গাজা উপত্যকায় খাবারের অভাবে প্রায় ২০০ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৯৬ জনই শিশু। গাজার স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এ তথ্য দিয়েছে। এদিকে গাজার ক্ষুধার্ত মানুষজন উড়োজাহাজ থেকে ফেলা খাবার ও বিতর্কিত ত্রাণ সংস্থা জিএইচএফ পরিচালিত কেন্দ্রগুলো থেকে ত্রাণ পাওয়ার জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

ইসরায়েলের চলমান অবরোধকে কেন্দ্র করে গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ অবস্থা চলছে। এর মধ্যেই গতকাল বৃহস্পতিবার হাসপাতালগুলোয় ‘ক্ষুধা ও অপুষ্টি’র কারণে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে দুটি শিশুও আছে। এখন পর্যন্ত গাজায় খাবারের অভাবে মোট মৃত মানুষের সংখ্যা ১৯৭-তে দাঁড়িয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান তেদরোস আধানোম গেব্রেয়াসুস বলেছেন, জুলাই মাসে গাজায় তীব্র অপুষ্টিতে ভোগা পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১২ হাজার, যা এক মাসে সর্বোচ্চ।

আল–জাজিরার সংবাদকর্মী ইব্রাহিম আল-খালিলি বলেন, গাজার অবস্থা খুবই ভয়ংকর। উড়োজাহাজ থেকে ফেলা খাবারের কিছু ভবনের ধ্বংসাবশেষের ভেতর পড়লে সেগুলোও খুঁজে পাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছে মানুষ।

মুস্তফা তানানি নামের এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, উড়োজাহাজ থেকে ফেলা অনেক খাবার ঠিকমতো মাটিতে পৌঁছায় না। সেগুলো ভবনগুলোর মাঝখানে উঁচুতে আটকা পড়ে। সেখানে পৌঁছানোটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘এখানে যেন যুদ্ধ চলছে। আমরা দূর থেকে আসি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই পাই না।’

ইব্রাহিম আরও বলেন, ‘এখানকার লড়াইটা শুধু খাবারের জন্য নয়, টিকে থাকার জন্য।’
মুস্তফা তানানি নামের এক বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বলেন, উড়োজাহাজ থেকে ফেলা অনেক খাবার ঠিকমতো মাটিতে পৌঁছায় না। সেগুলো ভবনগুলোর মাঝখানে উঁচুতে আটকা পড়ে। সেখানে পৌঁছানোটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি আরও বলেন, ‘এখানে যেন যুদ্ধ চলছে। আমরা দূর থেকে আসি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই পাই না।’

মুস্তফা বলেন, ‘সবার হাতে ত্রাণের ব্যাগ আছে, কিন্তু আমরা কিছুই পাই না। উড়োজাহাজ থেকে ফেলা ত্রাণ কোনো কাজেই আসছে না। দেখুন না, কোথায় তারা ত্রাণ ফেলেছে। ওই যে ওপরে, ভবনগুলোর মাঝখানে। এগুলো সংগ্রহ করা আমাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।’

আরও পড়ুনইসরায়েলের হামলার মুখে গাজায় অবশিষ্ট আছে মাত্র দেড় শতাংশ ফসলি জমি১৫ ঘণ্টা আগে

গাজার নাসের হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল বৃহস্পতিবার অনাহারের কারণে আল-মাওয়াসি এলাকার দুই বছর বয়সী একটি শিশুসহ দুই শিশু মারা গেছে।
শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টি নিয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় পাঁচ বছরের নিচের ২ লাখ ৯০ হাজার শিশুর মধ্যে মাত্র ৮ হাজার ৭০০ শিশুকে প্রয়োজনীয় খাবার ও পুষ্টি উপকরণ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।

শিশুদের দীর্ঘস্থায়ী অপুষ্টি নিয়ে সতর্ক করে জাতিসংঘ বলেছে, গাজায় পাঁচ বছরের নিচের ২ লাখ ৯০ হাজার শিশুর মধ্যে মাত্র ৮ হাজার ৭০০ শিশুকে প্রয়োজনীয় খাবার ও পুষ্টি উপকরণ সরবরাহ করা সম্ভব হয়েছে।

