গাজায় ত্রাণ সরবরাহ স্থগিত করেছে ইসরায়েল
Published: 27th, June 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ত্রাণ সরবরাহ আবারও স্থগিত করেছে ইসরায়েল। এর ফলে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক গাজায় প্রবেশ করতে পারছে না। বিতরণ করা ত্রাণসামগ্রী হামাস সদস্যদের হাতে চলে যাচ্ছে, এমন অভিযোগে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে বলে ইসরায়েলের গণমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। ত্রাণসামগ্রী যাতে হামাসের হাতে না যায়, সে জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনী একটি পরিকল্পনা করবে। সেটি না হওয়া পর্যন্ত গাজায় কোনো ত্রাণ ঢুকতে দেবে না ইসরায়েল।
এর আগেও দীর্ঘদিন ধরে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ রেখেছিল ইসরায়েল। চার সপ্তাহ ধরে সেখানে ত্রাণ বিতরণ করছে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল পরিচালিত বিতর্কিত সংস্থা গাজা ‘হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন’ (জিএইচএফ)। সংস্থাটির ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ত্রাণ আনতে যাওয়ার পথে এখন পর্যন্ত অন্তত ৫৪৯ ফিলিস্তিনিকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। গাজা সরকারের গণমাধ্যম দপ্তর গতকাল বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রগুলোকে ‘মৃত্যুফাঁদ’ বানিয়ে চালানো হামলায় এখন পর্যন্ত ৪ হাজার ৬৬ ফিলিস্তিনি আহত হয়েছেন। নিখোঁজ রয়েছেন অনাহারে থাকা ৩৯ ফিলিস্তিনি।
মিডল ইস্ট আইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলের কট্টর ডানপন্থী নেতা ও জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী বেন গভির গাজায় ত্রাণ বিতরণ পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন। এর আগে ইসরায়েলের সরকার দাবি করে, গাজায় সরবরাহ করা পণ্য ও খাদ্যের নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছে হামাস।
এএফপির খবরে বলা হয়েছে, গাজার প্রভাবশালী কিছু পরিবারের প্রতিনিধিত্বকারী একটি কমিটি গতকাল এমন অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে। তারা জানিয়েছে, এ ধরনের দাবি ভিত্তিহীন। এটি গাজায় প্রবেশ করা মানবিক সহায়তাকে বাধাগ্রস্ত করার একটি অজুহাত মাত্র।
স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজ বলেছেন, গাজা এখন গণহত্যার ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। এমন অবস্থায় ইসরায়েলের সঙ্গে বিদ্যমান সহযোগিতা চুক্তি অবিলম্বে স্থগিত করতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ভবনে ঢুকতেই ভয় মেলে না ওষুধও
ভবন ঝুঁকিপূর্ণ, সরবরাহ নেই প্রয়োজনীয় ওষুধ ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রীর। এমন অবস্থায় অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে খুলনার কয়রা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রগুলোর সেবা কার্যক্রমে। উপজেলায় এমন কেন্দ্রের সংখ্যা পাঁচটি। সবক’টি ভবনের দেয়াল ও ছাদে ফাটল ধরেছে। বেরিয়ে পড়েছে রড। যে কারণে স্বাস্থ্যসেবা দিতে জীবনের ঝুঁকি নিতে হচ্ছে কর্মীদের।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্র জানায়, কয়রায় পাঁচটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রে মূলত অন্তঃসত্ত্বা মা ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হয়। পাশাপাশি সাধারণ চিকিৎসা ও জন্মনিয়ন্ত্রণ সেবাও পরিচালিত হয়ে থাকে। তবে প্রতিটি কেন্দ্রের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। এ ছাড়া প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহ না থাকায় সেবাগ্রহীতার সংখ্যা কমে গেছে।
