প্রতি পাঁচজন শিক্ষার্থীর মধ্যে চারজনই থাকেন মেসে
Published: 23rd, September 2025 GMT
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী কিফায়াত উল হক। বাড়ি চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর থেকেই হলে থাকার জন্য চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু এত দিনেও সিট পাননি। বাধ্য হয়ে কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকার একটি মেসে থাকছেন। এতে প্রতি মাসে বাড়তি খরচ হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে যাতায়াতের সময়।
কিফায়াত একা নন। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই-তৃতীয়াংশের বেশি শিক্ষার্থী মেসসহ ভাড়া করা বাসাবাড়িতে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন। কিফায়াত প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন কারণে হলে ওঠার সুযোগ পাইনি। সামনেও হলে ওঠার সুযোগ হবে কি না, জানি না। মেসে থাকার কারণে প্রতি মাসেই বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। প্রথম বর্ষে কোনো টিউশনিও পাইনি। দ্বিতীয় বর্ষে এসে অনেক কষ্টে একটা টিউশনি পেয়েছি। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থীরই একই অবস্থা।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ৬ হাজার ৮৩২ জন। এর মধ্যে পাঁচটি হলে আবাসন আছে মাত্র ১ হাজার ৫০২ জনের জন্য। অর্থাৎ বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষার্থীর মাত্র ২১ দশমিক ৯৮ শতাংশ আবাসিক হলে থাকার সুযোগ পাচ্ছেন। আর বাকি ৭৮ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে ক্যাম্পাসের বাইরে।
প্রতিষ্ঠার ১৯ বছর পার হলেও শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যার সমাধান করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তবে বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্যের ভাষ্য, বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণ করে নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ চলছে। সেখানে চারটি আবাসিক হলও নির্মিত হচ্ছে। আগামী বছরের জুনের পর শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা অনেকটাই দূর হবে।
৭৮ শতাংশ শিক্ষার্থী থাকেন মেসেবিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, দেশের ২৬তম বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে ২০০৬ সালের ২৮ মে লালমাই-ময়নামতির লালমাটির পাহাড় আর সমতল ভূমিতে প্রতিষ্ঠিত হয় কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয় এক বছর পর, ২০০৭ সালের ২৮ মে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের যে ২২ শতাংশ শিক্ষার্থী হলে ঠাঁই পেয়েছেন, তাঁরাও স্বস্তিতে নেই। কারণ, পাঁচটি হলে তাঁদের থাকতে হচ্ছে গাদাগাদি করে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ১৯টি বিভাগে নিয়মিত শিক্ষার্থী ৬ হাজার ৮৩২ জন। এর মধ্যে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী রয়েছেন ১ হাজার ৪৬ জন। গত ১ জুলাই থেকে নতুন শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে তাঁদের কেউ এ পর্যন্ত হলে সিট পাননি বলে জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচটি হলে গত শনিবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্রী হলের মধ্যে নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলে শুরুতে আসনসংখ্যা ছিল ১৮০টি। বর্তমানে সেখানে ৩০২ জন শিক্ষার্থী আছেন। সুনীতি-শান্তি হলে (আগের নাম শেখ হাসিনা হল) শুরুতে আসনসংখ্যা ছিল ২৫৬টি। তবে হল প্রশাসন সেখানে বর্তমানে ৪০০ জনকে সিট দিয়েছে। এ কারণে গাদাগাদি করে থাকলেও দুটি ছাত্রী হলে প্রায় শতভাগ ছাত্রী থাকতে পারছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের এক শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, ‘অনেক কষ্টে হলে সিট পেয়েছি। কিন্তু হলে থাকতে হচ্ছে কষ্ট করে। একজনের সিটে দুজন থাকতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে আসনসংকট তীব্র।’
এক সিটে দুজনের থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন নওয়াব ফয়জুন্নেসা চৌধুরানী হলের প্রাধ্যক্ষ সুমাইয়া আফরিন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসন বরাদ্দ পায়নি, এমন কোনো শিক্ষার্থী বর্তমানে হলে নেই। তবে আসনসংখ্যার তুলনায় বেশি শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা দেওয়ায় তাঁদের কিছুটা কষ্ট করে থাকতে হচ্ছে।’
ছাত্রদের জন্য তিনটি হলে একই অবস্থা। শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলে আসনসংখ্যা ১৪৩, সেখানে আবাসন আছে ১৫০ জনের। কাজী নজরুল ইসলাম হলে আসনসংখ্যা ১৪২, সেখানে থাকেন ১৮০ জন। আর বিজয়-২৪ হলে (আগের নাম বঙ্গবন্ধু হল) বর্তমান পুরোনো ও নতুন ভবন মিলে আসনসংখ্যা ছিল ৪১২, সেখানে থাকছেন ৪৭০ শিক্ষার্থী।
শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত হলের প্রাধ্যক্ষ মো.
