আইপিএস ব্যাটারি দীর্ঘদিন ভালো রাখার ৫টি কার্যকর উপায়
Published: 14th, August 2025 GMT
১. সঠিকভাবে ইনস্টল ও বায়ু চলাচল নিশ্চিত করুন
আইপিএস ব্যাটারি কোথায় বসাতে হবে, এটা অধিকাংশ মানুষ ভুল করেন। প্রথম কাজ হলো সঠিক জায়গায় ব্যাটারি স্থাপন করা। ভুলভাবে বসালে এটি বিদ্যুৎ হারাতে পারে, অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে এবং এমনকি ক্ষতিগ্রস্তও হতে পারে।
উপযুক্ত জায়গা বেছে নিন: আইপিএস ব্যাটারি রাখুন পরিষ্কার, শুকনো এবং প্রচুর বাতাস চলাচল করে, এমন জায়গায়। পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল না থাকলে তাপ জমে ধীরে ধীরে এর কার্যক্ষমতা কমে যেতে পারে।
সূর্যের আলো ও আর্দ্রতা এড়িয়ে চলুন: আইপিএস ব্যাটারির বাইরের আবরণ এবং ভেতরের যন্ত্রাংশ সূর্যের আলো বা অতিরিক্ত আর্দ্রতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাই এটি সব সময় শীতল ও শুকনো জায়গায় রাখার চেষ্টা করুন।
স্থির জায়গায় বসান: আইপিএস ব্যাটারি বসানোর করার সময় খেয়াল রাখবেন, তা যেন নড়াচড়া না করে। নড়াচড়া করলে সংযোগ ঢিলা হয়ে যেতে পারে এবং বিদ্যুৎ সরবরাহে তৈরি হতে পারে সমস্যা।
২.সঠিকভাবে চার্জ ও ডিসচার্জ করুন
আইপিএস ব্যাটারি দীর্ঘদিন কার্যকর রাখতে সঠিক চার্জ-ডিসচার্জ চক্র মেনে চলা জরুরি। ভুলভাবে চার্জ-ডিসচার্জ করলে ব্যাটারির কর্মক্ষমতা দ্রুত কমে যায়, আয়ুও কমে। তাই সচেতন ব্যবহারই নিশ্চিত করবে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ ও ঝামেলামুক্ত সেবা।
অতিরিক্ত চার্জ দেবেন না: আইপিএসের ব্যাটারি নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত চার্জ দেওয়া। তাই এটি করতে যাবেন না। যদিও আধুনিক আইপিএসগুলোতে অতিরিক্ত চার্জ প্রতিরোধক ব্যবস্থা থাকে, তবুও নিয়মিত পরীক্ষা করুন। আইপিএসের ব্যাটারি কেনার সময় ভালো মানের ব্যাটারি বেছে নিন, তাহলে ভালো ব্যাকআপ পাবেন, ভোগান্তি কম হবে এবং দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত হবে।
পুরোপুরি ডিসচার্জ করবেন না: বারবার পুরোপুরি ডিসচার্জ হলে ব্যাটারির আয়ু কমে যায়। চার্জ লেভেল ২০-৩০ শতাংশের ওপরে রাখা সবচেয়ে ভালো এবং ব্যাটারি সম্পূর্ণ শেষ হওয়ার আগে চার্জ দেওয়ার চেষ্টা করুন।
সঠিক চার্জার ব্যবহার করুন: সব সময় প্রস্তুতকারকের পরামর্শ অনুযায়ী চার্জার ব্যবহার করুন। অসামঞ্জস্যপূর্ণ চার্জার ব্যবহারে ওভার ভোল্টেজ বা আন্ডার ভোল্টেজ হতে পারে, যা ব্যাটারির ক্ষতি করতে পারে।
নিয়মিত ইকুয়ালাইজেশন চার্জিং করুন: ইকুয়ালাইজেশন চার্জিং ব্যাটারির সেলগুলোর চার্জের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং সিসা সালফেট জমা হওয়া (সালফেশন) কমাতে সাহায্য করে। ইকুয়ালাইজেশন চার্জিং কত দিন পরপর করতে হবে, তা আইপিএস ব্যাটারির সঙ্গে দেওয়া ম্যানুয়াল বা নির্দেশিকা দেখে নিশ্চিত হয়ে নিন।
