র‍্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমান বলেছেন, দুর্গাপূজাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়িয়ে বিশৃঙ্খলা চেষ্টার পাঁয়তারা চলছে। এ নিয়ে র‍্যাবের আইসিটি বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সতর্ক রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম মনিটর করা হচ্ছে।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রংপুর নগরের শ্রীশ্রী করুণাময়ী কালিবাড়ি মন্দিরে পূজামণ্ডপ পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদেরকে এ কথা বলেন র‍্যাবের মহাপরিচালক। তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পাওয়া পূজা নিয়ে কিছু জানতে পারলে, সাধারণ জনগণকে অনুরোধ করছি, আপনারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জানাবেন। আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটি ভেরিফাই করব। যদি ঘটনা সত্য হয়, তাহলে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। আর যদি কেউ গুজবের উদ্দেশ্যে ছড়ান, তাহলে তাঁর (গুজবকারী) বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমরা সবাই মিলে সতর্ক থাকলে পূজায় কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না।’

দেশে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে থেকে দলমতবর্ণ-নির্বিশেষে সবাই দুর্গোৎসব উদ্‌যাপন করা হয় জানিয়ে র‍্যাবের মহাপরিচালক বলেন, ‘এই অসাম্প্রদায়িক পরিবেশ বজায় রাখার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি। সারা দেশে ৮-১০টি জায়গায় বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। প্রতিটি ক্ষেত্রে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।’

শহিদুর রহমান জানান, দেশে ৩১ হাজার ৫৪৬টি পূজামণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা হবে। তাই নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি পূজা উদ্‌যাপন কমিটিকে নিজস্ব ভলান্টিয়ার তৈরি করতে হবে। উভয়ে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকলে কোনো বিশৃঙ্খলা হবে না। এ ছাড়া আগামী বুধবার থেকে প্রতিটি পূজামণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মোতায়েন করা হবে।

দেশের সীমান্তবর্তী এলাকার পূজামণ্ডপে বিজিবি নিরাপত্তা দিচ্ছে বলে জানান র‌্যাবের মহাপরিচালক। এ ছাড়া দেশের অল্প কিছু মণ্ডপে ঝুঁকি বিবেচনায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ সময় র‍্যাব-১৩ এর অধিনায়ক লেফটেনেন্ট কর্নেল মনজুর করিম রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মজিদ আলীসহ রংপুরের পূজা উদ্‌যাপন কমিটির নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: রক ষ ক র

এছাড়াও পড়ুন:

দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন

আজ মহালয়া। সনাতন ধর্মের ভাষ্যমতে, দিনটি পিতৃপক্ষের সমাপ্তি এবং দেবীপক্ষের সূচনার প্রতীক। মহালয়ায় হিন্দু সম্প্রদায় তাঁদের পূর্বপুরুষদের উদ্দেশে তর্পণ করেন, তাঁদের শান্তি কামনা করেন এবং একই সঙ্গে দেবী দুর্গাকে মর্ত্যে আহ্বান জানান।

মহালয়াকে কেবল আধ্যাত্মিক অনুষ্ঠান নয়; বরং সনাতনী সমাজের সাংস্কৃতিক পরিচয় এবং সামাজিক সংহতির এক গভীর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। ভোরের আলো আর শিশিরসিক্ত প্রভাতে এ মহালয়ার আচার আমাদের মনে করিয়ে দেয়, প্রত্যেক প্রজন্মকে অতীতের শিক্ষার আলো ধরে সমাজের নৈতিক ও সামাজিক ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে।

বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সর্ববৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা প্রতিবছরের মতো এবারও ভক্তি, সংস্কৃতি ও সামাজিক সম্প্রীতির মিলনক্ষেত্র হিসেবে উদ্‌যাপিত হবে। এ উৎসবের মর্যাদা রক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্র, সম্প্রদায় ও নাগরিক সমাজের সম্মিলিত দায়িত্ব।