সম্প্রতি সরেজমিন মহারাজপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের দুটি ভবনকেই জরাজীর্ণ অবস্থায় দেখা যায়। এগুলো ব্যবহারের পুরোপুরি অযোগ্য। ভবনগুলোর দেয়াল থেকে পলেস্তারা খসে গেছে বহু আগেই। দেখা যায় ভেতরের ইট। এ ছাড়া পিলার ও ছাদে বড় বড় ফাটল। জানালা-দরজা ভেঙে যাওয়ায় সরিয়ে ফেলা হয়েছে প্রয়োজনীয় মালপত্র ও আসবাব। এখন দুই কক্ষের একটি টিনের ঘরে দাপ্তরিক কার্যক্রম চলছে শুধু। ওষুধ না থাকায় রোগীদের ফিরতে হচ্ছে পরামর্শ নিয়ে।
সবুরন নেছা নামের একজন নারীকে পাওয়া যায় সেখানে। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ভাঙাচুরা রুমের মধ্যি দীর্ঘ সময় বসে থাকার পর ডাক্তারের মুখের কথা শুনে বাড়ি যাতি হচ্ছে। কোনো ওষুধপথ্য নেই।’
এ কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেন সাব-অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (স্যাকমো) নিমাই চন্দ্র মণ্ডল। তাঁর ভাষ্য, এখানে দিনে গড়ে রোগী আসেন ৫০ জন। ভবন দুটি বেহাল হওয়ায় সাধারণ রোগী, মা ও শিশুদের সেবাদান বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রায় এক বছর ধরে টিনের দুটি কক্ষে তারা কষ্ট করে সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন।
নিমাই চন্দ্র মণ্ডলের ভাষ্য, জন্মনিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ও ওষুধেরও সংকট আছে। কেবল পরামর্শ দিয়ে বিদায় করেন সেবাগ্রহীতাদের। এতে সেবাগ্রহীতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। দিনে দিনে রোগী আসা কমছে।
বাগালি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণকেন্দ্রের কোয়ার্টারটি বসবাসের অযোগ্য। এই কেন্দ্রের প্রতিটি কক্ষের দেয়াল ও পিলারে ফাটল। এখানে-ওখানে ধসের চিহ্ন। কর্মীরা জানিয়েছেন, ভবনের ছাদে ফাটল থাকায় বৃষ্টির পানি চুইয়ে পড়ে।
মহেশ্বরীপুর, উত্তর ও দক্ষিণ বেদকাশি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কল্যাণকেন্দ্রে বছরখানেক আগে সংস্কার করা হয়। তবে এরই মধ্যে দেয়ালের পলেস্তারা খসে পড়ছে। মহেশ্বরীপুর কেন্দ্রের দোতলার ছাদে ফাটল দেখা গেছে। এসব কেন্দ্রে সেবা নিতে আসা কয়েকজন নারী বলেন, ভবনের অবস্থা ভালো না হওয়ায় অন্তঃসত্ত্বা মায়েদের নিয়ে বিপাকে পড়তে হয়। বেশিক্ষণ বসে থাকাও নিরাপদ মনে করেন না তারা। অনেকেই ভবনের চেহারা দেখে বাড়ি ফিরে যান। সেবা নেওয়া আর হয় না।
তাদের কথার সত্যতা মেলে পরিবার কল্যাণ পরিদর্শক আমেনা খাতুন ও পারভীন আকতারের বক্তব্যে। আমেনা মহারাজপুর ও পারভীন বাগালি কেন্দ্রে কর্মরত। তারা জানিয়েছেন, ভবনগুলোর বেশির ভাগ কক্ষ ব্যবহার অনুপযোগী। এ কারণে সেবা কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। সেখানকার টয়লেট ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। যে কারণে সেবাগ্রহীতা ও স্বাস্থ্যকর্মীদের বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শুভ্র মনিয়ম বলেন, ৫টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ভবনের অবস্থা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। কর্মীরা ঝুঁকি জেনেও দায়িত্ব পালন করছেন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসেরও অবস্থা একই রকম। ভবনের প্রতিটি কক্ষের ছাদ ও দেয়ালে ফাটল। দোতলার ছাদ চুইয়ে পড়া পানিতে আসবাব ও দাপ্তরিক কাগজপত্র নষ্ট হচ্ছে। মাস দুয়েক ধরে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ বন্ধ। তাই সেবা দিতে গিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে। এসব বিষয় জানিয়ে কিছুদিন আগে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চিঠি দিয়েছেন।