প্রতিবছর ২৭ জুন বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এসএমই) দিবস। বিশ্ব অর্থনীতিতে এসএমই খাতের অপরিসীম অবদানের স্বীকৃতি দানের পাশাপাশি এ খাতের চ্যালেঞ্জগুলো তুলে ধরতে এ দিবস পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে জাতিসংঘ। ২০১৭ সালে প্রথম পালিত হয় দিনটি। বিশ্ব ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প দিবস ২০২৫-এর প্রতিপাদ্য—টেকসই প্রবৃদ্ধি ও উদ্ভাবনের চালিকা শক্তি হিসেবে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের (এসএমই) ভূমিকা জোরদারকরণ।

২০১৭ সালের ৬ এপ্রিল এ/আরইএস/৭১/২৭৯ প্রস্তাবনার আলোকে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ২৭ জুন তারিখটিকে অতিক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প (এমএসএমই) দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এ ক্ষেত্রে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০’ অর্জনের ব্যাপারটি মূল ভাবনা হিসেবে কাজ করেছিল। এ প্রস্তাবনা তৈরি এবং সেই সঙ্গে এ বিষয়ে জাতিসংঘের সদস্যদেশগুলোর সমর্থন আদায়ে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক অলাভজনক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল কাউন্সিল ফর স্মল বিজনেস (আইসিএসবি) গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

আইসিএসবি দীর্ঘদিন ধরেই এসএমই খাতের গুরুত্ব তুলে ধরার জন্য একটি আন্তর্জাতিক দিবসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে আসছিল এবং তাদের প্রচেষ্টার ফলেই মূলত এটি সম্ভব হয়েছে। উল্লেখ্য, ২০১৭ সালের ১১ মে জাতিসংঘের ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল চেম্বারে আইসিএসবি একটি ‘এমএসএমইএস নলেজ সামিট’ আয়োজন করে। এই আয়োজন বিশ্ব ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ দিবসের বৈশ্বিক ভিত্তি হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। 

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

আমাদের বিনিয়োগের ৩০% এসএমইতে

ব্যাংকিং যাত্রার গত ৪ বছরে আমরা দুই হাজারের বেশি এসএমই উদ্যোক্তাকে বিনিয়োগ করেছি। আমাদের মোট বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর প্রায় ৩০ শতাংশ এসএমই, যা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে

সমকাল : এসএমই খাতে কী কী অর্জন রয়েছে আপনাদের?
তারিক মোর্শেদ : বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক ২০২১ সালের ১০ মার্চ ব্যাংকিং কার্যক্রম শুরু করে। দেশের অর্থনীতির অন্যতম স্টেকহোল্ডার এসএমই খাতের উদ্যোক্তা এবং ক্ষুদ্র বিনিয়োগে পরিচালিত ব্যবসায়ীরা অনেকে বিনিয়োগের সঠিক সহযোগিতা ও ব্যবস্থাপনা না থাকায় অর্থনীতিতে পিছিয়ে পড়েন। রয়েছেন এ জন্য সূচনালগ্ন থেকেই ব্যাংকের অগ্রাধিকারের মধ্যে এসএমই খাত অন্যতম। এসএমই খাতের উন্নয়নের জন্য আমরা প্রায় ১০টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষর করেছি। এর  ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও অ্যাসোসিয়েশনের কার্যনির্বাহী কমিটির সহায়তায় তাদের নিবন্ধিত সদস্য বা উদ্যোক্তাদের অতি সহজেই তুলনামূলক কম মুনাফায় বিনিয়োগ প্রদান করছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিষ্ঠান ও অ্যাসোয়িশনগুলো হচ্ছে– এসএমই ফাউন্ডেশন, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প মালিক সমিতি, বাংলাদেশ পেপারকোন অ্যান্ড টিউব ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইলেক্ট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইজ ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন, উইমেন ইন্টারপ্রেনারস নেটওয়ার্ক ফর ডেভেলপমেন্ট অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ পিভিসি পাইপ প্রস্তুতকারক সমিতি।
মাইক্রোক্রেডিট কর্মসূচির আওতায় আমরা প্রায় আড়াই হাজার পরিবারকে বিভিন্ন রকম আর্থিক সহযোগিতা প্রদানের মাধ্যমে আনব্যাংকড পিপলকে ব্যাংকিংয়ের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। ১৭ কোটির জনসংখ্যার দেশে এসএমইর কোনো বিকল্প নেই। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের যুগোপযোগী, ব্যবসাবান্ধব, প্রযুক্তিনির্ভর উদ্যোগ এবং নতুন নীতিমালা প্রণয়নের মাধ্যমে শিগগিরই এই খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান দ্বিগুণ করা সম্ভব।
এ খাতে আমাদের কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন রয়েছে। ব্যাংকিং যাত্রার গত ৪ বছরে আমরা দুই হাজারের বেশি এসএমই উদ্যোক্তাকে বিনিয়োগ করেছি। আমাদের মোট বিনিয়োগ পোর্টফোলিওর প্রায় ৩০ শতাংশ এসএমই, যা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন। আমাদের ব্যাংক কর্মসংস্থান তৈরি এবং স্থানীয় পণ্য উৎপাদনে ভূমিকা রাখছেন। আমরা উদ্ভাবনী এবং টেকনোলজিক্যাল ব্যবসা বাড়াতে আমাদের ব্যাংকিং সাপোর্ট অব্যাহত রেখেছি। আমরা এসএমই উদ্যোক্তাদের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক এবং এসএমই ফাউন্ডেশন প্রদত্ত ফান্ড সুবিধা প্রদান করছি, যা অর্থনীতিতে বিরাট ভূমিকা রাখছে।
সমকাল : আপনারা অর্থায়নে কোন বিষয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন? আগামীতে ভাবনা কী?
তারিক মোর্শেদ : আমরা আগামীতে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং ব্যবস্থার আওতায় আনতে শিগগিরই এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবস্থা শুরু করার জন্য কাজ করছি। গ্রামীণ এবং শহর অঞ্চলের সব পর্যায়ের কৃষিবান্ধব ও নারী উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে গুরুত্ব প্রদান করছি। 