দুঃখজনক হলেও সত্য, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন অশুভ চক্র সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে প্রতিমা ভাঙচুরের মাধ্যমে অনৈতিক প্ররোচনা সৃষ্টি করছে। গত কয়েক দিনে কুষ্টিয়া, গাজীপুরসহ কয়েকটি জায়গায় প্রতিমা ভাঙচুরের খবর পাওয়া গেছে, যেটি উদ্বেগজনক। এ কর্মকাণ্ড শুধু ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে না; বরং সমাজের নৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংহতিতেও ক্ষতি করে। আসন্ন দুর্গাপূজা উপলক্ষে দেশের ৫টি জেলাকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ ও ২৪টি জেলাকে মাঝারি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে ‘সম্প্রীতি যাত্রা’ নামের একটি সামাজিক প্ল্যাটফর্ম। তাই দুর্গাপূজায় নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়াই অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তৎপরতা এ প্রেক্ষাপটে বিশেষভাবে প্রশংসনীয়। কমিশনারের নেতৃত্বে ডিএমপি ইতিমধ্যে ২৫৮টি মণ্ডপে নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়েছে। এতে অন্তর্ভুক্ত আছে মণ্ডপভিত্তিক পাহারা, পৃথক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, প্রতিমা বিসর্জনের দিন সার্বিক তৎপরতা, সিসিটিভি স্থাপন, অগ্নিনিরাপত্তাব্যবস্থা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রতিরোধে নজরদারি। এটি প্রমাণ করে, সামাজিক ন্যায় ও আইনশৃঙ্খলার অটল ভিত্তি রক্ষায় রাষ্ট্র সচেতন ও সংবেদনশীল ভূমিকা গ্রহণ করছে।

একইভাবে সারা দেশে প্রায় ৩০ হাজার মণ্ডপে নিরাপত্তার আওতায় আনা অত্যন্ত জরুরি। প্রতিটি মণ্ডপে পর্যাপ্ত পুলিশি পাহারা, সিসিটিভি নজরদারি, অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা, জরুরি সেবা সংযোগ ও দর্শনার্থীদের সুশৃঙ্খল চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। তবে সরকারের একক তৎপরতা যথেষ্ট নয়, স্থানীয় কমিউনিটি, পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ এবং সাধারণ নাগরিকদের সচেতন অংশগ্রহণ সমানভাবে অপরিহার্য। প্রতিটি মণ্ডপে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও অন্যান্য সরকারি সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করি।

দার্শনিকভাবে ভাবলে দুর্গাপূজা কেবল দেবীর আরাধনা নয়, এটি মানবসমাজের নৈতিক সংহতি ও সাম্প্রদায়িক ঐক্যের এক জীবন্ত প্রতীক। প্রতিমা ভাঙচুর বা অশুভ প্ররোচনার বিরুদ্ধে সক্রিয় তৎপরতা মানে কেবল আইন রক্ষা নয়; বরং সমাজের নৈতিক ক্ষেত্রও রক্ষা করা। নাগরিকের সচেতনতা ও রাষ্ট্রের সংহত তত্ত্বাবধানের সমন্বয় নিশ্চিত করলে উৎসবের মর্যাদা ও সামাজিক সম্প্রীতি অটুট থাকবে।

আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজার প্রেক্ষাপটে আমাদের প্রত্যেকের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব সুস্পষ্ট। সেটি হলো কেউ যেন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানের পবিত্রতা বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সূক্ষ্ম সূত্রকে বিপন্ন করতে না পারে। রাষ্ট্রের নীতি ও নিরাপত্তাসংক্রান্ত কার্যক্রম যদি জনগণের সচেতনতা ও সম্মিলিত প্রচেষ্টার সঙ্গে মিলিত হয়, তবেই আমরা দেখতে পাব উৎসবমুখর ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে দুর্গাপূজার চিত্র। তখন এটি কেবল ধর্মীয় উৎসবের মহিমা বহন করবে না; বরং মানবসমাজের নৈতিক সংহতি, সাংস্কৃতিক ঐক্য ও সামাজিক সুষমতার স্থায়ী প্রতীক হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পূজায় থাকবে বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা: র‌্যাব 
  • দুর্গাপূজায় ৮০ হাজার ভলেন্টিয়ার থাকবে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • দুর্গাপূজার নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন