সেই দেশ তত দ্রুত উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে, যে দেশ এই খাতকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে। আজকের ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পেরই অবদান। আজ যে উদ্যোগ ক্ষুদ্র হিসেবে বিবেচ্য তাই আগামীর বৃহৎ শিল্প
কুটির, অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প (সিএমএসএমই) যে কোনো দেশের অর্থনীতির চালিকা শক্তি, যা কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দারিদ্র্য কমানো এবং উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সেই দেশ তত দ্রুত উন্নতির দিকে ধাবিত হয়েছে, যে দেশ এই খাতকে অগ্রাধিকার হিসেবে বিবেচনায় নিয়েছে। আজকের ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্পেরই অবদান। আজ যে উদ্যোগটি ক্ষুদ্র হিসেবে বিবেচ্য তাই আগামীর বৃহৎ শিল্প।
তাই ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের প্রতি আমাদের দেশও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ২০১০ সালে এসএমইএসপিডি নামে আলাদা বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনায় প্রতিটি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান এসএমই নামে আলাদা বিভাগ খুলে এসএমই উদ্যোক্তাদের সার্বিক সহযোগিতায় হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন এসএমই ফাউন্ডেশন নামে আলাদা প্রতিষ্ঠান তৈরি হয়েছে।
এ খাতের অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরতে প্রতি বছর ২৭ জুন বিশ্বব্যাপী উদযাপিত হয় আন্তর্জাতিক ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প দিবস। জাতিসংঘ ২০১৭ সালে দিবসটি ঘোষণা করে। বাংলাদেশে শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন এসএমই ফাউন্ডেশন ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর এ দিবস উদযাপন করছে। বিশ্বব্যাংকের মতে, বিশ্বের ৯০ শতাংশের বেশি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের আওতায় পড়ে, যা বিশ্বব্যাপী প্রায় ৭০ শতাংশ কর্মসংস্থানের জোগান দেয় এবং বিশ্ব জিডিপিতে এই খাতের অবদান ৫০ শতাংশের মতো।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারির তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৭৯ লাখ কুটির, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ৯৬ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠান এই খাতে পড়ে এবং জাতীয় জিডিপিতে ২৮ ভাগের মতো অবদান রাখছে। ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্প শুধু অর্থনীতির গতি বাড়ায় না, এটি নারীর ক্ষমতায়ন, গ্রামীণ উন্নয়ন এবং টেকসই কর্মসংস্থানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘উদ্ভাবন, স্থিতিস্থাপকতা এবং বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার মাধ্যমে ক্ষুদ্র ও মাঝারিশিল্পের ক্ষমতায়ন’। এই প্রতিপাদ্য এসএমই খাতকে প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও সবুজ শিল্পায়নের মাধ্যমে এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানায়। বাংলাদেশ ব্যাংক এই বছরের মধ্যে অর্থাৎ ২০২৫ সালে এসএমই ঋণ মোট ঋণের ২৫ শতাংশ এবং ২০২৯ সালের মধ্যে ২৯ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যমাত্রা হাতে নিয়ে এই বছর এসএমই খাতের জন্য একটি যুগোপযোগী মাস্টার সার্কুলার দিয়েছে, যা এসএমই খাতকে সামনের দিকে এগিয়ে নিতে যথাযত ভূমিকা রাখবে বলে খাতসংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
