নির্বাচনে ভোট চুরি করতে দেওয়া হবে না: ইসলামী আন্দোলন মহাসচিব
Published: 16th, August 2025 GMT
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা ইউনুস আহমদ। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনকে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে আমাদের যা করতে হয়, তা–ই করব। কাউকেই ভোট চুরি বা ডাকাতি করতে দেওয়া হবে না। কেউ অবৈধ ভোট দিতে চাইলে তাঁকে প্রতিহত করা হবে। কেউ মাস্তানি করতে চাইলে তাঁকে শায়েস্তা করা হবে।’
আজ শনিবার এক প্রশিক্ষণ কর্মশালার উদ্ভোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মহাসচিব এসব কথা বলেন। রাজধানীর পুরানা পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।
কর্মশালায় ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব বলেন, সংস্কার নিয়ে কিছু রাজনৈতিক দলের মনোভাব, পিআর পদ্ধতিতে একমত না হওয়া এবং সহিংসতার পুরোনো চিত্র আশাহত করেছে। তবে ইসলামী আন্দোলন বসে থাকবে না। মানুষের ভোটের অধিকার নিশ্চিতের জন্য দেশের সব শাখার সাংগঠনিক ও প্রশিক্ষণ বিভাগকে দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রস্তুতি নিতে হবে।
দলের যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বিএনপি মুখে গণতন্ত্রের কথা বলে, কিন্তু তারা দেশের একটি শাখাতেও নিয়মতান্ত্রিক কমিটি করতে পারেনি। কমিটি দিতে গেলে সহিংসতা শুরু হবে, যা বিএনপির নেতৃত্ব সামাল দিতে পারবে না। এই অনিয়ন্ত্রিত ও সহিংসতাপ্রবণ দলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচন করতে হবে। সে জন্য সাংগঠনিক মজবুতি, দাওয়াতি কার্যক্রম ও নির্বাচনী কৌশল আয়ত্তে আরও বেশি মনোযোগী হতে হবে।
ইসলামী আন্দোলনের সাংগঠনিক বিভাগভিত্তিক ধারাবাহিক কর্মশালার অংশ হিসেবে আজ সারা দেশের জেলা ও মহানগর শাখার সাংগঠনিক ও প্রশিক্ষণ বিভাগের কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। দিনব্যাপী এই কর্মশালায় সাংগঠনিক প্রতিবেদন উপস্থাপন ও পর্যালোচনা করে মজবুতি অর্জনের পথে সম্ভাবনা, সমস্যা ও কৌশল নিয়ে আলোচনা হয়।
কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন দলের সহকারী মহাসচিব আহমদ আবদুল কাউয়ুম, ফরিদপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, খুলনা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তফা কামাল, ময়মনসিংহ বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম রুহুল আমীন, রংপুর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এম হাসিবুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক লোকমান হোসেন জাফরী, সহপ্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক কে এম শরীয়াতুল্লাহ প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সিলেট-৪ আসনে বিএনপির দুই মনোনয়নপ্রত্যাশীর পাল্টাপাল্টি ‘শোডাউন’
সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরে আট ঘণ্টার ব্যবধানে সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট–কোম্পানীগঞ্জ–জৈন্তাপুর) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী দুই নেতার সমর্থনে কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে দুই নেতার এসব কর্মসূচিকে স্থানীয় লোকজন ‘পাল্টাপাল্টি শোডাউন’ হিসেবে মনে করছেন।
আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট সিটি করপোরেশনের দুবারের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী মতবিনিময় সভা করেন। এর প্রতিক্রিয়ায় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে উপজেলা সদরে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের দুবারের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল হাকিম চৌধুরীর সমর্থকেরা।
