গণফোরামের ইমেরিটাস সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, তরুণদের সঙ্গে নিয়ে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। গণতন্ত্র ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় শুধু রাজধানীতে কার্যক্রম পরিচালনা করলে হবে না, দেশের বিভিন্ন জেলাতেও সক্রিয় হতে হবে।

ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে গণফোরাম আয়োজিত এক শোকসভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ড.

কামাল হোসেন। গণফোরাম উপদেষ্টা পরিষদের প্রয়াত সদস্য ফজলুল হক সরকার, সভাপতি পরিষদের সদস্য কাজী মেজবাহ উদ্দিন ও দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম স্মরণে এই সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় ড. কামাল হোসেন বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে অসংখ্য মানুষ জীবন দিয়েছেন। এই আন্দোলনে গণফোরামের অনেকে জীবন দিয়েছেন।

সমাজের ভালো লোকগুলোকে নিয়ে ভবিষ্যতে গণফোরাম আরও শক্তিশালী হবে, এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, সংগঠনের শক্তির উৎস হলো জনগণের ঐক্য। যখনি অনৈক্য হয়, তখন সংগঠন দুর্বল হয়। এমন পরিস্থিতি হলে সমাজে উন্নয়ন করা যায় না।

এই শোকসভায় বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন নিয়ে যে আলাপ হচ্ছে, তা নিয়ে বোঝাপড়ায় অস্পষ্টতা রয়েছে। এগুলো একটি অন্যটির বিকল্প নয়, বরং একটি অন্যটির পরিপূরক। সংস্কার ও বিচারের জন্য নির্বাচনকে ধরে রাখার কোনো যৌক্তিকতা নেই। যারাই ক্ষমতায় আসুক, অন্যায়কারীদের বিচার নিশ্চিত করা হবে। বিচার না করলে বরং তাদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

সংস্কারকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, বিচারের জন্য সময়সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া কোনো রাজনৈতিক দাবি হতে পারে না। সংস্কার নিয়ে যতটা ঐকমত্য গঠিত হয়, সেটা নিয়ে নির্বাচনে যেতে হবে। তিনি বলেন, বহু বছর এই দেশের জনগণ ভোট দিতে পারেনি। তরুণেরা ভোট দিতে পারেনি। এই অধিকার থেকে বেশি দিন বঞ্চিত রাখলে তাদের প্রতি অবিচার করা হবে।

শোকসভায় বক্তব্য দেন গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, সভাপতি পরিষদের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সুব্রত চৌধুরী, এস এম আলতাফ হোসেন প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণফ র ম সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন আনিসুল ইসলাম ও মুজিবুল হক

জুলাই গণ–অভুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের অধীন নির্বাচনে অংশ নিয়ে কোনো ভুল করে থাকলে তার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন জাতীয় পার্টির নতুন নির্বাচিত চেয়ারম্যান আনিসুল ইসলাম মাহমুদ।

আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েল পার্টি সেন্টারে জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিলে প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এ ক্ষমাপ্রার্থনা করেন। একই কারণে কাউন্সিলে দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান দলের সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুও।

আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘তখনকার যে নিয়ম ছিল, যে আইন ছিল, (সে অনুযায়ী) বিশ্বের স্বীকৃত একটা সরকার নির্বাচন করে। সেই সরকারকে প্রতিহত করতে হলে আপনাকে পার্লামেন্টে (সংসদে) যেতে হবে। আমরা তো বিপ্লবী পার্টি নই। তারপরও যদি জনগণ মনে করে, আমরা কোনো অন্যায় করেছি, নিঃশর্তভাবে ক্ষমা চাচ্ছি। কারণ, আমরা জনগণকে নিয়ে রাজনীতি করতে চাই, জনগণের মতামতকে সম্মান প্রদর্শন করতে চাই। জনগণকে নিয়েই চলতে চাই।’

২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে আনিসুল ইসলাম বলেন, সে সময় আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ঐক্য গড়ে তোলার জন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদসহ বিএনপির এক উচ্চপদস্থ নেতার সঙ্গে তাঁরা আলোচনা করেছিলেন। কিন্তু বিএনপির কারণে সেটা হয়নি। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করেছি। আপনারা নির্বাচন করেননি। কিন্তু আপনারা তো স্থানীয় সরকারের নির্বাচনগুলো করেছেন। আপনারা ২০১৮ সালে নির্বাচন করেছেন, আমরা করেছি। আপনাদের সঙ্গে আমাদের পার্থক্য কোথায়?’

