চীন–যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্যচুক্তিতে সই করেছে: ডোনাল্ড ট্রাম্প
Published: 28th, June 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন বাণিজ্যচুক্তিতে সই করেছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। চলমান বাণিজ্যযুদ্ধ অবসানের প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এই চুক্তি হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
‘আমরা কিছুদিন আগেই চীনের সঙ্গে চুক্তি সই করেছি,’ গত বৃহস্পতিবার রাতে হোয়াইট হাউসের এক অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথাগুলো বলেন। তবে এ বিষয়ে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি। খবর আল–জাজিরার
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ও চীন ‘জেনেভা চুক্তি’ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অতিরিক্ত সমঝোতায় পৌঁছেছে। গত মাসে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভায় বাণিজ্যযুদ্ধের বিরতি নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে আলোচনা হয়, তিনি মূলত সেই প্রসঙ্গে এ মন্তব্য করেন। সেখানে দুই দেশ সাময়িক বাণিজ্যযুদ্ধ–বিরতিতে সম্মত হয়।
ওই কর্মকর্তা আরও জানান, মূলত চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে দ্রুত বিরল খনিজ রপ্তানি দ্রুত পুনরায় চালু করার প্রক্রিয়া নিয়েই এ সমঝোতা। চুক্তিটি জেনেভা চুক্তির ধারাবাহিকতা। জেনেভায় উভয় পক্ষই একমত হয়েছিল, পরস্পরের পণ্যে আরোপিত শুল্ক ও পাল্টা শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত করা হবে। লক্ষ্য ছিল দ্রুতই বৃহৎ বাণিজ্যচুক্তিতে পৌঁছানো। পরে লন্ডনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনায় চূড়ান্ত চুক্তির কাঠামো নির্ধারিত হয় এবং ট্রাম্প যে চুক্তির কথা বললেন, সেটি সম্ভবত সেই কাঠামোর আনুষ্ঠানিক রূপ।
যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিক বৃহস্পতিবার ব্লুমবার্গ টেলিভিশনকে বলেন, চুক্তিটি দুই দিন আগেই সই করা হয়েছে, যদিও তিনি নিজেও চুক্তির বিস্তারিত কিছু জানাননি।
গতকাল শুক্রবার চীনও আনুষ্ঠানিকভাবে চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তারা জানায়, যেসব পণ্য রপ্তানিতে নানা ধরনের নিয়ন্ত্রণ ছিল, সেগুলো রপ্তানির ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়া অনুযায়ী অনুমোদন দেওয়া হবে। তারা অবশ্য বিরল খনিজ নিয়ে কিছু বলেনি।
চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক বিবৃতিতে বলেন, লন্ডন বৈঠকের পর থেকে দুই দেশ নিয়মিত যোগাযোগ বজায় রেখেছে। তিনি আরও জানান, সম্প্রতি উভয় পক্ষের সম্মতিতে কাঠামোর বিস্তারিত বিষয়গুলো চূড়ান্ত হয়েছে। আইনি শর্ত পূরণ করে যেসব আবেদন করা হবে, চীন তা পর্যালোচনা করে অনুমোদন দেবে বলেও জানান তিনি।
সেই সঙ্গে চীনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্র চীনের ওপর যে বিধিনিষেধমূলক ব্যবস্থা আরোপ করেছে, তার মধ্যে বেশ কিছু বাতিল করা হবে।
জেনেভায় অনুষ্ঠিত আলোচনার সময় বেইজিং জানায়, তারা ২ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর অশুল্কসংক্রান্ত যেসব পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছিল, সেগুলো তুলে নেওয়া হবে। তবে এসব ব্যবস্থার কতটা কার্যকরভাবে প্রত্যাহার করা হবে, সেটা তখনো পরিষ্কার ছিল না।
যুক্তরাষ্ট্রের নতুন শুল্ক আরোপের জবাবে চীন পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও চুম্বকের রপ্তানি স্থগিত করেছিল। ফলে বৈশ্বিক সরবরাহব্যবস্থায় বড় প্রভাব পড়ে, বিশেষ করে গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান, মহাকাশপ্রযুক্তি কোম্পানি, সেমিকন্ডাক্টর নির্মাতা ও সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহকারীরা সংকটে পড়ে।
চীনের এই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার জবাবে ট্রাম্প প্রশাসনও পাল্টা ব্যবস্থা নেয়—তারা সেমিকন্ডাক্টর ডিজাইন সফটওয়্যার, বিমান ও অন্যান্য প্রযুক্তিপণ্য চীনে রপ্তানি নিষিদ্ধ করে।
জুনের শুরুতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, চীনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ তিন গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের জন্য বিরল খনিজ সরবরাহে সাময়িক অনুমতি দেওয়া হয়েছে। দুটি অভ্যন্তরীণ সূত্রে বলা হয়, ওই রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে সরবরাহ–সংকট শুরু হয়েছিল বলে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
মাসের শেষ দিকে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানান, চীনের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে—এর আওতায় বেইজিং যুক্তরাষ্ট্রে বিরল খনিজ ও চুম্বক সরবরাহ করবে; বিনিময়ে চীনা শিক্ষার্থীরা যুক্তরাষ্ট্রের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাবেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ব যবস থ সরবর হ
এছাড়াও পড়ুন:
থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের
থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।
থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।
সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
এফএওর সূচক কমেছেপ্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।
চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের
অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।