১. সঠিকভাবে ইনস্টল ও বায়ু চলাচল নিশ্চিত করুন

আইপিএস ব্যাটারি কোথায় বসাতে হবে, এটা অধিকাংশ মানুষ ভুল করেন। প্রথম কাজ হলো সঠিক জায়গায় ব্যাটারি স্থাপন করা। ভুলভাবে বসালে এটি বিদ্যুৎ হারাতে পারে, অতিরিক্ত গরম হ‌য়ে যে‌তে পারে এবং এমনকি ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে।

উপযুক্ত জায়গা বে‌ছে নিন: আইপিএস ব্যাটারি রাখুন পরিষ্কার, শুকনো এবং প্রচুর বাতাস চলাচল করে, এমন জায়গায়। পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল না থাকলে তাপ জমে ধীরে ধীরে এর কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।

সূর্যের আলো ও আর্দ্রতা এড়িয়ে চলুন: আইপিএস ব্যাটারির বাইরের আবরণ এবং ভেতরের যন্ত্রাংশ সূর্যের আলো বা অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এটি সব সময় শীতল ও শুক‌নো জায়গায় রাখার চেষ্টা করুন।

স্থির জায়গায় বসান: আইপিএস ব্যাটারি বসানোর করার সময় খেয়াল রাখবেন, তা যেন নড়াচড়া না করে। নড়াচড়া করলে সংযোগ ঢিলা হয়ে যেতে পারে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে তৈরি হতে পারে সমস্যা।

২.

সঠিকভাবে চার্জ ও ডিসচার্জ করুন

আইপিএস ব্যাটারি দীর্ঘদিন কার্যকর রাখতে সঠিক চার্জ-ডিসচার্জ চক্র মেনে চলা জরুরি। ভুলভাবে চার্জ-ডিসচার্জ করলে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা দ্রুত কমে যায়, আয়ুও কমে। তাই সচেতন ব্যবহারই নিশ্চিত করবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ঝামেলামুক্ত সেবা।

অ‌তি‌রিক্ত চার্জ দেবেন না: আইপিএসের ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত চার্জ দেওয়া। তাই এটি করতে যা‌বেন না। যদিও আধুনিক আইপিএসগুলোতে অতিরিক্ত চার্জ প্রতিরোধক ব্যবস্থা থাকে, তবুও নিয়মিত পরীক্ষা করুন। আইপিএসের ব্যাটারি কেনার সময় ভালো মানের ব্যাটারি বেছে নিন, তাহলে ভালো ব্যাকআপ পাবেন, ভোগান্তি কম হবে এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে।

পুরোপুরি ডিসচার্জ করবেন না: বারবার পুরোপুরি ডিসচার্জ হলে ব্যাটারির আয়ু কমে যায়। চার্জ লেভেল ২০-৩০ শতাংশের ওপরে রাখা সবচেয়ে ভালো এবং ব্যাটারি সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার আগে চার্জ দেওয়ার চেষ্টা করুন।

সঠিক চার্জার ব্যবহার করুন: সব সময় প্রস্তুতকারকের পরামর্শ অনুযায়ী চার্জার ব্যবহার করুন। অসামঞ্জস্যপূর্ণ চার্জার ব্যবহারে ওভার ভোল্টেজ বা আন্ডার ভোল্টেজ হতে পারে, যা ব্যাটারির ক্ষতি করতে পারে।

নিয়মিত ইকুয়ালাইজেশন চার্জিং করুন: ইকুয়ালাইজেশন চার্জিং ব্যাটারির সেলগুলোর চার্জের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং সিসা সালফেট জমা হওয়া (সালফেশন) কমাতে সাহায্য করে। ইকুয়ালাইজেশন চার্জিং কত দিন পরপর করতে হবে, তা আইপিএস ব্যাটারির সঙ্গে দেওয়া ম্যানুয়াল বা নির্দেশিকা দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন।

আরও পড়ুনড্রাগন ফল কীভাবে ও কতটা খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন৮ ঘণ্টা আগে৩. নিয়মিত ইলেকট্রোলাইট লেভেল পরীক্ষা করুন

লেড-অ্যাসিড আইপিএস ব্যাটারিতে ইলেকট্রোলাইটের স্তর সঠিক মাত্রায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকট্রোলাইট রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোতে সাহায্য করে, যা শক্তি সঞ্চয় ও সরবরাহ করে।

ডিস্টিল্ড ওয়াটার ব্যবহার করুন: ইলেকট্রোলাইটের স্তর নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনমতো ডিস্টিল্ড ওয়াটার যোগ করুন। ট্যাপ বা সাধারণ পা‌নি ব্যবহার কর‌বেন না; কারণ, এতে লবণ ও ময়লা থাকে, যা ব্যাটারির ক্ষতি করতে পারে।

প্লেট পর্যবেক্ষণ করুন: ব্যাটারির ভেতরে থাকা সিসার প্লেটগুলো ইলেকট্রোলাইটে পুরোপুরি ডুবে আছে কি না, তা নিশ্চিত করুন। যদি প্লেট বাইরে বেরিয়ে থাকে, তবে মরিচা ধরে যে‌তে পা‌রে এবং ব্যাটারির শক্তি কমে যে‌তে পা‌রে।

