বাংলাদেশ পুনর্গঠনের বার্তা নিয়ে ভোটারদের কাছে যেতে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের পরামর্শ এবি পার্টির
Published: 28th, June 2025 GMT
রাষ্ট্র সংস্কার ও বাংলাদেশ পুনর্গঠনের বার্তা নিয়ে আগামী নির্বাচনে জনগণের কাছে ভোট চাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির নেতারা। পাশাপাশি এলাকায় গিয়ে নির্বাচনী প্রচার ও সংগঠন বিস্তারেও আহ্বান জানানো হয়েছে।
আজ শনিবার দলের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় এ দিকনির্দেশনা দেন নেতারা। এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জুর সভাপতিত্বে এবং ভাইস চেয়ারম্যান লে.
মনোনয়নপ্রত্যাশীদের উদ্দেশে সোলায়মান চৌধুরী বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আমরা একটি নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠনের রাজনীতি নিয়ে জনগণের কাছে যাচ্ছি। আপনাদের সার্বিক অংশগ্রহণের মাধ্যমে এবি পার্টিই নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন করতে সক্ষম হবে। দেশ পরিবর্তনে এবি পার্টির ইতিবাচক রাজনীতির বার্তা জনগণের কাছে তুলে ধরতে হবে। নির্বাচন সামনে রেখে বাংলাদেশের সব উপজেলা, ইউনিয়ন ও গ্রামে এবি পার্টির সংগঠন প্রতিষ্ঠা করতে হবে।’
আগামী নির্বাচনে রাষ্ট্র সংস্কার ও পুনর্গঠনকে ভোটারদের কাছে প্রধান বিবেচ্য ইস্যু হিসেবে তুলে ধরার আহ্বান জানিয়ে মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, দেশের জনগণ যেন বুঝতে পারে এবি পার্টি সত্যিই নতুন রাজনীতি নিয়ে এসেছে। এদের পক্ষেই নতুন বাংলাদেশ পুনর্গঠন সম্ভব। এলাকায় গিয়েই সবাইকে নির্বাচনী প্রচারণা ও সংগঠন বিস্তারে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে।
ঐকমত্যের বাইরে দেশ পুনর্গঠন ও সংস্কার সম্ভব নয় উল্লেখ করে মজিবুর রহমান মঞ্জু আরও বলেন, ‘সরকার ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি কমিশন গঠন করে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছে। সেখানে বেশ কিছু বিষয়ে একমত হলেও গুরুত্বপূর্ণ অনেক বিষয়ে এখনো ঐকমত্যে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। বিশেষ করে সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে সব দল একমত হলেও প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ ও ক্ষমতা, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে এখনো রাজনৈতিক দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। এর বাইরে গিয়ে সংবিধান নির্ধারিত প্রতিষ্ঠানসমূহের নিয়োগ নিয়েও রয়েছে তীব্র মতবিরোধ। এই সবকিছু বিবেচনায় নিয়েই আমাদের রাজনীতি করতে হবে।’
নির্বাচনী প্রচারে নানা পরামর্শ দিয়ে এবি পার্টির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনীতি করছি, এটা জনগণকে বোঝাতে হবে। এলাকার সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে, কাজ করতে হবে।’
মতবিনিময় সভায় এবি পার্টির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার, ভাইস চেয়ারম্যান বি এম নাজমুল হক, লে. কর্নেল (অব.) দিদারুল আলম, লে. কর্নেল (অব.) হেলাল উদ্দিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যোবায়ের আহমেদ ভুইয়া, আবদুল্লাহ আল মামুন, আনোয়ার সাদাত, এ বি এম খালিদ হাসান, নাসরীন সুলতানা, সানী আবদুল হক, আমিনুল ইসলাম, আলতাফ হোসাইন, শাহাদাতুল্লাহ টুটুল, ছাত্রপক্ষের আহ্বায়ক মোহাম্মদ প্রিন্সসহ এবি পার্টির সারা দেশের মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি—যাতে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং ক্ষমতার প্রকৃত মালিক—জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আজ বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকেএম) থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চ্যান্সেলর ও নেগেরি সেমবিলান দারুল খুসুস রাজ্যের সুলতান তুংকু মুহরিজ ইবনি আলমারহুম তুংকু মুনাওয়িরর কাছ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ গ্রহণ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
