ঢাকায় রাতভর বৃষ্টি, সকালেই সাঁঝের আবহ
Published: 22nd, September 2025 GMT
ঢাকায় রাতভর বৃষ্টি হয়েছে। কখনও গুঁড়ি গুঁড়ি, কখনও মুষলধারে। ছিল বজ্রপাত। আজ ভোরের পরও আকাশ ছিল মেঘলা, সূর্যের দেখা মিলেনি। আকাশ কালো মেঘে ঢেকে থাকায় সকালেই তৈরি হয়েছে সাঁঝের আবহ।
রবিবার (২২ সেপ্টেম্বর) মুষলধারে বৃষ্টির কারণে অফিস ও স্কুলগামী মানুষের ভোগান্তি পৌঁছায় চরমে। শহরের বিভিন্ন সড়কে সৃষ্টি হয় জলজট, কোথাও হাঁটুপানি জমে যায়, আবার কোথাও সৃষ্টি হয়েছে যানজট।
ঢাকার মিরপুর, কল্যাণপুর, শ্যামলী, মালিবাগ, সায়েদাবাদ, বাড্ডা ও মগবাজার, বিমানবন্দর সড়কসহ বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার খবর পাওয়া গেছে। ফলে রিকশা, সিএনজি ও বাসে অতিরিক্ত ভাড়া গুণতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। অফিসগামী অনেকেই বাধ্য হয়ে ভিজে হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছেছেন।
মোহাম্মদপুরের কর্মজীবী নাজমুল হক বলেন, “বৃষ্টি শুরু হওয়ার পর বাস পাওয়া মুশকিল হয়ে যায়। ভাড়া দ্বিগুণ, আবার রাস্তায় পানি জমে হাঁটাও দায় হয়ে পড়ে।”
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, সকালের এই প্রবল বর্ষণ মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে হয়েছে। আজ দিনভর রাজধানীসহ দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে।
বৃষ্টিতে নগরীর তাপমাত্রা কিছুটা কমলেও ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সাধারণ মানুষকে। একদিকে যানজট, অন্যদিকে জলজট—সব মিলিয়ে রাজধানীবাসীর দিনের শুরুটা হয়ে ওঠেছে দুর্ভোগের।
মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা রুবিনা আক্তার বলেন, “সকাল ৮টা বাজলেও মনে হচ্ছিল এখনো ভোর হয়নি। জানালার বাইরে তাকিয়ে ভেবেছি—এটা কি সকাল, নাকি সাঁঝ?”
আবহাওয়ার সর্বশেষ পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, মৌসুমী বায়ুর অক্ষের বর্ধিতাংশ উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ হয়ে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। এর একটি অংশ বিস্তৃত রয়েছে উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত। বর্তমানে মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় আছে। আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ঢাকা, খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং রংপুর, রাজশাহী ও ময়মনসিংহের কিছু এলাকায় দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। দিনের তাপমাত্রা সামান্য কমবে।
ঢাকা/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে চাইল্ড ল্যাবরেটরি স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার ও সনদ বিতরণ
নারায়ণগঞ্জে চাইল্ড ল্যাবরেটরি স্কুলের বার্ষিক পুরস্কার ও সনদ বিতরণ অনুষ্ঠান উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানটি ছিল শিক্ষার্থীদের সাফল্য উদযাপন ও তাদের অনুপ্রেরণা জাগানোর এক উজ্জ্বল আয়োজন।
বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দেওয়া হয় বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অর্জিত পুরস্কার ও সনদপত্র। শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও কর্মচারীদের মাঝে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩১৪ টি পুরস্কার দেয়া হয়।
অনুষ্ঠানের সূচনাতেই শিক্ষার্থীদের পরিবেশনায় নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি ও নাটিকা দর্শকদের মুগ্ধ করে তোলে। ক্ষুদে শিল্পীদের প্রাণবন্ত পরিবেশনায় মিলনায়তনে তৈরি হয় এক মনোরম আবহ। কখনও দেশের গান, কখনও নৃত্য, আবার কখনও আবৃত্তি—প্রতিটি পর্বেই ছিল শিক্ষার্থীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা। অভিভাবকরাও মুগ্ধ হয়ে হাততালি আর উৎসাহে ভরিয়ে দেন প্রিয় সন্তানদের।
