ছাত্র-জনতার ক্ষোভ ও গণপ্রতিরোধকে ‘মব’ বলা ফ্যাসিস্টদের ষড়যন্ত্র: হেফাজতে ইসলাম
Published: 27th, June 2025 GMT
গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের বিরুদ্ধে ছাত্র-জনতার ক্ষোভ ও গণপ্রতিরোধকে ‘মব’ বলা ফ্যাসিস্টদের ষড়যন্ত্র বলে মনে করছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ। ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন না হওয়া পর্যন্ত দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধ জারি থাকবে বলেও ঘোষণা দিয়েছে সংগঠনটি।
শুক্রবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে এই ঘোষণা দিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। বিবৃতিটি পাঠিয়েছেন সংগঠনের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা আজিজুল হক।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, জুলাইর ঐক্যবদ্ধ বিপ্লবী ছাত্র-জনতার সম্মতির ভিত্তিতে ফ্যাসিবাদ নির্মূল করার দায়িত্ব নিয়ে এসেছে গণঅভ্যুত্থানের সরকার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসরদের অনেকে এখনও গ্রেপ্তার হয়নি। এদের গ্রেপ্তার করে বিচারের মুখোমুখি করার দায়িত্ব অন্তর্বর্তী সরকারের। কিন্তু এক্ষেত্রে তাদের ব্যর্থতা থাকলেও জুলাইর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতা চুপ করে বসে নেই। সরকার ও প্রশাসন যেখানে ব্যর্থ, সেখানেই জুলাই বিপ্লবের ছাত্র-জনতা এগিয়ে আসবে।
তিনি আরও বলেন, ভুলে গেলে চলবে না, এই অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের ষড়যন্ত্রমূলক ঝড়-ঝাপটাগুলো ঠেকিয়েছে বিপ্লবী ছাত্র-জনতাই। আজকে ছাত্র-জনতার ফ্যাসিবাদবিরোধী ভূমিকাকে ‘মব’ বলার মধ্যে ফ্যাসিস্টদের ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে আমরা মনে করি। তাছাড়া ভবিষ্যতেও যারা ফ্যাসিস্ট হয়ে উঠতে চাইবে, তাদের জন্যও জুলাইর ছাত্র-জনতা অশনিসঙ্কেত। সে কারণে জুলাইর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র আরো বিস্তৃত হচ্ছে। এই ষড়যন্ত্র ঠেকাতে ছাত্র-জনতাকে সব বিভেদ-বিভক্তি এড়িয়ে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। তা নাহলে অদূর ভবিষ্যতে নব্য ফ্যাসিবাদ সুযোগ বুঝে তাদের ঘাড় মটকে দেবে।
বিবৃতিতে তিনি বলেন, ২০১৩ সালে এদেশের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা শাপলা চত্বরে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধের জাগরণ ঘটিয়েছিল। ২০২১ সালে মোদিবিরোধী আন্দোলনেও এদেশের আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতা আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে জীবন দিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল। তাদের অনুপ্রেরণায় চব্বিশে এসে ছাত্রদের নেতৃত্বে তৌহিদি জনতাসহ সর্বস্তরের জনগণ এক মহাকাব্যিক গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের পতন ঘটায়। সেই গণঅভ্যুত্থান সফল হলেও জুলাই বিপ্লব এখনো অধরা। জুলাই বিপ্লব বাস্তবায়নসহ সারা দেশে ফ্যাসিবাদের মূলোৎপাটন না হওয়া পর্যন্ত জুলাইর বিপ্লবী ছাত্র-জনতার গণপ্রতিরোধ জারি থাকবে ইন-শা-আল্লাহ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: মব ছ ত র জনত র দ র ষড়যন ত র ষড়যন ত র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ফ্লোটিলায় কেমন আছেন শহিদুল আলম?
