চট্টগ্রামে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি অব্যাহত, পাহাড়ধসের সতর্কবার্তা
Published: 6th, July 2025 GMT
মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে চট্টগ্রামসহ তিন বিভাগে ভারী বৃষ্টির সতর্কবার্তা জারি করেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। সেই সঙ্গে চট্টগ্রামে পাহাড়ধসের আশঙ্কার কথাও জানানো হয়েছে।
আজ রোববার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক স্বাক্ষরিত এই সতর্কবার্তায় বলা হয়, দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকার কারণে চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টি হতে পারে। চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের পাশাপাশি জলাবদ্ধতার আশঙ্কা রয়েছে।
এদিকে, দুদিন ধরে হালকা থেকে মাঝারি মাত্রার বৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। আজ সকালেও মাঝারি মাত্রার থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। একই কারণে চট্টগ্রামসহ দেশের সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ৩৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। নগরের আমবাগান আবহাওয়া কেন্দ্রে একই সময়ে ২৩ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মাহমুদুল আলম জানান, আগামী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে আরও মাঝারি থেকে ভারী মাত্রার বৃষ্টি হবে। মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টি হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, সক্রিয় মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ু চাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা ও সমুদ্রবন্দরগুলোর ওপর দিয়ে দমকা অথবা ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সতর ক
এছাড়াও পড়ুন:
জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঐক্যের ভিত্তিতে গণতন্ত্রে ফিরতে হবে
জাতীয় নিরাপত্তা কেবল সামরিক সক্ষমতার বিষয় নয়। এর সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনীতির বিকাশ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। তাই জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে দেশকে এগিয়ে নিতে হবে।
আজ রোববার রাজধানীর গুলশানের একটি হোটেলে ‘জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে জাতীয় ঐক্য অপরিহার্য’ শীর্ষক সংলাপে এই অভিমত দেন বক্তারা। ফাউন্ডেশন ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (এফএসডিএস) আয়োজিত এই সংলাপে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন।
জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ। জনগণের ক্ষমতায়ন ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে পারলে জাতীয় নিরাপত্তা সুরক্ষিত হবে। তিনি বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। এর মানে এই নয় যে ঐক্য নেই। জাতীয় স্বার্থে সবাই আমরা ঐক্যবদ্ধ।’
বিদ্যমান পরিস্থিতিতে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করা এবং রাষ্ট্র সংস্কারের মাধ্যমে দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া জরুরি বলে উল্লেখ করেন বিএনপির মহাসচিব।
সংলাপে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি করতে পারলেই জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সুষ্ঠু নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচনের বিরোধিতা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, ‘এই পদ্ধতিতে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা জনগণের কাছে জবাবদিহি না–ও থাকতে পারেন। কারণ, তাঁরা দলের প্রতিনিধি হবেন, ব্যক্তির নন।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ১৫-২০ বছর ধরে যে যুদ্ধ চলছে, তা বাংলাদেশের মানুষের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য। এ মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়ার পথ একটাই—জনগণের হাতে ব্যালট পেপার তুলে দেওয়া, যাতে তাঁরা স্বাধীনভাবে তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে পারেন। তিনি বলেন, ‘ঐক্যের একমাত্র পথ হচ্ছে গণতন্ত্র। এটি নিশ্চিত হলে ঐক্য নিশ্চিত হবে। এ ছাড়া বিকল্প কোনো পথ নেই।’
সাবেক সেনাপ্রধান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) নুরুদ্দীন খান মনে করেন, জাতীয় নিরাপত্তার জন্য একটি ‘ন্যাশনাল আর্মি’ গঠন করা অত্যন্ত প্রয়োজন। তিনি বলেন, এর উদাহারণ চীনে আছে, সুইজারল্যান্ডে আছে, ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত তাঁরা দায়িত্বে থাকেন এবং তাঁরা সেনাবাহিনীর ট্রেনিং করে দেশের স্বাধীনতা–সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন।
আলোচনায় জাতীয় ঐক্যের ধারণাকে গণ–অভ্যুত্থানবিরোধী হিসেবে বর্ণনা করেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, এটি ফ্যাসিবাদী শক্তির বিরুদ্ধে জনগণের ঐক্যকে দমন করার জন্য ব্যবহৃত হতে পারে। তিনি রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, বর্তমান জাতিরাষ্ট্র আন্তর্জাতিক করপোরেশন ও আইএমএফের (আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল) মতো সংস্থার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। ফরহাদ মজহারের মতে, জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হলে গণপ্রতিরক্ষার ওপর জোর দিতে হবে। যেখানে জনগণের সামরিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রস্তুতি থাকবে। বর্তমান সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর এই সেনাবাহিনী ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা নিয়ে মাঠে থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারবে না, বরং জনগণের সঙ্গে দ্বন্দ্ব তৈরি করছে। কেবল বেতনভুক্ত সেনাবাহিনী দিয়ে দেশ রক্ষা করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
নির্বাচন কমিশন সংস্কারের কথা বলেন সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার। তিনি বলেন, জাতীয় নিরাপত্তা কেবল সামরিক সক্ষমতার বিষয় নয়, এর সঙ্গে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা, রাজনীতির বিকাশ ও অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থার সংস্কার করে একটি টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরিয়ে আনার ওপর জোর দেন তিনি। নির্বাচন কমিশনের নিয়োগপ্রক্রিয়ায় পরিবর্তন প্রয়োজন বলেও অভিমত দেন বদিউল আলম মজুমদার।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসে নির্বাচন হলে তাঁদের আপত্তি নেই। তবে যেনতেন একটি নির্বাচন তাঁরা চান না। পিআর পদ্ধতি প্রবর্তনের প্রস্তাব দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে, যেমন আমরা ট্র্যাডিশনাল (প্রচলিত) নির্বাচনের বিপরীতে পিআর পদ্ধতি চাচ্ছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচন নিরপেক্ষ সরকার অধীনে চাচ্ছি, এটা আমাদের দলীয় এজেন্ডা, অন্যদেরও এজেন্ডা আছে।’
সংলাপে আরও উপস্থিত ছিলেন নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান, আলোকচিত্র সাংবাদিক শহিদুল আলম, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, অধ্যাপক দিলারা চৌধুরী প্রমুখ।