়ে ওঠে। বন্ধুরা, সেটা সম্ভব হয়েছে। আর আপনারাই সেটা করেছেন। নিউ ইয়র্ক সিটির মেয়র পদে ডেমোক্র্যাট মনোনীত প্রার্থী হতে পেরে আমি সম্মানিত।”
আরো পড়ুন:
ইরানে ইসরায়েল-যুক্তরাষ্ট্রের হামলার নিন্দা জানাল ব্রিকস
হামলায় ইরানের পারমাণবিক স্থাপনা ধ্বংস হয়নি: মার্কিন গোয়েন্দা তথ্য
প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যাচ্ছে, মামদানি পেয়েছেন ৪৩ দশমকি ৫ শতাংশ ভোট, যেখানে কুয়োমো পেয়েছেন ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ। কুইন্স, ব্রুকলিন ও ম্যানহাটনের বেশিরভাগ জায়গায় মামদানি বড় জয় পেয়েছেন, আর কুয়োমো জিতেছেন ব্রঙ্কস ও স্টেটেন আইল্যান্ডে।
প্রাইমারি নির্বাচনের আগে মামদানি তুলনামূলকভাবে অপরিচিত ছিলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ গ্রহণের পর জাতীয় রাজনীতিতে চলমান অস্থিরতার সময় নিজেকে ‘ডেমোক্রেটিক সোশ্যালিস্ট’ হিসেবে উপস্থাপন করে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন।
তার গল্প অনেকটা আলেকজান্দ্রিয়া ওকাসিও-কোর্তেজের মতো, যিনি ২০১৮ সালে নিউ ইয়র্কের কংগ্রেসনাল নির্বাচনে চমকপ্রদ জয়ের মাধ্যমে মার্কিন রাজনীতিতে পরিচিত হয়ে ওঠেন। তবে এই প্রাইমারি নির্বাচন এখনো শেষ হয়নি।
নিউ ইয়র্কের প্রাইমারি ভোটিং প্রক্রিয়ায় ভোটাররা তাদের পছন্দের শীর্ষ পাঁচজন প্রার্থীকে র্যাংক করতে পারেন। তাই যারা মামদানিকে প্রথম পছন্দ হিসেবে ভোট দেননি, তাদের ভোটও আগামী কয়েক দিনে গণনা করা হবে।
বার্তা সংস্থা এপির মতে, মামদানির অন্যান্য প্রার্থীদের সঙ্গে কৌশলগত জোট গঠনের ফলে তিনি সম্ভবত ৫০ শতাংশের গণ্ডি পেরিয়ে যাবেন।
নিউ ইয়র্ক সিটি ডেমোক্র্যাটদের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। ফলে মামদানিকে ঘিরে সম্ভাবনা জোরদার হচ্ছে যে, তিনি শহরের প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত এবং প্রথম মুসলিম মেয়র হবেন; যদি তিনি বর্তমান মেয়র এরিক অ্যাডামসকে নির্বাচনে হারাতে পারেন।
অ্যাডামস এবার একজন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন আর রিপাবলিকান দলের প্রার্থী হচ্ছেন কার্টিস স্লিওয়া।
মামদানি জন্মগ্রহণ করেন উগান্ডায়, ভারতীয় বংশোদ্ভূত বাবা-মায়ের ঘরে এবং ছোটবেলায় যুক্তরাষ্ট্রে চলে আসেন। তার মা মীরা নায়ার একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র পরিচালক আর তার উগান্ডায় জন্ম নেওয়া বাবা মাহমুদ মামদানি কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক। মামদানির দাদা ভারতীয়।
ফিলিস্তিনি আন্দোলনের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ায় নিউ ইয়র্কের কিছু মানুষ তার বিরুদ্ধে ইহুদিবিদ্বেষের অভিযোগ তোলেন। তবে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গাজার যুদ্ধকে সমর্থন করা নিয়ে সমালোচনামুখর প্রগতিশীল ও তরুণ ভোটারদের সমর্থন লাভ করেন।
‘আন্তর্জাতিক আইন রক্ষার দায়িত্ব’
নিউ ইয়র্কে ইসরায়েলের বাইরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ইহুদি জনগোষ্ঠী রয়েছে, পাশাপাশি এখানে একটি উল্লেখযোগ্য মুসলিম জনগোষ্ঠীও বাস করে। তাই ইসরায়েল-ফিলিস্তিন সংঘাত নিউ ইয়র্ক সিটি নির্বাচনেও ভোটারদের মধ্যে বিশেষ প্রভাব ফেলবে।