মানবিক সামগ্রী নিয়ে গাজার অবরোধ ভাঙার শপথে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ফিলিস্তিনের ‘মৃত্যু উপত্যকার’ দিকে ছুটছে গ্লোবাল সুমুদ ফ্লোটিলার একটি নৌযান, যেটিতে রয়েছেন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী ও দৃকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহিদুল আলম।
গাজায় গণহত্যা উন্মুখ ইসরায়েলের হানাদার বাহিনী বৃহস্পতিবার (২ অক্টোবর) সকাল থেকে বিকালের মধ্যে সুমুদ ফ্লোটিলার বেশিরভাগ নৌযান তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে, গ্রেপ্তার করেছে সেসব নৌযানে থাকা অধিকারকর্মীদের, যাদের মধ্যে সুপরিচিত একজন হলেন জলবায়ুকর্মী গ্রেটা টুনবার্গ।
আরো পড়ুন:
সুমুদ ফ্লোটিলার একটি ছাড়া সব নৌযান জব্দ
ফ্লোটিলা থেকে শহিদুল আলম, ‘সামনে কী, বোঝার চেষ্টা করছি’
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের খবরে আসছে, ফ্লোটিলার নৌযানগুলো আটক করতে তাদের পেছনে হন্যে হয়ে ছুটছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফলে অনেকে জানতে চাইছেন এই ফ্লোটিয়া অংশ নেওয়া বাংলাদেশের একমাত্র অধিকারকর্মী শহিদুল আলমের খবর।
দুই দিন ধরে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছেন বাংলাদেশের বিশ্বনন্দিত আলোকচিত্রী শহিদুল আলম। ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে তার পোস্টগুলো মুহূর্তেই ভাইরাল হচ্ছে; সেই সঙ্গে হাজারো মানুষের আবেগঘন মন্তব্য পড়ছে, সবাই জানতে চাইছেন তিনি কেমন আছেন।
ফেসবুক বন্ধু ও পরিচিতদের বাইরে শহিদুল আলম এই দুই দিনে অসংখ্যা বাংলাদেশিদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন, সেটি বুঝতে পেরে দেশবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছন তিনি। মাতৃভূমির মানুষের উদ্বেগকে সম্মান জানিয়ে বার্তাও পাঠিয়েছেন তিনি।
বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ৫ মিনিটের দিকে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে নিজের শারীরিক অবস্থা এবং ফ্লোটিলার পরিস্থিতি সম্পর্কে তথ্য দেন শহিদুল আলম।
পোস্টে তিনি লিখেছেন, “অনেকে জানতে চাইছেন আমি কেমন আছি। দুঃখিত, আপনাদের প্রত্যেককে আলাদাভাবে উত্তর দিতে পারছি না। আজকে আমি বমি করেছি এবং পরে পড়েও গিয়েছিলাম, তবে তেমন গুরুতর কিছু নয়। জাহাজে ২০ জন চিকিৎসক ও নার্স থাকার কারণে চিকিৎসার দিক থেকে আমরা সম্ভবত অন্য যেকোনো জাহাজের যাত্রীদের চেয়ে সবচেয়ে ভালো যত্ন পাচ্ছি। আমি যে এত মনোযোগ পেয়েছি, তা ভীষণ উপভোগ করেছি। আমার ভাগ্নি মৌলি হলে হয়তো বলত, সব কিছুতেই আমার বাড়াবাড়ি। অবশ্য গাজা থেকে আরেকটি দিনের দূরত্বে আছি।”
আলজাজিরার খবর অনুযায়ী, গাজার অবরোধ ভাঙার লক্ষ্যে ৪৬টি দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৪৯৮ জন অধিকারকর্মী ৪৪টি নৌকা নিয়ে ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে গাজার পথে যাত্রা শুরু করে।
গাজায় গণহত্যা নিয়ে নীবরতা ভেঙে ইসরায়েলকে যুদ্ধ বন্ধ করে দ্বিরাষ্ট্রীয় সমাধানে আসতে চাপ দিতে থাকে বিভিন্ন দেশ, যার ধারাবাহিকতায় যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়াসহ পশ্চিমের উন্নত দেশগুলো ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দেয়; আরো অনেক দেশ এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানোর অপেক্ষায় রয়েছে।