স্থানীয় বিএনপি সূত্রে জানা যায়, সিলেট-১ আসনে মনোনয়নবঞ্চিত হন আরিফুল হক চৌধুরী। এ অবস্থায় তাঁকে দলের উচ্চপর্যায় থেকে ঢাকায় জরুরি তলব করা হয়। পরে ৫ নভেম্বর দলের চেয়ারপারসনের সঙ্গে তাঁর বৈঠক হয়। বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, দলের চেয়ারপারসন তাঁকে সিলেট-৪ আসনে নির্বাচন করার নির্দেশ দিয়েছেন। শিগগির এ-সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তি বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হবে।
আরিফুল হকের এমন ঘোষণার পর ‘স্থানীয় প্রার্থী’ হিসেবে আসনটিতে জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবিতে টানা কর্মসূচি পালন করছেন তাঁর কর্মী–সমর্থকেরা। একই দাবিতে সভা–সমাবেশ করছেন জেলা বিএনপির আরেক উপদেষ্টা হেলাল উদ্দিন আহমদের অনুসারীরাও।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, তাঁতী দল, শ্রমিক দলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও আলোচনা সভা হয়। বেলা একটা পর্যন্ত চলা এ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন আরিফুল হক চৌধুরী। সভায় তিনি বলেন, ‘আমি বিএনপির সঙ্গে প্রায় ৪৭ বছর ধরে আছি। কোনো দিন বিএনপির সিদ্ধান্তের বাইরে যাইনি। দলের সিদ্ধান্তে আমি আপনাদের খেদমতে এসেছি। কারণ, বিগত ১৭ বছর যে উন্নয়ন হওয়ার কথা, এর ছিটেফোঁটাও গোয়াইনঘাটে লাগেনি। খনিজ সম্পদে ভরপুর এ এলাকার মানুষ উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান থেকে বঞ্চিত। নির্বাচিত হলে এক বছরের মধ্যে এই এলাকার চিত্র বদলে যাবে।’
সভা শেষে উপজেলা সদরে আরিফুল হকের নেতৃত্বে মিছিল বের করা হয়। পরে তিনি গোয়াইনঘাট ও জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে গণসংযোগ করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহবুব রব চৌধুরী ও ইকবাল আহমদ, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি সাদিকুর রহমান, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমদ, জেলা বিএনপির উপদেষ্টা আবদুস শুকুর ও কাজী মুজিবুর রহমান, জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি সুরমান আলী, মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুস সামাদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে গোয়াইনঘাট উপজেলা সদরের শহীদ মিনারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে স্থানীয় বিএনপির একাংশ। মিছিল থেকে সিলেট-৪ আসনে আবদুল হাকিম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়ার দাবি জানানো হয়। মিছিলটি উপজেলা সদরের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় তাঁরা ‘লোকাল না বাইরা, লোকাল লোকাল’, ‘হাকিম ভাই হাকিম ভাই, হাকিম ছাড়া উপায় নাই’, ‘মানি না মানব না, হাকিম ছাড়া মানব না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।
যোগাযোগ করলে আবদুল হাকিম চৌধুরী বলেন, ‘সিলেট-৪ আসনে জামায়াত শক্তিশালী প্রার্থী দিয়েছে। তিনি জৈন্তাপুর উপজেলার বাসিন্দা। তাঁর বিপরীতে জয় পেতে হলে বিএনপিকে একজন “স্থানীয় ও শক্তিশালী” প্রার্থী দেওয়া উচিত। যেহেতু আমি গোয়াইনঘাট উপজেলার বাসিন্দা, তাই স্থানীয়রা আমাকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার দাবিতে সভা, সমাবেশ, মিছিল করছেন। তবে দল যে সিদ্ধান্ত দেবে, সেটাই চূড়ান্ত।’
স্থানীয় বিএনপির সূত্রে জানা গেছে, আরিফুল, হাকিম ও হেলাল ছাড়াও সিলেট-৪ আসনে বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নাহার সেলিম, মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক সহস্বেচ্ছাসেবক-বিষয়ক সম্পাদক সামসুজ্জামান মনোনয়নপ্রত্যাশী। এখানে জামায়াতের প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে কাজ করছেন দলটির জেলা কমিটির সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন।