নামাজ একটি দৈনিক ইবাদত, প্রতিদিন পাঁচবার পড়তে হয়। এরপরও আমাদের অজান্তে নামাজে এমন কতগুলো ভুল হয়ে যায়, যা নামাজের গুণগত মান ও আধ্যাত্মিক উপকার কমিয়ে দেয়। নামাজে আন্তরিকতা বাড়াতে এ ভুলগুলো চিহ্নিত করে সংশোধন করা গুরুত্বপূর্ণ।

নিচে নামাজে সাধারণ ১০টি ভুল এবং সেগুলো সংশোধনের উপায় আলোচনা করা হলো।

সবচেয়ে খারাপ চোর সে যে তার নামাজ থেকে চুরি করে।মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২,৬৮৬১.

ভুল নিয়ত

ভুল: অনেকে সঠিক নিয়ত ছাড়া নামাজ শুরু করেন। কখনো মনে মনে নিয়ত না করেই নামাজে দাঁড়ান।

সংশোধন: নামাজ শুরুর আগে হৃদয়ে স্পষ্ট নিয়ত করুন যে আপনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য নামাজ পড়ছেন। নিয়ত মুখে বলার দরকার নেই, তবে মনে সচেতনভাবে নির্ধারণ করতে হবে। নবী (সা.) বলেছেন, ‘আমলে মূল্য নির্ভর করে নিয়তের ওপর।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১)

২. তাড়াহুড়া করা

ভুল: তাড়াহুড়া বা মনোযোগের অভাবে অনেকে নামাজের অঙ্গভঙ্গি দ্রুত করেন। ফলে রুকু, সিজদায় সঠিক অবস্থান বজায় থাকে না।

সংশোধন: প্রতিটি অঙ্গভঙ্গিতে সময় নিন। রুকুতে পিঠ সোজা রাখুন, হাঁটুতে হাত দৃঢ়ভাবে রাখুন। সিজদায় কপাল, নাক, হাতের তালু, হাঁটু ও পায়ের আঙুল মাটিতে রাখুন। নামাজ আল্লাহর সঙ্গে কথোপকথন। তাই প্রতিটি অবস্থানে মনোযোগ দিন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সবচেয়ে খারাপ চোর সে যে তার নামাজ থেকে চুরি করে।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২২,৬৮৬)

আরও পড়ুন‘আত-তাহিয়্যাতু’র মর্মবাণী কী১১ এপ্রিল ২০২৫৩. ‘তাকবিরে তাহরিমা’ ভুল উচ্চারণ

ভুল: নামাজ শুরুর সময় ‘আল্লাহু আকবার’ দ্রুত বা মনোযোগ ছাড়া বলা অথবা হাত সঠিকভাবে না তোলা।

সংশোধন: তাকবিরে তাহরিমা বলার সময় উভয় হাত কাঁধ বা কানের সমান উঠিয়ে ‘আল্লাহু আকবার’ মনোযোগসহ বলুন। এটি নামাজের সূচনা এবং পুরো নামাজের সুর ও তাল নির্ধারণ করে দেয়।

৪. সুরা ফাতিহা ভুল পড়া

ভুল: সুরা ফাতিহার উচ্চারণ ভুল করা বা তাড়াহুড়া করে ‘মাদ’ (দীর্ঘ স্বর) সঠিকভাবে আদায় না করে পড়া।

সংশোধন: সুরা ফাতিহা নামাজের অপরিহার্য অংশ। সঠিক তাজবিদসহ পড়ুন ও শব্দের অর্থের প্রতি মনোযোগ দিন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে নামাজে সুরা ফাতিহা পড়া হয় না, সে নামাজ অপূর্ণ।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৯৪)

৫. রুকু ও সিজদায় ভুল অবস্থান

ভুল: রুকুতে পিঠ সোজা না রাখা, সিজদায় কপাল মাটিতে পুরোপুরি না রাখা।

সংশোধন: রুকুতে পিঠ মাটির সমান্তরাল রাখুন, হাঁটুতে হাত দৃঢ়ভাবে রাখুন। সিজদায় কপাল, নাক, হাতের তালু, হাঁটু ও পায়ের আঙুল মাটিতে রাখুন, বাহু শরীর থেকে দূরে রাখুন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘সিজদায় তোমার সাতটি অঙ্গ মাটিতে রাখো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৮০৯)

নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখো।সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩১৬. তাশাহুদ ভুল বা বাদ দেওয়া

ভুল: তাশাহুদ দ্রুত বা ভুল উচ্চারণ করা বা এর অর্থের প্রতি মনোযোগ না দেওয়া।

সংশোধন: দ্বিতীয় রাকাতের পর তাশাহুদের অবস্থানে বসে ধীরে ধীরে পড়ুন, ‘আত-তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াস সালাওয়াতু ওয়াত তাইয়্যিবাতু, আসসালামু আলাইকা আইয়ুহান নাবিয়্যু ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সালিহিন। আশহাদু আল-লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।’

অর্থাৎ সব মৌখিক, শারীরিক ও আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য। হে নবী, আপনার প্রতি সালাম এবং আল্লাহর রহমত ও বরকত নাজিল হোক। সালাম আমাদের প্রতি এবং আল্লাহর নেক বান্দাদের প্রতি। আমি সাক্ষ্য প্রদান করছি, আল্লাহ ছাড়া আর কোনো উপাস্য নেই এবং আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল। (বুখারি, হাদিস: ৬২৬৫)

অর্থের প্রতি মনোযোগ দিন ও এ সময়ে দোয়া করুন।

আরও পড়ুনকেন দরুদ পাঠ করব১৫ মার্চ ২০২৫৭. কিবলার দিকে না পড়া

ভুল: অপরিচিত স্থানে ভুল দিকে নামাজ পড়া এবং পরিচিত স্থানে কিবলা কখনো যাচাই না করা।

সংশোধন: নামাজের সময় মক্কার কাবার দিকে মুখ করুন। কিবলার দিক নিশ্চিত করতে কিবলা কম্পাস বা স্মার্টফোন অ্যাপ ব্যবহার করুন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘কিবলার দিকে মুখ করো। কারণ, এটি নামাজের শর্ত।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৫৫৫)

৮. অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া করা

ভুল: নামাজে পোশাক ঠিক করা, ঠেস দিয়ে দাঁড়ানো, ফোন পকেটে আছে কি না চেক করা বা চুলকানোর মতো অপ্রয়োজনীয় নড়াচড়া করা।

সংশোধন: নামাজে নড়াচড়া কম করুন। খুব প্রয়োজন হলে দ্রুত ও শান্তভাবে করুন। ভুল হলে ‘সাহু সিজদাহ’ দিয়ে নামাজ শেষ করুন। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘নামাজে কথা বললে তা বাতিল হয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস: ৯২২)

যে নামাজে সুরা ফাতিহা পড়া হয় না, সে নামাজ অপূর্ণ।সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩৯৪৯. সঠিক স্থানে হাত না রাখা

ভুল: নামাজে অপ্রয়োজনীয় হাত তোলা বা রুকু, সিজদা বা বৈঠকে সঠিক স্থানে হাত না রাখা।

সংশোধন: শুধু সুন্নাহ অনুযায়ী নির্ধারিত স্থানে হাত তুলুন। কোন রোকন আদায় করার সময় কোথায় হাত কীভাবে রাখতে হবে, তা ভালোভাবে জেনে নিন। যেমন-তেমন করে হাত রাখা নামাজের অমনোযোগিতার প্রমাণ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘আমার মতো নামাজ পড়ো যেভাবে আমাকে নামাজ পড়তে দেখো।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস: ৬৩১)

১০. খুশু-খুজু না থাকা

ভুল: দুনিয়াবি চিন্তা বা অর্থ না বোঝার কারণে নামাজে মনোযোগের অভাব।

সংশোধন: খুশু অর্থ ভয় ও খুজু অর্থ বিনয়। মনপ্রাণ আল্লাহর দিকে কেন্দ্রীভূত করে পড়াটাই নামাজের দাবি। পঠিত আয়াতের অর্থ চিন্তা করুন। মন ভ্রান্ত হলে ধীরে ধীরে তা ফিরিয়ে আনুন। আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয় সফল হয়েছে মুমিনগণ, যারা তাদের নামাজে খুশু অবলম্বন করে।’ (সুরা মুমিনুন, ২৩:১-২)

নামাজ ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত এবং এটি পূর্ণ করতে আন্তরিকতা, মনোযোগ ও সঠিক জ্ঞান প্রয়োজন। সাধারণ ভুলগুলো সম্পর্কে সচেতন হয়ে এবং সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করে আপনি নামাজের গুণগত মান বাড়াতে ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারেন।