হলে আসন না পেয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন এ বছর ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থী সানজিদা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাধ্য হয়ে কয়েকজন মিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে বাসা ভাড়া করে থাকছি। এতে বাড়তি টাকা খরচ হচ্ছে। আবার নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়েও প্রশ্ন থেকেই যায়। এ ছাড়া আমরা নতুন শিক্ষার্থী হওয়ায় অনেকে টিউশনি পাচ্ছি না। পরিবারের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। আমরা দ্রুত আবাসন সমস্যার সমাধান চাই।’
বিজয়-২৪ হলের নিচতলার কয়েকটি কক্ষে গত বছর ভর্তি হওয়া ১৮তম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ‘গাদাগাদি’ করে থাকছেন। তাঁদের একজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কোনো রুমে ১০ জন, আবার কোনো রুমে ১২ জন থাকছি। এতে পড়াশোনার পরিবেশটা ঠিকমতো হচ্ছে না। আমার বাবা স্বল্প আয়ের মানুষ, এ জন্য বাধ্য হয়ে কষ্ট করে হলে থাকছি।’
শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যাটি দীর্ঘদিনের বলে স্বীকার করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আশার কথা হচ্ছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্প্রসারিত ক্যাম্পাসে চারটি বড় বড় হল নির্মিত হচ্ছে। সেনাবাহিনী পুরো প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে। আশা করছি আগামী বছরের জুনের মধ্যে চারটি না হলেও আমাদের তিনটি হল বুঝিয়ে দিতে পারবে সেনাবাহিনী। হলগুলো চালু হয়ে গেলে শিক্ষার্থীদের আবাসন সমস্যা অনেকাংশেই কমে যাবে।’
হলে আসন পাননি, এমন অন্তত পাঁচ শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, আবাসনসংকটের কারণে প্রতিনিয়তই বিপাকে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। প্রতি মাসেই মেসের সিটভাড়া নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। অনেকে কুমিল্লা নগরে থাকায় সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকা সম্ভব হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচরাচর সংস্কৃতি থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া প্রতিনিয়ত যোগাযোগ, নিরাপত্তা এবং আর্থিক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাঁদের।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রথম আল ক আসনস খ য র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
‘আমি এটা চাই’ বলে কীসের ইঙ্গিত দিলেন মেসি
এত দিন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে ২০২৬ বিশ্বকাপে নিজের খেলার সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেছেন লিওনেল মেসি। শতভাগ ফিট থাকার ওপর তাঁর খেলা না খেলা নির্ভর করছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গত মাসে এনবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারেও মেসি বলেছেন, তিনি ২০২৬ বিশ্বকাপে থাকতে চান। একই কথাটাই এবার একটু ভিন্নভাবে বললেন আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি।
আর্জেন্টিনা দলের নতুন জার্সি উন্মোচনের বিজ্ঞাপনে (যেখানে অংশ নিয়েছেন বেশ কয়েকজন খেলোয়াড়, সংগীতশিল্পী বিজারর্যাপ ও আনহেল দি মারিয়া) ফুটবলারদের সঙ্গে আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ক্লদিও তাপিয়ার একটি তাস খেলার দৃশ্য দেখানো হয়েছে। তাসে ‘চার’ উঠতেই মেসি বলে ওঠেন,‘আমি এটা চাই।’
এই সংক্ষিপ্ত বার্তাটিকে মেসির ২০২৬ সালের বিশ্বকাপে খেলতে চাওয়ার ইচ্ছার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। আর্জেন্টিনাকে চতুর্থ বিশ্বকাপ জেতানোর স্বপ্নের প্রতিফলন হতে পারে মেসির এই চাওয়া।
আরও পড়ুনবছরের শেষ সফরে আর্জেন্টিনা দলে চমক, মেসিদের সঙ্গে তিন নতুন মুখ০৭ নভেম্বর ২০২৫৩৮ বছর বয়সী মেসি আর্জেন্টিনার বয়সভিত্তিক ও মূল দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিতেছেন। ২০০৮ সালের বেইজিং অলিম্পিকে স্বর্ণপদকও জিতেছেন। জাতীয় দলে ২০ বছরের যাত্রায় মেসি এরই মধ্যে পাঁচটি বিশ্বকাপে খেলেছেন— ২০০৬ জার্মানি, ২০১০ দক্ষিণ আফ্রিকা, ২০১৪ ব্রাজিল, ২০১৮ রাশিয়া এবং ২০২২ কাতার।
এখন মেসির চোখ ক্যারিয়ারের ৬ষ্ঠ বিশ্বকাপে। যেটি আগামী বছরের জুনে যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো এবং কানাডায় অনুষ্ঠিত হবে। তবে এর আগে ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা নিয়ে যতবারই তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে, কখনো স্পষ্ট করে সরাসরি কিছু বলেননি। এবার বিজ্ঞাপন চিত্রে মেসির সাম্প্রতিক এই ইঙ্গিত আর্জেন্টিনার সমর্থকদের মাঝে নতুন করে উত্তেজনা জাগিয়েছে।
মন্তব্য কিংবা বিজ্ঞাপন চিত্রের ইঙ্গিত বাদ দিলেও মেসি বিশ্বকাপ খেলার পথেই এগিয়ে যাচ্ছেন। অ্যাঙ্গোলায় এ বছরের শেষ সফরটিতেও আর্জেন্টিনা দল খেলতে যাবে মেসির নেতৃত্বে। আগামী ১৪ নভেম্বর অ্যাঙ্গোলার স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে এই প্রীতি ম্যাচ।
আরও পড়ুন২০২৬ বিশ্বকাপে খেলতে চান মেসি২৮ অক্টোবর ২০২৫এরই মধ্যে ম্যাচ সামনে রেখে দলও ঘোষণা করেছে আর্জেন্টিনা। যেখানে পরখ করে নেওয়া হবে তরুণদেরও। এই সফরের জন্য তিনজন নতুন ফুটবলারকে অন্তর্ভূক্ত করেছেন স্কালোনি।