বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি বাড়ছে
Published: 30th, September 2025 GMT
একটানা দুই বছর ধরে পণ্য পরিবহনকারী বাণিজ্যিক গাড়ির বাজারে ছিল মন্দাবস্থা। তাতে ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, ডেলিভারি ভ্যানের মতো পণ্য পরিবহনকারী গাড়ির বেচাকেনাও কমে যায়। তবে দুই বছর পর মন্দা কাটিয়ে এই বাজারে বাণিজ্যিক গাড়ির বিক্রি বাড়তে শুরু করেছে, যদিও দুই বছর আগের তুলনায় তা এখনো কম।
পণ্য পরিবহনকারী বাণিজ্যিক গাড়ির বাজারে এমন চিত্র উঠে এসেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আমদানির হিসাব এবং বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নিবন্ধনের তথ্যে। বাণিজ্যিক গাড়ির এই হিসাবে রয়েছে ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, রেফ্রিজারেটর ভ্যান, ডেলিভারি ভ্যান ইত্যাদি। এসব গাড়ির মধ্যে রয়েছে হালকা ও ভারী পণ্যবাহী।
পণ্যবাহী গাড়ির বাজারে ভারতীয় ব্র্যান্ড টাটা, অশোক লেল্যান্ড, আইশার ও মাহিন্দ্রা, চীনা ব্র্যান্ড ফোটনের অংশীদারত্ব বেশি। এ ছাড়া জাপানের মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের পিকআপ ট্রাকও বাজারজাত হচ্ছে দেশে। এসব ব্র্যান্ডের গাড়ি সরাসরি তৈরি এবং বিযুক্ত অবস্থায় আমদানি হয়। বিযুক্ত অবস্থায় আমদানি হওয়া গাড়ি দেশে সংযোজন করে বাজারজাত করা হয়। এ ছাড়া চেসিসসহ ইঞ্জিন ও গাড়ির বডি আলাদাভাবে আমদানি করেও দেশীয় কারখানায় প্রস্তুত করা হচ্ছে বাণিজ্যিক গাড়ি।
বাণিজ্যিক গাড়ির ব্র্যান্ডগুলোর পরিবেশকেরা জানিয়েছেন, দেশে আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য বাড়ছে। আবার পুরোনো গাড়িগুলো সড়ক থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ফলে মন্দাবস্থা কাটিয়ে সামনে পণ্যবাহী গাড়ির বাজার আরও বাড়বে।
দুই বছর পর বাড়ছে আমদানি
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসেবে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে পণ্যবাহী বাণিজ্যিক গাড়ি সবচেয়ে বেশি গাড়ি আমদানি হয়েছে ২০২১–২২ অর্থবছরে। এ সময়ে ট্রাক, পিকআপ, কাভার্ড ভ্যান, ডাম্প ট্রাক, রেফ্রিজারেটর ভ্যান তৈরি ও বিযুক্ত অবস্থায় আমদানি হয় ২৮ হাজার ৮৯৭টি। পরের অর্থবছরে তা কমে আসে ১২ হাজার ৯৩৯টিতে। দুই বছরের মাথায়, অর্থাৎ ২৩–২৪ অর্থবছরে তা আরও কমে ১২ হাজার ৮১০টিতে নেমে আসে।
দুই বছর কমতে থাকা আমদানি ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করে ২৪–২৫ অর্থবছরে। এ সময়ে বাণিজ্যিক গাড়ি আমদানি হয় ১৪ হাজার ১৯৭টি। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে পণ্যবাহী বাণিজ্যিক গাড়ি আমদানি বেড়েছে ১১ শতাংশ।
কখন কত গাড়ির নিবন্ধন
গাড়ি কেনার পর নিবন্ধন করাতে হয়। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্য অনুযায়ী, গত পাঁচ বছরে সবচেয়ে বেশি গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে ২০২১ সালে। এ সময় প্রতি মাসে গড়ে ১ হাজার ৮২৭টি গাড়ি নিবন্ধন হয়েছে। বিআরটিএ তথ্য অনুযায়ী, এরপর গাড়ির নিবন্ধন কমে যায়। তবে দুই বছর ধরে ধীরে ধীরে নিবন্ধনের সংখ্যা বাড়ছে। ২০২৪ সালে প্রতি মাসে গড়ে গাড়ি নিবন্ধন হয় ৯৫৪টি, যা এ বছর গড়ে বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ২০০টি।
ভারতের ব্র্যান্ডের প্রাধান্য, বিক্রি বাড়ছে চীনা ব্র্যান্ডের
পণ্যবাহী বাণিজ্যিক গাড়ির বাজারে অনেক দিন ধরেই শীর্ষে রয়েছে ভারতীয় ব্র্যান্ডগুলো। এ ক্ষেত্রে সবার চেয়ে এগিয়ে আছে টাটা ব্র্যান্ডের গাড়ি। ভারতের শীর্ষস্থানীয় বহুজাতিক অটোমোবাইল প্রস্তুতকারক টাটা মোটরসের অনুমোদিত পরিবেশক নিটল–নিলয় গ্রুপের নিটল মোটরস। ১৯৮৮ সাল থেকে বাংলাদেশে টাটা মোটরসের সহযোগী হিসেবে কাজ করে আসছে নিটল–নিলয় গ্রুপ। বাজারে সবচেয়ে বেশি অংশীদারত্ব নিয়ে দেশের বাণিজ্যিক গাড়ির জগতে প্রতিনিধিত্ব করছে তারা।
