চরমোনাইকে ‘ভণ্ড’ বলায় ক্ষুব্ধ ইসলামী আন্দোলন, এ্যানিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার দাবি
Published: 23rd, September 2025 GMT
লক্ষ্মীপুরে চরমোনাই পীরের সমালোচনা করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির দেওয়া বক্তব্যে ক্ষুদ্ধ হয়েছে বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এ্যানিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানিয়ে সোমবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাতে বিবৃতি দিয়েছে দলটির লক্ষ্মীপুর জেলা শাখা।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক জহির উদ্দিন বিবৃতিটি দেন।
আরো পড়ুন:
বিএনপির উদার গণতান্ত্রিক দৃষ্টিভঙ্গি অর্থনৈতিক পরিবেশ অর্জনে সহায়ক
পাবনায় ঘাটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সংঘর্ষ-গোলাগুলি
আরো পড়ুন: জামায়াত জাতীয় বেঈমান, চরমোনাই পীর ভণ্ড: এ্যানি
গতকাল সোমবার দুপুরে লক্ষ্মীপুর জেলা আউটডোর স্টেডিয়াম মাঠে সদর পূর্ব বিএনপির সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার সময় এ্যানি বলেন, “চরমোনাই পীর জাতীয় বেইমান ও ভণ্ড। গত ১৭ বছর আমরা স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। তখন ইসলামী আন্দোলনের কাউকে খুঁজে পাইনি। ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে বৈধতা দেওয়ার জন্য এই ইসলামী আন্দোলন তথা হাতপাখা কাজ করেছে।’’
তিনি বলেন, “ইসলামী দলগুলো পিআর পদ্ধতির নামে আন্দোলন করে নির্বাচনী পরিস্থিতি ঘোলাটে করছে। তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যের বিকল্প নাই। আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ খাকতে হবে।”
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ লক্ষ্মীপুর জেলা শাখার বিবৃতিতে নেতারা বলেন, এ্যানির বক্তব্য মিথ্যাচার ও মানহানিকর। চরমোনাই পীর সম্পর্কে কটূক্তি করে তিনি ইসলামপন্থিদের অনুভূতিতে আঘাত করেছেন। বিএনপির উচিত এ্যানিকে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা।
দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়ে ইসলামী দলগুলোর সঙ্গে ঐক্য করেনি, বরং ইসলামী রাজনীতিকে বিভ্রান্ত করেছে। এখন আবার ‘ইসলামী জোট’ গঠনের নামে ইসলামী দলগুলোর কাঁধে ভর করে রাজনীতিতে সুবিধা নিতে চায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, চাঁদাবাজ, দালাল ও ষড়যন্ত্রকারীদের দলে জায়গা দিতে গিয়ে এখন বিএনপি নিজেরাই জনআস্থা হারাচ্ছে। ইসলাম প্রিয় জনতা এসব মিথ্যাচার আর মেনে নেবে না।
ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ লক ষ ম প র জ ল চরম ন ই প র ব এনপ র ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
দুই ছেলের লাশের অপেক্ষায় রোজ নদীর পাড়ে বসে থাকেন মা
ছুঁয়ে দেখা হয়নি দুই সন্তানের মরদেহ। সন্তানকে শেষবারের মতো ‘বাবা’ বলে ডাকার ভাগ্যও হয়নি। বাবা-মায়ের কাছে সন্তানের লাশ পৃথিবীর সবথেকে ভারী হয়। শেষ স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সেই ভারটুকুও বহন করতে না-পারার আক্ষেপ নিয়ে নিজের মৃত্যুর অপেক্ষায় দিন গুনছেন হনুফা বেগম।
