বিদ্যালয়ের পরিচ্ছন্নতাকর্মীর রাজকীয় বিদায়
Published: 25th, June 2025 GMT
৩৫ বছরের চাকরিজীবনের শেষ দিনে এমন সম্মান পাবেন, তা কল্পনাও করেননি ফেনীর সেন্ট্রাল হাই স্কুলের পরিচ্ছন্নতাকর্মী সন্তোষ লাল। বিদায়বেলায় গলায় ফুলের মালা, হাতে উপহার, চারপাশে ভালোবাসার ডালি নিয়ে হাজির হন শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সহকর্মীরা। সুসজ্জিত গাড়িতে করে তাকে পৌঁছে দেওয়া হয় বাড়ি পর্যন্ত। আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন সন্তোষ লালসহ সবাই।
বিদ্যালয়ের মিলনায়তনে রবিবার (২২ জুন) দুপুরে সন্তোষ লালকে দেওয়া হয় বিদায় সংবর্ধনা। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন। প্রধান অতিথি ছিলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল।
বিদায় অনুষ্ঠানে নগদ অর্থ, আসবাবপত্রসহ বিভিন্ন উপহার পেয়ে আবেগ ধরে রাখতে পারেননি সন্তোষ লাল। কান্নাভেজা কণ্ঠে তিনি বলেন, “একজন সাধারণ কর্মচারী হিসেবে জীবনে কখনো ভাবিনি যে, এমন ভালোবাসা নিয়ে বিদায় নিতে পারব। এই স্কুলই আমার পরিবার।”
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদায়ী উপহার হিসেবে স্কুলের বিভিন্ন শাখা থেকে সম্মিলিতভাবে প্রায় ৫ লাখ টাকার বেশি অর্থ সহায়তা দেওয়া হয়েছে সন্তোষ লালকে। এর মধ্যে দিবা শাখার শিক্ষক পরিষদ ৫৪ হাজার, প্রভাতী শাখা ৫০ হাজার, দিবা শাখার শিক্ষার্থীরা ৬০ হাজার ৫৭০, প্রভাতী শাখার শিক্ষার্থীরা ৫৯ হাজার ১৩০ এবং স্কুলের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংগঠন ‘সেন্ট্রালিয়ান’-এর পক্ষ থেকে দেওয়া হয় ১ লাখ ৭৬ হাজার ৭৫০ টাকা।
বিদ্যালয় চত্বরে স্কাউটস গ্রুপের পক্ষ থেকে সন্তোষ লালকে গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। এর পর ফুলে সজ্জিত গাড়িতে করে বাসায় পৌঁছে দেওয়া হয় সন্তোষ লালকে, যেন কোনো বীরের বিজয়যাত্রা।
১৯৭৩ সালে মাত্র ৯-১০ বছর বয়সে মা সুন্দরী রানীর হাত ধরে ফেনী সেন্ট্রাল স্কুলে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে পা রাখেন সন্তোষ লাল। পরে বাবা কানু লালও একই পেশায় যুক্ত হন। সেই ধারাবাহিকতায় স্ত্রী সনজু রানীসহ সন্তোষ লালও দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে ওই স্কুলের পরিচ্ছন্নতা রক্ষার দায়িত্ব পালন করেন।
বর্তমানে সুলতানপুরের বাসিন্দা তিন কন্যা সন্তানের জনক সন্তোষ লাল। তিনি হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং পায়ের সংক্রমণে ভুগছেন। অসুস্থতার কারণেই চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন তিনি।
ফেনী সেন্ট্রাল হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেছেন, “সন্তোষ দার মতো দায়িত্বশীল, সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মচারীকে সম্মান জানিয়ে বিদায় দিতে পারা আমাদের সৌভাগ্য।”
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক শিক্ষক নিখিল চন্দ্র পাল, শাহজাহান চৌধুরী, বর্তমান সিনিয়র শিক্ষক তাজুল ইসলাম ভুঞা, সহকারী প্রধান শিক্ষক জহিরুল হক চৌধুরী বেলাল, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ইয়াকুব নবী, ছাত্রদলের সভাপতি সালাউদ্দিন মামুন, যুগ্ম সম্পাদক শওকত আলী জুয়েল পাটোয়ারী, সাংগঠনিক সম্পাদক জাকির হোসেন রিয়াদ, প্রভাতী ও দিবা শাখার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ শতাধিক ‘সেন্ট্রালিয়ান’।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আলাল উদ্দিন আলাল বলেছেন, “সন্তোষ দা কেবল একজন কর্মচারী নন, এই বিদ্যালয়ের ইতিহাসের অংশ। আমরা চাই, এমন মানুষের সম্মানজনক বিদায় যেন একটি সংস্কৃতি হয়ে দাঁড়ায়।”
ঢাকা/সাহাব উদ্দিন/রফিক
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
