যুবলীগ নেতাকে ধরতে ভবন ঘেরাও, ফোনে বললেন—‘আমি অনেক দূরে’
Published: 2nd, July 2025 GMT
রাজশাহীর যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীরা যুবলীগের এক নেতাকে ধরতে একটি ভবন ঘেরাও করেছিলেন। পরে খবর পেয়ে তল্লাশি শুরু করে পুলিশ। তখন যুবদলের এক নেতাকে ফোন করে সেই যুবলীগ নেতা বললেন, তিনি অনেক দূরে। তাঁকে খুঁজে লাভ হবে না। এরপর অভিযান স্থগিত করা হয়।
যুবলীগের এই নেতার নাম তৌরিদ আল মাসুদ ওরফে রনি। তিনি রাজশাহী মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিনই আত্মগোপনে চলে যান তিনি। জানা গেছে, এরই মধ্যে তিনি দেশত্যাগও করেছেন।
তৌরিদ আল মাসুদের অবস্থানের খবরে আজ বুধবার দুপুরে নগরের পদ্মা পারিজাত এলাকার একটি বহুতল অ্যাপার্টমেন্ট ঘেরাও করেন যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা–কর্মীরা। পরে খবর পেয়ে পুলিশের একটি দলও ভবনটিতে গিয়ে তল্লাশি শুরু করে। এ সময় জেলা যুবদলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক ফয়সাল সরকার ওরফে ডিকোকে ফোন করেন ওই যুবলীগ নেতা। তিনি বলেন, ‘ডিকো ভাই, আপনারা এত কষ্ট করে অভিযান করছেন। আমি আপনাদের থেকে অনেক দূরে। আমাকে খুঁজে লাভ হবে না, পাবেন না। ঠিক সময়মতো আমি নিজেই আত্মসমর্পণ করব, ধরা দেব।’
এরপর এই দুই নেতার মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে কথা হয়।
যুবলীগ নেতার এই ফোনের পর অভিযান শেষ হয়। নেতা–কর্মীরাও ভবনের সামনে থেকে চলে যান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যুবদলের নেতা ফয়সাল সরকার বলেন, ‘এইমাত্র সে আমাকে ফোন করেছিল। যুবদল, ছাত্রদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতারা এখানে আছেন। বুঝতে পারলাম, এই বাড়িতে অভিযান হওয়ায় সে খুব কষ্ট পাচ্ছে।’
ঘটনার পর সন্ধ্যায় যুবলীগের নেতা তৌরিদ আল মাসুদের সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ হয়। তিনি জানান, সরকার পতনের তিন থেকে চার মাস পর তিনি দেশের বাইরে চলে গেছেন। তৌরিদ আল মাসুদ বলেন, ‘এরা কোনো দিন সামনে আসার সাহস পায়নি। এখন ফাঁকা মাঠে না জেনেশুনে অযথা একটি বাড়ি এভাবে ঘেরাও করেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা ও নেতা এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন যেদিন বলবেন, সেদিনই দেশে ফিরব। যদি অন্যায় করে থাকি, সুশাসন ফিরলে শাস্তি হবে। অল্প সময়ের মধ্যেই সবার সঙ্গে দেখা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ত র দ আল ম স দ য বল গ ন ত য বল গ র য বদল সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
৪১ বছর ধরে হেঁটে হেঁটে পত্রিকা বিলি করেন গাইবান্ধার রহিম
গাইবান্ধার পত্রিকা বিক্রেতা আবদুর রহিম। বাড়ি পলাশবাড়ী পৌরসভার নুনিয়াগাড়ি এলাকায়। বয়স ৭১ বছর। এই বয়সেও তিনি ঘুমভাঙা চোখে একনজর পত্রিকার শিরোনাম দেখে নেন। পত্রিকা গুছিয়ে বগলে চেপে ছুটে চলেন পাঠকের কাছে। ‘ভাই, আজকে গরম খবর আছে’ বলেই পাঠকের হাতে এগিয়ে দেন পত্রিকা।
এক পাঠক থেকে আরেক পাঠকের কাছে যান আবদুর রহিম। পত্রিকা বিলি করেন সকাল ৬টা থেকে টানা ৭ ঘণ্টা। বিকেল ৫টা থেকে ৪ ঘণ্টা বিলি করা পত্রিকার টাকা সংগ্রহ করেন। ১১ ঘণ্টার বেশির ভাগ সময় হেঁটে পত্রিকা বিলি ও টাকা সংগ্রহ করেন। দূরের পাঠকের কাছে যান বাইসাইকেলে। প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হেঁটে বিলি করেন পত্রিকা। এভাবেই দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে গাইবান্ধায় পত্রিকা বিলির কাজ করছেন তিনি।
