তরুণদের নিয়ে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে: ড. কামাল হোসেন
Published: 26th, June 2025 GMT
গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, তরুণদের সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় শুধু রাজধানীতে কার্যক্রম পরিচালনা করলে হবে না, দেশের বিভিন্ন জেলাতেও সক্রিয় হতে হবে।
ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গণফোরাম আয়োজিত এক শোকসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ড.
সভায় ড. কামাল হোসেন বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অসংখ্য মানুষ জীবন দিয়েছেন। এই আন্দোলনে গণফোরামের অনেকে জীবন দিয়েছেন।
সমাজের ভালো লোকগুলোকে নিয়ে ভবিষ্যতে গণফোরাম আরও শক্তিশালী হবে, এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, সংগঠনের শক্তির উৎস হলো জনগণের ঐক্য। যখনি অনৈক্য হয়, তখন সংগঠন দুর্বল হয়। এমন পরিস্থিতি হলে সমাজে উন্নয়ন করা যায় না।
এই শোকসভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে যে আলাপ হচ্ছে, তা নিয়ে বোঝাপড়ায় অস্পষ্টতা রয়েছে। এগুলো একটি অন্যটির বিকল্প নয়, বরং একটি অন্যটির পরিপূরক। সংস্কার ও বিচারের জন্য নির্বাচনকে ধরে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যারাই ক্ষমতায় আসুক, অন্যায়কারীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। বিচার না করলে বরং তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।
সংস্কারকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিচারের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া কোনো রাজনৈতিক দাবি হতে পারে না। সংস্কার নিয়ে যতটা ঐকমত্য গঠিত হয়, সেটা নিয়ে নির্বাচনে যেতে হবে। তিনি বলেন, বহু বছর এই দেশের জনগণ ভোট দিতে পারেনি। তরুণেরা ভোট দিতে পারেনি। এই অধিকার থেকে বেশি দিন বঞ্চিত রাখলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে।
শোকসভায় বক্তব্য দেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সভাপতি পরিষদের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সুব্রত চৌধুরী, এস এম আলতাফ হোসেন প্রমুখ।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অজুহাত দেওয়ার ট্রেনিংপ্রাপ্ত: হাসনাত আবদুল্লাহ
সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অজুহাত দেওয়ার ট্রেনিংপ্রাপ্ত বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। বুধবার সন্ধ্যায় কুমিল্লার দেবীদ্বার সদর এলাকায় কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের বিভাজক ও সড়ক প্রশস্তকরণ কাজে ‘অনিয়ম দেখার’ পর সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন তিনি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বুধবার সন্ধ্যা ছয়টার দিকে হাসনাত আবদুল্লাহ তাঁর নিজ উপজেলার কুমিল্লা-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের দেবীদ্বার অংশের বিভাজক ও সড়কের দুই পাশে তিন ফুট করে প্রশস্তের কাজ দেখতে যান। সেখানে কাজে অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ করেন তিনি।
কাজে অনিয়ম সম্পর্কে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকার এই কাজ জনগণের কোনো কাজে আসবে না। বরং জনগণের আরও দুর্ভোগ বেড়েছে। কথা ছিল ডিভাইডার বসানোর আগে ছয় ইঞ্চি গাঁথুনি করবে, কিন্তু তারা তা করেনি। রাস্তার পিচের ওপরেই ডিভাইডার তোলা হয়েছে, যা ধাক্কা দিলেই পড়ে যাবে। এখানে ব্লক দেওয়ার কথা ছিল, তা দেয়নি। একটা রড থেকে আরেকটা রডের দূরত্ব থাকবে ৩০০ এমএম, কিন্তু তারা দূরত্ব দিয়েছে ৪০০ এমএম। যেখানে ১০০ রড লাগত, সেখানে তারা ৭০টি রড দিয়ে কাজ চালিয়ে দিয়েছে।
গত ২০ বছরে জবাবদিহিবিহীন একটা সমাজ গড়ে উঠেছিল উল্লেখ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী যাঁরা আছেন তাঁরা হচ্ছেন যেকোনো এক্সকিউজ বা অজুহাত দেওয়ার ট্রেনিংপ্রাপ্ত। তাঁদের যেকোনো জিনিসের জন্য অজুহাত প্রস্তুত থাকে। এটা আমার দায়িত্ব ওর দায়িত্ব, এই চেয়ার, ওই চেয়ার আমার না, এটা আমার দায়িত্ব না—এমনটা আমাদের সঙ্গেও করে। আগে ১ কোটি টাকার কাজে ৩০ লাখ টাকাই খেয়ে ফেলা হতো, কোনো জবাবদিহি ছিল না। গত ২০ বছর এভাবে চলছে, জবাবদিহিবিহীন একটা সমাজ গড়ে উঠেছিল। যারা অনিয়ম করে তাদের কেউ কেউ এখনো ভাবছে যে তাদের কোনো জবাবদিহি করতে হবে না।’
হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা যেহেতু কমিশন খাই না, সুতরাং আমরা কারও কাছে ধরা নেই। সুতরাং এ কাজের জন্য যে ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়েছে, তার যথাযথ প্রয়োগ হতে হবে।’
সেখানে উপস্থিত ঠিকাদার আশিকুর রহমান ভূঁইয়াকে উদ্দেশ করে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘এই টাকা আমার বাপের টাকা না, আপনার বাপের টাকাও না, জনগণের টাকা। এই সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাওয়া-আসা করে। তারা গালাগালি করে। ২ কোটি ৪৩ লাখ টাকা খরচ হয়েছে, দরকার হলে আরও ৫০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হতো, তবু এ কাজটা ঠিকভাবে করতেন। এই কাজে কেন অনিয়ম করলেন? ভাই গজব পড়বে! সওয়াবের নিয়তে কাজ করলে এমন করতে পারতেন না।’
পরে হাসনাত আবদুল্লাহ তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার ও সওজের নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন এবং দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন।
কাজের অনিয়ম সম্পর্কে জানতে চাইলে মেসার্স ভূঁইয়া এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. আশিকুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, ‘আমি যেভাবে ওয়ার্ক অর্ডার (কাজের আদেশ) পেয়েছি, সেভাবে করেছি। এখন মনে হচ্ছে আমার আরও ক্ষতি হবে। এরপরও যেভাবে ভালো হবে, ক্ষতিপূরণ দিয়ে হলেও কাজটা আমি শেষ করব।’