হানুফা বেগমের বাড়ি বরগুনার মাঝের চড়ে। তিনি স্বামী পরিত্যক্তা বৃদ্ধা। দুই সন্তান হারিয়ে সাগরের গর্জনের থেকেও ভারী হয়ে উঠেছে তার দীর্ঘশ্বাস। তিনি জানেন না ছেলেরা আর কখনো ফিরবে কিনা। তবুও নিয়ম করে প্রতিদিন নদীর তীরে বসে থাকেন ছেলেদের ফেরার আশা নিয়ে। নিষ্পলক তাকিয়ে থাকেন শূন্যপানে।
২০১১ সালে বড় ছেলে ফোরকান গভীর সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হন। সাত বছর পর ২০১৮ সালে মেজো ছেলে বিল্লালও হয় একই দুর্ভাগ্যের শিকার। মাত্র ১৯ বছর বয়সেই হারিয়ে যান তিনি সাগরের নীল অতলে।
হনুফা বেগম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘একে একে দুই ছেলে সাগরে মাছ শিকারে গিয়ে ট্রলার ডুবে নিখোঁজ হয়েছে। এখনো প্রতিদিন ছেলেদের অপেক্ষায় সাগর পাড়ে বসে থাকি। মানুষ আমাকে ‘পাগল’ বলে, কিন্তু মায়ের মন তো মানে না। আমি জানি ওরা বেঁচে নেই। কিন্তু বিশ্বাস তো হয় না।’’
তিনি আঁচলে চোখ মুছে বলেন, ‘‘মাঝের চড়ের আবাসনে থাকি। এখানে সবাই গরিব। পেটের ক্ষুধা মেটাতে আবাসনের সেই গরিবদের ঘরে কাজ করি। তাদের টাকা দেওয়ার সামর্থ্য নাই, তাই কাজের বিনিময়ে খাবার দেয়।’’
হনুফা বেগমের প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা হয় এই প্রতিবেদকের। তারা জানান, যে মায়ের মুখে খাবার তুলে দিতে গিয়ে দুই ছেলে ট্রলার ডুবে মারা গেছে, এখন সেই মা ভাঙাচোরা আবাসনে থেকে অর্ধাহার-অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন।
প্রতিবেশী মিলন হাওলাদার বলেন, ‘‘হনুফা বেগম খুব মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। চারদিকে উন্নয়নের গল্প শুনি কিন্তু আমাদের জীবনের কোন উন্নয়ন নেই। এই চড়ে অন্তত ৩০ জেলে নিখোঁজ হয়েছেন। সবার পরিবারেই এমন অভাব।’’
২০১৮ সালে সাগরে নিখোঁজ হন খোকন, আলতাফসহ অনেকেই। আলতাফের স্ত্রী খাদিজা বলেন, ‘‘দুই সন্তান রেখে গেছেন স্বামী। ওদের লেখাপড়া তো দূরের কথা, আমরা তিন বেলা খাবার খেতেও পারি না।’’
চড়ের বাসিন্দা ও নিখোঁজ জেলে খোকনের চাচা জলিল সিকদার বলেন, ‘‘অনেকে পরে অর্ধগলিত লাশ পেলেও, আমরা পাইনি। ফলে তাদের জানাজা-দাফনেরও সুযোগ পাইনি।’’
চারদিকে বিষখালী নদীবেষ্টিত মাঝের চড়ের জেলেরা বলছেন, এই চড়ের মানুষের জীবনের কোন মূল্য নেই। তারা সাগরে যান অথচ জেলে কার্ড নেই। তাই সরকারের কোন সুযোগ-সুবিধা তারা পান না।
এ বিষয়ে বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোঃ মহসীন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘‘হনুফা বেগমের তথ্য আমার জানা ছিল না। আপনাদের মাধ্যমে খোঁজ পেয়ে আমি তথ্য নিয়ে জানলাম তার দুই ছেলে নিখোঁজ। কিন্তু তাদের জেলে কার্ড ছিল না এবং মৃত্যুসনদ নাই। তাই সরকারের সহায়তার আওতায় আনা কঠিন। তবে, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে আমরা চেষ্টা করব হনুফা বেগম ও মাঝের চড়ের নিখোঁজ জেলেদের স্বজনদের পাশে দাঁড়ানোর।’’
ঢাকা/ইমরান//