পণ্যবাহী গাড়ির বাজারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে অশোক লে–ল্যান্ড ব্র্যান্ডের গাড়ি। ইফাদ গ্রুপের অন্যতম প্রতিষ্ঠান ইফাদ অটোস ১৯৮৫ সাল থেকে দেশে অশোক লেল্যান্ড ব্র্যান্ডের ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান বাজারজাত করে আসছে।
তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ভারতের আইশার ব্র্যান্ডের গাড়ি। আইশার ট্রাকের স্থানীয় পরিবেশক রানার গ্রুপ। ভারতের এই তিন ব্র্যান্ড পণ্যবাহী গাড়ির বাজারে অনেক দিন ধরে প্রাধান্য বিস্তার করে আসছে। তবে এখন চীনের ব্র্যান্ডেরও ধীরে ধীরে বাজার অংশীদারত্ব বাড়ছে। যেমন দেশের বাজারে খুব দ্রুত চীনের ফোটন ব্র্যান্ড চতুর্থ অবস্থানে উঠে এসেছে। এই গাড়ির পরিবেশক এসিআই মোটরস। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসেবে, গত চার বছরের ব্যবধানে এই গাড়ির আমদানি গড়ে প্রতিবছর ৩৫ শতাংশ হারে বেড়েছে।
আমদানির তথ্য অনুযায়ী, এসব ব্র্যান্ড ছাড়াও ভারতের মাহিন্দ্রা ব্র্যান্ডের ট্রাক–পিকআপ এবং জাপানের মিতসুবিশি ব্র্যান্ডের পিকআপ বাজারজাত হচ্ছে দেশে।
পণ্য পরিবহন বাড়ছে, গাড়ি বেচাকেনা বৃদ্ধির আশা
পণ্যবাহী গাড়ির বাজার মূলত দেশে পণ্য পরিবহনের হার বৃদ্ধির ওপর নির্ভরশীল। মোটাদাগে দুই ধরনের পণ্য পরিবহনে পণ্যবাহী গাড়ি ব্যবহৃত হয়। এক.
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের হিসাবে, ২৪–২৫ অর্থবছরে আমদানি–রপ্তানি পণ্য পরিবহন হয়েছে ১৪ কোটি ৪৬ লাখ টন, যা ২৩–২৪ অর্থবছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি।
গাড়ি বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, আমদানি–রপ্তানি পণ্য পরিবহন বাড়লে পণ্যবাহী গাড়ির বেচাকেনাও বাড়বে। অর্থাৎ দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়লে এই খাতের বাজারের আকারও বাড়বে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ ই বছর আমদ ন অবস থ বছর র ম টরস প কআপ
এছাড়াও পড়ুন:
দুর্গাপূজার আগে ভারতে গেল ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ
দুর্গাপূজাকে সামনে রেখে এবার ১২ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছিল সরকার। এ অনুমতির মেয়াদ রয়েছে ৫ অক্টোবর পর্যন্ত। এর আগে গত সোমবার পর্যন্ত ভারতে রপ্তানি হয়েছে ১ লাখ ৩০ হাজার কেজি ইলিশ। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ বছর ৩৭টি প্রতিষ্ঠানকে ইলিশ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সোমবার পর্যন্ত ১৬টি প্রতিষ্ঠান ইলিশ রপ্তানি করেছে। অর্থাৎ ২১টি প্রতিষ্ঠান কোনো ইলিশ রপ্তানি করতে পারেনি। ইলিশ রপ্তানি হয়েছে বেনাপোল ও আখাউড়া স্থলবন্দর দিয়ে। এ দুটি স্থলবন্দর দিয়ে শেষ মুহূর্তে আর ইলিশ রপ্তানি হওয়ার খুব বেশি সুযোগ নেই।
এনবিআরের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ইলিশ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।
এনবিআরের হিসাবে, সব মিলিয়ে এবার ইলিশ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ১৬ লাখ ৩৭ হাজার ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ২০ কোটি টাকা।সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানিএনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক দশকের মধ্যে ইলিশ রপ্তানি প্রথম শুরু হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে। গত সাত বছরে সবচেয়ে বেশি ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ২০২০–২১ অর্থবছরে। ওই সময় ১৭ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়। এর আগে সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৯–২০ অর্থবছরে। সেবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারই সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।
