স্বৈরাচারের উৎপত্তি বন্ধ করতে হলে দেশে স্বাধীন নির্বাচন কমিশন প্রতিষ্ঠার কোনো বিকল্প নাই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, সরকার ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যদি সত্যিকার স্বাধীন নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করতে পারে সেখানেই কিন্তু স্বৈরাচারের উৎপত্তিটা বন্ধ হয়ে যেতে পারে। শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না। জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনে সংস্কার প্রশ্নে বিএনপির অবস্থান কি তা তুলে ধরতে গিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে নাগরিক ঐক্যের ১৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, নির্বাহী বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে, বিচার বিভাগকে বিচার বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে এবং আইনসভাকে আইনের কাজ করতে দিতে হবে এবং সেখানেই থাকবে একটা কমপ্লিট ব্যালেন্স অব পাওয়ার। এটাকে আমরা আইনের ভাষায় বলি একটা ‘সেপারেশন অব পাওয়ার থিউরি’। তাহলে কোনো অর্গান অন্য কোনো অর্গানের ওপরে ওভার অধিকার প্রয়োগ করতে পারবে না, হস্তক্ষেপ করতে পারবে না, একটা আরেকটা ব্যালেন্সিং পাওয়ার হিসেবে পাহারাদার হিসেবে কাজ করবে।

জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন প্রসঙ্গে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা সবাই আশাবাদী মানুষ। আলোচনা চলছে। তার চাইতে বেশি হয়তো খানা-পিনা চলছে। সময় অনেক লাগছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, আমরা একটা জায়গায় ঐক্যতে আসতে পারব। ঐক্যতে আসার জন্য বিএনপির পক্ষ থেকে কী কী বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে তা পুরো জাতি দেখছে। আমরা বলেছি, ১০ বছরের বেশি কোনো ব্যক্তি বাংলাদেশে প্রধানমন্ত্রীত্বের আসনে বসতে পারবেন না। এখানেই স্বৈরাচারকে রুখে দেওয়া হলো, এখানে ফ্যাসিবাদের উৎপত্তি বন্ধ করে দেওয়া হলো।

তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সমস্ত গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে গণতন্ত্র রক্ষাকবজ হিসেবে শক্তিশালী ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো হবে। তার জন্য বিচার বিভাগের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে। এটা (বিচার বিভাগের স্বাধীনতা) যদি আমরা সাংবিধানিকভাবে নিশ্চিত করতে পারি তাহলে এটা গণতন্ত্রের রক্ষাকবজ হবে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং নির্বাচনকালীন সময়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে হবে।

কোনো বিভাগের অধিকার খর্ব নয়
সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা ৭০ অনুচ্ছেদের মধ্যে সংস্কার এনেছি। সবাই ঐক্যমত্য হয়েছে। এখন আমরা একটা প্রস্তাব দিয়েছি যে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে উভয়পক্ষের সদস্যদের মধ্যে গোপন ব্যালটে স্বাধীনভাবে এমপিরা ভোট দেবেন। সেটা আরেকটা বিপ্লব হবে। আর প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ আমরা ১০ বছরে সীমাবদ্ধ করলাম। সেটা কী আমাদের বড় ধরনের অর্জন নয়? এখন আমরা যদি প্রতিক্ষেত্রে নির্বাহী বিভাগকে সীমাবদ্ধ করি আইনিভাবে-সাংবিধানিকভাবে তাহলে কিন্তু নির্বাহী বিভাগ দুর্বল হবে। যদি যে যার জায়গায় নির্বাহী বিভাগ, বিচার বিভাগ, আইনসভা তার তার সীমাবদ্ধের মধ্যে কাজ করতে বাধ্য থাকে সেই ব্যবস্থাটা আমরা গ্রহণ করি। তাহলে প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের সংস্কার হবে। আমরা সেই সংস্কার চাই যে, সংস্কারের মধ্যে কোনো বিভাগের ক্ষমতা খর্ব হবে না।

