যুক্তরাষ্ট্র থেকে এফ-১৬ যুদ্ধবিমানের বদলে কেবল জেট ইঞ্জিন কিনতে চায় তুরস্ক, কিন্তু কেন
Published: 25th, September 2025 GMT
তুরস্ক হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান ও ক্ষেপণাস্ত্রের বদলে জেট ইঞ্জিন কেনার জন্য কয়েক শ কোটি ডলারের একটি অস্ত্র চুক্তিতে পরিবর্তন আনার অনুরোধ করতে পারে। এ বিষয় সম্পর্কে জানে এমন একটি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য জানিয়েছে।
গত বছর আঙ্কারা তার প্রাথমিক এফ-১৬ কেনার পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনে। তারা ৭৯টি আধুনিকায়ন কিট বাদ দিয়ে ৪০টি এফ-১৬ ভাইপার এবং এর সঙ্গে সম্পর্কিত গোলাবারুদ কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে চুক্তির মোট মূল্য ২ হাজার ৩০০ কোটি ডলার থেকে কমে ৭০০ কোটি ডলারে নেমে আসবে।
এখন তুরস্কের কিছু ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এই চুক্তিতে আরও পরিবর্তন আনার জন্য চাপ দিচ্ছেন। তাঁরা পরিকল্পিত এফ-১৬ বিমান কেনা ও গোলাবারুদ প্যাকেজের একটি অংশ পুরোপুরি বাদ দিতে চান।
এ বিতর্ক সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, আঙ্কারার কেউ কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, এফ-১৬-এর পেছনে শতকোটি ডলার ব্যয় না করে সেই অর্থ এফ-১৬-এর ইঞ্জিন কেনার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা ‘কান’ বিমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।এর পরিবর্তে তুরস্ক দেশীয়ভাবে উৎপাদিত পঞ্চম প্রজন্মের যুদ্ধবিমান ‘কান’-এর পেছনে বিনিয়োগকে অগ্রাধিকার দেবে। এই চুক্তির মাধ্যমে তারা কান বিমানের জন্য ইঞ্জিন সংগ্রহ করতে এবং যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বাধীন এফ-৩৫ কর্মসূচিতে ফিরে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে চায়।
প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের ওয়াশিংটন সফরের সময় বিষয়টি আলোচনায় আসতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে আঙ্কারা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে ওভাল অফিসের বৈঠকে এ প্রস্তাব দেবে কি না, তা স্পষ্ট নয়।
তবে কিছু কর্মকর্তা এখনো যুক্তি দিচ্ছেন, তুরস্কের পুরোনো বিমানবহরকে শক্তিশালী করতে অবিলম্বে ৪০টি এফ-১৬ ভাইপার কেনার দিকে এগিয়ে যাওয়া উচিত।
২০২৪ সালের শুরুতে মার্কিন সরকার মূল চুক্তি অনুমোদন করার পর থেকে তুরস্কের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা নেতৃত্ব দেশের পুরোনো এফ-১৬ বিমানগুলো প্রতিস্থাপনের সেরা উপায় কী হতে পারে, তা নিয়ে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।
রাশিয়ার তৈরি এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা কেনার কারণে ২০১৯ সালে তুরস্ককে এফ-৩৫ প্রোগ্রাম থেকে বাদ দেয় যুক্তরাষ্ট্র। ফলে আগামী বছরগুলোতে যুদ্ধবিমানের তীব্র ঘাটতির আশঙ্কা করছেন কর্মকর্তারা।
তুর্কি বিমানবাহিনী এফ-১৬, ইউরোফাইটার বা এফ-৩৫–সহ যেকোনো বিমান সংগ্রহ করতে আগ্রহ প্রকাশ করলেও তুরস্কের শীর্ষ প্রতিরক্ষা ক্রয় সংস্থা এবং প্রধান দেশীয় উৎপাদকেরা মনে করেন, আঙ্কারাকে এসব ক্ষেত্রে আরও বিচক্ষণ হতে হবে।
এই মতের সমর্থকেরা কান যুদ্ধবিমানটি পরিষেবায় আসার আগপর্যন্ত তুরস্কের বিদ্যমান এফ-১৬ বিমানবহরকে দ্রুত উন্নত স্থানীয় প্রযুক্তি দিয়ে আধুনিকায়নের পক্ষে।
একটি তুর্কি কনসোর্টিয়াম ২০২৮ সালের শেষের দিকে প্রথম ‘কান’ জেট সরবরাহ করার লক্ষ্য ঠিক করেছে। অবশ্য অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, এই সরবরাহ ২০৩০ সালের কাছাকাছি হতে পারে।