পুরো অনুষ্ঠানজুড়ে ছিল অভিভাবক, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ। কেউ ছবি তুলেছেন, কেউ সন্তানকে সাজাতে সাহায্য করেছেন, কেউবা নীরবে গর্বভরে দেখেছেন মঞ্চে তাদের প্রিয় মুখ। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন ১২২ জন শিক্ষার্থী এবং বিদ্যালয়ের সেরা শিক্ষক পুরষ্কার পান ৬ জন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের ভাইস প্রেসিডেন্ট বিল্লাল হোসেন রবিন।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনা উপভোগ করে তিনি বলেন, “শিশুদের এই আনন্দ, আত্মবিশ্বাস আর মঞ্চে নিজেকে প্রকাশের ক্ষমতাই প্রমাণ করে—তারা কতটা সম্ভাবনাময়। শিক্ষা শুধু বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ নয়; শিল্প-সংস্কৃতি শিশুর মানসিক বিকাশের অপরিহার্য অংশ।”
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, বাচ্চাকে অন্য কারো সঙ্গে তুলনা করবেন না। প্রত্যেক বাচ্চার নিজস্ব প্রতিভা ও দক্ষতা থাকে কেউ চমৎকার ছবি আঁকে, কেউ গান করে, কেউ নাচ বা কিছু তৈরি করতে পারে।
এজন্য প্রতিটি শিশুকে আলাদাভাবে বোঝা এবং উৎসাহ দেওয়াই গুরুত্বপূর্ণ। মা-বাবা বা শিক্ষকরা শুধুই গাইড বা পথপ্রদর্শক হিসেবে থাকবেন; চাপ বা শাস্তির মাধ্যমে নয়, ভালোবাসা ও সহানুভূতির মাধ্যমে শিশুদের এগোতে শেখাতে হবে।
প্রতিটি শিশুর আলাদা দক্ষতা আছে এবং তাদের সেই অনুযায়ী উৎসাহ ও নির্দেশনা দেওয়া উচিত, যাতে তারা স্বাভাবিকভাবে বড় হতে পারে এবং নিজের শক্তি ও সম্ভাবনা অনুযায়ী এগিয়ে যেতে পারে।
সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর শুরু হয় প্রতীক্ষিত পুরস্কার বিতরণ পর্ব। একে একে মঞ্চে উঠে আসে মেধাবী শিক্ষার্থীরা। বছরের সেরা ফলাফল, সহশিক্ষা কার্যক্রমে কৃতিত্ব ও সৃজনশীল প্রতিযোগিতায় সফল শিক্ষার্থীদের হাতে পুরস্কার ও সনদ তুলে দেন অতিথিরা। শিক্ষার্থীদের মুখে ঝলমল করছিল আনন্দের হাসি; অভিভাবকরা মোবাইল হাতে ধরে রাখছিলেন সন্তানের সাফল্যের মুহূর্তগুলো।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চাইল্ড ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান মোঃ সামসুজ্জামান। তিনি বলেন,“চাইল্ড ল্যাবরেটরি স্কুল শুধুমাত্র একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি আমাদের শিশুদের স্বপ্ন গড়ে তোলার এক কেন্দ্র। আমরা চাই প্রতিটি শিক্ষার্থী পড়াশোনার পাশাপাশি সৎ, দেশপ্রেমিক ও সংস্কৃতিমনা মানুষ হিসেবে বেড়ে উঠুক।”
বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা বিলকিস আক্তার বৈশাখী ও কাশফিয়া মেহজাবীন ইকরার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন পরিচালক ঐক্য পরিষদ (নারায়ণগঞ্জ জেলা) সভাপতি ও টাঙ্গাইল ক্যাডেট এন্ড একাডেমিক স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোঃ সাখাওয়াত হোসেন খাঁন, বাংলাদেশ কিন্ডারগার্টেন পরিচালক ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোঃ মজিবুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ কাউসার আহমেদ, রাজিয়া এ্যাপালেস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ্ব মোঃ গোলাম মোস্তফা খান, ক্যালিক্স প্রি-ক্যাডেট স্কুলের পরিচালক মতিনুল ইসলাম মতিন, এবং শাহিনুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক মোঃ আরিফ হোসেন ঢালী। সার্বিক ব্যবস্থাপনায় ছিলেন বিদ্যালয়ের ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান সোহান।