বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘গুপ্ত স্বৈরাচার থেকে দেশ ও দেশের মানুষকে আমাদের রক্ষা করতে হবে। আজকে আমাদের একটাই লক্ষ্য থাকবে, সেটি হচ্ছে, বিএনপির প্রত্যেক নেতা-কর্মীকে সব ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হতে হবে। আমাদের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। দেশ গঠন করতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।’

আজ শনিবার বিকেলে কুমিল্লা নগরের টাউন হল মাঠে কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তারেক রহমান এসব কথা বলেন। সম্মেলনে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেন তিনি।

তারেক রহমান বলেন, ‘আমরা যদি সবাই আজকে ঐক্যবদ্ধ না হই, আমরা যদি গণতান্ত্রিক শক্তিগুলো সব ঐক্যবদ্ধ না হই, আমরা যদি দেশের জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, তাহলে দেশ স্বাধীনের পর যেভাবে স্বৈরাচার চেপে বসেছিল, ২০০৮ সালের তথাকথিত নির্বাচন দিয়ে, ওয়ান-ইলেভেনের ফলে তথাকথিত নির্বাচন দিয়ে যেভাবে স্বৈরাচার দেশের কাঁধে চেপে বসেছিল, যদি আমরা জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে না পারি, তাহলে বলা যায় না, আগামী দিনে গুপ্ত স্বৈরাচারের আবির্ভাব হবে না।’

বিএনপির শীর্ষ নেতা বলেন, ‘দেশ স্বাধীনের পর এক স্বৈরাচার দেশের মানুষের কাঁধে চেপে বসেছিল। পরবর্তী সময়ে সেই স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করা হয়েছিল। একদলীয় শাসনকে বিতাড়িত করে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বহুদলীয় গণতন্ত্র চালু করেছিলেন। পরবর্তী সময়ে আবার স্বৈরাচার এসেছে। জনগণ আন্দোলন করে, যুদ্ধ করে সেই স্বৈরাচারকে বিতাড়িত করেছে। বিগত ১৫ বছর আরেক স্বৈরাচার চেপে বসেছিল, সেই স্বৈরাচারকেও বিতাড়িত করেছে জনগণ। কাজেই জনগণের চাওয়া অনুযায়ী আমাদের চলতে হবে।’

দেশকে সবার ঘর উল্লেখ করে তারেক রহমান বলেন, ‘একটি ঘর তৈরির জন্য সবাইকে মিলেমিশে কাজ করতে হয়। সবাই মিলে, শ্রমিকেরা মিলে যখন কাজ করে, তখন একটি সুন্দর ঘর হয়। কিন্তু একটি ঘরকে যদি ধ্বংস করে দিতে হয়, তখন কিন্তু বেশি লোকের প্রয়োজন লাগে না। এই দেশটি হচ্ছে আপনার, আমার—সবার ঘর। এই ঘরে ডাকাত পড়েছিল ১৫-১৬ বছর ধরে। সেই ডাকাতকে বাংলাদেশের জনগণ বিতাড়িত করেছে। এখন বাংলাদেশকে গঠন করতে হবে। দেশগঠনের শক্তি হচ্ছে জনগণ। তাই রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে আমাদের জনগণের কাছে যেতে হবে।’

সভা-সমাবেশ করে জনগণের কাছে যাওয়া যাবে না মন্তব্য করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘নেতা-কর্মীদের দুজন, তিনজন করে ছোট ছোট দলে বিভক্ত হয়ে জনগণের দোরগোড়ায় যেতে হবে। জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে হবে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল জনগণের সমর্থন পেলে কীভাবে দেশকে পুনর্গঠন করবে। কীভাবে জনগণের সন্তানদের শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে তুলবে, কীভাবে যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলবে, কীভাবে নারীদের আমরা ক্ষমতায়ন করব, কীভাবে কৃষকদের পাশে বিএনপি দাঁড়াবে, কীভাবে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা, স্বাস্থ্যব্যবস্থা গড়ে তুলবে। কৃষক-তরুণ থেকে শুরু করে সর্বস্তরের জনগণের কাছে এই বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। সেটি ঘরে ঘরে গিয়ে পৌঁছে দিতে হবে, জনসভা করে না। বিএনপির এখন লক্ষ্য ঐক্য, জনগণ এবং দেশগঠন।’

তারেক রহমান আরও বলেন, ‘বিগত ১৫-১৬ বছর আমরা দেশের মানুষকে নিয়ে স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছি। স্বৈরাচারের পতন হয়েছে, স্বৈরাচার দেশ থেকে বিতাড়িত হয়েছে। তাহলে সামনে কী? এখন সামনে হচ্ছে দেশগঠন। সামনে মূল কাজ হচ্ছে দেশকে পুনর্গঠন করা। দেশকে যদি পুনর্গঠন করতে হয়, দেশকে যদি জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী গড়ে তুলতে হয়, তাহলে অবশ্যই আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’

দীর্ঘ ১৬ বছর পর আজ নগরের টাউন হল মাঠে দক্ষিণ জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ৩টা ২৫ মিনিটে সম্মেলনের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হলেও দুপুরে থেকে দলে দলে আসতে থাকেন নেতা-কর্মীরা। বেলা আড়াইটার মধ্যে সম্মেলনস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। পরে নেতা-কর্মীরা কান্দিরপাড়সহ আশপাশের সড়কে অবস্থান নেন। এতে দুপুরের পর থেকেই সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

সম্মেলনে প্রধান বক্তা ছিলেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ। উদ্বোধক ছিলেন ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ (বুলু)। দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও কেন্দ্রীয় কর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক জাকারিয়া তাহেরের সভাপতিত্বে সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী, আমিন-উর-রশিদ (ইয়াছিন), কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিম ভূঁইয়া, সহসাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক মিয়া, শিল্পবিষয়ক সম্পাদক মো.

