পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পে অর্থায়নের সুফল পাচ্ছে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো (এনবিএফআই)। এ ধরনের অর্থায়ন প্রকল্পগুলো একদিকে পরিবেশের জন্য কম ক্ষতিকর, অন্যদিকে সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল। কিছু প্রকল্প পিছিয়ে পড়া নাগরিকদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে। ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, আর্থিক সংকট ও অর্থনীতিতে নানা অস্থিরতার মধ্যেও টেকসই অর্থায়ন প্রকল্পগুলো ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। ফলে এ খাতে ঋণ বাড়ছে, সঙ্গে গ্রাহকও।

বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা ও কম সুদে ঋণের ব্যবস্থা, বহুজাতিক ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানের শর্ত ও নিজস্ব উদ্যোগের ফলে দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পগুলোকে প্রাধান্য দিচ্ছে। ফলে ব্যাংকঋণের ৩৩ শতাংশই এখন টেকসই ও পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে। আর আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ২৮ শতাংশ ঋণ এসব খাতে।

টেকসই প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই), কৃষি, পরিবেশবান্ধব কারখানা, সামাজিকভাবে দায়িত্বশীল প্রকল্প ইত্যাদি। টেকসই অর্থায়নের মধ্যে রয়েছে পরিবেশবান্ধব খাতে যেকোনো ধরনের অর্থায়ন। বাংলাদেশ ব্যাংক মোট মেয়াদি ঋণের ৫ শতাংশ পরিবেশবান্ধব খাতে বিতরণের জন্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে নির্দেশ দিয়েছে। সব মিলিয়ে ঋণের ৪০ শতাংশ টেকসই প্রকল্পে দেওয়ার লক্ষ্যও নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত মার্চ শেষে দেশের ব্যাংকঋণের ২৪ শতাংশ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের ৩৫ শতাংশ খেলাপি হয়ে পড়লেও টেকসই ও পরিবেশবান্ধব ঋণে খেলাপির হার ২ শতাংশের নিচে, যা টেকসই খাতে অর্থায়নের বড় সাফল্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই ও পরিবেশবান্ধব খাতে ঋণ দিতে এখন বেশ আগ্রহী। এ জন্য এই খাতে ঋণের চাহিদাও বাড়ছে। এসব ঋণ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর মুনাফা বাড়াতে ও আর্থিক ভিত্তি শক্তিশালী করতেও বড় ভূমিকা রাখছে। যেসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান টেকসই খাতে অর্থায়নে বেশি নজর দিয়েছে, তারা সংকটের মধ্যেও অন্যদের চেয়ে ভালো আছে।

গত এক বছরে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পে ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গেছে। ২০২৪ সালের মার্চে এসব খাতে ঋণ ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা, যা গত মার্চ শেষে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৪ হাজার ৪৯ কোটি টাকায়। ২০২৪ সালের মার্চে এ খাতে ঋণের গ্রাহক ছিলেন ১৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৩ জন, গত মার্চে যা বেড়ে হয়েছে ২৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫৮ জনে।

তালিকায় ১০ ব্যাংক, ২ এনবিএফআই

টেকসই খাতে অর্থায়ন, সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম, পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে অর্থায়ন, টেকসই কোর ব্যাংকিং, ব্যাংকিং সেবার পরিধিসহ নানা সূচকের ওপর ভিত্তি করে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে টেকসই রেটিংয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি ২০২৪ সালের নানা সূচকের ভিত্তিতে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় ১০টি ব্যাংক ও ২টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান স্থান পেয়েছে। টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েক বছর ধরে এই তালিকা প্রকাশ করে আসছে।

টেকসই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের এই তালিকা প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাসটেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগ। এতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম সাজানো হয়েছে আদ্যক্ষরের ভিত্তিতে। এবারের টেকসই ১০ ব্যাংকের তালিকায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক ও শাহ্​জালাল ইসলামী ব্যাংক। আর তালিকায় স্থান করে নেওয়া দুটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান হলো আইডিএলসি ফাইন্যান্স ও আইপিডিসি ফাইন্যান্স। পাঁচ বছর ধরে ধারাবাহিকভাবে টেকসই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইডিএলসি। এসব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ কম, মুনাফায় শীর্ষে। এ ছাড়া নানা সূচকে ঈর্ষণীয় অবস্থানে রয়েছে, যা তাদের টেকসই তালিকায় অবস্থান করে নিতে সহায়তা করেছে।

এবার প্রথমবারের টেকসই ব্যাংকের তালিকায় স্থান পেয়েছে শাহ্​জালাল ইসলামী ব্যাংক। ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ উদ্দীন আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘এই রেটিংয়ে স্থান করে নেওয়ার জন্য আমরা পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন বাড়িয়েছি। এসব ঋণের গ্রাহকেরা অন্য গ্রাহকের তুলনায় ভালো। ফলে এ খাতে ঋণ বাড়িয়ে আমরা স্বস্তিতে রয়েছি।’