এ বছর ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পাওয়া ৩৭টি প্রতিষ্ঠানের একটি চট্টগ্রামের কালুরঘাটের প্যাসিফিক সি ফুডস। প্রতিষ্ঠানটি ৪০ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন পেয়েছে। তবে সিংহভাগই রপ্তানি করতে পারেনি।
জানতে চাইলে প্যাসিফিক সি ফুডসের পরিচালক আবদুল মান্নান প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে, এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।’
আবদুল মান্নান বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে মিয়ানমারের ইলিশের রপ্তানি মূল্য কম। ফলে ভারতের বাজারে মিয়ানমারের ইলিশ বেচাকেনা হচ্ছে বেশি।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার থেকে দেশটি ইলিশ আমদানি করে ভারত। দেশটি বাংলাদেশের চেয়ে বেশি পরিমাণে কম দামে ইলিশ আমদানি করে মিয়ানমার থেকে।
যেমন ২৪–২৫ অর্থবছরে (এপ্রিল–মার্চ) দেশটি মিয়ানমার থেকে সাড়ে ছয় লাখ কেজি ইলিশ আমদানি করেছে। গড়ে ভারতের আমদানি মূল্য ছিল ৬ ডলার ২৩ সেন্ট। অন্যদিকে একই সময়ে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করেছে ৫ লাখ ৪২ হাজার কেজি ইলিশ। গড় আমদানি মূল্য ছিল ১০ ডলার ৯৩ সেন্ট।
এর আগে সবচেয়ে কম রপ্তানি হয় ২০১৯-২০ অর্থবছরে। সেবার ৪ লাখ ৭৬ হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি হয়েছিল। সেই হিসাবে এবারই সবচেয়ে কম ইলিশ রপ্তানি হচ্ছে ভারতে।ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যেই ইলিশ গেলবাণিজ্য মন্ত্রণালয় এবার সাড়ে ১২ ডলার বা ১ হাজার ৫৩২ টাকা দরে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য বেঁধে দিয়েছে। এর মানে হলো, এর চেয়ে কমে ইলিশ রপ্তানি করা যাবে না। তবে চাইলেই বেশি দামে রপ্তানি করা যাবে।
এনবিআরের তথ্যে দেখা গেছে, ২০১৯–২০ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ন্যূনতম মূল্যে ইলিশ রপ্তানি হয়ে আসছে। ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে ইলিশ রপ্তানির নজির খুব কম।
এ বছর রপ্তানি হওয়া ৪৫টি চালানের মধ্যে ৪৪টি চালানের ইলিশ রপ্তানি হয়েছে ন্যূনতম রপ্তানি মূল্য অর্থাৎ সাড়ে ১২ ডলারে। শুধু একটি চালান ন্যূনতম রপ্তানি মূল্যের চেয়ে বেশি দামে রপ্তানি হয়েছে। এই চালান রপ্তানি করেছে ভোলার চরফ্যাশনের রাফিদ এন্টারপ্রাইজ। প্রতিষ্ঠানটি ৪২০ কেজি ইলিশ কেজিপ্রতি ১৩ ডলার ৬০ সেন্টে রপ্তানি করেছে।
স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমতে পারে, এমন আশায় ছিলাম আমরা। তবে স্থানীয় বাজারে ইলিশের দাম কমেনি। ফলে মাত্র দেড় হাজার কেজি ইলিশ রপ্তানি করেছি আমরা। তাতেও লোকসান হয়েছে। দাম বেশি থাকায় আর রপ্তানি করছি না।আবদুল মান্নান, পরিচালক, প্যাসিফিক সি ফুডসপ্রতিবারই অনুমতির চেয়ে কম রপ্তানিবাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি এবং এনবিআরের রপ্তানির হিসাব তুলনা করে দেখা গেছে, প্রতিবারই যে পরিমাণ ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হয়, বাস্তবে রপ্তানি হয় খুব কম। যেমন গত বছর ২৪ লাখ কেজি ইলিশ রপ্তানির অনুমোদন দেওয়া হলেও বাস্তবে রপ্তানি হয়েছে ৪ লাখ ৪৪ হাজার কেজি ইলিশ। অর্থাৎ অনুমতির ২৩ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে। এবারও এখন পর্যন্ত অনুমতির ১১ শতাংশ ইলিশ রপ্তানি হয়েছে।