অপ্রচলিত বা নতুন বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি বাড়ছে। চলতি ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে (জুলাই-মে) নতুন বাজারগুলোতে মোট ৬০৪ কোটি মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এ রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ বেশি।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শীর্ষ পাঁচ নতুন রপ্তানি গন্তব্য হচ্ছে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, ভারত ও দক্ষিণ কোরিয়া। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত এই পাঁচ বাজারের মধ্যে জাপান ও ভারতে তৈরি পোশাকের রপ্তানি বেড়েছে সবচেয়ে বেশি, তা যথাক্রমে ১০ ও ১৭ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ২ শতাংশ। তবে রাশিয়া ও দক্ষিণ কোরিয়ায় তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমেছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, চলতি অর্থবছরের প্রথম ১১ মাসে দেশ থেকে সব মিলিয়ে ৩ হাজার ৬৫৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি এর আগের ২০২৩–২৪ অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ২০ শতাংশ বেশি। প্রচলিত সব বাজারেই অর্থাৎ ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় রপ্তানি বেড়েছে।

বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে সবার শীর্ষে জাপান। চলতি অর্থবছরের মে পর্যন্ত ১১ মাসে দেশটিতে ১১২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১০ দশমিক ৩২ শতাংশ বেশি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশটিতে ১০৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল।

অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া। চলতি অর্থবছরে এখন পর্যন্ত দেশটিতে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা ৭৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছেন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২ শতাংশ বেশি। এ ছাড়া তৃতীয় শীর্ষ অপ্রচলিত বাজার রাশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে গত জুলাই-মে সময়ে ৩১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ কম।

চলতি অর্থবছরের জুলাই-মে সময়ে প্রতিবেশী ভারতে ৬১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩৫ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরে দেশটিতে ৫৪ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছিল। তার আগের অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছিল ৬৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।

ভারতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পেলেও বাজারটিতে তৈরি পোশাক রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন দেশের রপ্তানিকারকেরা। এর কারণ হলো, গত মাসে স্থলপথে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি নিষিদ্ধ করেছে ভারত সরকার। সে অনুযায়ী শুধু ভারতের নব সেবা ও কলকাতা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশটির আমদানিকারকেরা বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে পারবেন।

জানতে চাইলে স্প্যারো গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) শোভন ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সাত দিনের লিড টাইম ও কম পরিবহন খরচে আমরা স্থলবন্দর ব্যবহার করে ভারতে তৈরি পোশাক পাঠাতে পারতাম। বিধিনিষেধ আরোপের পর এখন সমুদ্রপথে রপ্তানি করতে ১৫-২১ দিন সময় লাগবে। মাসে তিনটি জাহাজ চট্টগ্রাম থেকে সরাসরি নব সেবা বন্দরে যায়। বাকি জাহাজ কলম্বো ঘুরে যায়।

শোভন ইসলাম আরও বলেন, বিধিনিষেধের কারণে পশ্চিমা ব্র্যান্ডগুলো ক্রয়াদেশ কমিয়ে দিয়েছে। ভারতের যেসব আমদানিকারক ক্রয়াদেশ দিচ্ছেন না, তাঁরা কারণ হিসেবে ভিসা জটিলতার কথা বলেন। সে দেশে পণ্য পাঠানোর খরচ বেড়েছে। ফলে সামনের দিনে এই বাজারে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমতে পারে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ শট ত আমদ ন দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

কৃষিঋণের ২০ শতাংশ দেওয়া হবে প্রাণিসম্পদ খাতে

দেশে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কৃষকদের মধ্যে ৩৯ হাজার কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ব্যাংকগুলো। এই অর্থ যাতে প্রকৃত কৃষকেরা পান, সে জন্য তদারকি বাড়াবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ ছাড়া কৃষি যান্ত্রিকীকরণ এবং প্রাণিসম্পদ খাতেও ঋণ বিতরণের লক্ষ্য বাড়ানো হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর আজ মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন অর্থবছরের জন্য কৃষি এবং পল্লিঋণ নীতিমালা ও কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম মিলনায়তনে আয়োজিত এ সংবাদ সম্মেলনে সংস্থাটির উপদেষ্টা ও ডেপুটি গভর্নররাসহ বিভিন্ন ব্যাংকের সরকারি-বেসরকারি ব্যবস্থাপনা পরিচালকেরা (এমডি) উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের এমডি মাসরুর আরেফিন, সোনালী ব্যাংকের এমডি শওকত আলী খান,  ইসলামী ব্যাংকের এমডি ওমর ফারুক খাঁন ও বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) নাসের এজাজ বিজয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষকদের জন্য সহায়তা নিশ্চিত করতে এ বছর ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। দেশে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও কৃষি খাতে বিনিয়োগ উৎসাহিত করাই এর মূল উদ্দেশ্য। এবারের লক্ষ্যমাত্রা গত অর্থবছরের চেয়ে ২ দশমিক ৬৩ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছর কৃষিঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এবার কৃষিঋণ বিতরণ কর্মসূচিতে প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংককে যুক্ত করা হয়েছে।