ডেমোক্র্যাট প্রাইমারি ভোটের কয়েকদিন আগে স্টিফেন কোলবার্টের টেলিভিশন অনুষ্ঠান দ্য লেট শো উইথ স্টিফেন কোলবার্ট-এ এসব বিষয়ে সরাসরি কথা বলেন মামদানি।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রখ্যাত কৌতুকশিল্পী কোলবার্টের প্রশ্নের জবাবে মামদানি বলেন, তিনি ইসরায়েলের অস্তিত্বের অধিকারের সঙ্গে একমত। তবে একই সঙ্গে তিনি বলেন, “আন্তর্জাতিক আইন রক্ষা করার দায়িত্বও তাদের রয়েছে।”
তিনি যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে ইহুদিদের বিরুদ্ধে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ার ঘটনার কথা স্বীকার করে নিউ ইয়র্কে একটি কমিউনিটি সেফটি ডিপার্টমেন্ট গঠনের প্রস্তাব দেন এবং ঘৃণামূলক অপরাধ প্রতিরোধ কার্যক্রমের বাজেট ৮০০ শতাংশ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেন।
মামদানির প্রচারে নিউ ইয়র্কবাসীর জীবনযাত্রার ব্যয়সংক্রান্ত সমস্যাগুলোকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়, যেমন ভাড়ার হার কমিয়ে আনা, ফ্রি বাস সার্ভিস এবং সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন মুদি দোকান চালুর প্রতিশ্রুতি।
৬৭ বছর বয়সি অ্যান্ড্রু কুয়োমো শুরুতে মূলধারার প্রার্থী হিসেবে বিবেচিত ছিলেন কিন্তু তার প্রচার ঘিরে নানা বিতর্ক মামদানিকে অতিরিক্ত সুবিধা এনে দেয়।
২০২১ সালে যৌন অসদাচরণের অভিযোগে কুয়োমোকে নিউ ইয়র্কের গভর্নরের পদ থেকে সরে দাঁড়াতে হয়। আর তার মেয়র পদে প্রার্থী হওয়াকে অনেকে তার ভাবমূর্তি পুনর্গঠনের প্রচেষ্টা হিসেবে দেখেছেন।
তবে নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৫ মিলিয়ন ডলারের সুপার প্যাক (স্বতন্ত্র ব্যয়ভিত্তিক রাজনৈতিক কমিটি) এবং সাবেক মেয়র ও ধনকুবের মাইকেল ব্লুমবার্গের মতো প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সমর্থন সত্ত্বেও কুয়োমো তার পুরোনো কেলেঙ্কারির ছাপ মুছতে পারেননি।
ঢাকা/রাসেল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর ষ ট র য ক তর ষ ট র র ন উ ইয়র ক ম মদ ন ক
এছাড়াও পড়ুন:
ভারতের নির্বাচনে ব্রাজিলের মডেল কীভাবে ‘২২ বার ভোট’ দিলেন
ভারতে ভোট জালিয়াতির ঘটনায় ব্রাজিলের এক মডেলের নাম জড়িয়ে গেছে। ভারতের উত্তরাঞ্চলীয় রাজ্য হরিয়ানার বিভিন্ন ভোটার কার্ডে ভোটারের ছবির জায়গায় লারিসা নেরি নামের ওই মডেলের ছবি দেখা গেছে। এ ক্ষেত্রে নামের জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন হিন্দু নাম ব্যবহার করা হয়েছে।
হরিয়ানায় গত বছর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ১০টি কেন্দ্রে ২২ বার ভোটার কার্ডে নেরির ছবি ব্যবহার করে ভোট দেওয়া হয়েছে।
ভারতের বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, এ ধরনের নকল ভোটার কার্ডগুলো হরিয়ানায় গত বছরের নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।
রাহুল বলেন, ‘তিনি (ব্রাজিলীয় মডেল) হরিয়ানায় ২২ বার ভোট দিয়েছেন। তিনি হরিয়ানার ভিন্ন ভিন্ন ১০টি বুথে ভোট দিয়েছেন এবং তাঁর নামের জায়গায় সীমা, সুইটি, সরস্বতী, রেশমি, বিমলাসহ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এটি কেন্দ্র থেকে নিয়ন্ত্রিত কর্মকাণ্ড। কেউ এই নারীকে ভোটার তালিকায় কেন্দ্রীয়ভাবে ঢুকিয়েছে, বুথ পর্যায়ে নয়।’
ভারতের বিরোধী নেতা রাহুল গান্ধী দাবি করেছেন, এ ধরনের নকল ভোটার কার্ডগুলো হরিয়ানায় গত বছরের নির্বাচনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) জয়ের ক্ষেত্রে সহায়ক হয়েছে।সংবাদ সম্মেলনে রাহুল গান্ধী সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই নারী কে? তাঁর বয়স কত? তিনি কোন রাজ্য থেকে এসেছেন? আমাকে কিছু ধারণা দিন।’
