কয়েকটি দলকে টেবিলে বসে দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণের দায়িত্ব কে দিয়েছে, প্রশ্ন আমীর খসরুর
Published: 27th, September 2025 GMT
আমরা কয়েকটি দল টেবিলের চারদিকে বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করব, এই দায়িত্ব কে দিয়েছে—এমন প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, পলিটিক্যাল মাসল (রাজনৈতিক পেশি) আছে, জনগণের সমর্থনপুষ্ট এমন একটি সরকার গত ১৬ বছর অনুপস্থিত ছিল, গত ১৪ মাস ধরেও তা অনুপস্থিত।
আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর রমনায় বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে এক সেমিনারে আমীর খসরু এসব কথা বলেন। ‘সংস্কার ও নির্বাচন: প্রেক্ষিত জাতীয় ঐক্য’ শিরোনামে এই সেমিনারের আয়োজন করে ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম। সেখানে আমীর খসরু সমাপনী বক্তব্য দেন।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ঐতিহাসিকভাবে দেখা গেছে, অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে যেসব দেশ যত তাড়াতাড়ি গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে গেছে, ওই দেশগুলো ভালো করেছে। আর যে দেশগুলো একটা তর্কবিতর্কে জড়িয়ে বিভিন্ন ইস্যু সামনে এনে নির্বাচনকে বিলম্বিত করেছে, সেসব দেশে গৃহযুদ্ধ, সামাজিক বিভক্তি ও অর্থনৈতিক বিপর্যয় ঘটেছে—এটা প্রমাণিত।
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ১৪ মাস পরে বাংলাদেশে এখনো তর্কবিতর্ক চলছে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, ‘আমাদের দেশে ১৬ বছর একটা প্রতিনিধিত্বহীন সরকার দেশ চালিয়েছে।.
জনগণের সমর্থনপুষ্ট একটি শক্তিশালী সরকারের পলিটিক্যাল মাসল (রাজনৈতিক পেশি) থাকে উল্লেখ করে আমীর খসরু বলেন, যেটা গত ১৪ মাস ধরে অনুপস্থিত, গত ১৬ বছর ধরেও অনুপস্থিত ছিল। সেই ধারা থেকে পরিবর্তন করতে হলে বাংলাদেশের মানুষের প্রথম প্রত্যাশা হচ্ছে, তারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটা প্রতিনিধিত্বশীল সরকার ও সংসদ দেখতে চায়। মানুষ এমন সরকার দেখতে চায়, যে সরকার তাদের কাছে দায়বদ্ধ থাকবে এবং জবাবদিহি থাকবে। বাংলাদেশে মূল সমস্যা হচ্ছে জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতা। যেসব দেশে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট ছিল, সেখানে এই একই সমস্যা ছিল। জবাবদিহি ও দায়বদ্ধতার অভাবের কারণ তারা অনির্বাচিত সরকার। তারা ক্রমান্বয়ে স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট হয়েছে। আমরা তো সেখান থেকে এখনো বের হতে পারছি না।
শেখ হাসিনার শাসনামলেই বিএনপির পক্ষ থেকে ‘ভিশন ২০৩০’, ২৭ দফা ও ৩১ দফা প্রস্তুত করা হয়েছিল উল্লেখ করে সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু বলেন, ‘তখন সংস্কারের এত বিস্তারিত একটা কর্মসূচি কোনো দল দেশের সামনে প্রতিষ্ঠা করেনি। অন্তর্বর্তী সরকারের করা সংস্কার কমিশন, ঐকমত্য কমিশন নিয়ে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। আমরা অংশগ্রহণ করছি। সংস্কার কমিশন হোক আর না হোক, আমাদের ৩১ দফা সংস্কার আমরা বাস্তবায়ন করব।’
এই দায়িত্ব কে দিয়েছে
তবে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের ১৪ মাস পরেও কেন ঐকমত্যের আলোচনা করতে হবে, সেই প্রশ্ন রেখে আমীর খসরু মাহমুদ বলেন, ‘যতটুকু ঐকমত্য হয়েছে, লেট’স ক্লোজ দ্য চ্যাপ্টার। ঐকমত্যের বাইরে গিয়ে আবার কেন এত আলোচনা করতে হচ্ছে? কেন আমাকে পিআর নিয়ে আলোচনা করতে হবে? পিআর নিয়ে যদি ঐকমত্য না হয়, ক্লোজ দ্য চ্যাপ্টার।...আমরা যতটুকু একমত হয়েছি, এই দায়িত্বটা আমাদের কে দিয়েছে? আমরা কয়েকটি দল টেবিলের চারদিকে বসে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করব, এই দায়িত্ব কে দিয়েছে?’