গাজার এনজিও নেটওয়ার্কের প্রধান আমজাদ শাওয়া আল–জাজিরাকে বলেন, গাজায় অন্তত দুই লাখ শিশু তীব্র অপুষ্টিতে ভুগছে। গত মার্চ থেকে ইসরায়েলি অবরোধের কারণে গাজায় প্রয়োজনীয় শিশুখাদ্য ও পুষ্টি উপকরণ পৌঁছাতে পারছে না। আর এগুলোর অভাবে অনেক শিশুকে প্রাণ হারাতে হচ্ছে।

আরও পড়ুনগাজায় রক্তের তীব্র সংকট, রক্তদাতারাও অপুষ্টিতে১৯ ঘণ্টা আগে

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় বলেছে, গত বুধবার গাজায় মাত্র ৯২টি ত্রাণবাহী ট্রাক ঢুকেছে। তবে জাতিসংঘ বলেছে, গাজার মানুষের দৈনিক প্রয়োজন মেটাতে সেখানে ৫০০ থেকে ৬০০ ত্রাণবাহী ট্রাক পৌঁছানো দরকার।

গাজার সরকারি গণমাধ্যম কার্যালয় আরও বলেছে, যে ত্রাণ গাজায় পৌঁছেছে, তার বেশির ভাগই ছিনতাই ও লুটপাটের কারণে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে পারে না। তাদের অভিযোগ, ইসরায়েল ইচ্ছা করে এমন বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে তৈরি যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ছাড়ে ঝুঁকির মুখে স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স শিল্প খাত

দেশে ইতোমধ্যেই তৈরি হয় ফ্রিজ ও এসির এমন যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক (এসডি) ছাড় দিয়েছে সরকার। অন্যদিকে দেশে এসব যন্ত্রাংশ তৈরির কাঁচামাল আমদানিতে আরোপ করা হয়েছে উচ্চ শুল্ক হার। এতে দেশের ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য উৎপাদন শিল্প খাত পড়েছে বড় ঝুঁকিতে। অন্ধকার দেখছেন এ খাতের বিনিয়োগকারীরা।

তারা বলছেন, এ সিদ্ধান্তে দেশে ইলেকট্রনিক্স পণ্য ও যন্ত্রাংশ উৎপাদনের চেয়ে আমদানি লাভজনক হয়ে উঠেছে। ফলে স্থানীয় শিল্পায়ন ব্যাহত হচ্ছে কর্মসংস্থান হারাচ্ছে বিপুল জনগোষ্ঠী। সংশ্লিষ্টদের মতে, এরূপ সিদ্ধান্তের ফলে ইলেকট্রনিক্স খাতে উদ্ভাবন ও প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় বাংলাদেশের অগ্রগতি থমকে যাচ্ছে। উৎপাদন শিল্পের আড়ালে আমদানির্ভর সংযোজন শিল্প বিকাশের পথ সুগম হয়েছে।

আরো পড়ুন:

অক্টোবরে রেমিট্যান্স এল ৩১ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা

উৎপাদনশীলতা বাড়াতে বিজিএমইএ-এনপিও সমঝোতা স্মারক

উল্লেখ্য, গত ২৪ জুন ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানি সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন (এসআরও নম্বর-২৭৪-আইন/২০২৫/৩১৭-মূসক) জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। উক্ত এসআরওতে রেফ্রিজারেটর, ফ্রিজার ও এয়ারকন্ডিশনার তৈরিতে ব্যবহৃত হয় এমন বেশ কিছু প্রয়োজনীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে, যা বাংলাদেশেই বহু বছর আগে থেকেই উৎপাদিত হয়ে আসছে। পক্ষান্তরে এসব যন্ত্রাংশ উৎপাদনের কাঁচামাল আমদানিতে বিনিয়োগকারীদের উচ্চ শুল্ক দিতে হচ্ছে যা স্থানীয় বৃহৎ ইলেকট্রনিক্স শিল্প খাতের জন্য হুমকিস্বরূপ।

স্থানীয় শিল্পের পরিপন্থি এমন সিদ্ধান্তে হতবাক এই শিল্পে বিনিয়োগকারী উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো। তারা জানান, এই সিদ্ধান্তের ফলে স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স উৎপাদন শিল্পে দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের বিদ্যমান কয়েক হাজার কোটি টাকার বিশাল বিনিয়োগই শুধু নয়, লক্ষাধিক লোকের কর্মসংস্থানও ঝুঁকির মুখে পড়েছে। বাধাগ্রস্ত হয়েছে সম্পূর্ণ উৎপাদনমুখী দেশীয় ইলেকট্রনিক্স ও প্রযুক্তিপণ্য শিল্প খাতের টেকসই বিকাশ। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে ফ্রিজ-এসি উৎপাদন খাতে উল্টো পথে হাঁটছে সরকার।
ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের দেড় কোটি মানুষ খাদ্য সংকটে পড়তে যাচ্ছে বলে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ ইউনিট (এফপিএমইউ), জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও), জাতিসংঘের শিশু তহবিল (ইউনিসেফ) ও বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি)।

এর আগে সরকারি সংস্থা এটুআই এবং আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) গবেষণার তথ্য বলছে, ২০৩০ সালের মধ্যে চাকরি হারাতে পারেন দেশের প্রায় ৫৩ লাখ ৮০ হাজার মানুষ। স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদন শিল্প খাতের পরিপন্থি শুল্কনীতির ফলে এই সংকট আরো ঘণীভূত হবে বলে আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

জানা গেছে, এসআরও নম্বর-২৭৪-আইন/২০২৫/৩১৭-মূসক এর ৮৪.১৮ শিরোনাম সংখ্যার অধীনে এইচএস কোড: ৮৪১৮.৯৯.০০-এর আওতায় দেশীয় রেফ্রিজারেটর ও ফ্রিজার উৎপাদন শিল্পে ব্যবহৃত উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের তালিকায় বর্তমানে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে এমন বেশ কয়েকটি যন্ত্রাংশ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে-রেফ্রিজারেটর/ফ্রিজার শেলফ, স্টপার ব্লক, ডিওডোরেন্ট ব্লক, পিপি বটম প্লেট, ক্রিস্পার কভার, ড্রেনেজ পাইপ কভার, কভার অব কম্প্রেসর হাউজ, সাপোর্ট অব ক্রিস্পার কভার, কটন প্যাড ফর শেলফ, পিপি বেল্ট এবং ডাম্পিং ব্লক। এছাড়া শিরোনাম সংখ্যা ৮৫.৩৬-এর অধীনে এইচএস কোড ৮৫৩৬.৬১.০০-এর আওতায় লাইট হোল্ডার যন্ত্রাংশ আমদানিতেও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে।

ফ্রিজের পাশাপাশি দেশীয় এয়ার কন্ডিশনার উৎপাদন শিল্পের ক্ষেত্রেও শিরোনাম সংখ্যা ৮৪.১৫-এর অধীনে এইচএস কোড ৮৪১৫.৯০.৯০-এর আওতায় দেশে উৎপাদিত হচ্ছে এমন বেশ কয়েকটি উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রেও সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে-ফ্যান ব্লোয়ার, কানেকটিং পাইপ, এক্সিয়াল ফ্যান, ক্যাসিং ফর ইনডোর, এয়ার গাইড প্লেট, টিউব প্লেট, এয়ার ফিল্টার, আইডিইউ প্যানেল, ডিস্ট্রিবিউশন পাইপ এবং ক্রস ফ্লো ফ্যান।

নতুন এসআরও অনুযায়ী ফ্রিজে ব্যবহৃত হয় এমন তৈরিকৃত (সেমি ফিনিশড) যন্ত্রাংশ বিদেশ থেকে বিনা শুল্কে আমদানি করা গেলেও একই যন্ত্রাংশ দেশে তৈরির জন্য কাঁচামাল আমদানিতে ৪৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হচ্ছে। আর এসির ক্ষেত্রে কাঁচামাল আমদানিতে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রদান করতে হচ্ছে। ফলে আমদানিকারক-সংযোজনকারী এবং উৎপাদনকারীদের মধ্যে পলিসিগত সামঞ্জস্য থাকছে না। উৎপাদনকারীর বিপুল বিনিয়োগ হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে। হাজার হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হারাচ্ছে।

এসআরও সুবিধা পাওয়ার জন্য যেসব মেশিনারিজ থাকতে হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে, সেসব মেশিনারিজ দিয়ে যেসব যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়, সেগুলোর শুল্ক মওকুফ করা হয়েছে। এখন যেসব উৎপাদনকারী ইতোমধ্যেই বিপুল বিনিয়োগ করে উক্ত মেশিনারিজগুলো স্থাপন করেছেন, তাদের সেসব মেশিনারিজ কোনো কাজেই লাগছে না। কারণ উক্ত মেশিনারিজ ব্যবহার করে যেসব যন্ত্রাংশ তৈরি করা হচ্ছে, সেসব যন্ত্রাংশের মূল্য আমদানিকৃত যন্ত্রাংশের চেয়ে অনেক বেশি হচ্ছে। ফলে আমদানিকে উৎসাহিত করা হয়েছে এবং উৎপাদনকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।

এছাড়া এই শিল্প খাতে নতুন কোনো বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান এবং মূল্য সংযোজন হচ্ছে না। কারণ একজন উৎপাদনকারীকে তিন ধাপে বিনিয়োগ করে (মেশিনারিজ ক্রয় ও স্থাপন, লোকবল নিয়োগ এবং উচ্চ শুল্কে কাঁচামাল আমদানি) যন্ত্রাংশ তৈরি করতে হচ্ছে। পক্ষান্তরে এসআরও সুবিধায় কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই বিনা শুল্কে এসব যন্ত্রাংশ আমদানি করা যাচ্ছে, যা অধিক লাভজনক হওয়ায় দেশ উৎপাদনমুখী শিল্পের পরিবর্তে সংযোজনমুখী শিল্পে রূপান্তরিত হচ্ছে।

খাত সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এসআরও-২৭৪ এর ফলে সেমি ফিনিশড গুডস (এসএফজি) এবং প্লাস্টিক শিল্পে সরাসরি নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। ইলেকট্রনিক্স শিল্পে ব্যবহৃত প্লাস্টিক পার্টসের একটি বিশাল অংশের যোগান আসে এই দুটি খাত থেকে। বর্তমানে দেশে সেমি ফিনিশড গুডস প্রক্রিয়াকরণের জন্য বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৯,৫০০ কোটি টাকা। আর এ খাতে স্থানীয় মূল্য সংযোজনের পরিমাণ ৫০০ কোটি টাকারও বেশি। এখানে কর্মসংস্থান প্রায় ৭ হাজার মানুষের। আর প্লাস্টিক শিল্প খাতে দেশে মাঝারি ও ক্ষুদ্র প্রায় ৬,০০০ কারখানা রয়েছে, যেখানে কর্মসংস্থান হয়েছে ১৫ লাখের অধিক মানুষের। দেশের জিডিপির প্রায় ১ শতাংশ এই শিল্পনির্ভর। এসআরও-২৭৪ এর ফলে এই খাতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। এতে এই খাত বিপুল কর্মসংস্থান হারাচ্ছে, দেশের শিল্পায়ন ব্যাহত হচ্ছে।