আরও পড়ুনড্রাগন ফল কীভাবে ও কতটা খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার পাবেন৮ ঘণ্টা আগে৩. নিয়মিত ইলেকট্রোলাইট লেভেল পরীক্ষা করুনলেড-অ্যাসিড আইপিএস ব্যাটারিতে ইলেকট্রোলাইটের স্তর সঠিক মাত্রায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকট্রোলাইট রাসায়নিক প্রক্রিয়াগুলোতে সাহায্য করে, যা শক্তি সঞ্চয় ও সরবরাহ করে।
ডিস্টিল্ড ওয়াটার ব্যবহার করুন: ইলেকট্রোলাইটের স্তর নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনমতো ডিস্টিল্ড ওয়াটার যোগ করুন। ট্যাপ বা সাধারণ পানি ব্যবহার করবেন না; কারণ, এতে লবণ ও ময়লা থাকে, যা ব্যাটারির ক্ষতি করতে পারে।
প্লেট পর্যবেক্ষণ করুন: ব্যাটারির ভেতরে থাকা সিসার প্লেটগুলো ইলেকট্রোলাইটে পুরোপুরি ডুবে আছে কি না, তা নিশ্চিত করুন। যদি প্লেট বাইরে বেরিয়ে থাকে, তবে মরিচা ধরে যেতে পারে এবং ব্যাটারির শক্তি কমে যেতে পারে।
লিকেজ বা ছিদ্র পরীক্ষা করুন: ব্যাটারিতে কোনো লিকেজ বা ছিদ্র আছে কি না, খেয়াল করুন। লিকেজ শুধু ব্যাটারির ক্ষতিই করে না, বিপজ্জনকও হতে পারে। তাই নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
৪. টার্মিনালগুলো পরিষ্কার ও দৃঢ় রাখুনআইপিএসের টার্মিনাল বলতে মূলত আইপিএস ব্যাটারির সঙ্গে সংযুক্ত দুটি প্রান্তকে বোঝায়। এই টার্মিনাল ঢিলা হলে বা ময়লা জমলে বিদ্যুতের অপচয় হয় এবং এতে ব্যাটারির আয়ু কমে যেতে পারে। তাই সংযোগগুলো পরিষ্কার এবং নিরাপদ রাখা খুবই জরুরি।
করোশন বা মরিচা পরিষ্কার করুন: ব্যাটারির সংযোগস্থলে যদি মরিচা ধরে যায়, তাহলে তা বিদ্যুৎপ্রবাহ বন্ধ করে ব্যাটারির ক্ষতি করে। বেকিং সোডা এবং পানির মিশ্রণ দিয়ে টার্মিনালগুলো হালকাভাবে পরিষ্কার করুন। পরিষ্কার করার পর যেন মরিচা না ধরে, তার জন্য পেট্রোলিয়াম জেলি বা টার্মিনাল প্রটেক্টর লাগানো উচিত।
সংযোগগুলো শক্ত করুন: সংযোগগুলো খুব ঢিলা থাকলে স্পার্কিং বা অনিয়মিত চার্জিং হতে পারে, এতে ব্যাটারির ক্ষতি হতে পারে। সংযোগগুলো নিয়মিত পরীক্ষা করুন এবং শক্ত করে দিন।
ক্ষয়ক্ষতি পরীক্ষা করুন: তার এবং সংযোগে ছিদ্র, ক্ষয় বা কোনো ক্ষতি আছে কি না, খেয়াল করুন। বিদ্যুৎ-বিভ্রাট এড়াতে সেসব দ্রুত বদলে ফেলুন।
৫. সঠিকভাবে সংরক্ষণ ও ব্যবহার করুনসংরক্ষণ ও ব্যবহারের পদ্ধতি ব্যাটারির মেয়াদের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। তাই সঠিক উপায়ে ব্যাটারি ব্যবহার করতে হবে। অযত্ন ও ভুল ব্যবহারের কারণে ব্যাটারি দ্রুত অকেজো হয়ে যেতে পারে। নিয়মিত পরীক্ষা, সঠিক চার্জিং ও তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করলে ব্যাটারি দীর্ঘ সময় কার্যকর থাকে।
ব্যটারির ওপর কিছু রাখবেন না: অনেক সময় ব্যাটারির ওপর বিভিন্ন সরঞ্জাম রাখা হয়। এতে ব্যাটারি অতিরিক্ত গরম হয়ে যায়। ফলে বিভিন্ন সমস্যা দেখা দেয়। তাই ব্যাটারির ওপর কিছু রাখবেন না।
দীর্ঘ সময় ব্যবহার না করলেও যত্নে রাখুন: অনেক সময় বাড়ির বাইরে গেলে আইপিএস ব্যবহার করা হয় না। তখন ব্যাটারি পুরো চার্জ দিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে ঠান্ডা ও শুকনো স্থানে রেখে দিন, এতে ব্যাটারি নষ্ট হবে না।
তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করুন: সাধারণত ২০-২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ব্যাটারি ভালো কাজ করে। অতিরিক্ত গরম বা ঠান্ডা তাপমাত্রা ব্যাটারির কর্মক্ষমতা কমিয়ে দেয় এবং আয়ু হ্রাস করে।
ঘন ঘন চালু-বন্ধ করবেন না: ঘন ঘন চালু-বন্ধ করলে ব্যাটারির ওপর চাপ পড়ে। তাই প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাটারিটি ব্যবহার করুন।
সবশেষেআইপিএস ব্যাটারির যত্ন নেওয়া কঠিন নয়। শুধু সঠিকভাবে ইনস্টল করা, চার্জ-ডিসচার্জের খেয়াল রাখা, ইলেকট্রোলাইট পরীক্ষা, টার্মিনাল পরিষ্কার রাখা এবং সঠিকভাবে ব্যবহার করলেই ব্যাটারি বহু বছর ভালো থাকবে। আর একটু যত্ন নিলে খরচসাধ্য পরিবর্তনের ঝামেলা এড়ানো যাবে।
সূত্র: পাওয়ারটর্ন ব্যাটারি
আরও পড়ুন৮ বছর আগে যেমন ছিল সাদাপাথর পর্যটনকেন্দ্র, দেখুন ২০টি ছবি২ ঘণ্টা আগেউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ন ন শ চ ত কর ট র র ওপর র ব যবহ র পর ষ ক র কর ন স
এছাড়াও পড়ুন:
চীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চার গুণ সয়াবিন কেনার আহ্বান ট্রাম্পের
চীনকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা বৃদ্ধির আহ্বান জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর আহ্বান, চীন যেন যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা চার গুণ বৃদ্ধি করে।
দেশ দুটির মধ্যকার শুল্কযুদ্ধের বিরতি শেষ হওয়ার আগে এই আহ্বান জানান ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই আহ্বানে শিকাগোর বাজারে সয়াবিনের দাম বেড়েছে, যদিও বিশ্লেষকেরা এই আহ্বানের বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান।
গতকাল রোববার গভীর রাতে ট্রাম্প নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লেখেন, চীন সয়াবিনের ঘাটতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। তাঁর আশা, এ বাস্তবতায় চীন দ্রুতই যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা চার গুণ করবে। চীন সেটা করতে চাইলে দ্রুততার সঙ্গে সেবা দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ট্রাম্প। এই কথা বলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংকে আগাম ধন্যবাদও জানিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের পোস্টের পর আজ সোমবার শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডে সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া সয়াবিনের দাম বুসেলপ্রতি ১০ দশমিক ১১ ডলার বা ২ দশমিক ৩৮ শতাংশ বেড়েছে। এর আগে সেই সয়াবিনের দাম স্থির ছিল।
বিশ্ববাজার থেকে সবচেয়ে বেশি সয়াবিন কেনে চীন। গত বছর চীন প্রায় ১০৫ মিলিয়ন বা ১০ কোটি ৫০ লাখ মেট্রিক টন সয়াবিন আমদানি করেছে। এর প্রায় এক–চতুর্থাংশ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র থেকে, বাকিটা প্রধানত ব্রাজিল থেকে। চীনের সয়াবিন কেনা চার গুণ বাড়লে তার বেশির ভাগই যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করতে হবে।
বেইজিংভিত্তিক এজিরাডার কনসাল্টিংয়ের প্রতিষ্ঠাতা জনি শিয়াং বলেন, চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে এত বেশি সয়াবিন কিনবে, এমন সম্ভাবনা খুবই কম।
বেইজিং ও ওয়াশিংটনের মধ্যে শুল্কযুদ্ধ বিরতির সময়সীমা শেষ হচ্ছে ১২ আগস্ট। যদিও ট্রাম্প প্রশাসনের ইঙ্গিত, এই সময়সীমা বাড়ানো হতে পারে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র থেকে সয়াবিন কেনা বৃদ্ধি করা এই সময়সীমা বৃদ্ধির শর্ত কি না, তা পরিষ্কার নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্পের মূল লক্ষ্য হলো, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য–ঘাটতি হ্রাস।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে চীনের সয়াবিন আমদানি বাড়তে পারে, এই সম্ভাবনায় চীনের সয়ামিল ফিউচারের (আগাম লেনদেন) দাম শূন্য দশমিক ৬৫ শতাংশ কমে প্রতি মেট্রিক টন ৩ হাজার ৬৮ ইউয়ানে নেমেছে। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অবশ্য রয়টার্সের মন্তব্যের অনুরোধে এখনো সাড়া দেয়নি।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে স্বাক্ষরিত প্রথম পর্যায়ের বাণিজ্যচুক্তিতে চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে কৃষিপণ্য, বিশেষ করে সয়াবিন কেনা বৃদ্ধির অঙ্গীকার করেছিল। তবে বেইজিং সেই লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেনি।
শুধু তা–ই নয়, চলতি বছর ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের বাণিজ্য উত্তেজনার মধ্যেও গত বছর চতুর্থ ত্রৈমাসিকে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সয়াবিন কেনেনি চীন। সামনেই যুক্তরাষ্ট্রে ফসল তোলার মৌসুম। ফলে তাদের উদ্বেগ বাড়ছে।
এদিকে বেইজিংয়ের কথাবার্তায় যথেষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া গেছে, তারা এ বছর যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন না–ও কিনতে পারে। আর্জেন্টিনা থেকে সয়ামিলের পরীক্ষামূলক চালান কিনেছে দেশটি। সে কারণে এমনটা ধারণা করা হচ্ছে। ট্রিভিয়াম চায়নার কৃষি বিশ্লেষক ইভেন রজার্স পে এ কথা বলেন।
রয়টার্সের আগের এক সংবাদে বলা হয়েছে, চীনের পশুখাদ্য প্রস্তুতকারকেরা আর্জেন্টিনার তিন কার্গো সয়ামিল চালান কিনেছে। মূলত দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সস্তা দামে সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই ক্রয়। সেই সঙ্গে বছরের চতুর্থ প্রান্তিকে সয়াবিনের সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা আছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সয়াবিন শিল্প বিকল্প ক্রেতা খুঁজছে, কিন্তু সে ক্ষেত্রেও কোনো দেশ চীনের সমকক্ষ নয়। গত বছর চীন যুক্তরাষ্ট্র থেকে ২২ দশমিক ১৩ মিলিয়ন বা ২ কোটি ২১ লাখ টন ও ব্রাজিল থেকে ৭৪ দশমিক ৬৫ মিলিয়ন বা ৭ কোটি ৪৬ কোটি টন সয়াবিন আমদানি করেছে।