এক বছরে ঋণ বেড়ে দ্বিগুণ

সারা বিশ্বে এখন জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে নানা আলোচনা, সমালোচনা ও গবেষণা চলছে। সে জন্য কার্বন নিঃসরণ কমাতে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে ঝুঁকছে বিভিন্ন দেশ। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশও পিছিয়ে নেই। এ দেশের তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতে এখন আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যা ২৪০। এ অবস্থায় ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো টেকসই অর্থায়নের পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব কার্যক্রম শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে অনেক ব্যাংক তাদের শাখা ও এটিএমে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করছে। বিদ্যুতের ব্যবহার কমিয়ে প্রাকৃতিক আলোর ব্যবহার বাড়ানো হচ্ছে। কোনো কোনো ব্যাংক কাগজের ব্যবহারও কমিয়ে আনছে। টেকসই অর্থায়নের ক্ষেত্রে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহৃত হচ্ছে বা হবে এমন প্রকল্পগুলোকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত ‘টেকসই খাতে অর্থায়ন’ শীর্ষক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে টেকসই খাতে ব্যাংকগুলোর ঋণস্থিতি বেড়ে হয়েছে ৫ লাখ ৮২ হাজার ৩৮১ কোটি টাকা, যা ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণের ৩৩ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মার্চে ব্যাংকঋণের স্থিতি ছিল ১৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা। এদিকে মার্চ শেষে আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণের স্থিতি ছিল ৭৬ লাখ ৯৮৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে টেকসই খাতে ঋণ ছিল ২১ হাজার ৬৬৮ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৮ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০২৪ সালের মার্চে এসব খাতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা, যা এ বছরের মার্চে বেড়ে হয়েছে ৬ লাখ ৪ হাজার ৪৯ কোটি টাকা। ফলে এক বছরে পরিবেশবান্ধব ও টেকসই প্রকল্পে ঋণ বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে পরিবেশবান্ধব খাতে ৮ হাজার ৭৬৩ কোটি টাকা ও টেকসই প্রকল্পে ১ লাখ ৪৯ হাজার ৮১৯ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ বা নবায়ন করা হয়েছে। এ সময়ে পরিবেশবান্ধব খাতে ঋণ আদায় হয়েছে ৫ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা ও টেকসই প্রকল্পের ঋণ আদায় হয়েছে ৭৭ হাজার ৯৪৭ কোটি টাকা। এ সময়ে পরিবেশবান্ধব খাতে ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে ৫৩ কোটি টাকা ও টেকসই প্রকল্পের ঋণ পুনঃ তফসিল হয়েছে ২ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। এই ঋণ পুনঃ তফসিলের হার অন্য যেকোনো ঋণের চেয়ে কম।

টেকসই ঋণের গ্রাহকও দ্বিগুণ

টেকসই ঋণ বলতে কার্বন নিঃসরণের মাধ্যমে পরিবেশ বিপর্যয় কমানোর পাশাপাশি বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় এমন ঋণকে বোঝানো হয়। টেকসই অর্থায়নে পুরুষ উদ্যোক্তার পাশাপাশি নারী উদ্যোক্তারাও রয়েছে। এ খাতের উদ্যোক্তাদের ৬৪ শতাংশ পুরুষ ও ৩৬ শতাংশ নারী। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত মার্চ শেষে টেকসই অর্থায়ন নিয়েছেন এমন গ্রাহকের সংখ্যা ২৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫৮। এর মধ্যে ৯ লাখ ৩৩ হাজার ৩৬৭ জন নারী উদ্যোক্তা। আর পুরুষ উদ্যোক্তার সংখ্যা ১৬ লাখ ৪৬ হাজার ৫৯১। ব্যাংকের টেকসই অর্থায়নের গ্রাহকসংখ্যা ২৫ লাখ ৭১ হাজার ৯৭০ ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে টেকসই অর্থায়নের গ্রাহকসংখ্যা ৭ হাজার ৯৮৮। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলে ২০২৪ সালের মার্চে টেকসই ঋণের গ্রাহক ছিল ১৩ লাখ ১৬ হাজার ৭৬৩ জন, গত মার্চে যা বেড়ে হয়েছে ২৫ লাখ ৭৯ হাজার ৯৫৮ জন। ফলে এক বছরে গ্রাহকও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে।

টেকসই অর্থায়নের মধ্যে পরিবেশবান্ধব প্রকল্পের গ্রাহক ৫৩ শতাংশ। টেকসই কৃষি প্রকল্পের গ্রাহক ২২ শতাংশ। ১৮ শতাংশ গ্রাহক সামাজিক দায়িত্বশীল প্রকল্পের। এর মধ্যে কেউ নারী ও প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান করেছে। পরিবেশবান্ধব গ্রাহকদের মধ্যে আরও রয়েছে সৌরবিদ্যুৎ, বিকল্প বিদ্যুৎ, পরিবেশবান্ধব ইট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, চক্রায়ন অর্থনীতি, সমুদ্রের সম্পদনির্ভর অর্থনীতি বা ব্লু ইকোনমি এবং তথ্য ও প্রযুক্তি।

অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান প্রথম আলোকে বলেন, শুরুতে বহুজাতিক ঋণদাতা সংস্থাগুলো টেকসই খাতে ঋণ দেওয়ার জন্য কম সুদে অর্থায়ন করেছে। পরিবেশ বিবেচনায় এরপর আরও অনেক সংস্থা এতে নজর দিয়েছে। এসব ঋণ আলাদা করে তদারক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংকগুলো এসব ঋণে সুফল পেয়েছে। পরে অন্য সব ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে পরিবেশকে বিবেচনায় নিয়েছে। যেসব ব্যাংক এসব খাতে নজর দিয়েছিল, তারা এখন ভালো করছে। পরিবেশবান্ধব অর্থায়ন পারে টেকসই পৃথিবী গড়ে তুলতে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ২০২৪ স ল র ম র চ গত ম র চ শ ষ ট কসই খ ত প রকল প র স থ ন কর ব যবহ র ব যবস থ এসব খ ত র ট কসই এক বছর এসব ঋণ ২৫ ল খ ঋণ ব ড় র জন য পর ব শ ব তরণ ক বছর

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নীরবতা ভেঙে হঠাৎ রাজনীতিকে ‘না’ বলে দিলেন শমসের মুবিন চৌধুরী
  • পাড়ার মঞ্চ থেকে বড় পর্দায় 
  • বিকল্প শক্তির উত্থানে নভেম্বরের শেষে ‘জাতীয় কনভেনশন’ করবে বাম ঘরানার দলগুলো
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%