রাষ্ট্র সংস্কার ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনের বার্তা নিয়ে আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির নেতারা। পাশাপাশি এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচার ও সংগঠন বিস্তারেও আহ্বান জানানো হয়েছে।

আজ শনিবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ দিকনির্দেশনা দেন নেতারা। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর সভাপতিত্বে এবং ভাইস চেয়ারম্যান লে.

কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিনের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন দলটির প্রতিষ্ঠাতা আহ্বায়ক ও উপদেষ্টা এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরী।

মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের রাজনীতি নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। আপনাদের সার্বিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবি পার্টিই নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করতে সক্ষম হবে। দেশ পরিবর্তনে এবি পার্টির ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের সব উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে এবি পার্টির সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’

আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনকে ভোটারদের কাছে প্রধান বিবেচ‍্য ইস‍্যু হিসেবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দেশের জনগণ যেন বুঝতে পারে এবি পার্টি সত্যিই নতুন রাজনীতি নিয়ে এসেছে। এদের পক্ষেই নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন সম্ভব। এলাকায় গিয়েই সবাইকে নির্বাচনী প্রচারণা ও সংগঠন বিস্তারে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।

ঐকমত্যের বাইরে দেশ পুনর্গঠন ও সংস্কার সম্ভব নয় উল্লেখ করে মজিবুর রহমান মঞ্জু আরও বলেন, ‘সরকার ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। সেখানে বেশ কিছু বিষয়ে একমত হলেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে সব দল একমত হলেও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। এর বাইরে গিয়ে সংবিধান নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়োগ নিয়েও রয়েছে তীব্র মতবিরোধ। এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আমাদের রাজনীতি করতে হবে।’

নির্বাচনী প্রচারে নানা পরামর্শ দিয়ে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনীতি করছি, এটা জনগণকে বোঝাতে হবে। এলাকার সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে, কাজ করতে হবে।’

মতবিনিময় সভায় এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান বি এম নাজমুল হক, লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত, এ বি এম খালিদ হাসান, নাসরীন সুলতানা, সানী আবদুল হক, আমিনুল ইসলাম, আলতাফ হোসাইন, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্সসহ এবি পার্টির সারা দেশের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঐকমত য র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি

ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ অনুমোদন দেওয়ার সময় আইএমএফ বাংলাদেশের অর্থনীতির গতিবিধি সম্পর্কে যে পূর্বাভাস দিয়েছে, তা উদ্বেগজনকই। তারা মনে করে, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তাসহ চার কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতি এখনো খারাপ অবস্থায় আছে। অন্য তিনটি কারণ হলো কঠোর আর্থিক ও রাজস্ব নীতির প্রভাব, বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা বৃদ্ধি এবং ব্যাংক খাতে অব্যাহত চাপ।

বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেনও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কথা স্বীকার করে বলেছেন, বিনিয়োগ স্থবিরতা কাটেনি। প্রশ্ন হলো গত ১০ মাসে অন্তর্বর্তী সরকার এই স্থবিরতা কাটাতে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নিয়েছে কি না। আইএমএফ বলছে, চলতি অর্থবছরের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) প্রবৃদ্ধি ৩ দশমিক ৮ শতাংশ হতে পারে। আগামী অর্থবছরে তা বেড়ে ৫ দশমিক ৪ শতাংশ হবে। সংস্থাটির মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি গড়ে ৬ দশমিক ২ শতাংশে নেমে আসতে পারে। মূল্যস্ফীতিই জনজীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে, সেটা জানা গেল বিশ্বব্যাংকের আরেক প্রতিবেদনে। এতে বলা হয়, জাতীয় দারিদ্র্যের হার ২০২৫ সালে ২২ দশমিক ৯ শতাংশ হবে। ২০২২ সালে তা ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ। এর মধ্যে অতিদরিদ্র মানুষের সংখ্যা, যঁাদের দৈনিক আয় ২ ডলার ১৫ সেন্টের নিচে ছিল, তঁাদের সংখ্যা ৩০ লাখ হতে পারে। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ মূল্যস্ফীতি ও বেকারত্ব। যে হারে নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে, সে হারে মানুষের আয় বাড়েনি। আন্তর্জাতিক দারিদ্র্যরেখা দিয়ে দরিদ্র মানুষ চিহ্নিত করা হয়। ক্রয়ক্ষমতা সমতা (পিপিপি) অনুসারে, দিনে ২ দশমিক ১৫ ডলার আয় করে প্রয়োজনীয় পণ্য ও সেবা কেনার সামর্থ্য না থাকলে অতিদরিদ্র হিসেবে ধরা হয়।

