গাজায় অনাহারে প্রায় ২০০ জনের মৃত্যু, খাবারের খোঁজে ধ্বংসাবশেষেও হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ
Published: 8th, August 2025 GMT
গাজা উপত্যকায় খাবারের অভাবে প্রায় ২০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ জনই শিশু। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ তথ্য দিয়েছে। এদিকে গাজার ক্ষুধার্ত মানুষজন উড়োজাহাজ থেকে ফেলা খাবার ও বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে ত্রাণ পাওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরায়েলের চলমান অবরোধকে কেন্দ্র করে গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ অবস্থা চলছে। এর মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালগুলোয় ‘ক্ষুধা ও অপুষ্টি’র কারণে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুটি শিশুও আছে। এখন পর্যন্ত গাজায় খাবারের অভাবে মোট মৃত মানুষের সংখ্যা ১৯৭-তে দাঁড়িয়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, জুলাই মাসে গাজায় তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ হাজার, যা এক মাসে সর্বোচ্চ।
আল–জাজিরার সংবাদকর্মী ইব্রাহিম আল-খালিলি বলেন, গাজার অবস্থা খুবই ভয়ংকর। উড়োজাহাজ থেকে ফেলা খাবারের কিছু ভবনের ধ্বংসাবশেষের ভেতর পড়লে সেগুলোও খুঁজে পাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ।
মুস্তফা তানানি নামের এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, উড়োজাহাজ থেকে ফেলা অনেক খাবার ঠিকমতো মাটিতে পৌঁছায় না। সেগুলো ভবনগুলোর মাঝখানে উঁচুতে আটকা পড়ে। সেখানে পৌঁছানোটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এখানে যেন যুদ্ধ চলছে। আমরা দূর থেকে আসি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই পাই না।’ইব্রাহিম আরও বলেন, ‘এখানকার লড়াইটা শুধু খাবারের জন্য নয়, টিকে থাকার জন্য।’
মুস্তফা তানানি নামের এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, উড়োজাহাজ থেকে ফেলা অনেক খাবার ঠিকমতো মাটিতে পৌঁছায় না। সেগুলো ভবনগুলোর মাঝখানে উঁচুতে আটকা পড়ে। সেখানে পৌঁছানোটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যেন যুদ্ধ চলছে। আমরা দূর থেকে আসি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই পাই না।’
মুস্তফা বলেন, ‘সবার হাতে ত্রাণের ব্যাগ আছে, কিন্তু আমরা কিছুই পাই না। উড়োজাহাজ থেকে ফেলা ত্রাণ কোনো কাজেই আসছে না। দেখুন না, কোথায় তারা ত্রাণ ফেলেছে। ওই যে ওপরে, ভবনগুলোর মাঝখানে। এগুলো সংগ্রহ করা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’
আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলার মুখে গাজায় অবশিষ্ট আছে মাত্র দেড় শতাংশ ফসলি জমি১৫ ঘণ্টা আগেগাজার নাসের হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার অনাহারের কারণে আল-মাওয়াসি এলাকার দুই বছর বয়সী একটি শিশুসহ দুই শিশু মারা গেছে।
শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টি নিয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় পাঁচ বছরের নিচের ২ লাখ ৯০ হাজার শিশুর মধ্যে মাত্র ৮ হাজার ৭০০ শিশুকে প্রয়োজনীয় খাবার ও পুষ্টি উপকরণ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।
গাজার এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়া আল–জাজিরাকে বলেন, গাজায় অন্তত দুই লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। গত মার্চ থেকে ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় প্রয়োজনীয় শিশুখাদ্য ও পুষ্টি উপকরণ পৌঁছাতে পারছে না। আর এগুলোর অভাবে অনেক শিশুকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে।
আরও পড়ুনগাজায় রক্তের তীব্র সংকট, রক্তদাতারাও অপুষ্টিতে১৯ ঘণ্টা আগেগাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় বলেছে, গত বুধবার গাজায় মাত্র ৯২টি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে। তবে জাতিসংঘ বলেছে, গাজার মানুষের দৈনিক প্রয়োজন মেটাতে সেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছানো দরকার।
গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় আরও বলেছে, যে ত্রাণ গাজায় পৌঁছেছে, তার বেশির ভাগই ছিনতাই ও লুটপাটের কারণে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে না। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল ইচ্ছা করে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
কিশোরগঞ্জে হেযবুত তওহীদের গোলটেবিল বৈঠকে পুলিশি বাধা, সভা পণ্ড
কিশোরগঞ্জে হেযবুত তওহীদের একটি গোলটেবিল বৈঠক পুলিশের বাধার কারণে পণ্ড হয়ে যায়। কেন্দ্রঘোষিত ‘রাষ্ট্র সংস্কারের প্রস্তাবনা—তওহীদভিত্তিক আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা’ শিরোনামে আজ সোমবার বেলা ১১টায় শহরের একটি রেস্তোরাঁর পার্টি সেন্টারে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে পুলিশের বাধার কারণে শেষ পর্যন্ত অনুষ্ঠানটি পণ্ড হয়ে গেছে।
আয়োজনের কয়েক দিন আগে থেকেই জেলায় কর্মরত সাংবাদিকদেরও দাওয়াত দিয়েছিল হেযবুত তওহীদ। সংগঠনের পক্ষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনুষ্ঠান সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা চালানো হয়।
সংগঠন ও প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, সোমবার বেলা ১১টার দিকে গোলটেবিল বৈঠক শুরু হওয়ার ১৫ মিনিটের মধ্যে অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হয় কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল। এ আয়োজনের জন্য প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া হয়নি জানিয়ে অনুষ্ঠান বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দেয় পুলিশ। এ সময় নেতারা বৈঠকে উপস্থিত লোকদের কাছে বিদায় নেওয়ার জন্য পুলিশের কাছে একটু সময় চান। তবে পুলিশ তাৎক্ষণিক সভা বন্ধ করতে বলে। ফলে হেযবুত তওহীদের নেতা-কর্মীরা বৈঠক করতে পারেননি। পরে সংগঠনের প্রচারপত্র বিতরণ করে উপস্থিতি লোকজনকে বিদায় দেন বৈঠকের আয়োজকেরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কিশোরগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, এ অনুষ্ঠান করার জন্য প্রশাসনের কাছ থেকে হেযবুত তওহীদের পক্ষ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া হয়নি। অনুমতি ছাড়া সভা করা উচিত হয়নি। যে কারণে তাদের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এ সময় কিশোরগঞ্জ জেলা হেযবুত তওহীদের সভাপতি সোহানুর রহমানের সভাপতিত্বে আয়োজনে প্রধান অতিথি ছিলেন হেযবুত তওহীদের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহফুজুল আলম। অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ময়মনসিংহ বিভাগীয় সভাপতি এনামুল হক, ঢাকা দক্ষিণের সভাপতি তসলিম উদ্দিন। অনুষ্ঠানের সঞ্চালনায় ছিলেন জেলার নারী সম্পাদক সাথী আক্তার।
এ বিষয়ে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি মাহফুজুল আলম বলেন, ‘বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্র গঠনে বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। আমরাও আমাদের প্রস্তাব সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান ড. আলী রীয়াজের কাছে দিয়েছি। এই প্রস্তাব বিষয়েই আমরা সারা দেশে আলোচনা সভা ও বৈঠক করে যাচ্ছি। তবে কোথাও কোনো বাধা দেওয়া হয়নি। জাতীয় প্রেসক্লাবেও অনুষ্ঠান করেছি। কিন্তু কিশোরগঞ্জে আমাদের অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়াটা খুবই দুঃখজনক।’