পিআর ইস্যু নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারীরা দেশের আদর্শে বিশ্বাসী নয়: মঈন খান
Published: 30th, June 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) ইস্যু নিয়ে দ্বন্দ্ব সৃষ্টিকারীরা দেশের আদর্শে বিশ্বাসী নয়। তারা নিজের আদর্শে বিশ্বাস করে, তাদের নিজেদের দলীয় আদর্শে বিশ্বাস করে।
তিনি বলেন, যদি পিআর পদ্ধতি হয় সেখানে জনগণ দলকে ভোট দেবে। কিন্তু তারা জানবে না যে তাদের প্রার্থী কে, কে এমপি হবে। তাহলে তারা কীভাবে সঠিকভাবে ভোট দেবে? ভোট পাওয়ার পর দল সিলেকশন করবে কাকে এমপি বানাবে। তাহলে সেখানে জনগণের প্রতিনিধিত্ব কীভাবে হলো?
সোমবার রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের সাধারণ সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
মঈন খান বলেন, আজকে যারা বড় বড় কথা বলে, জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে যারা আত্মত্যাগ করেছে, রাজপথে যারা ছিল তারা কারা ছিল? তারা মুখে কখনো বলেনি যে তারা বিএনপি। তারা পরিচয় দিয়েছিল তারা সাধারণ ছাত্র। কিন্তু সেই ছাত্র-জনতার শতকরা ৮০ থেকে ৯০ ভাগ বিএনপির প্রতিনিধি ছিল।
তিনি বলেন, আমি স্পষ্ট ভাষায় বলে দিতে চাই, বাংলাদেশ কারও একক সম্পত্তি নয়। এক বছর আগে আওয়ামী লীগ মনে করেছিল, বাংলাদেশ তাদের একক পৈত্রিক সম্পত্তি এবং এর পরিণতি দেশের মানুষ তাদের দেখিয়ে দিয়েছে। আজকে যদি আবার কেউ মনে করে বাংলাদেশ তাদের একক সম্পত্তি। সেটা তাদের মারাত্মক ভুল হবে এবং আমি তাদের বলব ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, আজকে মুখে মুখে অনেকে বড় কথা বলতে পারে। আজ এমন একটা ভাব যে অনেকেই বাংলাদেশের মালিক হয়ে গেছে। রাজপথে আসুন। বিএনপির নেতাকর্মীরা এক লাখ মামলা খেয়েছে, বাংলাদেশে আর কেউ খায়নি। বিএনপির ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করে তাদের পেছনে পুলিশ লেলিয়ে দিয়েছিল। আজকে যারা বড় কথা বলছেন, তাদের কার বিরুদ্ধে স্বৈরাচার সরকারের সময়ে কী অন্যায়-অত্যাচার হয়েছিল, তার হিসাব করুন।
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি বলেন, পিআর পদ্ধতি চাওয়ার পেছনে ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। এতে লাভবান কারা হবে তা ভাবতে হবে। ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন হলে ফ্যাসিস্টরা সুযোগ পাবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড আবদ ল মঈন খ ন ব এনপ র স থ য় কম ট র সদস য ব এনপ র আদর শ
এছাড়াও পড়ুন:
আমরা জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ: প্রধান উপদেষ্টা
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আমরা ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন আয়োজনের জন্য কঠোর পরিশ্রম করছি—যাতে জনগণের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায়।’
প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমরা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করতে এবং ক্ষমতার প্রকৃত মালিক—জনগণের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
আজ বুধবার মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়া ন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয় (ইউকেএম) থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি গ্রহণ করে দেওয়া বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা এ কথা বলেন।
বিশ্ববিদ্যালয় অডিটরিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে চ্যান্সেলর ও নেগেরি সেমবিলান দারুল খুসুস রাজ্যের সুলতান তুংকু মুহরিজ ইবনি আলমারহুম তুংকু মুনাওয়িরর কাছ থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির সনদ গ্রহণ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। সামাজিক ব্যবসা প্রসারে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে এই সম্মাননা দেওয়া হয়।
সম্মাননা প্রসঙ্গে মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘এই স্বীকৃতি আমাকে তরুণ প্রজন্মের স্বপ্ন পূরণে আমার দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। গত বছর বাংলাদেশের বহু তরুণ সাহসিকতার সঙ্গে একটি ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছিল। শত শত ছাত্র-যুবক একটি উন্নত ভবিষ্যতের জন্য জীবন উৎসর্গ করেছে—যেখানে প্রত্যেকে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারবে এবং ভয়, বৈষম্য ও অবিচার থেকে মুক্ত থাকবে।’