টের স্টেগেনের অধিনায়কত্ব কেড়ে নিল বার্সা, নতুন অধিনায়ক কে
ঝামেলার শুরুটা করেছিলেন মার্ক–আন্দ্রে টের স্টেগেন।
চোটের কারণে দীর্ঘদিন ধরে মাঠের বাইরে বার্সেলোনার জার্মান গোলকিপার। বার্সেলোনা চেয়েছিল, লা লিগার চোট–বদলি নিয়মের অধীনে নতুন গোলকিপার হোয়ান গার্সিয়াকে নিবন্ধন করাতে। কিন্তু টের স্টেগেন সাফ জানিয়ে দেন, নিজের চিকিৎসা–সংক্রান্ত কোনো তথ্য তিনি লা লিগার কাছে দেবেন না। এতে গত জুনে এস্পানিওল থেকে আনা গোলকিপার হোয়ান গার্সিয়াকে নিয়ে বার্সার পরিকল্পনা আর এগোয়নি।
আরও পড়ুনবিশ্বকাপ জয়ের পর আর্জেন্টিনা দলের কে কত গোল করেছেন, ট্রফি জিতেছেন কে বেশি১ ঘণ্টা আগেএবার পাল্টা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিল বার্সা। গতকাল টের স্টেগেনের কাছ থেকে অধিনায়কত্ব কেড়ে নিয়েছে কাতালান ক্লাবটি। এ নিয়ে বার্সার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘মার্ক–আন্দ্রে টের স্টেগেনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক কার্যক্রম শুরুর পর এবং বিষয়টি পুরোপুরি সমাধান না হওয়া পর্যন্ত পরিচালক পর্ষদ ও কোচিং স্টাফের সঙ্গে পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে ক্লাব সাময়িকভাবে তাকে মূল দলের অধিনায়কত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ এ সময়টায় বর্তমান সহ–অধিনায়ক রোনালদ আরাউহো প্রথম অধিনায়কের দায়িত্ব গ্রহণ করবেন বলেও জানিয়েছে বার্সেলোনা।
হাঁটুর চোটে গত মৌসুমে দীর্ঘদিন মাঠের বাইরে ছিলেন টের স্টেগেন। গত মাসের শেষ দিকে পিঠে অস্ত্রোপচার হয়। তখন জানানো হয়, অন্তত তিন মাস বাইরে থাকতে হবে ৩৩ বছর বয়সী ফুটবলারকে। লা লিগার নিয়ম অনুযায়ী, কোনো খেলোয়াড় যদি চার মাসের বেশি সময় মাঠের বাইরে থাকেন, তাহলে তাঁর বার্ষিক বেতনের ৮০ শতাংশ বেতন বাবদ ক্লাবের মোট খরচের হিসাব থেকে বাদ দেওয়া যাবে।
লা লিগার নিয়ম অনুযায়ী, সব দলকে বেতন সীমা নীতি মেনে চলতে হয়। টের স্টেগেন বার্সায় সবচেয়ে বেশি বেতন পাওয়া খেলোয়াড়দের একজন। তাঁর বেতনের ৮০ শতাংশ হিসাব থেকে বাদ দিতে পারলে ক্লাবটির জন্য বেতন সীমা নীতি মেনে অন্য একাধিক খেলোয়াড় নিবন্ধন করানোর পথটা সহজ হয়ে যায়।
আরও পড়ুনচীন সফর বাতিল করে অক্টোবর ও নভেম্বরে যাদের মুখোমুখি হবে আর্জেন্টিনা৫ ঘণ্টা আগেবার্সা চেয়েছিল, টের স্টেগেনের বেতনের কিছু অংশ ব্যবহার করে চোট–বদলি নিয়মে একজন গোলকিপার লা লিগায় নিবন্ধন করাতে। কিন্তু ঝামেলা হলো, চোট-বদলির নিয়ম ব্যবহার করতে হলে আগে চোট পাওয়া খেলোয়াড়ের লিখিত সম্মতি লাগে। এতে তাঁর স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য পর্যালোচনা করতে পারে লা লিগা। কিন্তু টের স্টেগেন এই তথ্য দিতে রাজি না হওয়ায় চোট–বদলি নিয়ম কাজে লাগাতে পারবে না বার্সা। আর এখন বার্সেলোনার যা আর্থিক অবস্থা, টের স্টেগেনের বেতনের বড় অংশ হিসাব থেকে বাদ দিতে না পারলে লিগে তারা নতুন কোনো খেলোয়াড়কে নিবন্ধন করাতে পারবে না। টের স্টেগেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, তিনি মাত্র তিন মাস মাঠের বাইরে থাকবেন। লা লিগার নিয়ম অনুযায়ী, অন্তত চার মাস মাঠের বাইরে থাকলে সেটাকে দীর্ঘমেয়াদি চোট হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
টের স্টেগেনের সঙ্গে বার্সার এই ঝামেলা ক্লাবটির আর্থিকভাবে ভোগান্তিরও একটি উদাহরণ। কয়েক বছর ধরেই আর্থিক সমস্যায় ভুগে নতুন খেলোয়াড় সই করানো নিয়ে লড়াই করতে হচ্ছে বার্সাকে।
লা লিগার নতুন মৌসুমে বার্সেলোনা প্রথম ম্যাচটা খেলবে ১৬ আগস্ট, মায়োর্কার বিপক্ষে। কিন্তু এর আগে নতুন আনা গোলরক্ষক গার্সিয়াকে নিবন্ধন করাতে না পারলে ভালো ঝামেলায় পড়বেন বার্সেলোনা কোচ হান্সি ফ্লিক। ইনাকি পেনা এখন দলে একমাত্র ফিট গোলকিপার, যিনি লিগে নিবন্ধিত। আরেক গোলকিপার ভয়েচেক সেজনিরও নিবন্ধন বাকি।