দেশের প্রধান বিনোদনকেন্দ্র কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে প্রতিদিন হাজারো পর্যটকের সমাগম ঘটে। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্র ও শনিবার সৈকতের কলাতলী থেকে সুগন্ধা-লাবণী পয়েন্ট পর্যন্ত ৫ কিলোমিটারে লাখো পর্যটকের ঢল নামে। ভিড়ের এই সময় প্রায় প্রতিদিন একাধিক শিশু হারিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম ৭ দিনে অন্তত ১১ জন শিশু নিখোঁজ হয়। এর মধ্যে গত শুক্রবার এক দিনে নিখোঁজ হয়েছে ৫ শিশু। যাদের পরবর্তী সময়ে উদ্ধার করে টুরিস্ট পুলিশ।

টুরিস্ট পুলিশ, লাইফগার্ড ও বিচ–কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ইদানীং সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের শিশুসন্তান হারানোর ঘটনা উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছে। হারিয়ে যাওয়া বেশির ভাগ শিশুর বয়স ৩ থেকে ৬ বছর, এর মধ্যে মেয়েশিশুর সংখ্যা বেশি।

এ প্রসঙ্গে সৈকত ভ্রমণে আসা পর্যটকদের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ প্রথম আলোকে বলেন, ৯৫ শতাংশ শিশু হারিয়ে যাচ্ছে অভিভাবকদের উদাসীনতায়। অনেক অভিভাবক সন্তানদের সৈকতের বালুতে রেখে সমুদ্রের পানিতে নেমে গোসলে ব্যস্ত থাকেন। তখন ভিড়ের মধ্যে শিশুসন্তানটি হারিয়ে যায়। হারিয়ে যাওয়া মেয়েশিশুরা পাচারকারীর খপ্পরে পড়তে পারে—এই আশঙ্কায় শুধু শিশুদের উদ্ধার এবং নজরদারির জন্য ১১ সদস্যের একটি টুরিস্ট পুলিশ দলকে সারাক্ষণ ব্যস্ত রাখতে হচ্ছে। গত ৯ মাসে টুরিস্ট পুলিশ সৈকতে হারিয়ে যাওয়া ১৭২ জন শিশুকে উদ্ধার করে অভিভাবকের কাছে হস্তান্তর করেছে।

টুরিস্ট পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গত ৯ মাসে পুলিশ সৈকত এলাকা থেকে ৩৪ জন ছিনতাইকারী, ৪৪ জন ভাসমান অপরাধী, ১০ জন উত্ত্যক্তাকারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, সমুদ্রসৈকতে গোসলে নামলে একটি চক্র নারী পর্যটকদের গোসলের ছবি তুলে অপকর্ম চালায়। সময় সুযোগ বুঝে অনেকে মুঠোফোন, হাতঘড়ি, ক্যামেরাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি ও ছিনতাই করে। অন্ধকারে চলে মাদক বেচাবিক্রি। সৈকতকে অপরাধমুক্ত রাখতে টুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যেও শিশু হারানোর ঘটনা বেড়েই চলেছে। কোনো শিশু হারিয়ে গেলে উদ্ধারের পর তার মা–বাবা অথবা অভিভাবকদের উদাসীনতার জন্য মুচলেকা দিতে হচ্ছে।

টুরিস্ট পুলিশের দেওয়া তথ্যমতে, গত ৯ মাসে পুলিশ সৈকত এলাকা থেকে ৩৪ জন ছিনতাইকারী, ৪৪ জন ভাসমান অপরাধী, ১০ জন উত্ত্যক্তকারীকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠিয়েছে। অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, সমুদ্রসৈকতে গোসলে নামলে একটি চক্র নারী পর্যটকদের গোসলের ছবি তুলে অপকর্ম চালায়। সময় ও সুযোগ বুঝে অনেকে মুঠোফোন, হাতঘড়ি, ক্যামেরাসহ মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি ও ছিনতাই করে। অন্ধকারে চলে মাদক বেচাবিক্রি। সৈকতকে অপরাধমুক্ত রাখতে টুরিস্ট পুলিশের কার্যক্রম বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যেও শিশু হারানোর ঘটনা বেড়েই চলেছে। কোনো শিশু হারিয়ে গেলে উদ্ধারের পর তার মা–বাবা অথবা অভিভাবকদের উদাসীনতার জন্য মুচলেকা দিতে হচ্ছে।

লাইফ গার্ডের কয়েকজন কর্মী জানান, মা–বাবা কিংবা অভিভাবকদের উদাসীনতা, নাকি কোনো চক্রের কারণে শিশুরা হারিয়ে যাচ্ছে সে রহস্য উদ্‌ঘাটন করা দরকার। কারণ, হারানো শিশুরা উদ্ধারের পর ঠিকমতো ঘটনার তদন্ত হয় না।