নতুন বাংলাদেশ গড়তে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘২০২৪ সালের জুলাই ও আগস্ট মাসে তরুণদের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থান আমাদের জাতীয় পরিচয় ও ভবিষ্যৎ আশার নতুন অর্থ তৈরি করেছে। আজ আমরা এক নতুন বাংলাদেশ গড়তে কাজ করছি, যেখানে শাসনব্যবস্থা হবে ন্যায়সংগত, অর্থনীতি হবে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও প্রত্যেকে সমান সুযোগ পাবে সফল হওয়ার জন্য। আমাদের সরকার শান্তি ও স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করার দিকে মনোযোগী রয়েছে।’
আরও পড়ুনমালয়েশিয়ায় সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেলেন মুহাম্মদ ইউনূস৩ ঘণ্টা আগেসর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হিসেবে সংস্কারের কথা উল্লেখ করেন মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আমাদের সুস্পষ্ট লক্ষ্য—বিস্তৃত পরিকল্পনা এবং এগিয়ে যাওয়ার দৃঢ়প্রত্যয়। একটি শক্তিশালী ও সহনশীল বাংলাদেশ গড়তে আমাদের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে উদ্যোক্তাদের সহায়তা, শিক্ষা ও প্রযুক্তিতে বেশি বিনিয়োগ এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক অংশীদারদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করা।’
বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘তোমরা আগামী দিনের নির্মাতা। তোমাদের ভাবনা, সৃজনশীলতা ও দায়িত্ববোধই ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে—শুধু মালয়েশিয়ার নয়, সমগ্র বিশ্বের। স্বপ্ন পূরণের পথে এগিয়ে যেতে গিয়ে সব সময় মনে রেখো, প্রকৃত সাফল্য শুধু নিজের জন্য অর্জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; বরং কীভাবে তুমি অন্যদেরও তোমার সঙ্গে উন্নতির পথে নিয়ে যাচ্ছ, সেটিও সমান গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যে সেরা উত্তরাধিকার রেখে যেতে পারি, তা হলো এমন এক পৃথিবী, যেখানে কাউকে পেছনে ফেলে রাখা হবে না।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘তোমাদের সিদ্ধান্ত, কাজ ও মূল্যবোধই নির্ধারণ করবে আমরা কোথায় যাব। তাই আমি তোমাদের অনুরোধ করছি, বড় স্বপ্ন দেখো, সাহসীভাবে চিন্তা করো এবং সেই অনুযায়ী কাজ করো। ভয় পেয়ো না, প্রত্যেক ব্যর্থতাই সাফল্যের পথে একটি ধাপমাত্র।’
আরও পড়ুনআজিয়াটাকে বাংলাদেশে ফাইভ–জি সেবা সম্প্রসারণের আহ্বান প্রধান উপদেষ্টার৩ ঘণ্টা আগেপৃথিবীকে বদলে দেওয়ার জন্য প্রয়োজন প্রকৃত নেতার, প্রয়োজন সমস্যা সমাধানকারীর—এ কথা উল্লেখ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের ক্ষমতা রয়েছে অসাধারণ কিছু করার, মানুষের সেবায় ব্যবসা গড়ে তোলার, জীবন বদলে দেওয়ার মতো নতুন ধারণা সৃষ্টির, অথবা এমন নীতি প্রণয়নের, যা গোটা একটি সম্প্রদায়কে উন্নতির পথে নিয়ে যাবে।’
মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘আজকের অন্যতম বড় বিপদ হলো সম্পদ ক্রমে কয়েকজন মানুষের হাতে কেন্দ্রীভূত হচ্ছে। এর ফলে বৈষম্য ও অবিচার সৃষ্টি হয়। আমাদের যা দরকার, তা হলো একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক অর্থনীতি—যেখানে সম্পদ ন্যায্যভাবে ভাগ হবে এবং প্রত্যেক মানুষ মর্যাদা ও উদ্দেশ্য নিয়ে বাঁচার সুযোগ পাবে।’
বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী বন্ধুত্বের কথা স্মরণ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, দুই দেশ সব সময়ই দৃঢ় সম্পর্ক ভাগাভাগি করেছে, যা গড়ে উঠেছে পারস্পরিক শ্রদ্ধা, সাংস্কৃতিক বিনিময় ও উন্নতির যৌথ স্বপ্নের ওপর।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে মালয়েশিয়ার উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী জাম্ব্রি আবদুল কাদির ও ইউকেএমের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক সুফিয়ান জুসোহ উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুনমিয়ানমারে শান্তি মিশন পাঠাবে মালয়েশিয়া ও তার আঞ্চলিক মিত্রদেশগুলো১৬ ঘণ্টা আগে