একই পে স্কেলের দাবিতে আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজারের শ্রমিক-কর্মচারীদের বিক্ষোভ
Published: 10th, August 2025 GMT
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার ও কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডের (এএফসিসিএল) শ্রমিক-কর্মচারীরা ‘এক করপোরেশন, এক পে স্কেল’ বাস্তবায়ন ও নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন।
আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এএফসিসিএলের প্রধান ফটকের সামনে এই কর্মসূচি পালিত হয়। একই দাবিতে শ্রমিক-কর্মচারীরা এএফসিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মাধ্যমে শিল্প উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিয়েছেন।
এএফসিসিএলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের ব্যানারে কর্মীরা আশুগঞ্জ সার কারখানার ভেতর থেকে প্রধান ফটকের সামনে এসে বিক্ষোভ সমাবেশে অংশ নেন। শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি বজলুর রশিদের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার, জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি আক্তার হোসেন ও সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ।
বক্তারা বলেন, একই কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের জন্য দুটি বেতন কাঠামো চালু থাকায় বৈষম্যের সৃষ্টি হয়েছে। শুধু টেকনিশিয়ান ও অপারেটরদের মজুরি স্কেলে রাখা হয়েছে, বাকি সবাই জাতীয় পে স্কেলে আছেন। কারখানার উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ শ্রমিকদের ওপর নির্ভর করে। তাঁদের সঙ্গে এমন বৈষম্য সহ্য করা যায় না। তাই জাতীয় মজুরি কমিশনের আওতাভুক্ত শ্রমিকদের জন্য ১৫ শতাংশ বিশেষ প্রণোদনা দ্রুত বাস্তবায়নের পাশাপাশি টেকনিশিয়ান ও অপারেটরদেরও জাতীয় পে স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানানো হয়।
তাঁরা আরও বলেন, চলতি বছরের ১ মার্চ থেকে ১৬২ দিন ধরে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ থাকায় আশুগঞ্জ সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে। এতে প্রতিদিন প্রায় ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, যার মূল্য প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। বিদেশ থেকে উচ্চমূল্যে সার আমদানি বন্ধ করতে হবে। গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করে ইউরিয়া উৎপাদন পুনরায় চালুরও দাবি জানান শ্রমিক-কর্মচারীরা।
সমাবেশ শেষে শ্রমিকেরা কারখানার ভেতরে বিক্ষোভ মিছিল করেন এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালকের মাধ্যমে শিল্প উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেন।
এএফসিসিএলের শ্রমিক-কর্মচারী ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবু কাউসার বলেন, আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার ও কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেডে মোট ৭০২ জন শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা রয়েছেন, যার মধ্যে ৪৫২ জন জাতীয় বেতন কমিশনের আওতাভুক্ত, বাকি ২৫০ জন জাতীয় মজুরি কমিশনের আওতাভুক্ত। অপারেটর ও টেকনিশিয়ানদের মজুরি কমিশনে থাকতে বাধ্য করা হলেও ড্রাইভার, মালি পর্যন্ত জাতীয় বেতন কমিশনের সুবিধা পাচ্ছেন। বিসিআইসির প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের খাদ্যনিরাপত্তা ও জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও একই করপোরেশনের শ্রমিকদের বেতন কাঠামোতে বিভাজন রয়েছে। ফলে পদোন্নতি ও অন্যান্য সুবিধায় বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন মজুরি কমিশনের আওতাভুক্ত শ্রমিকেরা।
আবু কাউসার বলেন, জাতীয় মজুরি কমিশন থেকে জাতীয় বেতন কমিশনে স্থানান্তর করলে করপোরেশনের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হবে না। বিসিআইসির অধীন সব টেকনিশিয়ান ও অপারেটরদের জাতীয় বেতন স্কেলে অন্তর্ভুক্ত করে ‘এক করপোরেশন এক পে স্কেল’ কার্যকর করার জন্য বিসিআইসির পরিচালনা পর্ষদ ও মন্ত্রণালয়কে নির্দিষ্ট সময়সীমা ও রূপরেখা প্রণয়ন করতে হবে।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।