সালাহউদ্দিন বলেন, আমরা সেই সংস্কার চাই, যেই সংস্কারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো নির্মিত হবে, সেই সংস্কার আমরা চাই যার মধ্য দিয়ে রাষ্ট্র কাঠামো সংস্কার হবে, সংবিধানের গণতান্ত্রিক সংস্কার হবে এবং যার ফলশ্রুতিতে আমরা জাতির অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জন করতে পারব। সেই রাষ্ট্র ব্যবস্থা, সেই সমাজব্যবস্থা আমরা কামনা করি।

চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স আনতে হবে
সালাহ উদ্দিন বলেন, এখন জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশনের প্রচেষ্টার মধ্যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে যে, নির্বাহী বিভাগকে যত বেশি নিয়ন্ত্রিত করা যায়। নির্বাহী বিভাগ থেকে অতীতে একজন স্বৈরাচার হয়েছিল বলে নির্বাহী বিভাগকে আমরা বিলুপ্ত করতে পারব না, দুর্বল করতে পারব না। একজন সংসদীয় পদ্ধতিতে স্বৈরাচার প্রতিষ্ঠা হয়েছিল সেজন্য আমরা আইনসভাকে বিলুপ্ত করতে পারব না, দুর্বল করতে পারব না। আমাদের চেষ্টা করতে হবে চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স এবং একটা হারমোনিয়াস কোঅপারেশন, একটা মধুর সম্পর্ক, একটা পাহারাদার সৃষ্টি করা, সেফ গার্ড সৃষ্টি করার জন্য সকল অর্গানগুলোকে সেইভাবে শক্তিশালী করা। শুধুমাত্র নির্বাহী বিভাগকে দুর্বল করার মধ্য দিয়ে কিন্তু রাষ্ট্রে একটি শক্তিশালী গণতান্ত্রিক কাঠামো দাঁড় করানো যাবে না। নির্বাহী বিভাগকে নির্বাহী বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে, বিচার বিভাগকে বিচার বিভাগের কাজ করতে দিতে হবে এবং আইনসভাকে আইনের কাজ করতে দিতে হবে।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ স ল হউদ দ ন আহমদ ব ভ গ র ক জ করত গণত ন ত র ক ব যবস থ প রব ন ত করত

এছাড়াও পড়ুন:

এনসিসি বাদ দিলে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি করবে না বিএনপি

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল (এনসিসি) বা এমন কোনো পর্ষদের চিন্তা বাদ দিলে এক ব্যক্তি জীবনে সর্বোচ্চ ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে পারবেন বলে যে প্রস্তাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশন তুলেছে, সেটা মেনে নেবে বিএনপি। আজ বুধবার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের দ্বিতীয় দফা বৈঠকের ষষ্ঠ দিনের আলোচনা শেষে দলের এই অবস্থান তুলে ধরেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ।

রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আজকের আলোচনা শেষে সালাহউদ্দিন আহমদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘এনসিসির মতো আর কোনো বডি নির্বাহী ক্ষমতার কর্মকাণ্ড বাধাগ্রস্ত করে বা ইন্টারফেয়ার করে বা এমন ব্যবস্থা থাকলে আমরা সে প্রস্তাবটা গ্রহণ করব না। এনসিসির মতো ব্যবস্থা থাকলে আমরা আগের অবস্থায় থাকব (কারও প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদ ১০ বছর মানবেন না)।’

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী না করে শুধু নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতা সব জায়গায় কমিয়ে একটি সুষ্ঠু সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালনা কখনো সম্ভব হয় না বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘ফ্রিডম অব প্রেস (সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা) যদি আমরা নিশ্চিত করতে পারি, দুদকসহ অন্যান্য রিলেটেড প্রতিষ্ঠানগুলো যদি আমরা শক্তিশালী করতে পারি, এখানে গণতন্ত্র রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে তারা। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়া গণতন্ত্র কখনো শক্তিশালী হবে না।’

রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর জবাবদিহি ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্য আইনে বিধান রাখার কথা বলেন বিএনপি নেতা সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি বলেন, ‘সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসহ অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে, ট্রান্সপারেন্সি (স্বচ্ছতা) নিশ্চিত করতে হবে। যেসব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এটার সঙ্গে সম্পর্কিত, সেগুলোর আইন না থাকলে আইন করা। আর যেগুলোর আইন আছে, সে আইন সংস্কার করা। তাহলে রাষ্ট্রে ক্ষমতার মধ্যে চেক অ্যান্ড ব্যালান্স (ক্ষমতার ভারসাম্য) তৈরি হবে।’

যে দেশে ফ্রিডম অব প্রেস বেশি, সে দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। এগুলো না করে শুধু নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে সব জায়গায় কমিয়ে একটি সুষ্ঠু সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালনা কখনো সম্ভব হয় না।সালাহউদ্দিন আহমদ, স্থায়ী কমিটির সদস্য, বিএনপি

সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন, স্বাধীন নির্বাচন কমিশন যদি স্বাধীনভাবে নির্বাচন পরিচালনা করে এবং জুডিশিয়ারির (বিচার বিভাগ) স্বাধীনতা পুরোপুরি নিশ্চিত করা যায় এবং দুদকসহ অন্যান্য যেসব প্রতিষ্ঠান সম্পর্কিত, সেগুলোকে যদি শক্তিশালী করা যায় তাহলে তা গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করবে। এসব প্রতিষ্ঠান ছাড়া, গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ ছাড়া, গণতন্ত্র কখনো শক্তিশালী হবে না।

বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরামের এই সদস্য বলেন, যে দেশে ফ্রিডম অব প্রেস বেশি, সে দেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী হয়। এগুলো না করে শুধু নির্বাহী বিভাগের ক্ষমতাকে সব জায়গায় কমিয়ে একটি সুষ্ঠু সরকার বা রাষ্ট্র পরিচালনা কখনো সম্ভব হয় না।

আজকের আলোচনায় বিএনপি ছাড়াও জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), ইসলামী আন্দোলন, গণসংহতি আন্দোলনসহ ৩০টি রাজনৈতিক দল অংশ নিয়েছে। বৈঠকে সংবিধান ও রাষ্ট্রের মূলনীতি, এনসিসি, দ্বিকক্ষবিশিষ্ট সংসদ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পদ্ধতি, নারী প্রতিনিধিত্ব নিয়ে আলোচনা হলেও কোনো বিষয়ে ঐকমত্য হয়নি।

প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দারের সঞ্চালনায় আজকের আলোচনায় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য বদিউল আলম মজুমদার, বিচারপতি মো. এমদাদুল হক, ইফতেখারুজ্জামান ও মো. আইয়ুব মিয়া।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ ও খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর বিদেশযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা
  • সংবিধানে ‘আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস’ পুনঃস্থাপন করতে হবে: খেলাফত মজলিস
  • সংস্কার কাজে আলোচনার চেয়ে খাওয়াদাওয়া বেশি হচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • শ্রমিক মজলিস ফারিহা গার্মেন্টস ইউনিটের দায়িত্বশীল সমাবেশ অনুষ্ঠিত
  • শর্তসাপেক্ষে প্রধানমন্ত্রী পদে সর্বোচ্চ ১০ বছরের বিষয়ে একমত বিএনপি
  • এনসিসি বাদ দিলে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদের প্রস্তাব নিয়ে আপত্তি করবে না বিএনপি
  • সাবেক এমপি বেনজিরের ফ্ল্যাট ও জমি জব্দের আদেশ 
  • ইসরায়েলের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে ইরানে তিনজনের ফাঁসি
  • সিলেট হেফাজতে বিরোধ, পাল্টা কমিটি ঘোষণা