তবে রাজনীতি-কূটনীতির জটিল প্যাঁচ পাশ কাটিয়ে বিশ্বের অধিকারকর্মীদের একটি গ্রুপ গাজায় ইসরায়েলের নজিরবিহীন অবরোধ ভাঙার অঙ্গীকার করে নৌযানের বহর নিয়ে গাজার দিকে যাত্রা করে দুদিন আগে।
দ্য গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার ভোর থেকে নৌযানগুলোর অবস্থান গাজার উপকূল বা তার কাছাকাছি এসে পৌঁছায়। তবে আন্তর্জাতিক জলসীমাতেই সেগুলোর বেশিরভাগের নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েলি হানাদার বাহিনী, যারা অন্তত ৩৫০ জন অধিকারকর্মীদের গ্রেপ্তার করেছে বলে খবর রয়েছে।
আলজাজিরার জানায়, ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দাবি করেছে তারা একটি বাদে সব নৌযান জব্দ করে নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।
শহিদুল আলমদের নৌযানটি যেহেতু এখনো যাত্রা অব্যাহত রেখেছে এবং সেই নৌযানের অবস্থা সম্পর্কে মাঝে মাঝে তথ্য দিচ্ছেন তিনি, সেহেতু আটক না হওয়া নৌযানটিতেই রয়েছেন তারা।
এর আগের পোস্টে ঝঞ্ঝামুখর সাগরে তাদের নৌযানের অবস্থার বর্ণনা দিয়েছিলেন শহিদুল আলম। সেখানেও শারীরিকভাবে কিছুটা অসুস্থতা বোধ করার কথা জানিয়েছিলেন তিনি। তবে এবার সেই পরিস্থিতি নৌযানে থাকা অন্য চিকিৎসকদের সহায়তায় কাটিয়ে উঠার তথ্য দিলেন তিনি।
ইসরায়েলের গণহত্যা অভিযানে গাজার অন্তত ৬৬ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, গুরুতর আহত হয়ে জীবনের সঙ্গে লড়ছেন প্রায় দেড় লাখ। বহু শিশু অনাহার-অর্ধাহারে মায়ের কোলে মারা যাচ্ছে, কঙ্কালসার সন্তান প্রসব করছেন গাজার মায়েরা। আর সব বয়সি মানুষ দুর্ভিক্ষের মধ্যে ধুকছে।
শুরুর দিকে বিশ্ব সম্প্রদায় নিশ্চুপ থাকলেও কয়েক মাস হলো ইউরোপ, এশিয়া ও দক্ষিণ আমেরিক ও আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধের পক্ষে সোচ্চার হয়েছে। যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সহ অনেক দেশ ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ নিয়ে উত্তাপ ছড়িয়েছে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অধিবেশনেও।
শুধু যুক্তরাষ্ট্রের জোরালো সমর্থনে এখনো গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। শহিদুল আলমের মতো বিশ্বের ৪৬টি দেশের অধিকারকর্মীরা যখন গাজা ফ্লোটিয়া নিয়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন এবং অধিকাংশ দেশ যখন এই ফ্লোটিলার পক্ষে রয়েছে, তখনো গাজায় নরহত্যা অব্যাহত রেখেছে দখলদার ইসরায়েল।
আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, বুধবারও (১ অক্টোবর) গাজায় ৯৩ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
অবশ্য গাজা ফ্লোটিলায় ইসরায়েলি হানার প্রতিবাদে দেশে দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে। এরই মধ্যে আর্জেন্টিনা ও ইতালিতে বিশাল র্যালি হয়েছে। মালয়েশিয়া, কলম্বিয়া, ভেনেজুয়েলাসহ অনেক দেশের রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধান ইসরায়েলের নিন্দা করে অধিকারকর্মীদের নিঃশর্ত মুক্তি দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
কলম্বিয়া থেকে ইসরায়েলের সব কূটনীতিককে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং কালবিলম্ব না করে তাদের দেশ ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে কলম্বিয়া সরকার।
ঢাকা/রাসেল