৫ আগস্টের পর আমরা মনে করেছিলাম, একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। কিন্তু এক বছর পর বুকে হাত দিয়ে বলেন, পরিবর্তন কি ভালোর দিকে গেছে? দেশের প্রবৃদ্ধি এখন ৩ শতাংশে নেমেছে। প্রবৃদ্ধি তো ৭ শতাংশ ছিল। আপনারা বলছেন, চুরি বন্ধ করেছেন, বিদেশে টাকা যাওয়া বন্ধ করেছেন। তাহলে প্রবৃদ্ধি কমল কেন?—আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, জাতীয় পার্টির নতুন নির্বাচিত চেয়ারম্যান

বর্তমান সরকারের সময় দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমেছে উল্লেখ করে আনিসুল ইসলাম বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমরা মনে করেছিলাম, একটা সুন্দর বাংলাদেশ গড়ে উঠবে। কিন্তু এক বছর পর বুকে হাত দিয়ে বলেন, পরিবর্তন কি ভালোর দিকে গেছে? দেশের প্রবৃদ্ধি এখন ৩ শতাংশে নেমেছে। প্রবৃদ্ধি তো ৭ শতাংশ ছিল। আপনারা বলছেন, চুরি বন্ধ করেছেন, বিদেশে টাকা যাওয়া বন্ধ করেছেন। তাহলে প্রবৃদ্ধি কমল কেন?’

আনিসুল ইসলাম মাহমুদের নেতৃত্বে জি এম কাদেরবিরোধী অংশ জাতীয় পার্টির দশম জাতীয় কাউন্সিল করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছে। এতে আনিসুল ইসলামকে চেয়ারম্যান এবং এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদারকে মহাসচিব নির্বাচিত করা হয়েছে। এ ছাড়া কাজী ফিরোজ রশিদকে সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান এবং সাবেক মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নুকে নির্বাহী চেয়ারম্যান করা হয়। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে জানানো হয়।

নবনির্বাচিত মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার বলেন, ‘আমরা লক্ষ করেছিলাম, জাতীয় পার্টি থেমে যাচ্ছে। পার্টি টুকরা টুকরা হচ্ছে এবং যাঁরা মূল দায়িত্বে ছিলেন, তাঁরা দায়িত্বপালনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। কিন্তু আমরা বলতে চাই, জাতীয় পার্টি প্রতিহিংসার রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না, বরং জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আজকের এই কাউন্সিল অঙ্গীকার ব্যক্ত করবে।’

‘বর্তমান সরকারকে তারাই উপদেশ দিচ্ছে, যারা এই দেশে বসবাস করেনি’ বলে মন্তব্য করেন জাতীয় পার্টির (জেপি) চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু।

নতুন কমিটি নির্বাচনের আগে কাউন্সিলের মতামতের ভিত্তিতে জাতীয় পার্টির বর্তমান গঠনতন্ত্রের ২০(ক) ধারাটি বিলুপ্ত করা হয়। এ প্রসঙ্গে নতুন কমিটির সিনিয়র কো-চেয়ারম্যান কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, ‘আজকের কাউন্সিল অনেক দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ। জাতীয় পার্টিকে মানুষ স্বৈরাচার বলে। এর একমাত্র কারণ ২০(ক) ধারা। এটা অসাংবিধানিক ধারা। আমরা আলোচনার ভিত্তিতে এই ধারা তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘সরকারটা চলছে না। চলবে কীভাবে? গভর্নমেন্ট তো নেই। আর উপদেশ দিচ্ছে কারা, যারা কেউ এ দেশে বসবাস করেনি। কবে কোন অমাবস্যার রাতে দেশ ছেড়ে চলে যাবে, কেউ জানবেও না। এই বাস্তবতা চিন্তা করার পরে মনে হয়, হায় হায়, এ দেশটা আমাদের! আমরা এ দেশের অনন্য অংশীদার ছিলাম। কথা বলার সময় মুখ সামলে কথা বলবেন।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে দ্বন্দ্ব অনিবার্য উল্লেখ করে আনোয়ার হোসেন মঞ্জু বলেন, ‘একটা প্রান্তিক পর্যায়ে আমরা চলে এসেছি। এখন মনে হচ্ছে, একটা শেষ খেলা হবে। দ্বন্দ্ব এখন অনিবার্য। আমরা সবাই নাকি স্বৈরাচার হয়ে গেছি। আপনারা গণতন্ত্র শিখেছেন কোথা থেকে? তারা যে ভাষায় কথা বলে, আমরাও সেই ভাষায় কথা বলতে জানি। তাই যাঁরা রাজনীতি করবেন এবং করছেন, তাঁদের দায়বদ্ধতা অনেক বেশি।’

জাতীয় পার্টিতে জি এম কাদেরের বিরোধী অংশের সম্মেলন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬ বছরে যারা মজলুম ছিল, আজকে অনেকেই জালেম হয়ে উঠছে: নুরুল হক নুর
  • ইসি অভিযান থেকে রাহুলদের আটক, পরে ছেড়ে দিল পুলিশ
  • নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের অধিকারের প্রথম পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হবে: তারেক রহমান
  • ‘অধিকাংশ মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে’
  • ‘কৃত্রিম’ বন্যা রোধ: বক্তব্যের ফাঁপা প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার নির্মম চিত্র
  • ‘১৪ সালে বিএনপির কারণে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে জোট হয়নি’
  • দেশ যেন এক মগের মুল্লুকে পরিণত হয়েছে: হাফিজ উদ্দিন
  • দেশবাসীর কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলেন আনিসুল ইসলাম ও মুজিবুল হক
  • ৭১ এর মতো ২৪ সালেও বুক পেতে দিয়েছেন বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী: হা
  • সংস্কারের ৯৯ শতাংশই বিএনপি আগে উপস্থাপন করেছে: তারেক রহমান