সম্মাননা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই স্বীকৃতি আমাকে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে আমার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গত বছর বাংলাদেশের বহু তরুণ সাহসিকতার সঙ্গে একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। শত শত ছাত্র-যুবক একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে—যেখানে প্রত্যেকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারবে এবং ভয়, বৈষম্য ও অবিচার থেকে মুক্ত থাকবে।’
নতুন বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় পরিচয় ও ভবিষ্যৎ আশার নতুন অর্থ তৈরি করেছে। আজ আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি, যেখানে শাসনব্যবস্থা হবে ন্যায়সংগত, অর্থনীতি হবে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবে সফল হওয়ার জন্য। আমাদের সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী রয়েছে।’
আরও পড়ুনমালয়েশিয়ায় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন মুহাম্মদ ইউনূস৩ ঘণ্টা আগেসর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে সংস্কারের কথা উল্লেখ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট লক্ষ্য—বিস্তৃত পরিকল্পনা এবং এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়প্রত্যয়। একটি শক্তিশালী ও সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তাদের সহায়তা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তোমরা আগামী দিনের নির্মাতা। তোমাদের ভাবনা, সৃজনশীলতা ও দায়িত্ববোধই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে—শুধু মালয়েশিয়ার নয়, সমগ্র বিশ্বের। স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে গিয়ে সব সময় মনে রেখো, প্রকৃত সাফল্য শুধু নিজের জন্য অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং কীভাবে তুমি অন্যদেরও তোমার সঙ্গে উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছ, সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে সেরা উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারি, তা হলো এমন এক পৃথিবী, যেখানে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তোমাদের সিদ্ধান্ত, কাজ ও মূল্যবোধই নির্ধারণ করবে আমরা কোথায় যাব। তাই আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, বড় স্বপ্ন দেখো, সাহসীভাবে চিন্তা করো এবং সেই অনুযায়ী কাজ করো। ভয় পেয়ো না, প্রত্যেক ব্যর্থতাই সাফল্যের পথে একটি ধাপমাত্র।’
আরও পড়ুনআজিয়াটাকে বাংলাদেশে ফাইভ–জি সেবা সম্প্রসারণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার৩ ঘণ্টা আগেপৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত নেতার, প্রয়োজন সমস্যা সমাধানকারীর—এ কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা রয়েছে অসাধারণ কিছু করার, মানুষের সেবায় ব্যবসা গড়ে তোলার, জীবন বদলে দেওয়ার মতো নতুন ধারণা সৃষ্টির, অথবা এমন নীতি প্রণয়নের, যা গোটা একটি সম্প্রদায়কে উন্নতির পথে নিয়ে যাবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকের অন্যতম বড় বিপদ হলো সম্পদ ক্রমে কয়েকজন মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এর ফলে বৈষম্য ও অবিচার সৃষ্টি হয়। আমাদের যা দরকার, তা হলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি—যেখানে সম্পদ ন্যায্যভাবে ভাগ হবে এবং প্রত্যেক মানুষ মর্যাদা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাঁচার সুযোগ পাবে।’
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দুই দেশ সব সময়ই দৃঢ় সম্পর্ক ভাগাভাগি করেছে, যা গড়ে উঠেছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও উন্নতির যৌথ স্বপ্নের ওপর।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী জাম্ব্রি আবদুল কাদির ও ইউকেএমের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সুফিয়ান জুসোহ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনমিয়ানমারে শান্তি মিশন পাঠাবে মালয়েশিয়া ও তার আঞ্চলিক মিত্রদেশগুলো১৬ ঘণ্টা আগে