ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) উদ্যোগে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) সংলগ্ন এলাকা ও সম্রাট বাহাদুর শাহ পার্কের চারপাশ থেকে অবৈধ দোকানপাট ও অস্থায়ী স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বিশেষ অভিযানে এ উচ্ছেদ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
আরো পড়ুন:
২ দফা দাবিতে ভাসানী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের কক্ষে তালা
রাকসু নির্বাচন পেছানোয় ক্যাম্পাস ছাড়ছেন শিক্ষার্থীরা
এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন ডিএসসিসির এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট আমিনুল ইসলাম এবং জবি প্রশাসন সার্বিক সহযোগিতা করে।
দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় গড়ে ওঠা এসব অবৈধ দোকান ও অস্থায়ী স্থাপনার কারণে শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের চলাচলে প্রতিবন্ধকতা তৈরি হচ্ছিল। একই সঙ্গে একাডেমিক পরিবেশ ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি মাদক ব্যবসা ও অসামাজিক কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুলডোজারের সহায়তায় সম্রাট বাহাদুর শাহ পার্ক সংলগ্ন এলাকা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুটপাতের দোকান উচ্ছেদ করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির যৌথ সভার সিদ্ধান্ত এবং প্রশাসনের আনুষ্ঠানিক চিঠির ভিত্তিতেই এ পদক্ষেপ নেয় ডিএসসিসি।
অভিযান চলাকালে জবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড.
তবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় গেট সংলগ্ন কয়েকটি দোকান উচ্ছেদ হওয়ায় কিছু শিক্ষার্থীর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়।
তারা অভিযোগ করেন, হঠাৎ দোকান ভেঙে ফেলার কারণে তারা বিপাকে পড়েছেন। এ সময় কিছু শিক্ষার্থী বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলে পরিস্থিতি সামাল দেন প্রশাসন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. তাজাম্মুল হক বলেন, “আমরা আশপাশের অবৈধ দোকান সরানোর পদক্ষেপ নিয়েছি। শিক্ষার্থীরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে, যা অবশ্যই অপরাধ।”
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ড এসস স অব ধ দ ক ন
এছাড়াও পড়ুন:
নিরাপদ খাদ্য সরবরাহ করেন যবিপ্রবি শিক্ষার্থী সুজা
কেউ কেউ শুধু স্বপ্ন দেখেই থেমে যায়, আবার কেউ স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে ছুটে চলে অদম্য সাহসে। যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী বি এম সুজা উদ্দিন সেই অদম্য সাহসী মানুষদের একজন।
পরিবারে অভাব ছিল না, কারণ বাবা ছিলেন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কিন্তু সুজার মনে বাসা বেঁধেছিল ভিন্ন এক তৃষ্ণা; স্বপ্ন নিজের কিছু গড়ে তোলার, উদ্যোক্তা হওয়ার। তাই তো ২০২০ সালে অনার্স চতুর্থ বর্ষে থাকা অবস্থায় মাত্র ৩ হাজার টাকা মূলধন দিয়ে শুরু করেন ব্যবসা।
আরো পড়ুন:
১০ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মূল্যায়নে অকৃতকার্য ইবি উপাচার্য
চাকসু নির্বাচনের তারিখ পেছানো নিয়ে যা জানা গেল