লিকেজ বা ছিদ্র পরীক্ষা করুন: ব্যাটারিতে কোনো লিকেজ বা ছিদ্র আছে কি না, খেয়াল করুন। লিকেজ শুধু ব্যাটারির ক্ষতিই করে না, বিপজ্জনকও হতে পারে। তাই নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

৪. টার্মিনালগুলো পরিষ্কার ও দৃঢ় রাখুন

আইপিএসের টার্মিনাল বলতে মূলত আইপিএস ব্যাটারির স‌ঙ্গে সংযুক্ত দুটি প্রান্তকে বোঝায়। এই টার্মিনাল ঢিলা হলে বা ময়লা জমলে বিদ্যুতের অপচয় হয় এবং এতে ব্যাটারির আয়ু কমে যেতে পারে। তাই সংযোগগুলো পরিষ্কার এবং নিরাপদ রাখা খুবই জরুরি।

করোশন বা মরিচা পরিষ্কার করুন: ব্যাটারির সংযোগস্থলে যদি মরিচা ধরে যায়, তাহলে তা বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ করে ব্যাটারির ক্ষতি করে। বেকিং সোডা এবং পানির মিশ্রণ দিয়ে টার্মিনালগুলো হালকাভাবে পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার করার পর যেন মরিচা না ধরে, তার জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি বা টার্মিনাল প্রটেক্টর লাগানো উচিত।

সংযোগগুলো শক্ত করুন: সংযোগগুলো খুব ঢিলা থাকলে স্পার্কিং বা অনিয়মিত চার্জিং হতে পারে, এতে ব্যাটারির ক্ষতি হতে পারে। সংযোগগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং শক্ত করে দিন।

ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করুন: তার এবং সংযোগে ছিদ্র, ক্ষয় বা কোনো ক্ষতি আছে কি না, খেয়াল করুন। বিদ্যুৎ-বিভ্রাট এড়াতে সেসব দ্রুত বদলে ফেলুন।

৫. সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করুন

সংরক্ষণ ও ব্যবহারের পদ্ধতি ব্যাটারির মেয়াদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই স‌ঠিক উপা‌য়ে ব্যাটারি ব্যবহার কর‌তে হ‌বে। অযত্ন ও ভুল ব্যবহা‌রের কারণে ব্যাটারি দ্রুত অকেজো হ‌য়ে যে‌তে পা‌রে। নিয়মিত পরীক্ষা, সঠিক চার্জিং ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করলে ব্যাটারি দীর্ঘ সময় কার্যকর থাকে।

ব্যটারির ওপর কিছু রাখবেন না: অনেক সময় ব্যাটারির ওপর বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা হয়। এতে ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। ফ‌লে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই ব্যাটারির ওপর কিছু রাখবেন না।

দীর্ঘ সময় ব্যবহার না করলেও যত্নে রাখুন: অনেক সময় বাড়ির বাইরে গেলে আইপিএস ব্যবহার করা হয় না। তখন ব্যাটারি পুরো চার্জ দিয়ে সং‌যোগ বি‌চ্ছিন্ন করে ঠান্ডা ও শুকনো স্থানে রেখে দিন, এতে ব্যাটারি নষ্ট হবে না।

তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন: সাধারণত ২০-২৫ ডি‌গ্রি সেল‌সিয়াস তাপমাত্রায় ব্যাটারি ভালো কাজ করে। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা তাপমাত্রা ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং আয়ু হ্রাস করে।

ঘন ঘন চালু-বন্ধ করবেন না: ঘন ঘন চালু-বন্ধ করলে ব্যাটারির ওপর চাপ পড়ে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাটারিটি ব্যবহার করুন।

সব‌শে‌ষে

আইপিএস ব্যাটারির যত্ন নেওয়া কঠিন নয়। শুধু সঠিকভাবে ইনস্টল করা, চার্জ-ডিসচার্জের খেয়াল রাখা, ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা, টার্মিনাল পরিষ্কার রাখা এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করলেই ব্যাটারি বহু বছর ভালো থাকবে। আর একটু যত্ন নিলে খরচসাধ্য পরিবর্তনের ঝামেলা এড়ানো যাবে।

সূত্র: পাওয়ারটর্ন ব্যাটা‌রি

আরও পড়ুন৮ বছর আগে যেমন ছিল সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র, দেখুন ২০টি ছবি২ ঘণ্টা আগে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ন ন শ চ ত কর ট র র ওপর র ব যবহ র পর ষ ক র কর ন স

এছাড়াও পড়ুন:

থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%

এশিয়াসহ বিশ্বের চালের বাজারে নিম্নমুখী প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এশিয়ায় চালের অন্যতম বৃহৎ সরবরাহকারী থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। মূলত বাজারে চালের সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