এ বিতর্ক সম্পর্কে অবগত একটি সূত্র জানিয়েছে, আঙ্কারার কেউ কেউ যুক্তি দিচ্ছেন, এফ-১৬–এর পেছনে শতকোটি ডলার ব্যয় না করে সেই অর্থ এফ-১৬–এর ইঞ্জিন কেনার কাজে ব্যবহার করা যেতে পারে, যা কান বিমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
প্রথম কান বিমানটি জেনারেল ইলেকট্রিকের এফ১১০ ইঞ্জিন দিয়ে চালিত হবে, যা এফ-১৬ বিমানেও ব্যবহৃত হয়। তবে তুরস্ক শেষ পর্যন্ত ২০৩০-এর দশকে সরবরাহের জন্য একটি দেশীয় ইঞ্জিন মডেল তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে।
কিছু কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা এফ-১৬–এর সঙ্গে আসা সম্ভাব্য বিধিনিষেধ নিয়েও উদ্বিগ্ন। কারণ, ওয়াশিংটন হয়তো আঙ্কারাকে তাদের দেশীয়ভাবে উৎপাদিত অস্ত্র সন্নিবেশ করতে বাধা দিতে পারে।
কিছু কর্মকর্তা যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা এফ-১৬-এর সঙ্গে আসা সম্ভাব্য বিধিনিষেধ নিয়েও উদ্বিগ্ন। কারণ, ওয়াশিংটন হয়তো আঙ্কারাকে তাদের দেশীয়ভাবে উৎপাদিত অস্ত্র সন্নিবেশ করতে বাধা দিতে পারে।সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তুরস্ক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র থেকে শুরু করে গাইডেড বোমা—বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্রব্যবস্থা তৈরিতে দক্ষতা দেখিয়েছে, যা যুদ্ধবিমানের সঙ্গে যুক্ত করা যায়।
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াসার গুলার গত নভেম্বরে নিশ্চিত করেছিলেন, আঙ্কারা ইতিমধ্যে এফ-১৬–এর জন্য ১৪০ কোটি ডলার অগ্রিম পরিশোধ করেছে।
অন্যান্য কর্মকর্তা অবশ্য যুক্তি দিচ্ছেন, তুরস্কের উচিত এফ-৩৫ প্রোগ্রামে আবার যোগ দেওয়ার বিষয়ে অগ্রাধিকার দেওয়া, যা অবিলম্বে তাঁদের যুদ্ধবিমানের সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
এফ-১৬ বা ইউরোফাইটারের মতো বিমানগুলোর উৎপাদনে বছরের পর বছর সময় লাগে। কিন্তু তুরস্কের জন্য নির্মিত ছয়টি এফ-৩৫ বিমান গুদামে সংরক্ষিত আছে এবং আঙ্কারাকে আবার ওই কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হলে তা দ্রুত হস্তান্তর করা যেতে পারে। গুলার আরও বলেন, তুরস্ক শেষ পর্যন্ত ৪০টি এফ-৩৫ বিমান কেনার লক্ষ্য ঠিক করেছে।
কিন্তু এফ-১৬ চুক্তিতে তুরস্কের বারবার পরিবর্তনের দাবি মার্কিন প্রশাসনের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে।
ওয়াশিংটনভিত্তিক একটি সূত্র মিডল ইস্ট আইকে বলেছে, পেন্টাগন জোর দিয়ে বলেছে, এফ-১৬ চুক্তি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারা এফ-৩৫ কর্মসূচি নিয়ে আবার আলোচনা শুরু করবে না। সূত্রটি বলেছে, এফ-১৬–এর পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্র জেট ইঞ্জিন বিক্রি করতে রাজি হবে, এমন সম্ভাবনা কম। কারণ, এটি একটি চূড়ান্ত চুক্তি।
পূর্ব ভূমধ্যসাগরে ক্ষমতার ভারসাম্যের প্রেক্ষাপটে তুরস্কের এফ-৩৫ প্রোগ্রামে ফিরে আসার সম্ভাবনা কৌশলগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।
গ্রিস ২০২৮ সালে তাদের প্রথম এফ-৩৫ বিমান পেতে চলেছে, যেখানে তুরস্কের পুরোনো এফ-১৬ বিমানবহর প্রতিনিয়ত কর্মক্ষমতার চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ছে।
তবে এ অঞ্চলের শক্তিধর দেশ, বিশেষ করে ইসরায়েল ও গ্রিস—এই বিক্রি আটকাতে ওয়াশিংটনের কাছে তদবির করছে। ইসরায়েল দীর্ঘদিন ধরে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় মার্কিন অস্ত্র বিক্রির ওপর একটি অলিখিত ভেটো বজায় রেখেছে, যাতে তারা তাদের সামরিক শক্তিতে গুণগত শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রাখতে পারে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য ক তর ষ ট র র ত রস ক র প র কর মকর ত সরবর হ র জন য উৎপ দ