আবদুর রহিম বলেন, ‘সকাল ৬টা থেকে পত্রিকা বিলির কাজ শুরু করি। বেলা ১টার দিকে শেষ হয়। উপজেলা সদরে হেঁটে বিলি করি। তবে সদর থেকে ৬-৭ কিলোমিটার দূরে জুনদহ, কালীতলা, ঢোলভাঙ্গা, হোসেনপুর এলাকায় সাইকেলে যাই। এসব জায়গায় সাইকেল রেখে হেঁটে পত্রিকা বিলি করি। দুপুরে বাড়িতে বিশ্রাম নিই। এরপর পত্রিকা বিক্রির টাকা তোলা শুরু করি। টাকা তুলতে বিকেল ৫টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সময় লাগে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার হাঁটাহাঁটি হয়ে যায়। এ রকম ব্যস্ততায় কীভাবে ৪১ বছর কেটে গেল, টেরই পেলাম না! তবে পত্রিকা বিলি করে আনন্দ পাই। অনেক পাঠক আমাকে ভালোবাসেন, খোঁজখবর নেন।’
দীর্ঘ সময় পত্রিকা বিলি করতে সমস্যা হয় কি না, তা জানতে চাইলে আবদুর রহিম বলেন, ‘আমার কোনো অসুখবিসুখ নেই। যত দিন শরীর ভালো থাকবে, তত দিন এই কাজ চালিয়ে যাব।’
ব্যবসার শুরুরহিমের পৈতৃক বাড়ি রংপুর শহরের আরাজি গুলাল বুদাই এলাকায়। সেখানে তাঁর বাবার ৩ শতাংশ জমিতে বসতভিটা ছিল। এ ছাড়া কোনো সম্পদ ছিল না। বাবা আবেদ আলী অনেক আগেই মারা গেছেন। তিন ভাই ও চার বোনের মধ্যে সবার বড় তিনি। লেখাপড়া করেছেন তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতেন। ১৯৭৫ সালে বিয়ে করেন একই এলাকায়। তাঁর ছয় মেয়ে ও এক ছেলে। দারিদ্র্যের কারণে সংসার চালানো একসময় কঠিন হয়ে পড়ে।
রহিমের খালাতো ভাই রংপুর শহরে পত্রিকা বিলি করতেন। তাঁর পরামর্শে ১৯৮৪ সাল থেকে রংপুরে স্থানীয় পত্রিকা দিয়ে আবদুর রহিমের এই ব্যবসার যাত্রা শুরু। এরপর তিনি বাসে ফেরি করে বিক্রি করতে থাকেন পত্রিকা। প্রতিদিন রংপুর থেকে বাসে উঠে পলাশবাড়ী পর্যন্ত আসেন। এভাবে তিন বছর কেটে যায়। এরপর পলাশবাড়ীর স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে থেকে পত্রিকা বিক্রি শুরু করেন। ছয় মাস থাকেন সেখানে। এরপর জমানো ও ঋণের টাকায় নুনিয়াগাড়ি এলাকায় সোয়া ৮ শতাংশ জমি কিনে টিনশেড ঘর বানান। বাড়ি থেকে ব্যবসা করতে থাকেন। পলাশবাড়ী চারমাথা এলাকায় বসে ঢাকা, রংপুর ও বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক পত্রিকা সংগ্রহ করে পলাশবাড়ী উপজেলা সদরে বিক্রি করতে থাকেন।
হকার থেকে এজেন্টকয়েক বছর পর আবদুর রহিম নিজের নামে বেশ কিছু পত্রিকার এজেন্সি নেন। পত্রিকার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় একা সামলাতে পারছিলেন না। তাই চারজন লোক নিয়োগ করেন। তাঁরা এখনো রহিমের কাছে কমিশনে পত্রিকা নিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ব্যবসা শুরুর সময় প্রতিদিন ২০০ থেকে ২৫০ কপি পত্রিকা বিলি করতেন। মাসিক আয় ছিল ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কয়েক বছর পর পাঠকের চাহিদা বেড়ে যায়। সে সময় মাসিক আয় হতো ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। বর্তমানে ছাপা পত্রিকার পাঠক কমে গেছে। এখন প্রতিদিন ১৫০ থেকে ১৬০ কপি পত্রিকা বিলি করছেন। বর্তমানে তাঁর মাসিক আয় গড়ে ১৬ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আবদুর রহিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘পত্রিকার ব্যবসা করে রংপুর থেকে এসে পলাশবাড়ীতে বাড়ি করতে পেরেছি, মেয়েদের বিয়ে দিয়েছি। সততার সঙ্গে চলছি। এতেই আমি সন্তুষ্ট।’
পলাশবাড়ী মহিলা ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ আবু সুফিয়ান সরকার বলেন, ‘আবদুর রহিমকে বহু বছর ধরেই পত্রিকা বিক্রি করতে দেখছি। তাঁকে দেখে মনে হয় না ৭১ বছর বয়স হয়েছে। তাঁর মধ্যে ক্লান্তি দেখা যায় না। দিন-রাত পরিশ্রম করেন। কখনো তাঁকে মিথ্যা বলতে শুনিনি। এলাকার মানুষ তাঁকে ভালোবাসেন।’