গাজায় বিমান থেকে ফেলা ত্রাণের বক্সের চাপায় ১৫ বছর বয়সী মুহান্নাদ জাকারিয়া ঈদ নামে এক ফিলিস্তিনি কিশোর নিহত হয়েছেন। একই দিনে আরো ১১ জন অনাহারে মারা গেছেন। এ নিয়ে দেশটিতে অনাহারে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২১২ জনে। 

রবিবার (১০ আগস্ট) আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, শনিবার গাজার নেতজারিম করিডরের কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। সেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। 

আলজাজিরার যাচাই করা ভিডিওতে দেখা যায়, মুহান্নাদের চারপাশে কয়েকজন মানুষ জড়ো হয়ে তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। অন্য ফুটেজে নিহতের ভাই তাকে ঘটনাস্থল থেকে তুলে নিচ্ছেন, আর বাবাকে দেখা যায় হাসপাতালে তার মরদেহ আঁকড়ে ধরে আছেন।

নিহত কিশোরের ভাই রয়টার্সকে বলেন, “আমার ভাই বিমান থেকে ফেলা ত্রাণ আনতে গিয়েছিল। একটি বাক্স সরাসরি তার ওপর পড়ে সে শহীদ হয়েছে।” 

তিনি আরো বলেন, “ত্রাণ সীমান্ত দিয়ে না দিয়ে ওপর থেকে ফেলে আমাদের সন্তানদের হত্যা করা হচ্ছে।”

জাতিসংঘ বারবার সতর্ক করেছে আকাশপথে ত্রাণ ফেলা বিপজ্জনক ও অকার্যকর। গাজা সরকারের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এভাবে ২৩ জন নিহত ও ১২৪ জন আহত হয়েছেন। 

সরকার বলেছে, “আমরা বারবার খাদ্য, শিশুদের দুধ, ওষুধ ও চিকিৎসা সামগ্রী যথাযথভাবে স্থলপথে প্রবেশের আহ্বান জানিয়ে আসছি।”

গাজার চিকিৎসা সূত্র জানায়, শনিবার ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ৪৭ জন নিহত হয়েছেন, যার মধ্যে ৪০ জন ত্রাণের অপেক্ষায় ছিলেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় অনাহারে আরো ১১ জন মারা গেছেন। যুদ্ধ শুরু থেকে অপুষ্টিজনিত মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে ২১২ এ দাঁড়িয়েছে, যার মধ্যে ৯৮ জন শিশু।

মে মাসে আংশিক অবরোধ প্রত্যাহারের পরও ইসরায়েল গাজায় ত্রাণ সরবরাহে কঠোর বিধিনিষেধ চালিয়ে যাচ্ছে। 

আল শিফা হাসপাতালের পরিচালক মোহাম্মদ আবু সালমিয়া বলেছেন, “দুর্ভিক্ষ এখন গুরুতর ঝুঁকি, বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণদের জন্য। অপুষ্টি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমিয়ে মৃত্যুর কারণ হতে পারে।”

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (ডব্লিউএফপি) ইসরায়েলকে আহ্বান জানায়, গাজায় প্রতিদিন অন্তত ১০০টি ত্রাণ ট্রাক প্রবেশের অনুমতি দিতে। তবে এখন পর্যন্ত মাত্র ৬০ জন ট্রাকচালককে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য সংস্থা দৈনিক ৬০০ ট্রাকের প্রয়োজনীয়তা জানিয়েছে।

ডব্লিউএফপির সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “২৭ জুলাই থেকে ২৬৬টি ট্রাক ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে, যার ৩১ শতাংশ অনুমোদিত ছিল।” 

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানায়, তারা গত পাঁচ মাসে গাজায় কোনো মানবিক সহায়তা পাঠাতে পারেনি, ফলে ক্ষুধার্ত ও অসুস্থ ফিলিস্তিনিরা বেঁচে থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় হামলা আরো তীব্র করেছে। নেতজারিম করিডরের কাছে ত্রাণের অপেক্ষায় থাকা অবস্থায় ইসরায়েলি গুলিতে ছয় জন নিহত হয়েছেন। দক্ষিণ গাজার একটি ত্রাণ কেন্দ্র থেকে নাসের মেডিকেল কমপ্লেক্সে আরো দুই মরদেহ আনা হয়েছে। খান ইউনিসে বিমান হামলায় এক নারী নিহত ও একজন আহত হয়েছেন।

যুদ্ধের শুরু থেকে গাজায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ৬১ হাজার ৩৬৯ ফিলিস্তিনি নিহত ও ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৫০ জন আহত হয়েছেন।

মৃত্যুর সংখ্যা বাড়তে থাকা ও ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিন্দা তীব্র হচ্ছে। ইসরায়েলের গাজা সিটি দখলের পরিকল্পনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ইতালি, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা।

তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। মিসরের প্রেসিডেন্ট সিসির সঙ্গে বৈঠকের পর বলেছেন, “আমরা গাজা পুরো দখলের পরিকল্পনাকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করছি। এটি ইসরায়েলের সম্প্রসারণবাদী ও গণহত্যামূলক নীতির নতুন ধাপ। ক্ষুধার মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ এবং স্থায়ী দখল ইসরায়েলের উদ্দেশ্য।” 

গাজার বাসিন্দারা বলছেন, “কোথাও নিরাপদ নেই— উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব বা পশ্চিম। তবে মরে গেলেও আমরা এখানেই থাকব।”

ঢাকা/ইভা 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসর য় ল র অন হ র

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাথমিকের শিক্ষকদের কর্মবিরতি স্থগিত, কর্মসূচি চলবে

সরকারি প্রাথমিকে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে সমাধানের আশ্বাসে চলমান কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন বলে জানিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

সহকারী শিক্ষকদের বিভিন্ন দাবির বিষয়ে রবিবার (৯ নভেম্বর) বিকেলে প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ ও প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে একটি বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরো পড়ুন:

পঞ্চগড়ে দুদকের গণশুনানিতে প্রাথমিকের ২ প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত 

প্রাথমিকের শিক্ষকদের নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিলেন শিক্ষা উপদেষ্টা

রাত সাড়ে ৯টায় মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু তাহের মো. মাসুদ রানা। সভায় প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সভায় শিক্ষকদের দাবির বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনায় শিক্ষক নেতাদের দাবির বিষয়সমূহ অর্থ মন্ত্রণালয়কে অবহিত করে যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে দাবিসমূহ সমাধানের বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে শিক্ষক নেতারা চলমান কর্মবিরতি স্থগিতের ঘোষণা দেন।

বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, কর্মবিরতির কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তবে অবস্থান কর্মসূচি চলবে।

তিনি আরো জানান, সোমবার বিকেল ৫টায় অর্থ মন্ত্রণালয়ে মিটিংয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।

ঢাকা/রায়হান/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