ফলাফলটা অনুমেয়ই ছিল! ইয়াঙ্গুনের থুন্না স্টেডিয়ামের স্কোরবোর্ডে বাংলাদেশের নামের পাশে কত ডিজিটের সংখ্যা বসবে, সেটা নিয়েই ছিল আগ্রহ। বাংলাদেশ ৭: ০ তুর্কমেনিস্তান– হুট করে স্কোর লাইনটা দেখে বা শুনে থাকলে চমকে ওঠাই স্বাভাবিক। কিন্তু কয়েক দিন ধরে যারা নারী এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের খোঁজখবর রাখছেন, তাদের কাছে এ স্কোর লাইন স্বাভাবিক মনে হওয়ারই কথা!
প্রথম দুই ম্যাচে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে অনেক এগিয়ে থাকা বাহরাইন ও স্বাগতিক মিয়ানমারকে হারানোর পর র্যাঙ্কিংয়ে ১৩ ধাপ পিছিয়ে থাকা তুর্কমেনিস্তান বাংলাদেশের আক্রমণ ঝড়ের সামনে উড়ে যাওয়াই স্বাভাবিক। তবে দলটির কোচ বোরিস বোরোভিক বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলারের ওপর অভিমান করলেও করতে পারেন! কারণ ‘আনুষ্ঠানিকতা’য় পরিণত হওয়া এমন ম্যাচে সেরা একাদশটাই অপরিবর্তিত রেখেছিলেন বাটলার।
আসলে ইংলিশ ম্যানের দোষ কী! খেলার সঙ্গে বাংলাদেশ যে মানসিকতায়ও বড় দল হয়ে উঠছে, তা তো প্রথমে তাঁকেই প্রমাণ করতে হবে। বুধবার এক ম্যাচ হাতে রেখে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপ নিশ্চিত হওয়ার পরও পা মাটিতে রেখে ইংলিশ কোচ বলেছিলেন, এখনও অর্ধেক কাজ বাকি। পুরো কাজ শেষ করে অর্থাৎ ষোলোকলা পূর্ণ করে উদযাপন সারার প্রস্তুতি নিয়ে গতকাল বাটলারের মাঠে আসা।
শিষ্যদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে কোচের বার্তা। দলের প্রাণভোমরা ঋতুপর্ণা চাকমা প্রকাশ্যেই বলেছিলেন, তুর্কমেনিস্তান ম্যাচ শেষ করেই হবে উদযাপন। বাহরাইন, মিয়ানমার, সর্বশেষ তুর্কমেনিস্তান– তিন ম্যাচে ১৬ গোল দিয়েছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এদিন ম্যাচ শেষে সবাই গোল হয়ে হইহুল্লোড় করে উদযাপন সারলেন আফিদা, ঋতুপর্ণারা। সাত গোলের ম্যাচে ঋতুপর্ণা ও শামসুন্নাহার জুনিয়র করেছেন জোড়া গোল। একটি করে গোল করেছেন মনিকা চাকমা, স্বপ্না রানী ও তহুরা খাতুন। স্বপ্না, ঋতুপর্ণা, শামসুন্নাহারদের প্রতিটি গোলে বড় মাপের ফুটবলারের ছাপ।
৩ মিনিটে বক্সের বাইরে থেকে বুলেট গতির শটে গোলের মালা গাঁথা শুরু করেন স্বপ্না। খেলা শেষেও ইউটিউবে বারবার লুপ করে দেখা যায় এমন দর্শনীয় গোল। এর পরে কে কখন তুর্কমেনিস্তান বক্সে ঢুকে গোল করে বের হয়ে যাচ্ছেন, নোটবুকে তা টুকে রাখা মুশকিল হয়ে যাচ্ছিল। পাঁচ গোলের পর তুর্কমেনিস্তান গোলরক্ষক পরিবর্তন করে। তবুও প্রথমার্ধ শেষে গোল সংখ্যা হলো সাতটি এবং শেষ পর্যন্ত স্কোর লাইন সেটাই থাকল।
বিশেষভাবে মনে রাখা গেল শেষ গোলটি এসেছে আগের ম্যাচে জোড়া গোল করা ঋতুপর্ণার ট্রেডমার্ক গোল থেকে। কাল মুড়িমুড়কির মতো গোল করেও মেয়েদের উচ্ছ্বাস দেখা গেল না। ভাবখানা এমন যেন এ আর এমন কি! শামসুন্নাহাররা আঙুল দেখিয়ে শুধু গোল নম্বরগুলো মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলেন। দ্বিতীয়ার্ধে আর গোল হলো না কেন, এই নিয়েই বরং আফসোস থাকতে পারে।
তবে টানা তিন জয় নিয়ে অপরাজিত থেকে এশিয়ান কাপ বাছাই পর্ব শেষ করা বাংলাদেশের কাছে গোল সংখ্যা তো আর মুখ্য হয়ে ওঠার কথা নয়। মেয়েরা যে সুন্দর ফুটবল উপহার দিয়েছে, ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ে তা ফুল হয়ে ফুটে থাকবে অনেক দিন। বাংলাদেশের মেয়েদের খেলা দেখতে বসলে মাঝেমাঝে আকাশের রামধনুর কথা মনে হতে পারে। সুন্দর পাস, সুন্দর ক্রস, সুন্দর গোল নামক কত রং সেখানে ছড়িয়ে! প্রথম থেকে আবির ছড়িয়ে তা স্মরণীয় হয়ে থাকা এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের শেষ পর্যন্ত ধরে রাখল বাংলাদেশ। ২০২৬ এশিয়ান কাপেও বাংলাদেশের ফুটবল আকাশে ছড়িয়ে পড়ুক এমন রঙের মেলা।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন র ফ টবল ত র কম ন স ত ন স ন দর গ ল কর প রথম
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কীভাবে ‘ম্যাডম্যান তত্ত্ব’ ব্যবহার করে বিশ্ব বদলে দেওয়ার চেষ্টা করছেন
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে গত মাসে জানতে চাওয়া হয়েছিল, ইরানে হামলায় তিনি ইসরায়েলের সঙ্গে অংশ নেওয়ার পরিকল্পনা করছেন কি না। জবাবে তিনি বলেছিলেন, ‘আমি এটা করতে পারি। আবার আমি না-ও করতে পারি। আমি কী করতে যাচ্ছি, তা কেউই জানে না।’
ট্রাম্প বিশ্বকে এমনটা বিশ্বাস করতে দিয়েছিলেন যে ইরানকে আলোচনা শুরুর সুযোগ দিতে দুই সপ্তাহ হামলা স্থগিত রাখার বিষয়ে তিনি সম্মত হয়েছেন। কিন্তু পরে এ সময়ের মধ্যেই তিনি হামলা চালিয়ে বসেন।
এ ঘটনায় একটি প্রবণতা সামনে এসেছে, ট্রাম্পের সম্পর্কে সবচেয়ে অনুমেয় বিষয়টি হলো তাঁর অননুমেয় আচরণ। তিনি তাঁর চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করেন। তিনি স্ববিরোধী কাজ করেন। তাঁর কথা আর কাজে মিল নেই।
লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক পিটার ট্রুবোউইৎজ বলেন, ‘(ট্রাম্প) একটি অত্যন্ত কেন্দ্রীভূত নীতিনির্ধারণী প্রক্রিয়া তৈরি করেছেন, অন্তত পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে। সম্ভবত (প্রেসিডেন্ট) রিচার্ড নিক্সনের পর থেকে এটিই সবচেয়ে কেন্দ্রীভূত।’ তিনি বলেন, ‘এটি নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তগুলোকে ট্রাম্পের আচরণ, তাঁর পছন্দ ও মেজাজ-মর্জির ওপর আরও বেশি নির্ভরশীল করে তুলেছে।’
ট্রাম্প তাঁর এই বৈশিষ্ট্যকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে আসছেন। তিনি তাঁর নিজের অননুমেয় আচরণকে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত ও রাজনৈতিক সম্পদে পরিণত করেছেন। তিনি এই অননুমেয় আচরণকে একটি মতবাদ বা নীতির পর্যায়ে নিয়ে গেছেন। আর এখন যে ব্যক্তিগত বৈশিষ্ট্য তিনি হোয়াইট হাউসে নিয়ে এসেছেন, সেটিই পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতি নিয়ন্ত্রণ করছে। এটি বিশ্বব্যবস্থার বিদ্যমান কাঠামো পাল্টে দিচ্ছে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এটিকে ‘ম্যাডম্যান থিওরি’ বা ‘খ্যাপাটে তত্ত্ব’ বলে থাকেন। এই তত্ত্বে একজন বিশ্বনেতা তাঁর প্রতিপক্ষকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, তিনি নিজের মেজাজ-মর্জিমতো যেকোনো কিছু করতে সক্ষম, যাতে প্রতিপক্ষের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করা যায়। সফলভাবে ব্যবহার করা হলে এটি একধরনের জবরদস্তি বা চাপ প্রয়োগের কৌশল হতে পারে। ট্রাম্প বিশ্বাস করেন, এটি সুফল দিচ্ছে এবং এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের তাঁর পছন্দমতো অবস্থানে নিয়ে আসতে পারছেন।
কিন্তু এটি কি এমন পদ্ধতি, যা শত্রুদের বিরুদ্ধেও কাজে দেবে? আর এর ত্রুটি কি এমনটি হতে পারে যে এটি প্রতিপক্ষকে বোকা বানানোর জন্য তৈরি করা একটি কৌশল না হয়ে বরং সুপ্রতিষ্ঠিত ও সুস্পষ্ট চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের ওপর ভিত্তি করে গঠিত, যার ফলে তাঁর আচরণ আরও সহজে অনুমানযোগ্য হয়ে ওঠে?
কথার আক্রমণ, অপমান ও কাছে টানা
রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কাছে টেনে আর আমেরিকার মিত্রদের কথার আক্রমণের মধ্য দিয়ে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্প তাঁর দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করেন। তিনি কানাডাকে অপমান করে বলেছিলেন, দেশটির যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম অঙ্গরাজ্য হয়ে যাওয়া উচিত।
ট্রাম্প বলেছিলেন, গ্রিনল্যান্ডকে (আমেরিকার মিত্র ডেনমার্কের একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল) যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একীভূত করার জন্য সামরিক শক্তি প্রয়োগের কথা বিবেচনা করতে তিনি প্রস্তুত। তিনি আরও বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উচিত পুনরায় পানামা খালের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ নেওয়া।
সামরিক জোট ন্যাটো সনদের ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, প্রতিটি সদস্যদেশ অন্য দেশকে রক্ষায় এগিয়ে আসার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের এ অঙ্গীকারকে সংশয়ের মধ্যে ফেলে দেন। যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেস বলেন, ‘আমি মনে করি, (ন্যাটো সনদের) ৫ অনুচ্ছেদ লাইফ সাপোর্টে আছে।’
ন্যাটো সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (প্রথম সারিতে বাঁ থেকে চতুর্থ) ও বিশ্বনেতারা