সংস্কার কাজে আলোচনার চেয়ে খাওয়াদাওয়া বেশি হচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
Published: 26th, June 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ‘জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষ থেকে চলা সংস্কার কার্যক্রমে আলাপ–আলোচনার চেয়ে খাওয়াদাওয়া বেশি হচ্ছে। কিন্তু বিএনপি বিশ্বাস করে, চূড়ান্তভাবে আমরা একটি ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারব।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে এ কথা বলেন সালাহউদ্দিন আহমদ। নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের বীজ বিএনপির যুগপৎ আন্দোলনের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা হয়েছিল উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা জানতাম ফ্যাসিবাদের পতন হবে। কিন্তু কবে, কখন ও কোন পদ্ধতিতে হবে, সেটা আমাদের জানা ছিল না।’
সংস্কার প্রশ্নে বিএনপি সরকারকে সহযোগিতা করছে উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, দশ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন না, এ প্রস্তাবে বিএনপি একমত হয়েছে। এখানেই ফ্যাসিবাদকে রুখে দেওয়া হলো। এরপর বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে হবে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে সেটি হবে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ।
গণতন্ত্র রক্ষা করতে হলে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা জরুরি উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, গণমাধ্যমকর্মীরা যাতে মালিকের চাকরি না করে বিবেকের চাকরি করেন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
নির্বাচন কমিশন সত্যিকারের নির্বাচন পরিচালনা করতে পারলে ফ্যাসিবাদকে রুখে দেওয়া যায় বলে মনে করেন বিএনপির এই নেতা। শুধু নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করলেই ফ্যাসিবাদী কাঠামো রুখে দেওয়া যায় না, বলেন তিনি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করতে বেশি সক্রিয় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, অতীতে একজন স্বৈরাচার তৈরি হয়েছিল বলে নির্বাহী বিভাগকে ধ্বংস করা যাবে না। বরং একটি শক্তিশালী তত্ত্বাবধায়ক গঠন করতে হবে। যার মাধ্যমে ক্ষমতার ভারসাম্য রক্ষা ও গণতন্ত্র নিশ্চিত হবে। বিএনপি সংস্কার চায়, কিন্তু কোনো বিভাগকে দুর্বল করতে চায় না, বলেন এই নেতা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স ব ধ নত ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপির নতুন স্লোগান ‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ’: আমীর খসরু
বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, তারা ক্ষমতায় এলে মেগা প্রকল্প থেকে সরে এসে দক্ষতা উন্নয়ন (স্কিল ডেভেলপমেন্ট) খাতে বিনিয়োগের ওপর জোর দেবেন।
দেশের অর্থনীতিকে কোনো ‘গোষ্ঠী বিশেষের কাছে জিম্মি’ না রেখে এর সুফল প্রতিটি নাগরিকের কাছে পৌঁছে দিতে বিএনপি ‘অর্থনৈতিক গণতন্ত্রায়ণ’ মডেল গ্রহণ করবে। এটি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নতুন স্লোগান।
ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে আমীর খসরু এই ঘোষণা দেন।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) বিকালে ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদ হলরুমে ফরিদপুর বিভাগের ব্যবসায়ীদের নিয়ে এই সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ ইসলাম।
আমীর খসরু বলেন, “আমরা কোনো মেগা প্রজেক্টের দিকে যাব না, তার চেয়ে স্কিল ডেভেলপমেন্টের দিকে জোর দেব। আগামীর বাংলাদেশ গড়তে হলে বর্তমানে ফলো করা মডেল থেকে বেরিয়ে এসে এমন মডেলে যেতে হবে, যাতে এর সুফল প্রত্যেকটা নাগরিক পেতে পারে।”
বিনিয়োগের প্রধান লক্ষ্য হবে শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, “পাশাপাশি বিনামূল্যে জনগণকে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে বিএনপি। এই লক্ষ্য পূরণে অনেকগুলো নতুন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করতে হবে।”
বিএনপির এই নেতা দেশের ব্যবসায়িক জটিলতা কমাতে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে অনুমোদনের সময়সীমা বেঁধে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন।
তিনি বলেন, “একটা রেস্টুরেন্ট করতে গেলে ১৯টা অনুমতি নিতে হয় বাংলাদেশে। এই অনুমতি নিতে নিতে আর ব্যবসা করা হয়ে ওঠে না। সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে যেই অনুমোদনের দরকার, সেটি ১৫ দিনের মধ্যে করার ব্যবস্থা করতে হবে।”
“আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, ঘুষ-দুর্নীতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেক ডিসিশনের মধ্যে টাইম ফ্রেম থাকতে হবে। নির্দিষ্ট সময়সূচির মধ্যে যেকোনো পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে,” বলেন আমীর খসরু।
দেশের পুঁজিবাজার (ক্যাপিটাল মার্কেট) নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আমীর খসরু বলেন, “আমাদের ক্যাপিটাল মার্কেট শেয়ারবাজার নিয়ে গেছে। এই ক্যাপিটাল মার্কেটকে বড় করতে আমাদের বিগ প্ল্যান রয়েছে।”
পরিবেশ সুরক্ষায় গুরুত্ব দিয়ে তিনি বলেন, বিশ্ব এখন গ্রিন ইকোনমির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং বিএনপিও সেই ধারা অনুসরণ করবে।
“আমাদের বিনিয়োগগুলো এমন হবে, যেখানে আমাদের টাকা অপচয় হবে না, পরিবেশ বাধাগ্রস্ত হবে না,” যোগ করেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, ব্যবসাকে সহজ করতে যত আইন, পরিবেশ বদলান এবং বিনিয়োগ বাড়ান দরকার, তার সবকিছুই বিএনপি করবে।
তিনি বলেন, “আমরা আগে থেকেই এসব করে নিচ্ছি, কারণ ক্ষমতায় যাওয়ার পরে এসব করতে গেলে দেরি হয়ে যাবে। আমরা ডে ওয়ান থেকেই এ কাজ শুরু করতে চাই।”
স্পোর্টস ইকোনমি ও থিয়েটার ইকোনমির মতো পরিকল্পনার কথাও তুলে ধরেন আমীর খসরু।
সভায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক রাশেদ আল মাহমুদ আগামী ১৮ মাসে এক কোটি কর্মসংস্থান তৈরির ওপর জোর দেন।
বিএস জুট মিলের চেয়রাম্যানের বীর মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল হক শাহজাদা মিয়া প্রচলিত আইনের পরিবর্তন করে নতুন উদ্যোক্তা তৈরিতে ব্যাংক সলভেন্সি সনদকে প্রাধান্য দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এসএম ফজলুল হক ঘুষ ছাড়া কাজ না হওয়ার বাস্তব চিত্র তুলে ধরেন। ফরিদপুর জুট ফাইবার্সের পরিচালক চৌধুরী ফারিয়ান ইউসুফ জুট সেক্টরের উন্নতির জন্য পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেন।
সভাপতি শামা ওবায়েদ ইসলাম তার বক্তব্যে ফরিদপুরে যুবকদের জন্য একটি আইটি হাব প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের কথা জানান।
ঢাকা/তামিম/রাসেল