একজন বন্ধুর কাছে দেড় হাজার এবং এক বড় ভাইয়ের কাছ থেকে পাওয়া দেড় হাজার টাকা দিয়ে যাত্রা শুরু হয় অনলাইনে ফেসবুক পেজ ও গ্রুপের মাধ্যমে, আজ অরগানিক ও স্বাস্থ্যকর খাবারের বিশ্বস্ত মাধ্যমে রূপ নিয়েছে।
গত ৪ বছর ধরে শুধু অনলাইনেই চলেছে এই পথচলা। এরপর একদিন সাহস করে ক্যাম্পাসের ভেতরে একটি টেবিলে কয়েকটি পণ্য সাজিয়ে বসেন তিনি। সেই টেবিলই হয়ে উঠল তার স্বপ্নের অফলাইন রূপ। আজ সেটা সবার কাছে পরিচিত ‘সুজাস ফুড হেভেন’ নামে।
শুরুতে তার পড়াশোনা আর ব্যবসা সামলানো ছিল অনেক কঠিন। অর্ডার হাতে পেলে ক্লাস বা পরীক্ষা না থাকলে নিজেই ডেলিভারি দিতেন যশোর শহর ও ক্যাম্পাসে। অন্য জেলায় পাঠাতেন কুরিয়ারে। ধীরে ধীরে দোকানে অংশীদার ও কর্মচারী যুক্ত হয়, তাতে কিছুটা স্বস্তি আসে তার। তবে স্বপ্ন পূরণের টানে পড়াশোনার প্রতি আগের মতো সিরিয়াস হওয়া সম্ভব না হলেও নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা চালিয়ে গেছেন। কারণ তিনি জানতেন, ফলাফলে কিছুটা ঘাটতি হলেও স্বপ্ন পূরণের পথে অভিজ্ঞতা অর্জনই বড় সম্পদ।
বন্ধুদের সহযোগিতা তার পথচলায় বিশেষ ভূমিকা রেখেছে। এর বাইরে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকেও পেয়েছেন প্রেরণা। ক্যাম্পাসে স্টল বসানোর সুযোগ কিংবা উদ্যোক্তা মেলায় অংশ নেওয়ার অভিজ্ঞতা তাকে করেছে আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
মাসে ১৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় করে আজ তিনি নিজের খরচ মেটাচ্ছেন, কর্মচারীর বেতন দিচ্ছেন এবং নতুন করে বিনিয়োগ করছেন ব্যবসায়। যদিও এখনো অর্থনৈতিক চাপ পুরোপুরি কাটেনি, তবে সুজা উদ্দিন দৃঢ় বিশ্বাসী- এই চাপই তাকে আরো শক্ত করবে এবং সামনে এগিয়ে নিয়ে যাবে।
সুজা বলেন, “আমার পথচলা একেবারে সহজ ছিল না। প্রথম দিকে আমার দোকানে বসতে লজ্জা লাগত, কখনো কখনো বিব্রতকর অবস্থার মুখোমুখিও হয়েছি। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সবকিছু জয় করে এখন আমি গর্বের সঙ্গে বলতে পারি- আলহামদুলিল্লাহ, আমি আমার কাজ নিয়ে সন্তুষ্ট। গ্রাহকদের ভালোবাসা ও সম্মান আমার আত্মবিশ্বাসকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।”
তার স্বপ্ন নিরাপদ খাদ্যের আউটলেট গড়ে তোলা এবং ভবিষ্যতে আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। ইতোমধ্যে একজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পেরে তিনি মনে করেন, এটাই তার সবচেয়ে বড় সাফল্যের সূচনা।
অন্য শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে করে তিনি বলেন, “যদি উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন থাকে, তাহলে পড়াশোনার পাশাপাশি অবসর সময়ে ছোট পরিসরে কাজ শুরু করুন। এমন প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করুন, যা সম্পর্কে আপনি জানেন, ভালো সোর্স রয়েছে এবং যেটা নিয়ে কাজ করতে আপনি আনন্দ পান। এতে সময় সঠিকভাবে কাজে লাগবে, অভিজ্ঞতাও বাড়বে। পড়াশোনা শেষ হওয়ার পর সহজেই বড় পরিসরে শুরু করতে পারবেন।”
সুজা উদ্দিন হয়তো বড় ব্যবসায়ী নন, কিন্তু তার গল্প বড়। তিনি প্রমাণ করেছেন শুধু চাকরির স্বপ্ন দেখলেই জীবন বদলায় না। স্বপ্ন দেখতে হয় ভিন্নভাবে, সাহস করে শুরু করতে হয় ছোট থেকে। এটি তার সাহসের গল্প, স্বপ্নের গল্প, নিজেকে গড়ে তোলার গল্প।
‘সুজাস ফুড হেভেন’ শুধু একটি খাবারের দোকান নয়, এটি একটি প্রমাণ। চাইলে স্বপ্ন সত্যি হয়, যদি লড়াই করার সাহস থাকে।
ঢাকা/মেহেদী