৯ মাসে ১৭২ শিশু উদ্ধার

গত শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টা। চার বছর বয়সী শিশুকন্যাকে নিয়ে সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে নামেন ভোলার চরফ্যাশনের এক দম্পতি। তখন সৈকতে ৫০ থেকে ৬০ হাজার পর্যটকের ভিড় ছিল।

ভিড়ের মধ্যে হঠাৎ মেয়েকে হারিয়ে পাগলপ্রায় ওই দম্পতি। এরপর তাঁরা সৈকতে পর্যটকের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা টুরিস্ট পুলিশের শরণাপন্ন হন। টুরিস্ট পুলিশ আধঘণ্টা সৈকতে প্রচারণা এবং তল্লাশি চালিয়ে ঝাউবাগান এলাকা থেকে উদ্ধার করে ওই শিশুকে। এরপর তাকে মা-বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়।

টুরিস্ট পুলিশের এসআই শিমুল হালদার বলেন, মা–বাবাকে কাছে না পেয়ে হারিয়ে গিয়ে শিশুটি কান্নাকাটি করছিল। মা–বাবার নাম ছাড়া বাড়ির ঠিকানাও বলতে পারছিল না। পরে মাইকিং করে তার মা–বাবাকে শনাক্ত করা হয়। এরপর শিশুটিকে তাঁদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

একই দিন বেলা পৌনে দুইটার দিকে সুগন্ধা সৈকত থেকে হারিয়ে যায় সাত বছর বয়সী একটি মেয়েশিশু। মা–বাবার সঙ্গে ময়মনসিংহ থেকে বেড়াতে এসেছিল সে। মা–বাবার সঙ্গে সমুদ্রেও নেমেছিল সে। পর্যটকের ভিড়ে কখন যে মেয়েটি হারিয়ে যায়, টেরই পাননি মা–বাবা। এরপর দুজনের চলে কান্নাকাটি।

টুরিস্ট পুলিশের এসআই সুব্রত বাড়ৈ বলেন, সৈকত এলাকায় ঘণ্টাব্যাপী তল্লাশি ও প্রচারণা চালিয়ে ওই শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়। হারানো মেয়েকে পেয়ে মা-বাবার মুখে হাসি ফোটে, কিন্তু চোখেমুখে তখনো আতঙ্কের ছাপ দেখা গেছে।

অনেক অভিভাবক সৈকতে এসে শিশু সন্তানের দিকে নজর রাখতে ভুলে যান। ব্যস্ত হয়ে পড়েন সেলফি তোলায় ও গোসলে। গত শুক্রবার কক্সবাজারের সুগন্ধা পয়েন্টে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর যটক র সন ত ন ছ নত ই অপর ধ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

‘দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’ লিখে রেখে যাওয়া নবজাতকের অভিভাবক হতে কয়েক শ ফোনকল

কেউ এসেছেন সৈয়দপুর থেকে, কেউ–বা নওগাঁ থেকে। কেউ নিঃসন্তান, কারও আবার ছেলেসন্তান থাকলেও মেয়ে নেই। দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিরকুট লিখে এক মায়ের রেখে যাওয়া বাচ্চার অভিভাবক হতে আগ্রহী তাঁরা। কর্তৃপক্ষের পরামর্শে তাঁরা আবেদনও করেছেন। এ ছাড়া বাচ্চাটির অভিভাবক হওয়ার জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাসপাতালের পরিচালকসহ কর্মকর্তাদের কাছে কয়েক শ ফোনকল এসেছে।

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালের পঞ্চম তলায় শিশু ওয়ার্ডের শয্যায় এক নবজাতক কন্যাসন্তান রেখে যান তাঁর স্বজনেরা। শয্যার পাশে একটি বাজারের ব্যাগে একটি চিরকুট পাওয়া যায়। শিশুটির মা চিরকুটে লিখেছেন, ‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন।’ এরপর এ নিয়ে প্রথম আলোসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। তারপর থেকে বাচ্চাটির অভিভাবক হতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন হাসপাতালে ছুটে আসছেন এবং কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ শিশুবিশেষজ্ঞ শেখ সাদেক আলী বলেন, ‘বাচ্চাটির আজ একটু খিঁচুনির মতো দেখা দিয়েছে। দুধ পান করছে কম। অন্য সবকিছু স্বাভাবিক আছে। একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, সবার আগে বাচ্চাটির সুস্থতা। পরে অন্য সব বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে।