ফিন্যান্সিয়াল ইনক্লুশনের আওতায় আমরা প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে ব্যাংকিং ব্যবস্থায় সঞ্চয়ে উদ্বুদ্ধ করা এবং নানামুখী ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ভূমিকা রাখছি। গ্রিন ব্যাংকিং, টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্ব প্রদান করছি এবং সে লক্ষ্যে সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী কাজ করছি। স্টার্টআপ ও প্রযুক্তিনির্ভর এসএমই ব্যাংকিংয়ে অধিক গুরুত্ব প্রদান করছি।
সমকাল : এসএমই খাতে রপ্তানি বাড়াতে কীভাবে অবদান রাখা যায়?
তারিক মোর্শেদ : বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন অনুযায়ী এসএমইকে নতুনভাবে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে, যেখানে সর্বোচ্চ ৫০ কোটি টাকা পর্যন্ত এসএমই খাতে বিনিয়োগ করা যেতে পারে। তবে বাস্তবতা হলো এসএমই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের এ সম্পর্কিত ধারণা কম থাকায় জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান সেভাবে বাড়ছে না। সচেতনতা বৃদ্ধি ও তার বাস্তব প্রয়োগের মাধ্যমে এসএমই খাতের উন্নয়নের মাধ্যমে রপ্তানি বাড়ানো সম্ভব। তাই আমরা এসএমই উদ্যোক্তাসহ সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীকে তাদের পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন এবং বিক্রয় পরবর্তী সেবা আরও উন্নত করতে পরামর্শ দিচ্ছি। এসএমই উদ্যোক্তাসহ সব পর্যায়ের ব্যবসায়ীর পণ্য রপ্তানির প্রশিক্ষণ ও সনদ প্রদান করছি। ব্যবসায়ীদের ই-কমার্স ব্যবহার করে স্বল্প সময়ে পণ্য বাজারজাতে উৎসাহ এবং সহযোগিতাও করছি আমরা।
সমকাল : এসএমই খাতে নারীর সম্পৃক্ততা বাড়াতে করণীয় কী?
তারিক মোর্শেদ : দেশে প্রায় ৩.৮ মিলিয়ন নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন, যাদের মধ্যে অনেকেরই সরকার-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বিভিন্ন ধরনের সহযোগিতা প্রয়োজন। অনেক নারী উদ্যোক্তা রয়েছেন, যারা সঠিক গাইডলাইনের অভাবে যোগ্যতা থাকার পরও উদ্যোক্তা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারছেন না। তাই নারী উদ্যোক্তাদের সহযোগিতার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম থাকা প্রয়োজন। যেখানে যোগাযোগ করলে তারা তাদের মেধা, দক্ষতা এবং যোগ্যতা অনুযায়ী সহযোগিতা পেতে পারেন। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য আকর্ষণীয় বিনিয়োগ স্কিম চালু করা উচিত। নারী উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন পর্যায়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। সামাজিক ও পারিবারিক অঙ্গনেও নারী উদ্যোক্তাদের পজিটিভভাবে গ্রহণ করতে হবে। তাদের জন্য ব্যবসায়িক নেটওয়ার্ক বাড়ানো, পরামর্শ প্রদান এবং সব পর্যায়ের ব্যবসায় সমান সুযোগ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
সমকাল : এসএমইবান্ধব নীতির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্য কী হওয়া উচিত?
তারিক মোর্শেদ : এসএমই খাতের সার্বিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যাংকিং নীতিমালা করার সময় এসেছে। গ্রাম অঞ্চলের আমানতের অন্তত ৬০ শতাংশ ওই অঞ্চলের এসএমই খাতের উন্নয়নে বিনিয়োগ করা উচিত। এসএমই গ্রাহককে তাদের ব্যবসায়িক তথ্য সংরক্ষণে আরও যত্নশীল হতে হবে। এসএমই গ্রাহককে স্বল্প মুনাফায় বিনিয়োগ প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এসএমই গ্রাহকের জন্য ট্যাক্স ইনসেনটিভ ঘোষণা এবং ব্যবসাবান্ধব নীতির প্রয়োজন। তাদের ব্যবসায়িক নিবন্ধন, লাইসেন্স গ্রহণ এবং ব্যাংকিং ব্যবস্থায় প্রবেশ সহজতর করা দরকার। এসএমই গ্রাহকদের তাদের ব্যবসার ধরন অনুযায়ী সময়ে সময়ে প্রশিক্ষণ, পরামর্শ প্রদান এবং প্রযুক্তিগত সহযোগিতা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে বিশেষ করে নারী, যুব এবং প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের প্রতি দিতে হবে বিশেষ দৃষ্টি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চারটি শোরুম পরিচালনা করছেন শ্রাবণী রায়
  • ব্র্যাংক ব্যাংকের বেশির ভাগ এসএমই ঋণ জামানতবিহীন
  • আমাদের বিনিয়োগের ৩০% এসএমইতে
  • এক জায়গা থেকে সেবা চালু করা উচিত
  • অধস্তন আদালতের বিচারকদের শৃঙ্খলা বিধিমালা বিষয়ে রিভিউ আবেদনে আদেশ রোববার
  • এসএমই খাতের বিকাশই অর্থনীতির বিকাশ
  • পাঁচ বছরে ১৪৪ কোটি টাকার মূলধন সংগ্রহ
  • কম সুদে ও সহজ শর্তে ঋণের সুযোগ রয়েছে
  • যে পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারের দাম সবচেয়ে বেশি কমল