রাজনীতির সংস্কার ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করতে কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় সরকারের সমালোচনা করেছে আইএমএফ। অবশ্য অর্থনৈতিক ব্যবস্থাপনা, বিশেষ করে বিনিময় হার আরও নমনীয় করা ও কর রাজস্ব বাড়াতে নেওয়া সংস্কারকাজের প্রশংসা করেছে তারা। এর পাশাপাশি সংস্থাটি বৈদেশিক মুদ্রার মজুত বা রিজার্ভ পুনর্গঠন ও মূল্যস্ফীতি কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। সরকারি ভর্তুকি ধাপে ধাপে কমিয়ে একটি টেকসই পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া উচিত বলেও মত দিয়েছে আইএমএফ। 

স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ বর্তমানে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যেসব সুযোগ–সুবিধা পাচ্ছে, উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ হলে তার অনেকটাই কমে যাবে। এ জন্য কেবল বিদেশি সংস্থা নয়, দেশের অর্থনীতিবিদেরাও প্রাক্‌–প্রস্তুতি নেওয়ার কথা বলেছেন।  

রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে যে অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকিতে পড়ে, সেটা জানতে আইএমএফ বিশ্বব্যাংক বা অন্য কোনো আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনের প্রয়োজন পড়ে না। দেশের সাধারণ মানুষ সাদাচোখেই সেটা দেখতে পাচ্ছে। কিন্তু সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব এ বিষয়ে কতটা সজাগ আছে, সেই প্রশ্ন আছে। দিনের পর দিন আলোচনা করেও কেন তারা সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারছে না? যেখানে রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান পরস্পর বিপরীত মেরুতে, সেখানে মতৈক্য প্রতিষ্ঠা করা কঠিনই বটে। 

আমরা আশা করব, রাজনৈতিক দলগুলো অবিলম্বে ন্যূনতম বিষয়ে ঐকমত্য প্রকাশ করবে, যাতে একটি শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করা যায়। কোনো দল যদি নিজের অবস্থানে অনড় থাকে এবং অন্যদের কথা শুনতে না চায়, তাহলে রাজনৈতিক ঐকমত্য কখনো হবে না। এই সরল সত্য কথাটি সংশ্লিষ্ট সবাই মনে রাখবে আশা করি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুনামগঞ্জে শতকোটির বালুমহাল নিয়ে বিএনপির দু’পক্ষে দ্বন্দ্ব
  • নির্বাচন বিলম্বিত বা না হওয়ার জন্য পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন চাওয়া হচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা জরুরি
  • টাকা ও ক্ষমতা ব্যবহার করে দল গড়া মানুষ দেখতে চায় না: জোনায়েদ সাকি
  • গণতান্ত্রিক রূপান্তরের সন্ধিক্ষণে ‘জনগণ’ কীভাবে কথা বলবে
  • ঐকমত্যের আলোচনা ও প্রক্রিয়া কতটা সফল হবে?
  • ক্ষমতার দাপটের পরিণাম ভোগ করছে বিগত সরকার: বদিউল আলম মজুমদার
  • সংস্কার কাজে আলোচনার চেয়ে খাওয়াদাওয়া বেশি হচ্ছে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • জুলাই সনদে কী থাকছে, কী থাকা উচিত