থাইল্যান্ডসহ চালের অন্যান্য বড় উৎপাদনকারী দেশ ভারত ও মিয়ানমারে উৎপাদন বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববাজারেও চালের দাম কমছে। বিশ্ব খাদ্য সংস্থার খাদ্যসূচক অনুযায়ী, চলতি বছর চালের দাম কমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। এমনকি বিশ্ববাজার চালের দাম আগস্ট মাসে আট বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে আসে। খবর দ্য নেশনের

থাইল্যান্ডে চালের দামের এই নিম্নমুখী প্রবণতা একদম নতুন কিছু নয়, বেশ কয়েক মাস ধরেই এ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষিবিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, দীর্ঘ সময় ধরে চালের দাম কম থাকায় দেশটির কৃষকেরা ধানের আবাদ কমিয়ে দিতে পারেন।

থাইল্যান্ডে গত বৃহস্পতিবার ৫ শতাংশ খুদযুক্ত চালের দাম দাঁড়ায় টনপ্রতি ৩৩৫ ডলার। আগের সপ্তাহে যা ছিল ৩৩৮ ডলার। থাইল্যান্ডের কৃষি খাত–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গত ১৪ বছরে থাই সরকারের জনতুষ্টিমূলক নীতির কারণে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। সরকার কৃষকদের সন্তুষ্ট করতে বিভিন্ন ধরনের নিশ্চয়তা দিয়েছে। এসব কর্মসূচিতে প্রায় ৪০ বিালিয়ন বা ৪ হাজার কোটি ডলার ব্যয় হলেও একধরনের নীতিগত ফাঁদ তৈরি হয়েছে। ফলে কৃষকেরা প্রযুক্তি উন্নয়ন, দক্ষতা বাড়ানো কিংবা বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার সঙ্গে খাপ খাওয়ানো থেকে নিরুৎসাহিত হয়েছেন।

সেই সঙ্গে থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীরা জানান, বর্ষা মৌসুমের শেষ দিকে বাজারে নতুন চালের সরবরাহ এসেছে। এটাও দাম কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। অন্যদিকে ভারত ও মিয়ানমারের মতো প্রতিযোগী দেশগুলো চালের গুণগত মানের উন্নতি করেছে। আধুনিকতা এনেছে উৎপাদনব্যবস্থায়। ফলে তারা কম খরচে ভালো মানের চাল রপ্তানি করতে পারছে। কিন্তু থাইল্যান্ড এখনো ভর্তুকিনির্ভর ব্যবস্থায় আটকে আছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির কৃষকেরা ক্ষতির মুখে পড়ছেন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

এফএওর সূচক কমেছে

প্রতি মাসেই খাদ্যমূল্যসূচক করে থাকে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও)। তাতে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর বিশ্ববাজারে চালের দাম কেমেছে ১৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। গত অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক নেমে এসেছে ৯৮ দশমিক ৪–এ। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে তা ছিল ১১৩ দশমিক ৬। সেই সঙ্গে ২০২৪ সালের অক্টোবর মাসে চালের মূল্যসূচক ছিল ১২৫ দশমিক ৭। সেই হিসাবে এক বছরে চালের দাম কমেছে ২১ দশমিক ৭ শতাংশ।

চালের দামের এই পতন শুরু হয় ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ চাল রপ্তানিকারক দেশ ভারত ধাপে ধাপে রপ্তানি–নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে শুরু করে তখন। এ ঘটনা চালের বাজারে বড় প্রভাব ফেলে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সব ধরনের চালের মূল্যসূচক ১৩ শতাংশ কমেছে। খবর ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসের

অথচ ২০২৪ সালের শুরুতে এর উল্টো চিত্র দেখা গেছে। তখন ভারত একের পর এক রপ্তানি সীমাবদ্ধতা জারি করলে ২০০৮ সালের পর চালের দাম সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। বিশ্বজুড়ে ভোক্তাদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। মানুষের মধ্যে মজুতের প্রবণতা তৈরি হয়। অন্যান্য উৎপাদক দেশেও সুরক্ষাবাদী পদক্ষেপ নেওয়া হয়। এর পর থেকে চালের দাম কমতে শুরু করে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহের দাবিতে আশুগঞ্জ সার কারখানায় সমাবেশ 
  • সরবরাহ বাড়ছে শীতের আগাম ফুলকপি ও বাঁধাকপির, কমছে দাম
  • গ্রিস থেকে গ্যাস আমদানিতে সম্মত ইউক্রেন: জেলেনস্কি
  • থাইল্যান্ডে চালের দাম ১৫ বছরে সর্বনিম্ন, বিশ্ববাজারে এ বছর কমেছে ১৪%
  • ইউক্রেনের হামলা: নভোরো-সিয়েস্ক বন্দরের তেল রপ্তানি বন্ধ করল রাশিয়া
  • চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারকে কঠোর হতে হবে
  • জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি মোকাবিলার বরাদ্দ অর্থের বেশিরভাগ পাচ্ছে উষ্ণায়নে দায়ী দেশগুলো