জুলাই ঘোষণাপত্রকে ‘অপূর্ণাঙ্গ’ আখ্যায়িত করে এটির সংশোধন দাবি করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার। এই ঘোষণাপত্রে একটি নির্দিষ্ট দলের চিন্তা-চেতনা প্রকাশ পেয়েছে বলে রাজনীতির ময়দানে গুঞ্জন উঠেছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে এক আলোচনা সভায় প্রধান বক্তা ছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল। জুলাই গণ–অভ্যুত্থান স্মরণে ‘ছাত্র-শিক্ষক-জনতার অবদান ও করণীয়’ শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশন।

আলোচনা সভায় জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার বলেন, বিচারক হত্যা, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, শাপলা চত্বরের ঘটনা এবং শিক্ষকদের অবদান—এসবের কিছুই জুলাই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। জুলাইয়ের যে আকাঙ্ক্ষা ছিল, তা ঘোষণাপত্রে প্রতিফলিত হয়নি। এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ঘোষণাপত্রটি সংশোধন করতে হবে।

জুলাই ঘোষণাপত্রে ইসলামপন্থীদের অবদান মূল্যায়িত হয়নি বলেও দাবি করেন গোলাম পরওয়ার। তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার তৈরি ঘোষণাপত্রটি অসম্পূর্ণ। বিদ্যমান ব্যবস্থায় নির্বাচন হলে নতুন ফ্যাসিবাদের জন্ম হতে পারে। নির্বাচনের সময় ঘোষণাকে ইতিবাচক বলা হলেও প্রয়োজনীয় সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে তা জনগণের সঙ্গে প্রতারণা হবে।’ নির্দলীয় সরকারের অধীনেই জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করে সেই আলোকে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের আহ্বান জানান তিনি।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, রন্ধ্রে রন্ধ্রে ফ্যাসিবাদ লুকিয়ে আছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে জাতীয় নির্বাচন সম্ভব নয়। যাঁদের কারণে দ্বিতীয় স্বাধীনতার সূচনা হয়েছিল—সেই শ্রমিক, মুটে-মজুর ও শিক্ষকেরা জুলাই ঘোষণাপত্রে উপেক্ষিত। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে অন্তঃসারশূন্য এ ঘোষণাপত্র সংশোধন করতে হবে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ আদর্শ শিক্ষক ফেডারেশনের সভাপতি এম কোরবান আলী, সঞ্চালনা করেন ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি অধ্যাপক এ বি এম ফজলুল করীম।

সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ। এ ছাড়া বক্তব্য দেন বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক উমার আলী, বাংলাদেশ কলেজ শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক নূর নবী, বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মাওলানা শাহজাহান মাদানী, বাংলাদেশ মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মো.

মুনজুরুল হক, বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসাইন, বাংলাদেশ ইবতেদায়ি মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের সভাপতি জি এম আলাউদ্দিন, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন শিক্ষক পরিষদের সভাপতি মো. সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পরওয় র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

প্রধান উপ‌দেষ্টা‌কে স্মারক‌লি‌পি দি‌লেন জামায়াতসহ ৮ জনের নেতারা

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে প্রধান উপ‌দেষ্টা‌কে স্মারকলিপি দি‌য়ে‌ছেন জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন ৮ দলীয় জোটের শীর্ষ‌নেতারা।

বৃৃহস্প‌তিবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের নেতৃত্বে ৮ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় গিয়ে এই স্মারকলিপি জমা দেন। এ সময় প্রধান উপদেষ্টার পক্ষে স্মারকলিপি গ্রহণ করেন শিল্প এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান।

সেখান খে‌কে বে‌রি‌য়ে এ‌সে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সাংবা‌দিক‌দের বলেন, “যমুনায় যাওয়ার পর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক স্মারকলিপি গ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন, তবে আমাদের দাবি ছিল আমরা মহাপরিচালকের কাছে স্মারকলিপি দেব না। আমরা প্রধান উপদেষ্টার কাছেই স্মারকলিপি দিতে চেয়েছি। পরে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান আমাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেছেন।”

“আমরা ৮ দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আদিলুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেছি, স্মারকলিপি পড়ে শুনিয়েছি। শিল্প উপদেষ্টা আমাদের দাবির সঙ্গে দ্বিমত করেননি। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের পাঁচ দাবি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন” যোগ ক‌রেন পরওয়ার।

৮ দ‌লের প্রতিনিধি হি‌সে‌বে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এ এইচ এম হামিদুর রহমান আযাদ, খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির আহমদ আলী কাসেমী ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপার) সহসভাপতি রাশেদ প্রধান যমুনায় যান।

তার আগে বৃহস্প‌তিবার দুপু‌রে যমুনার উ‌দ্দে‌শ্যে ৮ দ‌লের পদযাত্রা রাজধানীর মৎস্য ভবন মো‌ড়ে আটকে দেয় পুলিশ।

জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারি, জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোটসহ পাঁচ দফা দাবিতে প্রধান উপ‌দেষ্টা বরাবর স্মারক‌লি‌পি দেওয়ার আ‌গে পল্টন‌ মো‌ড়ে সং‌ক্ষিপ্ত সমা‌বে‌শ ক‌রেন ৮ দ‌লের শীর্ষনেতারা।

দলগুলোর পাঁচ দফা দাবি হলো- জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি এবং ওই আদেশের ওপর নভেম্বরের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; আগামী জাতীয় নির্বাচনে উভয় কক্ষে বা উচ্চকক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ‘ফ্যাসিস্ট’ সরকারের সব জুলুম–নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

৮ দলীয় জোটের মধ্যে রয়েছে- জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ৫ দফা দাবি না মানলে ১১ নভেম্বর ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে: জামায়াত নেতা গোলাম পরওয়ার
  • ১১ নভেম্বর মহাসমাবেশ, দাবি না মানলে ঢাকার চিত্র হবে ভিন্ন: গোলাম পরওয়ার
  • প্রধান উপ‌দেষ্টা‌কে স্মারক‌লি‌পি দি‌লেন জামায়াতসহ ৮ জনের নেতারা