আরও পড়ুনঘড়ির চাপে কি আমাদের ইবাদতের ক্ষতি হচ্ছে২২ মে ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সহ হ ব খ র অবস থ ন বল র দ মন য গ আল ল হ বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সিলেট বিভাগের ১৭ আসনে প্রার্থীদের নাম জানাল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিলেট বিভাগের চার জেলায় ১৯টি সংসদীয় আসনের মধ্যে ১৭টিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ।

গতকাল শনিবার বিকেলে রাজধানীর পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রার্থীদের নামের তালিকা আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হয়। তালিকা ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী। এ সময় দলের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আবদুর রব ইউসুফী, সহসভাপতি জুনায়েদ আল হাবিব, নাজমুল হাসান কাসেমী, বদরুল আলম প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

দলটির সূত্রে জানা গেছে, সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসন ছাড়া বাকি ৫টিতে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর) আসনে হোসাইন আহমদ, সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, বালাগঞ্জ ও ফেঞ্চুগঞ্জ) আসনে নজরুল ইসলাম, সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ ও জৈন্তাপুর) আসনে মুহাম্মদ আলী, সিলেট-৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসনে উবায়দুল্লাহ ফারুক এবং সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ) আসনে ফখরুল ইসলাম। সিলেট-৫ আসনে দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত উবায়দুল্লাহ ফারুক দলটির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি।

সুনামগঞ্জ জেলার পাঁচটি আসনেই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁরা হলেন সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, ধর্মপাশা, জামালগঞ্জ ও মধ্যনগর) আসনে তাফাজ্জুল হক আজিজ, সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই ও শাল্লা) আসনে শোয়াইব আহমদ, সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর ও শান্তিগঞ্জ) আসনে হাম্মাদ গাজীনগরী, সুনামগঞ্জ-৪ (সদর ও বিশ্বম্ভরপুর) আসনে মুখলিসুর রহমান চৌধুরী এবং সুনামগঞ্জ-৫ (ছাতক ও দোয়ারাবাজার) আসনে নুরুল হক।

মৌলভীবাজার জেলার ৪টি আসনের মধ্যে ৩টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়। এ জেলায় মৌলভীবাজার-২ (কুলাউড়া) আসনে কোনো প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি। অন্য তিন আসনের প্রার্থীরা হলেন মৌলভীবাজার-১ (বড়লেখা ও জুড়ী) আসনে বদরুল ইসলাম, মৌলভীবাজার-৩ (সদর ও রাজনগর) আসনে জামিল আহমদ আনসারী এবং মৌলভীবাজার-৪ (শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ) আসনে শেখ নূরে আলম হামিদী।

হবিগঞ্জ জেলার চারটি আসনে প্রার্থী হলেন হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ ও বাহুবল) আসনে সিদ্দিকুর রহমান চৌধুরী, হবিগঞ্জ-২ (আজমিরীগঞ্জ ও বানিয়াচং) আসনে এখলাছুর রহমান, হবিগঞ্জ-৩ (সদর, লাখাই ও শায়েস্তাগঞ্জ) আসনে মাহবুবুর রহমান চৌধুরী এবং হবিগঞ্জ-৪ (চুনারুঘাট ও মাধবপুর) আসনে নুরুজ্জামান আসাদী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • আগামী নির্বাচন হবে মাইনাস আওয়ামী লীগ: অলি আহমদ
  • ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন জমা, মরদেহে ৯টি গভীর আঘাতের চিহ্ন
  • সরকার সন্ত্রাস দমনে কঠোর না হলে আসন্ন নির্বাচন অনিশ্চিত: ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ
  • মুরগির ডাক শুনে ঘরের দরজা খুলতেই খুন হন জসীম
  • জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের হতাহতদের সংখ্যা ভিন্ন কেন, প্রশ্ন সালাহউদ্দিন আহমদের
  • গভীর রাতে মোরগের ডাকে শুনে দরজা খোলেন, এরপর কুপিয়ে হত্যা
  • সিলেট বিভাগের ১৭ আসনে প্রার্থীদের নাম জানাল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম
  • ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের জন্য সংগ্রহ করা হচ্ছে ৪০ হাজার বডি ক্যামেরা