আবুল কালাম।

সম্মেলন সঞ্চালনা করেন দক্ষিণ জেলা বিএনপির সদস্যসচিব আশিকুর রহমান মাহমুদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার জাহান ভূঁইয়া।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত র ক রহম ন জনগণ র ক ছ ব ত ড় ত কর ব এনপ র ব যবস থ গঠন কর র জনগণ আম দ র বস ছ ল গঠন ক

এছাড়াও পড়ুন:

নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার

বাংলাদেশে জনগণের স্বাস্থ্যব্যবস্থা নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত জরুরি হলেও এখানে পেশা হিসেবে নার্সদের অমর্যাদাসম্পন্ন একটা অবস্থানে রাখা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন কবি ও রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার।

ফরহাদ মজহার বলেন, ‘নার্সদের ডাক্তারি ব্যবস্থার অধীন একটা পেশা হিসেবে যে দেখা হয়, আমরা মনে করি এটা ভুল। এখান থেকে মুক্ত হতে হবে। নার্স সেবাটা স্বাস্থ্যসেবার একটা মৌলিক দিক। ফলে তাঁদের স্বাধীনভাবে এই পেশাকে চর্চা করবার সুযোগ–সুবিধা দিতে হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন ফরহাদ মজহার। সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএনএ) ও স্বাস্থ্য আন্দোলন। স্বাস্থ্য আন্দোলনের পক্ষে বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার।

সরকার স্বাস্থ্যকে এখন আর জনগণের অধিকার হিসেবে স্বীকার করছে না বলে অভিযোগ করেন ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, ‘এখন স্বাস্থ্যকে অধিকার নয়, বাজারজাত পণ্য বানানো হয়েছে। টাকা থাকলে চিকিৎসা পাবেন, টাকা না থাকলে নয়।’

নার্সদের স্বাধীন পেশাগত চর্চা, পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ, ন্যায্য বেতন ও মর্যাদা নিশ্চিতের জন্য জাতীয় নার্সিং কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সদেরকে ডাক্তারদের হুকুমমতো চলতে হবে—এই ধারণা ভাঙতে হবে। স্বাস্থ্য মানে শুধু প্রেসক্রিপশন নয়, প্রতিরোধও একটি বড় দিক। নার্সদের মর্যাদা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত হলে জনগণ প্রকৃত স্বাস্থ্যসেবা পাবে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ফরহাদ মজহার বলেন, নার্সিং স্বাস্থ্যসেবার এক মৌলিক দিক। কিন্তু আমাদের সমাজে চিকিৎসাকে ডাক্তারিকরণ বা মেডিক্যালাইজেশন করা হয়েছে। অনেক রোগে ডাক্তার কিংবা ওষুধের প্রয়োজনই হয় না। এ জায়গায় নার্সরা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ নার্সেস অ্যাসোসিয়েশনের (বিএনএ) সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম। এক মাসের মধ্যে নার্সিং কমিশন গঠনের এক দফা দাবি বাস্তবায়ন না হলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে কঠোর কর্মসূচি দেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনের সঞ্চালনা করেন বিএনএর সহসভাপতি মাহমুদ হোসেন তমাল। এতে উপস্থিত ছিলেন স্ট্যান্ডিং কমিটির চেয়ারপারসন জরিনা খাতুন, সহসভাপতি মনির হোসেন ভূঁইয়া এবং সংগঠনের অন্যান্য কেন্দ্রীয় নেতা-কর্মী।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংস্কার, বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তরুণ নেতৃত্বের বিকল্প নেই: রাশেদ খান
  • প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্য দেশের পরিস্থিতি অস্থির করে তুলছে: ফারুক
  • নার্সদের অমর্যাদাকর অবস্থানে রাখা হয়েছে: ফরহাদ মজহার
  • ১৭ বছর এক অসুর জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছিল: নিপুন রায় 
  • নির্বাচিত সরকার না থাকায় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছি: আমীর খসরু
  • অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • ড. ইউনূসের নেতৃত্বেই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে: অ্যাটর্নি জেনারেল
  • চাঁদপুরে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করায় এনসিপির নিন্দা
  • রাষ্ট্র মানে কিন্তু গ্রামীণ ব্যাংক চালানো নয়: ফরহাদ মজহার
  • ইসরায়েলের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক নিষেধাজ্ঞা আরোপের পক্ষে ভোট