বিতর্কিত তিন নির্বাচনের অভিযোগ তদন্তে কমিটি করল সরকার
Published: 26th, June 2025 GMT
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত বিতর্কিত তিনটি (২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত) জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিষয়ে ওঠা অভিযোগ তদন্তে সরকার একটি কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটিকে ভবিষ্যতে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সুপারিশ করারও দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
পাঁচ সদস্যের এ কমিটির সভাপতি করা হয়েছে হাইকোর্টের সাবেক বিচারপতি শামীম হাসনাইনকে। কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব শামীম আল মামুন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল হক, আইনজীবী তাজরিয়ান আকরাম হোসাইন এবং নির্বাচন বিশেষজ্ঞ মো.
আজ বৃহস্পতিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে এই কমিটি গঠনের কথা জানানো হয়। কমিটিকে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দেবে। কমিটি তদন্তের প্রয়োজনে আরও সদস্য নিতে পারবে (কো-অপ্ট)।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই তিনটি নির্বাচন নিয়ে দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এসব নির্বাচনে নানা কৌশলে জনগণের ভোট দেওয়ার অধিকার ভূলুণ্ঠিত করে সাজানো প্রক্রিয়ায় আওয়ামী লীগকে নির্বাচিত করার জোরালো অভিযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধানে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে রাষ্ট্র পরিচালনার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে তা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগও এসব নির্বাচন পরিচালনাকারীদের বিরুদ্ধে রয়েছে। এতে দেশে আইনের শাসন, গণতন্ত্র এবং মৌলিক মানবাধিকার বিপন্ন হয়েছে বলে আশঙ্কা রয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয় এমন প্রেক্ষাপটে অন্তর্বর্তী সরকার ভবিষ্যতে জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে, দেশে গণতন্ত্র সুরক্ষিত এবং ফ্যাসিবাদ ও কর্তৃত্বপরায়ণ শাসনের আশঙ্কাকে প্রতিহত করতে এসব নির্বাচনে সংঘটিত দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড তদন্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
কমিটির কার্যপরিধি
তদন্ত কমিটি ২০১৪,২০১৮ এবং ২০২৪ সালে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনগুলোর বিষয়ে নির্বাচন পর্যবেক্ষক, দেশি ও বিদেশি তদারকি প্রতিষ্ঠান এবং নাগরিক সংগঠনের প্রতিবেদন ও গণমাধ্যমে উত্থাপিত অভিযোগ বিশ্লেষণ, নির্বাচনের বিভিন্ন দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের অভিযোগ এবং সার্বিকভাবে এগুলোর নিরপেক্ষতা ও গ্রহণযোগ্যতার বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত গ্রহণ ও বিশ্লেষণ করবে।
এ ছাড়াও এসব নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ সীমাবদ্ধ করতে ও জনগণের ভোটাধিকার প্রদান বাধাগ্রস্ত করতে তৎকালীন ক্ষমতাসীন দল ও সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা বিশ্লেষণ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশন ও এর সচিবালয় ও প্রশাসনের ভূমিকা বিশ্লেষণ, নির্বাচন কার্যক্রমে আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থার ভূমিকা বিশ্লেষণ, তৎকালীন নির্বাচন কমিশনগুলোর বিরুদ্ধে ওঠা আর্থিক অনিয়মের অভিযোগগুলো যাচাই, অনিয়মের দায়-দায়িত্ব নির্ধারণ এবং ভবিষ্যতে সব নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে আইন, বিধিবিধান, নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনিক আয়োজনের কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা, পরিবর্তন ও রূপরেখা বিষয়ে সুপারিশ দেবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ষ ঠ ত তদন ত সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘এক্সকিউজ’ দেওয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত : হাসনাত আবদুল্লাহ
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ‘এক্সকিউজ’ দেওয়ায় প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (দক্ষিণাঞ্চল) হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘আগে এক কোটি টাকার কাজের মধ্যে ৩০ লাখ টাকাই আত্মসাৎ করা হতো। কোনো জবাবদিহিতা ছিল না। গত ২০ বছর ধরে এমন জবাবদিহিহীন সমাজ তৈরি হয়েছে। এখনও কেউ কেউ ভাবছে তাদের জবাবদিহি করতে হবে না—এটাই তাদের ভুল। আমরা যেহেতু কমিশন খাই না, তাই আমরা কারও কাছে দায়বদ্ধ নই। আমি ঠিকাদার নিয়ে এখানে কাজ করি না, আমার কোনো ঠিকাদারও না। সুতরাং এই কাজের জন্য সরকারের যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতেই হবে।’
গতকাল বুধবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কে দেবিদ্বার অংশে যানজট নিরসনে দুই কোটি ৪৩ লাখ টাকা ব্যয়ে সড়ক প্রশস্তকরণ এবং বিভাজক স্থাপনকাজে অনিয়ম হাতেনাতে ধরার পর সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তিনি।
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘তারা হচ্ছে যেকোনো এক্সকিউজ দেওয়ার প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাদের কাছে সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকে এক্সকিউজ। আর দায়িত্ব পাস করা—এই চেয়ার, সেই চেয়ার—আমাদের সঙ্গেও এমন আচরণ করে। এটি মেনে নেওয়া যায় না।’
সড়কের অনিয়ম প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দুই কোটি ৪৩ লাখ টাকা খরচ করে কাজটি জনগণের উপকারে আসছে না, বরং আরও দুর্ভোগ বেড়েছে। কথা ছিল ডিভাইডার বসানোর আগে ৬ ইঞ্চি গাঁথুনি হবে, কিন্তু তা করা হয়নি। পিচঢালা রাস্তার ওপরেই ডিভাইডার বসানো হয়েছে—একটু ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। ব্লক দেওয়ার কথা ছিল, তাও দেওয়া হয়নি। যেখানে এক রোড থেকে অন্য রোডের দূরত্ব থাকার কথা ৩০০ মিমি, সেখানে তারা দিয়েছে ৪০০ মিমি। যেখানে প্রয়োজন ১০০টি রড, সেখানে ব্যবহার করেছে মাত্র ৭০টি। এই অনিয়মের দায়ভার ঠিকাদার, ইঞ্জিনিয়ার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা এমন যেন কাজীর গরু কিতাবে আছে কিন্তু গোয়ালে নেই।’
জানা গেছে, কুমিল্লা-সিলেট মহাসড়কের দেবিদ্বার অংশে যানজট নিরসনে রোড ডিভাইডার স্থাপন ও সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে সরকারের পক্ষ থেকে দুই কোটি ৪৩ লাখ টাকার বরাদ্দ নিশ্চিত করেন হাসনাত আবদুল্লাহ। এই কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছিল মেসার্স ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে হাসনাত আবদুল্লাহ নিজেই সরেজমিনে গিয়ে অনিয়ম ধরেন।
তিনি বলেন, ‘গতকালও আরেকটি সড়কে অনিয়মের কারণে কাজ বন্ধ করেছি। এ কাজের ঠিকাদার উপস্থিত ছিলেন, তাকে বলা হয়েছে ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বসে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে। দেবিদ্বারের মানুষের দুর্ভোগ আমি হতে দেব না।’
ঠিকাদার আশিকুর রহমান ভূঁইয়াকে উদ্দেশ্য করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই টাকা আমার বা আপনার বাবার টাকা নয়—এটা জনগণের টাকা। কেন এই টাকা অপচয় হবে? জনগণের টাকা হারাম করা যাবে না। প্রতিদিন হাজারো মানুষ এই রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করে। তাদের গালমন্দ শুনতে হয়। এই কাজ ঠিকভাবে করতে আরও ৫০ লাখ টাকা বেশী বরাদ্দ হলেও সমস্যা হতো না। আপনি কেন অনিয়ম করলেন? ভাই, গজব পড়বে। সাওয়াবের নিয়তে করলে এমন কাজ হতো না। দেবিদ্বারে প্রায় ৪০টি হাসপাতাল রয়েছে, প্রতিদিন গড়ে ১৫টি ডেলিভারি হয়। এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—এই দায়ভার আপনাকে নিতে হবে।’
এ বিষয়ে মেসার্স ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আশিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি যেভাবে ওয়ার্ক অর্ডার পেয়েছি, সেভাবেই কাজ করেছি। এখন মনে হচ্ছে আরও ক্ষতি হয়েছে। এরপরও যতটুকু সম্ভব ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও কাজটি ঠিকঠাক শেষ করব।’