রাহুল বলতে থাকেন, ‘তিনি (ওই নারী) ব্রাজিলের নাগরিক। একজন ব্রাজিলীয় মডেল। এটি একটি স্টক ফটোগ্রাফ।’
একজন ব্রাজিলীয় নারীর নাম কীভাবে হরিয়ানার নির্বাচনী তালিকায় যুক্ত হলো, সে প্রশ্ন তুলেছেন রাহুল।
যে নারীকে নিয়ে এত কিছু, সেই ব্রাজিলীয় মডেল বলছেন, তিনি এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না। তাঁর ব্যবহৃত ছবিটিও পুরোনো।
অনলাইনে পোস্ট করা একটি ভিডিওতে ব্রাজিলীয় মডেল নেরি বলেন, ‘তারা আমার পুরোনো ছবি ব্যবহার করছে। এটা একটা পুরোনো ছবি। আমার বয়স তখন ১৮ বা ২০ বছর ছিল। আমি জানি না, এটা কোনো নির্বাচন বা ভোটসংক্রান্ত কিছু কি না…এবং সেটা ভারতে। উফ! তারা মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার জন্য আমাকে ভারতীয় হিসেবে দেখাচ্ছে। এ কেমন পাগলামো! কী উদ্ভট ব্যাপার! আমরা কোন দুনিয়ায় আছি?’
রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস দল ২০২৪ সালে হরিয়ানায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। তবে তারা ওই নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে হেরে যায়। তখন কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে শুধু ১১ হাজার ২০০ ভোটের ব্যবধান ছিল।রাহুল গান্ধীর অভিযোগ, হরিয়ানার ২ কোটি নিবন্ধিত ভোটারের মধ্যে প্রতি আটজনের একজন ভুয়া।
কংগ্রেসের নেতা বলেন, এক পর্যালোচনায় বেশ কিছু অনিয়ম পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রয়েছে—একই ছবির বারবার ব্যবহার, একই ঠিকানায় একসঙ্গে বহু ভোটারের নিবন্ধন এবং বিভিন্ন রাজ্যের ভোটার তালিকায় একই ব্যক্তির নাম থাকা।
রাহুল গান্ধীর দল কংগ্রেস ২০২৪ সালে হরিয়ানায় অনুষ্ঠিত নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিল। জরিপও সেই কথা বলছিল। তবে তারা ওই নির্বাচনে সামান্য ব্যবধানে হেরে যায়। তখন কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে শুধু ১১ হাজার ২০০ ভোটের ব্যবধান ছিল।
রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমি নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছি, ভারতের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করছি।’
রাহুল অন্য একজন নারীর ছবি দেখিয়ে অভিযোগ করেন, ২২৩ জন ভোটারের জায়গায় ওই নারীর ছবি ব্যবহার করা হয়েছে এবং দুটি ভোটকেন্দ্রে এ ভোটগুলো দেওয়া হয়েছে। ভোটার পরিচিতি কার্ডে ভিন্ন ভিন্ন ঠিকানা, নাম ও বয়স উল্লেখ করা হয়েছে।
রাহুল বলেন, ‘প্রথমবার যখন আমি এই তথ্য জানতে পেরেছিলাম তখন আমি একদমই বিশ্বাস করতে পারিনি। বিভিন্ন সূত্রের কাছ থেকে এ ব্যাপারে যাচাই করার জন্য আমি দলের সবাইকে বলেছিলাম। আজ আপনারা যা দেখছেন, তা সেই প্রক্রিয়ারই ফল।’
এ কংগ্রেস নেতার অভিযোগ, ভারতের নির্বাচন কমিশন স্বচ্ছভাবে কাজ করছে না। তারা বিজেপিকে সহায়তা করছে এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভোটার তালিকায় জালিয়াতি করছে।
তবে নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি নির্বাচনের অনেক আগেই সব রাজনৈতিক দলকে ভোটার তালিকা দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে কেউ কোনো আপত্তি জানায়নি।