এছাড়াও পড়ুন:
চলতি অর্থবছরে ৫% জিডিপি প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস এডিবির; ৪ কারণে চাপে প্রবৃদ্ধি
চলতি অর্থবছর মোট দেশজ উৎপাদন (জিডিপি) কিছুটা বাড়বে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবির পূর্বাভাস অনুসারে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশ হতে পারে। গত অর্থবছরের জন্য জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন হলো ৪ শতাংশ।
এডিবি আরও বলেছে, তৈরি পোশাক রপ্তানি স্থিতিশীল থাকলেও রাজনৈতিক পরিবর্তন, ঘন ঘন বন্যা, শিল্প খাতে শ্রমিক অস্থিরতা এবং বিরাজমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি কারণে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। এই চার কারণে প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক প্রবৃদ্ধিতে।
আজ মঙ্গলবার এডিবি এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) সেপ্টেম্বর সংস্করণ প্রকাশ করেছে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি সম্পর্কে এমন পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
এডিবি আরও বলেছে, চলতি অর্থবছরে ভোগ্যব্যয় বাড়বে। কারণ, রেমিট্যান্সের প্রবৃদ্ধি পাবে। এ ছাড়া আসন্ন নির্বাচনসংক্রান্ত নানা ধরনের খরচের কারণেও ভোগব্যয় বাড়াবে।
বাংলাদেশে এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হো ইউন জিয়ং বলেন, ‘ভবিষ্যৎ প্রবৃদ্ধিনির্ভর করবে ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নয়নের মাধ্যমে প্রতিযোগিতা বাড়ানো, বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা এবং নির্ভরযোগ্য জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করার ওপর। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের বাণিজ্যে মার্কিন শুল্কের প্রভাব এখনো স্পষ্ট নয়। দেশের ব্যাংক খাতের দুর্বলতা অব্যাহত রয়েছে। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনের জন্য জরুরি।
এডিবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৬ অর্থবছরের জন্য কিছু ঝুঁকি রয়ে গেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যসংক্রান্ত অনিশ্চয়তা, ব্যাংক খাতের দুর্বলতা এবং নীতি বাস্তবায়নের অনাগ্রহ প্রবৃদ্ধির অগ্রগতিতে বাধা হতে পারে। এ জন্য সঠিক সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বজায় রাখা এবং কাঠামোগত সংস্কার দ্রুততর করার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে জানানো হয়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৯ দশমিক ৭ শতাংশ। গত অর্থবছরের তা বেড়ে দাঁড়ায় ১০ শতাংশ। এর পেছনে রয়েছে পাইকারি বাজারে সীমিত প্রতিযোগিতা, বাজার তথ্যের ঘাটতি, সরবরাহ শৃঙ্খলে বাধা এবং টাকার অবমূল্যায়ন।
এডিবি বলছে, চলতি অর্থবছরে প্রবৃদ্ধির মূল চালিকাশক্তি হবে ভোগব্যয়, যা শক্তিশালী রেমিট্যান্স প্রবাহ ও নির্বাচন-সংশ্লিষ্ট ব্যয়ের কারণে বাড়বে। তবে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ও রাজস্বনীতি এবং বিনিয়োগকারীদের সতর্ক মনোভাব বিনিয়োগকে মন্থর করতে পারে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রপ্তানির ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রতিযোগিতা বাড়ায় রপ্তানি খাত এবং এর প্রবৃদ্ধি চাপ বাড়াবে। ফলে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে রপ্তানিকারকদের মূল্য কমাতে হতে পারে।