ট্রাফিক সহায়কের খণ্ডকালীন চাকরি, শিক্ষার্থীদের সুবিধার থেকে শঙ্কা বেশি
Published: 11th, November 2025 GMT
বিকেল সাড়ে পাঁচটা। রাজধানীর কারওয়ান বাজার মোড়ে দুজন তরুণ ট্রাফিক সহায়ক দৌড়ে যান একদিকে অটোরিকশা থামাতে, পরক্ষণেই ছুটে যান উল্টো দিক থেকে আসা গাড়ির দিকে। ঢাকার বিশৃঙ্খল রাস্তায় কিছুটা শৃঙ্খলা ফেরানোর চেষ্টা তাঁদের। পাশে রয়েছেন এক ট্রাফিক পুলিশ সদস্যও। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পরিবর্তনের সময় ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় অস্থিরতা দেখা দেয়। তখনই শিক্ষার্থীরা স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে অংশ নেন। পরে অন্তর্বর্তী সরকার ও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) যৌথ উদ্যোগে গত বছরের ডিসেম্বর থেকে শিক্ষার্থীদের খণ্ডকালীন ট্রাফিক সহায়ক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
খণ্ডকালীন চাকরি, কিন্তু অনিশ্চিত সুবিধাপ্রতিদিন চার ঘণ্টা দায়িত্ব পালনের বিপরীতে শিক্ষার্থীরা পান ৫০০ টাকা। মাসের ৭ তারিখের মধ্যে বেতন দেওয়ার কথা থাকলেও নিয়মিতভাবে বিলম্ব হচ্ছে। জুন ও জুলাই মাসে অনেকে বেতনই পাননি। অনেকেই টিউশনি ছেড়ে এই কাজে আসায় আর্থিক চাপে পড়েছেন। সোনারগাঁও বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র মুহাম্মদ মিয়ান বলেন, ‘এই শহরের ট্রাফিক সামলানো খুব কঠিন। প্রতি সেকেন্ডে সতর্ক থাকতে হয়। আমরা শুধু আইন মানাতে নয়, পুলিশ ও মানুষের দূরত্ব কমাতেও কাজ করছি। অটোরিকশা নিয়ন্ত্রণই সবচেয়ে চ্যালেঞ্জ।’ দায়িত্ব শুরু করার আগে শিক্ষার্থীরা মাত্র এক সপ্তাহের প্রশিক্ষণ ও একটি ভেস্ট পেয়েছেন। আইডি কার্ড এখনো দেওয়া হয়নি। অনেকেই ভবিষ্যতে চাকরির ক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা সনদ পাওয়ার আশায় এই কাজে যুক্ত হয়েছেন। তবে নিয়মিত বেতন, নিরাপত্তা ও মর্যাদার অভাব শিক্ষার্থীদের মধ্যে হতাশা তৈরি করেছে।
মতিঝিল এলাকায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করছেন শিক্ষার্থীরা.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
আগাম জাতের আলু চাষে ব্যস্ত হাকিমপুরের কৃষক
দিনাজপুরের হাকিমপুরে আগাম জাতের আলু রোপণকে কেন্দ্র করে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকেরা। আমন ধান কাটার পর ফাঁকা জমিতে অ্যাস্টেরিক, কার্ডিনাল ও স্বল্পমেয়াদী শাটাল জাতের আলুর বীজ রোপণের কাজ চলছে।
মৌসুমের শুরুতে আলুর ভালো দামের প্রত্যাশা থাকলেও সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের বাড়তি ব্যয় তাদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে।
উপজেলার খট্টামাধবপাড়া, ইসবপুর, বোয়ালদাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠজুড়ে হাল চাষ, আগাছা পরিষ্কার, গোবর ও রাসায়নিক সার প্রয়োগ, বেড তৈরি ও হিমাগার থেকে আনা বীজ রোপণে কৃষকদের ব্যাপক কর্মব্যস্ততা। শীতের আগমনী বার্তায় কৃষিজমিতে যেন উৎসবের আমেজ।
খট্টামাধবপাড়ার কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমন ধান কাটার পরপরই আলুর জমি প্রস্তুত শুরু করেছি। হাল চাষ থেকে শুরু করে বীজ আনা, সব মিলিয়ে এখন সবচেয়ে ব্যস্ত সময়। এক বিঘায় খরচ ৪০ হাজার টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আগাম আলু ৫০ থেকে ৬০ দিনের মধ্যেই বাজারে বিক্রি করা যায় কিন্তু বর্তমান বাজারদর কম। রপ্তানির সুযোগ থাকলে কৃষকেরা বেশি লাভবান হতো।”
ইসবপুরের কৃষক মোজাফফর হোসেন জানান, আগাম আলুর দামে লাভ বেশি থাকায় অ্যাস্টেরিক, কার্ডিনাল ও শাটাল জাতের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে। এসব আলুর উৎপাদন প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ পর্যন্ত হয়।
মাধবপাড়ার কৃষক আজিজার রহমান বলেন, “বীজ আলুর দাম কম থাকায় স্বস্তি মিললেও সার ও কীটনাশকের মূল্যবৃদ্ধি হিসাব বদলে দিয়েছে। বাজারদর না বাড়লে লোকসান অনিবার্য।”
এ মৌসুমে শ্রমিকরাও ব্যস্ত সময় পার করছেন। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত জমির বিভিন্ন ধাপে তাদের কাজ চলছে। স্থানীয় শ্রমিক রেজাউল করিম জানান, আগাম আলুর মৌসুমে কাজ বেশি থাকে, আয়ও ভালো হয়।
হাকিমপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আরজেনা বেগম বলেন, “আগাম আলু চাষে কৃষকদের প্রয়োজনীয় কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ভালো ফলনের আশা করা যাচ্ছে। চলতি বছর উপজেলায় ১ হাজার ৩৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, এরইমধ্যে ৬০ হেক্টরে বীজ রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।”
ঢাকা/মোসলেম/এস