নতুন কৃষিঋণ নীতিমালায় নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে কৃষি ও পল্লিঋণ খাতে যেকোনো পরিমাণে ঋণ ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোর (সিআইবি) রিপোর্ট গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। কৃষি ও পল্লিঋণের আওতাভুক্ত শস্য-ফসল খাতসহ অন্যান্য সব খাতে সর্বোচ্চ আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত নতুন ঋণ বা বিদ্যমান ঋণ নবায়নের ক্ষেত্রে সিআইবি মাশুল মওকুফ করা হয়েছে। মোট বরাদ্দের ২০ শতাংশ প্রাণিসম্পদ খাতে এবং ২ শতাংশ সেচ ও কৃষি যন্ত্রপাতি খাতের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

এখন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে কৃষি খাতের ঋণে পুনঃ অর্থায়ন করছে। আমি মনে করি, এই অর্থ বাজেটে বরাদ্দ থাকা উচিত। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ না। এ ছাড়া আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বা আন্তর্জাতিকভাবে এমন চর্চা করা হয় না। সরকার টাকা দিলে আমরা সেটা ব্যবস্থাপনা করতে পারিআহসান এইচ মনসুর, গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক।  

নীতিমালায় বলা হয়েছে, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ খাতে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণের ক্ষেত্রে ডিপি নোট (১০ টাকা থেকে ৫০ টাকার স্ট্যাম্প/সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী), লেটার অব হাইপোথিকেশন ও ব্যক্তিগত গ্যারান্টি ছাড়া আর কোনো মাশুল গ্রহণ করা যাবে না। এ ক্ষেত্রে স্ট্যাম্প রাখার প্রয়োজন নেই।

এ ছাড়া এরিয়া অ্যাপ্রোচ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এতে অঞ্চলভিত্তিক ফসলের উৎপাদন বা উৎপাদন সম্ভাব্যতাবিষয়ক তথ্যভান্ডার, যেমন কৃষি গবেষণা কাউন্সিল দ্বারা উদ্ভাবিত ক্রপ জোনিং সিস্টেম কিংবা খামারি অ্যাপসে সংরক্ষিত নির্দিষ্ট ফসলের অঞ্চলভিত্তিক উৎপাদন সম্ভাবনা ও উৎপাদনশীলতার তথ্য ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

নীতিমালায় এজেন্ট ব্যাংকিং পদ্ধতিতে কৃষি ও পল্লিঋণ বিতরণ ত্বরান্বিতকরণের লক্ষ্যে আদায়কৃত সুদ/মুনাফার কিছু অংশ সংশ্লিষ্ট এজেন্টের সঙ্গে শেয়ার/ভাগাভাগি করার জন্য ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কন্ট্রাক্ট ফার্মিং পদ্ধতিতে কৃষি ও পল্লিঋণ নীতিমালায় উল্লিখিত ফসল ঋণ, মৎস্য সম্পদ উন্নয়ন এবং প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট উপখাতসমূহে ঋণ দেওয়া যাবে বলে জানানো হয়েছে।

কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের আওতা বাড়িয়ে ক্ষীরা, কচুর লতি, কাঁঠাল, বিটরুট, কালিজিরা, বস্তায় আদা–রসুন ও হলুদ চাষ, খেজুর গুড় উৎপাদনের ঋণ যুক্ত করা হয়েছে। অঞ্চলভেদে কৃষকের প্রকৃত চাহিদার ভিত্তিতে ঋণ বিতরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এতে ফসলভিত্তিক নির্ধারিত ঋণ ও বিনিয়োগের পরিমাণ ২০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি/হ্রাস করার সুযোগ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি ব্যাংকগুলোকে কৃষিঋণ বিতরণ ও আদায়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সচেতনতামূলক অনুষ্ঠান আয়োজন এবং নিয়মিত ঋণ পরিশোধকারী কৃষকদের পুরস্কার প্রদানের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অনুষ্ঠান শেষে গভর্নর আহসান এইচ মনসুর সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে কৃষি খাতের ঋণে পুনঃ অর্থায়ন করছে। আমি মনে করি, এই অর্থ বাজেটে বরাদ্দ থাকা উচিত। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের কাজ না। এ ছাড়া আর্ন্তজাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বা আন্তর্জাতিকভাবে এমন চর্চা করা হয় না। সরকার টাকা দিলে আমরা সেটা ব্যবস্থাপনা করতে পারি।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৬০ কোটি টাকার গৃহকর নিয়ে দ্বন্দ্ব মেটাতে যৌথ কমিটি
  • যুক্তরাষ্ট্রের বাড়তি ক্রয়াদেশ অনেক পোশাক কারখানায়
  • র‍্যাগিংয়ের অভিযোগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী বহিষ্কার
  • কুবিতে র‍্যাগিং: ২ শিক্ষার্থী বহিষ্কারসহ বিভাগীয় প্রধান ও ছাত্র উ
  • খনিজ ও তেল–গ্যাস অনুসন্ধানে পাকিস্তানের সঙ্গে সহযোগিতা বৃদ্ধি করবে যুক্তরাষ্ট্র
  • আবারো গ্রেপ্তার টিকটকার প্রিন্স মামুন
  • গাজায় নিহতের সংখ্যা ৬১ হাজার ৭০০ ছাড়াল
  • ১২ দিনে দেশে রেমিট্যান্স এল ১০৫ কোটি ডলার
  • নেতানিয়াহু পথ হারিয়ে ফেলেছেন: নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
  • কৃষিঋণের ২০ শতাংশ দেওয়া হবে প্রাণিসম্পদ খাতে