তৈরি পোশাক খাতের পর বাংলাদেশের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত হিসেবে দ্রুত উঠে আসছে ইলেকট্রনিক্স খাত। কিন্তু এসআরও-২৭৪ এর কারণে ইলেকট্রনিক্স পণ্যের রপ্তানি খাত ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে রপ্তানি আয় বৃদ্ধির নতুন ক্ষেত্র সংকুচিত হয়েছে। এতে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উত্তরণের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা কঠিন হবে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পথে রয়েছে। ফলে ইউরোপীয় ও আমেরিকান বাজারে রপ্তানি সুবিধা বজায় রাখতে হলে বর্তমানে প্রযোজ্য ৩০ শতাংশ মূল্য সংযোজনের পরিবর্তে কমপক্ষে ৪০ শতাংশ মূল্য সংযোজন নিশ্চিত করতে হবে। অর্থাৎ পণ্যের মোট মূল্যের অন্তত ৪০ শতাংশ বাংলাদেশে উৎপাদিত হতে হবে। কিন্তু এসআরও-২৭৪ অনুযায়ী উৎপাদনমুখীতা থেকে দেশ আমদানিমুখী হয়েছে এবং বৈশ্বিক বাণিজ্য বৈষম্য দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা বাংলাদেশের মতো স্বল্পোন্নত দেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।

এ খাতের দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রশ্ন যেসব দেশীয় ফ্রিজ ও এসি প্রতিষ্ঠান আমদানি বিকল্প উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করছে এবং উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় মেশিনারিজ ও প্লান্টস রয়েছে, তবে কেন এবং কাদের স্বার্থে ওসব যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করা হলো? এই শুল্ক নীতিমালার মাধ্যমে কোন উদ্দেশ্যে দেশীয় হাই-টেক শিল্প খাতের বিকাশ বাধাগ্রস্ত করা হলো? এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে স্থানীয় ফ্রিজ ও এসি উৎপাদন শিল্পের তৈরিকৃত সমজাতীয় উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের সুবিধা বাতিল করার আহ্বান জানিয়েছেন দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তারা।

তারা বলছেন, এতদিন যেসব দেশীয় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ফ্রিজ ও এসির আনুষঙ্গিক উপকরণ ও খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি করে আসছিলেন, সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহার করায় তাদের কাছে ওসব যন্ত্রাংশ উৎপাদনের চেয়ে বরং আমদানি করাই বেশি লাভজনক হয়ে উঠেছে। ফলে তারা এখন আমদানির প্রতি ঝুঁকছেন। এতে আমদানি ব্যয় বাড়ছে, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এছাড়াও এ খাতের খুচরা যন্ত্রাংশ উৎপাদনেও নতুন কোনো বিনিয়োগ আসছে না। ফলে শুধু এ খাতের ভবিষ্যৎ বিনিয়োগই নয়, কর্মসংস্থান সৃষ্টির পথও সংকুচিত হচ্ছে এবং বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ছেন।

তাই দেশীয় প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে ফ্রিজ ও এসির যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি হচ্ছে, সেসব পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের বিষয়টি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গুরুত্বসহকারে পুনর্বিবেচনা করে তা বাতিল করা উচিত বলে অভিমত জানিয়েছেন শিল্প খাতে বিনিয়োগ সংশ্লিষ্টরা।

শিল্প সংশ্লিষ্টদের অভিমত, দেশীয় উৎপাদনমুখী ইলেকট্রনিক্স শিল্প খাতের টেকসই বিকাশের স্বার্থে এবং এ খাতের দেশীয় শিল্পোদ্যোক্তাদের বিশাল বিনিয়োগ সুরক্ষা নিশ্চিতকল্পে ফ্রিজ, এসির যেসব খুচরা যন্ত্রাংশ এখন দেশেই উৎপাদিত হচ্ছে, সেসব আমদানিতে সম্পূরক শুল্ক অব্যাহতির সুবিধা বাতিল করে যৌক্তিক হারে সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা অত্যন্ত জরুরি। একইসঙ্গে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্কহ্রাস করা এখন সময়ের দাবি।

ঢাকা/সাহেল/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দেশে তৈরি যন্ত্রাংশ আমদানিতে শুল্ক ছাড়ে ঝুঁকির মুখে স্থানীয় ইলেকট্রনিক্স শিল্প খাত