বর্তমানে খেলাপি ঋণ এসএমইসহ সব ঋণের জন্য একটি বড় মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলাপি ঋণের সংস্কৃতি থেকে বের হতে হবে। ফি বছর এসএমই শিল্প খাতের ঋণ বিতরণের ঊর্ধ্বমুখী সম্প্রসারণ এই খাতের দ্রুত বিকাশকে চিহ্নিত করে। দেশের চলমান মন্দা এবং বিনিয়োগ খরা কাটাতে এসএমই শিল্পে বিনিয়োগের পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। এই শিল্পে বিনিয়োগের আগে নজরদারি তথা মনিটরিং বিভাগে সমান জোর দিতে হবে। এই খাতের উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ, সহজ শর্তে ঋণ, বাজারসুবিধা এবং ডিজিটাল সহায়তা নিশ্চিত করলেই দেশ আরও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে। সবাই মিলে এই খাতকে শক্তিশালী করতে সচেষ্ট হলে একটি টেকসই উন্নয়ন অর্জন করা সম্ভব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মত মত এসএমই খ ত ব শ বব য এই খ ত অবদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
পুঁজিবাজারে মূলধন কমেছে ২৬ হাজার ৫১৪ কোটি টাকা
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে (৯ থেকে ১৩ নভেম্বর) সূচকের বড় পতনের মধ্যে দিয়ে লেনদেন শেষ হয়েছে। এ সময়ে ডিএসই ও সিএসইতে টাকার পরিমাণে লেনদেনে বেশ কমেছে। তবে বিদায়ী সপ্তাহে উভয় পুঁজিবাজারে বাজার মূলধন বেশ কমেছে ২৬ হাজার ৫১৪ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
শনিবার (১৫ নভেম্বর) ডিএসইর সাপ্তাহিক বাজার পর্যালোচনা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
তথ্য মতে, সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ২৫৬.২৫ পয়েন্ট বা ৫.৩৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৭০২ পয়েন্টে। অপর সূচকগুলোর মধ্যে ডিএসই-৩০ সূচক ৮৯.৩৬ পয়েন্ট বা ৪.৬০ শতাংশ কমে ১ হাজার ৮৫১ পয়েন্টে, ডিএসই শরিয়াহ সূচক ৬২.২৬ পয়েন্ট বা ৫.৯৯ শতাংশ কমে ৯৭৬ পয়েন্টে এবং ডিএসএমইএক্স সূচক (এসএমই ইনডেক্স) ১৮৬.৮৪ পয়েন্ট বা ২০.৪০ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৭২৮ পয়েন্টে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭৩ হাজার ৯৭৪ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯০ হাজার ৯১৫ কোটি ৮৯ লাখ কোটি টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ১৬ হাজার ৯৪১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ১ হাজার ৭৭১ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ২ হাজার ৪২২ কোটি ২৩ লাখ টাকার। সপ্তাহের ব্যবধানে ডিএসইতে লেনদেন কমেছে ৬৫০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে ডিএসইতে মোট ৩৮৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিটের লেনদেন হয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ১৭টির, দর কমেছে ৩৬৩টির ও দর অপরিবর্তিত রয়েছে ৩টির। তবে লেনদেন হয়নি ৩০টির।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইর সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৫৫৭.৩১ পয়েন্ট বা ৩.৯৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৪০১ পয়েন্টে। সিএসইর অপর সূচকগুলোর মধ্যে সিএসই-৩০ সূচক ১.৯১ শতাংশ কমে ১২ হাজার ১৭৫ পয়েন্টে, সিএসসিএক্স সূচক ৩.৪৪ শতাংশ কমে ৮ হাজার ৩১৮ পয়েন্টে, সিএসআই সূচক ৩.৫১ শতাংশ কমে ৮৪৪ পয়েন্টে এবং এসইএসএমইএক্স (এসএমই ইনডেক্স) ১১.৩৪ শতাংশ কমে ১ হাজার ৭২৪ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
বিদায়ী সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮২ হাজার ৫৫৭ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে সিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৬ লাখ ৯২ হাজার ১৩০ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। টাকায়। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৫৭২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ৮০ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর বিদায়ী সপ্তাহের আগের সপ্তাহে লেনদেন হয়েছিল ৯৭ কোটি ১৯ লাখ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে সিএসইতে লেনদেন কমেছে ১৬ কোটি ৮৪ লাখ টাকা।
বিদায়ী সপ্তাহে সিএসইতে মোট ২৭২টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেনে অংশ নিয়েছে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে দর বেড়েছে ২৯টির, দর কমেছে ২৩৬টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ৭টির শেয়ার ও ইউনিট দর।
ঢাকা/এনটি/ইভা