আজ শনিবার দুপুরে হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, শিশু ওয়ার্ডের সামনে মানুষের ভিড়। কেউ বাচ্চাটির দত্তক নিতে, কেউ–বা একনজর দেখতে এসেছেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, বাচ্চা রেখে যাওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর হাসপাতালের পরিচালক, ওয়ার্ড মাস্টারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে তিন শতাধিক ফোন এসেছে।

দুপুর সাড়ে ১২টায় হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার সুমন কুমারের কক্ষে বাচ্চা নিতে আসেন মুনিরা-আনোয়ার দম্পতি। তাঁদের বাড়ি জেলার বিরামপুর উপজেলায়। মুনিরা জানান, তাঁদের দুই ছেলে আছে। কিন্তু মেয়ে নেই। তাঁর একটি অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু ছেলেরা তাঁদের একটি বোন চায়।

বাচ্চাটির অভিভাবক হওয়ার জন্য হাসপাতালের পরিচালক বরাবর অনেকে আবেদন করেছেন। পেশায় ব্যবসায়ী এক ব্যক্তি আবেদনপত্রে লিখেছেন, বিয়ের ১০ বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি এখনো বাবা হতে পারেননি। আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে তিনি বাচ্চাটির অভিভাবক হতে চান।

দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ফজলুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত শিশুটির সুস্থতা। এরপর সমাজসেবা অধিদপ্তরের শিশুকল্যাণ বোর্ড আছে। বোর্ডের সদস্যরা বসে যাঁরা আবেদন করেছেন, সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। এ ক্ষেত্রে আর্থিকভাবে সচ্ছল নিঃসন্তান দম্পতিকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়ে থাকে।’

সমাজসেবা কার্যালয়ের পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) হা‌বিবা আক্তার বলেন, বাচ্চাটির দায়িত্ব নিতে আগ্রহী অনেক দম্পতি ইতিমধ্যে যোগাযোগ করেছেন। কেউ কেউ হাসপাতালের পরিচালক বরাবর আবেদনও করেছেন। তবে জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের শিশুকল্যাণ কমিটি আছে। বাচ্চাটির সুস্থতা সাপেক্ষে ওই কমিটি আবেদনপত্রগুলো যাচাই-বাছাই করবে। বিভিন্ন শর্তসাপেক্ষে রেজল্যুশনের পর বাচ্চা হস্তান্তর হবে।

বাচ্চাটির জন্য তারেক রহমানের উপহার

এদিকে নবজাতক শিশুটির জন্য উপহারসামগ্রী পাঠিয়েছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। আজ দুপুরে তারেক রহমানের পক্ষে বিএনপির স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক এবং নিপীড়িত নারী-শিশু আইনি ও স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা সেলের প্রধান সমন্বয়কারী রফিকুল ইসলাম হাসপাতালের পরিচালকের হাতে উপহারসামগ্রী তুলে দেন। এতে বাচ্চাটির জন্য পোশাক ও নগদ কিছু অর্থ আছে।

এ সময় বিএনপির নিপীড়িত নারী-শিশু আইনি ও স্বাস্থ্যসেবা সহায়তা সেলের দিনাজপুর শাখার সদস্য চিকিৎসক মাসতুরা বেগম, জিয়াউল হক, নুর জামান সরকার, তামান্না নুসরাত, হাফিজুল ইসলাম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

আরও পড়ুন‘পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাচ্চা রেখে গেলাম, দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’০৭ নভেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পার্বতীপুর-সৈয়দপুর ৩৩ হাজার ভোল্টেজ সঞ্চালন লাইনের ১৭ কিলোমিটারের তার চুরি
  • আকুর বিল পরিশোধের পর কমল রিজার্ভ
  • ‘জেমস বন্ড’ সিরিজের পরিচালক মারা গেছেন
  • গলায় ছুরিকাঘাত নিয়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দেন অটোরিকশাচালক, পরে মৃত্যু
  • কাটা গলা নিয়ে রিকশাচালিয়ে ৩ কিলোমিটার, হাসপাতালে মৃত্যু
  • শরীয়তপুরে জাতীয় যুবশক্তির কমিটি ঘোষণার ২০ মিনিট পরই সদস্যসচিবের পদত্যাগ
  • ৩৭ রানে ৮ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তানের কাছে সিরিজ হারল দ. আফ্রিকা
  • ‘দয়া করে কেউ নিয়ে যাবেন’ লিখে রেখে যাওয়া নবজাতকের অভিভাবক হতে কয়েক শ ফোনকল
  • জাহাজ চলাচল বন্ধ, ৮ দিনেও সেন্ট মার্টিন যাননি কোনো পর্যটক