রাজনৈতিক দলগুলো যদি একমত হয়েও থাকে, সেটাও জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন বিএনপি নেতা আমীর খসরু। তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচনে জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে আমাদের সংসদে আসতে হবে, এটা পাস করার জন্য। আজকে যদি আমরা সবাই নাকে খত দিয়ে অনেক জিনিসে একমত হয়ে যাই, কালকে যদি দেশের মানুষ সেটা না চায়, ম্যান্ডেট না দেয়, তাহলে কী হবে? আমরা পরিষ্কার করেছি যে ৩১ দফা নিয়ে জনগণের কাছে যাব। কিন্তু তার বাইরে গিয়ে যে এক্সারসাইজ চলছে, এর মাধ্যমে লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হচ্ছে।’
ক্ষমতায় যেতে হবে প্রস্তুতি নিয়ে
জনগণকে রাজনৈতিক দলগুলোর আগামীর বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখানোর কথা বলা উচিত বলে মনে করেন সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ। তিনি বলেন, বিএনপি বলেছে ম্যান্ডেট পেলে প্রথম ১৮ মাসে এক কোটি মানুষকে চাকরি দেওয়া হবে। কীভাবে করা হবে, তা জনগণের সামনে তুলে ধরা হবে। বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিককে বিনা মূল্যে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হবে। দেশের অর্থনীতিতে যে বিপর্যয় ঘটেছে, সেখান থেকে বের হওয়ার জন্য আমাদের কৌশল কী হবে, অর্থনৈতিক খাতে কী হবে, দেশি–বিদেশি বিনিয়োগ কীভাবে হবে, এসব নিয়েও দলটি কাজ করেছে বলে তিনি জানান।
আমীর খসরু বলেন, সব রাজনৈতিক দলকে এই প্রস্তুতি নিয়েই ক্ষমতায় যেতে হবে। শুধু রাজনীতির গণতন্ত্রায়ণ করলে হবে না, অর্থনীতিরও গণতন্ত্রায়ণ করতে হবে। অর্থাৎ রাজনীতি ও অর্থনীতিতে সবার জন্য সমান সুযোগ থাকতে হবে। এ রকম প্রতিটি সেক্টরকেই গণতন্ত্রায়ণ করতে হবে। বিভিন্ন বিষয়ে তর্কবিতর্ক, বিভক্তি সৃষ্টি না করে আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে দেশে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
সেমিনারের শুরুতে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতির নির্বাচনের নেতিবাচক দিক ও হঠাৎ পিআরের দাবি সামনে আনার পেছনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নিয়ে একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন ডেমোক্রেসি ডায়াস বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ–আল–মামুন। অনুষ্ঠানে রাজনীতিকদের মধ্যে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম ও গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বক্তব্য দেন।
সুশীল সমাজের প্রতিনিধি হিসেবে বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, আসিফ মোহাম্মদ শাহান ও এস এম শামীম রেজা এবং বিএনপির মিডিয়া সেলের আহ্বায়ক অধ্যাপক মওদুদ হোসেন আলমগীর। সাংবাদিক সোহরাব হাসান, কাজী জেসিন, বিশ্লেষক রেজাউল করিম রনি, কণ্ঠশিল্পী সাজ্জাদ হুসাইন পলাশ, অভিনেতা শাহেদ শরীফ খানসহ আরও কয়েকজন সেমিনারে বক্তব্য দেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক জনগণ র ঐকমত য ১৪ ম স আম দ র সরক র ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
ককটেল নিক্ষেপ ও অগ্নিসংযোগ করলে গুলির নির্দেশ ডিএমপি কমিশনারের
কর্তব্যরত অবস্থায় পুলিশকে বা জনগণকে লক্ষ্য করে ককটেল নিক্ষেপ কিংবা গাড়িতে আগুন দিলে হামলাকারীকে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী।
রবিবার (১৬ নভেম্বর) বিকেলে বেতার বার্তায় মাঠ পর্যায়ে নিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের এমন নির্দেশনা দেন তিনি। ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে স্বীকার করলেও কেউ বক্তব্য দিতে রাজি হননি।
আরো পড়ুন:
অতিরিক্ত আইজি-ডিআইজিসহ পুলিশের ৩১ কর্মকর্তাকে বদলি
ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরা হলো না শিক্ষকের
নাশকতাকারীদের লক্ষ্য করে গুলির নির্দেশ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএমপি কমিশনার বলেছেন, “হ্যাঁ, বলেছি। বলেছি, বাসে আগুন দিলে, পুলিশ ও জনগণের গায়ে আগুন দিয়ে গুলি করে দিতে বলেছি।”
এটা কি আইনে কাভার করে? জানতে চাইলে তিনি বলেন, “একশ’তে একশ’ কাভার করে। চাইলে আপনিও পারেন এটা!”
পুলিশ কিংবা নাগরিক নাশকতাকারীর বিরুদ্ধে কীভাবে ব্যবস্থা নিতে পারে, তা ব্যাখ্যা করে ডিএমপি কমিশনার বলেন, “দণ্ডবিধির ৯৬ থেকে ১০৪ ধারাতে যা বলা আছে, সে অনুযায়ী, আপনিও পারেন এটা। তাতে বলা আছে যে, যেকোনো লোকের সম্পদ বা জানের হেফাজতের জন্য সে গুলি করতে পারে, তার যদি গান থাকে।”
তিনি বলেন, “সে আইন অনুযায়ী এই বার্তাটা আমি স্মরণ করায় দিলাম আমার কলিগদের যে, যে কোনো বাসে আগুন দিবে, তোমার গায়ে ককটেল মারবে, জনগণের গায়ে ককটেল মারবে, তুমি গুলি করে দিবা।”
উল্লেখ্য, দণ্ডবিধির ৯৬ ধারায় বলা হয়েছে, ‘ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষার অধিকার প্রয়োগকালে কৃত কোনোকিছুই অপরাধ নহে।’
গত সপ্তাহে চট্টগ্রামে কয়েকটি ‘টার্গেট কিলিংয়ের’ পর দিশেহারা নগর পুলিশের কমিশনার হাসিব আজিজ অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের গুলি করে হত্যার নির্দেশ দেন। গত ১১ নভেম্বর দুপুরে বেতার বার্তার মাধ্যমে এ নির্দেশনা দেন সিএমপি কমিশনার।
এর পরদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে সিএমপি কমিশনারের এই সিদ্ধান্তে উদ্বেগ জানায় মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
সংস্থাটি বলেছে, দেশের সংবিধান যেকোনো নাগরিকের জীবনের অধিকার এবং আইনের আশ্রয় পাওয়ার নিশ্চয়তা দেয়। সন্দেহভাজন অপরাধীকেও আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া হত্যা বা গুলি চালানোর নির্দেশ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
ঢাকা/এমআর/রফিক